পবিত্র শবে কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য – মুহাম্মদ জহিরুল আলম
মহান আল্লাহ্ পরম দয়ালু ও পরম দয়াময়। সৃষ্টির প্রতি তাঁর দয়া অপরিসীম। দয়াময় আল্লাহ্ পুণ্যবান এবং পাপী সকলের রিজিকের বিষয়ে সহানুভূতিশীল, কিন্তু তিনি মু’মিনদের জন্য ক্ষমা ও তাদেরকে জান্নাত দানে পরম দয়াবান। দয়াময় আল্লাহ্র দয়া ও করুণার অপূর্ব নিদর্শন আল কুরআন। মানবজাতির প্রতি মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে মুক্তির বাণীসমূহ পবিত্র কুরআনের মাধ্যমেই মহান আল্লাহ্ আমাদের দান করেছেন। এ কুরআনের সাথেই পরম করুণাময় আল্লাহ্র আরেকটি নিয়ামত আমরা পেয়েছি তা হলো পবিত্র ‘শবে কদর’।
পবিত্র ‘শবে কদর’-এর সম্মান ও মর্যাদাই এ রাতের বিশেষত্বকে ফুটিয়ে তুলেছে। ‘শবে কদর’-কে আরবিতে ‘লাইলাতুল কদর’ বলা হয়। এর অর্থ ‘অতিশয় সম্মানিত ও মহিমান্বিত রাত’ বা ‘পবিত্র রজনি’। ফারসি ভাষায় ‘শব’ ও আরবি ভাষায় ‘লাইলাতুল’ অর্থ রজনি বা রাত্রি। আর ‘কদর’ শব্দের অর্থ সম্মান, মর্যাদা, মহাসম্মান। যে রাতে পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে সেই রাতই লাইলাতুল কদর বা শবে কদর। মহাগ্রন্থ আল কুরআন লাওহে মাহ্ফুজে সংরক্ষিত ছিল। লাওহে মাহ্ফুজ এর অর্থ সংরক্ষিত ফলক। লাইলাতুল কদর বলতে পবিত্র কুরআন নাজিলের সেই মহিমান্বিত রজনিকে বুঝায়। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই আমি কুরআন নাজিল করেছি মর্যাদাপূর্ণ কদর রজনিতে। আপনি কি জানেন, মহিমাময় কদর রজনি কী? মহিমান্বিত কদর রজনি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। সেই রাতে রুহ ও ফেরেশতা তাদের প্রতিপালকের আদেশক্রমে প্রত্যেক বিষয়ের (সিদ্ধান্তের) জন্য নেমে আসেন। এই শান্তির ধারা চলতে থাকে ঊষা বা ফজর পর্যন্ত।” (সূরা আল ক্বদর ৯৭ : আয়াত ১-৫)
এক হাদিসের বর্ণনা হতে পাওয়া যায়- “আল্লাহ্র রাসুল (সা.) বনী ইসরাঈলের এক ব্যাক্তির কথা আলোচনা করেন। সে অস্ত্রসজ্জিত হয়ে হাজার মাস আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ করেছে। একথা শুনে মুসলমানগণ আশ্চর্য হলো। তখন আল্লাহ্ অবতীর্ণ করেন ‘নিশ্চয়ই আমি কদরের রাতে কুরআন নাজিল করেছি। আপনি কি জানেন কদরের রাতটি কী? কদরের রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম’।” (তাফসিরে দুররে মানসুর, খণ্ড ৩০, পৃষ্ঠা ৫৬৮)। তাই পবিত্র শবে কদরের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যাধিক।
কদরের রাত শান্তিময়, বরকতময়, উত্তম একটি রাত। ভোরের আলো উদিত হওয়া পর্যন্ত এ রাত বিরাজ করে। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি কদরের রাতে ইমানের সাথে সওয়াবের নিয়তে ইবাদত করেছে তার অতীত পাপসমূহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।” (তাফসিরে মাজহারী, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ২৯২) হযরত রাসুল (সা.) দীর্ঘ দিন হেরা পর্বতের গুহায় সাধনা করার পর এ রাতেই সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে সর্বপ্রথম প্রাপ্ত হন। এভাবেই মহান আল্লাহ্ পবিত্র কদরের রজনিতে দয়াল রাসুল (সা.)-এর নিকট মানবজাতির মুক্তির বিধান পবিত্র কুরআন নাজিল করে তাঁর রাসুলকে সম্মানিত করেছিলেন। তাই উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য এ রাতে ইবাদতের মর্যাদা হাজার মাসের ইবাদতের চেয়েও উত্তম।
রমজান মাস পবিত্র কুরআন নাজিলের মাস। রমজান মাসের যে রাতেই পবিত্র কুরআন নাজিল হয়েছে সে রাতই পবিত্র কদরের রাত। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন, “তোমরা রমজানের শেষ দশকের বিজোড় রাতগুলোতে শবে কদরকে সন্ধান করো।” এ রাতগুলো হলো ২১, ২৩, ২৫, ২৭ ও ২৯। আমরা জানি, আরবিতে দিনের আগে রাত গণনা করা হয়। অধিকাংশ আলেমদের গবেষণা ও ব্যাখ্যায় তাই ২৬ তারিখ দিবাগত রাত অর্থাৎ সাতাশ তারিখে পবিত্র শবে কদরের অন্যতম সম্ভাব্য রাত। আমরা যারা আশেকে রাসুল তাদের জন্য এ রজনি আরো মর্যাদাময়। আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) তাঁর বর্ণিল ও কর্মময় জীবনে পবিত্র শবে কদর রজনির প্রতিটি মাহ্ফিলে এ মহিমান্বিত রাতের গুরুত্ব ও তাৎপর্য শিক্ষা দিয়েছেন। পাশাপাশি এ রাতে কীভাবে আল্লাহ্র দরবারে প্রার্থনা করতে হবে, তিনি দয়া করে তাও শিক্ষা দিয়েছেন। তিনি শিক্ষা দিয়েছেন, আগে জানতে হবে, তবেই তা সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হবে। আর তাই আশেকে রাসুলগণ অনেক সৌভাগ্যবান।
পবিত্র কদর রজনির মর্যাদা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। এর অর্থ হলো হাজার মাস ইবাদত বন্দেগির চাইতে ঐ রজনিটির মর্যাদা বেশি। আল্লাহ্ পাক দয়া করে যখন কারো সম্মান মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন সেটিই তার জন্য কদর।
মহান ইমাম, নুরে মোহাম্মদীর ধারক, মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর মানব মুক্তির বার্তা বিশ্বময় প্রচার করে যাচ্ছেন। এ মহামানব, মহিমান্বিত কদরের রজনিতে ধূলির ধরায় আগমন করেন। এ মহামানবের নেক দৃষ্টি ও দয়ার বরকতে কদর নসিব সম্ভব। তাঁর নেক দৃষ্টির বদৌলতে আশেকের তকদিরে শুভ পরিবর্তন আসে। পবিত্র শবে কদর মহান আল্লাহ্র এক মহা নিয়ামত, মানবজাতির জন্য এ রাত শান্তি ও কল্যাণের বার্তা নিয়ে আসে এবং তা ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত বিরাজ করে। একইসাথে এ রাতে মুক্তিকামী মানুষ যদি নুরে মোহাম্মদীর ধারক কোনো মহামানবের সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর উসিলা ধরে মহান মালিকের কদমে নিজেকে সমর্পণ করে কদর ভিক্ষা চায়, দয়াময় আল্লাহ্ কখনোই তার গোলামকে ফিরিয়ে দিবেন না। আমিন।
[লেখক: পিএইচ.ডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]