মোর্শেদের প্রয়োজনীয়তা
ড. মুহাম্মদ নাছিরউদ্দীন (সোহেল)
মানবজীবনে বিদ্যা বা শিক্ষা ২ ধরনের হয়ে থাকে। একটি পুঁথিগত বিদ্যা বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, অন্যটি ক্বালবি বিদ্যা বা তাসাউফের বিদ্যা। এই দুই ধরনের বিদ্যা অর্জনের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উভয়ের প্রয়োজন রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের জন্য শিক্ষার্থীরা যাদের নিকট যায়, তাদেরকে বাংলায় শিক্ষক বা গুরু, ইংরেজিতে `Teacher’ আর আরবিতে মুয়াল্লিম বলা হয়। যে সব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষা অর্জন করে থাকেন, সেগুলোকে স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বলা হয়। অন্যদিকে ক্বালবি বিদ্যা বা তাসাউফের বিদ্যা নিজ হৃদয়ে ধারণ করার জন্য যাঁদের নিকট যেতে হয়, তাঁদেরকে বাংলায় বলা হয় ‘পথপ্রদর্শক’; ইংরেজিতে বলা `Spritual Guide’; আরবিতে বলা হয় ‘মোর্শেদ’; আর ফারসিতে বলা হয় ‘পির’। আমাদের দেশে পির শব্দটি ব্যাপকভাবে প্রচলিত। কেননা বাংলা-ভারত উপমহাদেশে কোনো নবি-রাসুল আগমন করেননি। পারস্য থেকে অলী-আল্লাহ্গণ এখানে এসে ইসলাম ধর্ম প্রচার করেন। ফলে আমাদের দেশে ইসলাম সম্পর্কিত বিভিন্ন শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে ফারসি শব্দের অধিক প্রচলন দেখা যায়। যেমন-রোজা, নামাজ, পির, দোজখ, বেহেশত ইত্যাদি। তাই আমাদের দেশে মোর্শেদকে ‘পির’ বলে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। মোর্শেদ হলেন মহান আল্লাহ্র বন্ধু তথা অলী-আল্লাহ্। অলী-আল্লাহ্দের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আধ্যাত্মিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলা হয়। আমাদের দেশে এই জাতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ‘দরবার শরিফ’ বলে অভিহিত করা হয়।
আমরা আমাদের সন্তানদেরকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত করার জন্য শৈশবেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে দেই। আমার স্বপ্ন যদি থাকে আমার সন্তান চিকিৎসক হবে, তাহলে তাকে মেডিকেল কলেজে ভর্তি করাব, যদি আমার সন্তানের লক্ষ্য থাকে সে প্রকৌশলী হবে, তবে তাকে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাব; কিংবা সে যদি আইনজীবী হতে চায়, তাহলে তাকে ল’ কলেজে ভর্তি করাব। এভাবে লক্ষ্য অনুযায়ী নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে যথাযথভাবে কোর্স সুসম্পন্ন করে সে তার স্বপ্নের পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করে থাকে। কিন্তু আমি যদি আমার সন্তানকে শিক্ষকের নিকট না পাঠিয়ে এবং নির্দিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি না করে শুধুমাত্র চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশলবিদ্যা ও আইনবিদ্যার গ্রন্থগুলো বাজার থেকে এনে তাকে অধ্যয়নের জন্য দিয়ে থাকি, তাহলে কি আমার সন্তান চিকিৎসক, প্রকৌশলী বা আইনজীবী হতে পারবে? প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা অর্জনের জন্য স্ব স্ব বিষয়ে শিক্ষকের সান্নিধ্যে গিয়ে নির্দিষ্ট বিষয়ে শিক্ষা অর্জন করা অপরিহার্য। মূলত প্রত্যেক শিক্ষা অর্জনের জন্য শিক্ষক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু আমি ক্বালবি বিদ্যা অর্জনের জন্য যখনই ক্বালবি বিদ্যার শিক্ষক অলী-আল্লাহর নিকট যাব, তখনই আমাদের সমাজে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়! আমাকে বলা হয়, পিতা-মাতাই বড়ো পির! কিন্তু পিতা-মাতা যদি ক্বালবি বিদ্যায় বিদ্বান না হন, তাহলে তারা কীভাবে আমাকে ক্বালবি বিদ্যা শিখাবেন? আবার অনেকেই বলে থাকেন, মাদ্রাসা থেকে পাশ করা মুফতি, মোহাদ্দেস, মোফাসসেরে কুরআন তাদের নিকট থেকেই আমরা ক্বালবি বিদ্যা অর্জন করতে পারব। কিন্তু প্রশ্ন হলো, মাদ্রাসায় পড়াশোনা করে হয়তো উল্লিখিত ডিগ্রি অর্জন করা যাবে, কিন্তু মাদ্রাসার শিক্ষা অর্জন করে কি আল্লাহ্ওয়ালা হওয়া যাবে? চরিত্রবান হওয়া যাবে? যদি তাই হতো, তাহলে মাদ্রাসা থেকে পাশ করা শিক্ষার্থীরা আলোকিত মানুষ হয়ে যেতেন, তাদের দ্বারা সমাজে কোনো অন্যায় কাজ হতো না। তাহলে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, সৎ ও আদর্শ চরিত্রবান হওয়ার জন্য, মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর পরিচয় লাভ করার জন্য আমাদেরকে মোর্শেদের নিকট যেতে হবে। এর কোনো বিকল্প পথ নেই।
মোর্শেদের পরিচয়
আরবি ‘মোর্শেদ’ শব্দটি ‘রুশদুন’ ধাতু হতে উৎপন্ন হয়েছে, যার বাংলা অর্থ হচ্ছে পথ। আর মোর্শেদ শব্দটির বাংলা অর্থ পথ প্রদর্শক। আরবি মোর্শেদ শব্দের ফারসি প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘পির’, যার বাংলা অর্থ আধ্যাত্মিক শিক্ষা গুরু, পুণ্যাত্মা, মহাপুরুষ, মুরুব্বি। মূলত হাদি শ্রেণির অলী-আল্লাহ্গণকে আমাদের সমাজে পির বলে অভিহিত করা হয়। অলী-আল্লাহ্ আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ আল্লাহর বন্ধু, আল্লাহ্ওয়ালা। পৃথিবীতে ৩ শ্রেণির অলী-আল্লাহ্ বিদ্যমান রয়েছেন। যথা-
(১) হাদি : যে সকল অলী-আল্লাহ্ নিজে গভীর সাধনা করে মহান আল্লাহ্র পরিচয় লাভ করেন এবং মানুষকে এই পদ্ধতি শিক্ষাদানের জন্য আল্লাহ্ কর্তৃক দায়িত্ব প্রাপ্ত হন, তাঁরা হাদি শ্রেণির অলী-আল্লাহ্। আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বা তাওয়াজ্জোহ্র স্তর ভেদে হাদি শ্রেণির অলী-আল্লাহ্ ৪ প্রকার। যথা- (ও) অলী-আল্লাহ, (ওও) অলীয়ে কামেল, (ওওও) অলীয়ে মোকাম্মেল এবং (ওঠ) মোজাদ্দেদে জামান বা যুগের ইমাম।
(২) মাজ্জুব : যাঁরা মহান আল্লাহর এশ্কে ডুবে ইবাদতে মশগুল থাকেন, তাঁরা মাজ্জুব শ্রেণির অলী-আল্লাহ্। তাঁরা মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বিশেষ দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
(৩) দেশরক্ষক : যাঁরা আল্লাহর পরিকল্পনা মোতাবেক সৃষ্টিজগত পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন, তাঁরা হলেন দেশ রক্ষক অলী-আল্লাহ্।
এই ৩ শ্রেণির অলী-আল্লাহ্ যুগের ইমামের সরাসরি তত্ত্বাবধানে থেকে সৃষ্টিজগত পরিচালনার সুমহান দায়িত্বে নিয়োজিত থাকেন। যুগের ইমাম হলেন রূহে আজম ও সিরাজুমমুনিরের ধারক ও বাহক। তাঁর মাধ্যমে সকল শ্রেণির অলী-আল্লাহ্ ফায়েজ প্রাপ্ত হয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব সম্পাদন করেন। শুধু তাই নয়, সমগ্র সৃষ্টিজগত এই ফায়েজ দ্বারাই চলমান ও বহমান রয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কোনো নারী হাদি শ্রেণির অলী-আল্লাহ্ হতে পারেন না। মহান আল্লাহ্ মানুষকে হেদায়েতের জন্য নবুয়তের যুগে ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবি ও রাসুল জগতের বুকে প্রেরণ করেন, কিন্তু তাঁদের মধ্যে একজনও নারী ছিলেন না।
অনেকের মনেই প্রশ্ন থাকে যে, আমরা কীভাবে চিনব কারা আল্লাহর বন্ধু? এই বিষয়ে হযরত রাসুল (সা.) মানবজাতিকে সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এই প্রসঙ্গে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- ‘‘মহান আল্লাহ্ বলেন- নিশ্চয় আমার বান্দাদের মধ্যে অলী-আল্লাহ্ হলো তাঁরা, আমাকে স্মরণ করলে যাঁদের কথা স্মরণ হয় এবং যাঁদেরকে স্মরণ করলে আমার কথা স্মরণ হয়।” (তাফসীরে মাজহারি ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪৮)
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, এই প্রসঙ্গে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, “আরজ করা হলো- হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! অলী-আল্লাহ্গণ কারা? তিনি বললেন- যাঁদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয় (তথা আল্লাহর প্রেমের ফায়েজ পাওয়া যায়।” (তাফসীরে দুররে মানছুর ১১নং খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭০) এমনিভাবে ইমাম বগভী (রহ.) উল্লেখ করেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “একদা রাসুল (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলেন, অলী-আল্লাহ্ তথা আল্লাহর বন্ধু কারা? জবাবে তিনি বললেন- যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয়।” (তাফসীরে মাজহারি ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪৮)
হযরত রাসুল (সা.) আউলিয়ায়ে কেরামের প্রসঙ্গে বলেন, “আমার উম্মতের মধ্যে যারা আলেম তথা আল্লাহর পরিচয় লাভকারী অলী-আল্লাহ্, তাঁরা বনি ইসরাইলের নবিগণের মতো।” (তাফসিরে রূহুল বয়ান ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৮)
হযরত রাসুল (সা.) আরও বলেন- “আলেমগণ (আল্লাহ্তত্ত্বের জ্ঞানে জ্ঞানী) পৃথিবীর প্রদীপ এবং আম্বিয়ায়ে কেরামের প্রতিনিধি, কিংবা আলেমগণ আমার উত্তরাধিকারী এবং আম্বিয়ায়ে কেরামেরও উত্তরাধিকারী।” (তাফসীরে মাজহারি ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৭)
‘মোর্শেদ’ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে গিয়ে মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, “নবুয়তের যুগে মানবজাতিকে আদর্শ চরিত্রবানরূপে গড়ে তুলে আল্লাহ্কে পাওয়ার পদপ্রদর্শক ছিলেন নবী ও রাসুলগণ। এমনিভাবে নবুয়তের যুগ শেষ হয়ে যাওয়ার পর মোজাদ্দেদ, যুগের ইমাম ও অলী-আল্লাহ্গণই মুর্শেদরূপে মানুষকে আল্লাহ্কে পাওয়ার পথ দেখিয়ে আসছেন। প্রকৃতপক্ষে প্রত্যেক যুগেই মুর্শেদে কামেলের মাধ্যমে মানুষ খোদাপ্রাপ্তির সন্ধান পেয়ে থাকে।” (শান্তি কোন পথে?, পৃষ্ঠা ৫২)
জগৎশ্রেষ্ঠ এই মহামানব আরও বলেন, “যে সকল মহামানব গভীর সাধনার মাধ্যমে নিজের ভেতরে আল্লাহ্র পরিচয় পেয়েছেন, অতঃপর তা শিক্ষাদানের মাধ্যমে মানুষের সাথে আল্লাহর যোগসূত্র স্থাপন করে দিতে সক্ষম, তিনিই মুর্শেদ বা পীর হওয়ার উপযুক্ত। পীর হওয়ার জন্য প্রথমে অলী-আল্লাহ্ হওয়া প্রয়োজন।” (মুক্তি কোন পথে?, পৃষ্ঠা ১১২)
মোর্শেদের পরিচয় উপস্থাপন করতে গিয়ে ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর বলেন, “মোর্শেদ এমন একজন মহামানব, যিনি মুরীদকে আল্লাহ্র সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে সক্ষম। যিনি মুরীদকে রাসূল (সঃ)-এর সাথেও যোগাযোগ করিয়ে দিতে পারেন। যিনি মুরীদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে দিতে পারেন। যিনি মুরীদের হৃদয়ে ঈমানের বীজ বপন করে থাকেন। মোর্শেদ এমন একজন মহামানব, যিনি মুরীদের চরিত্রকে সংশোধন করে দেন। যিনি মুরীদের অন্তরের খবর রাখেন। যিনি মুরীদকে বিপদ থেকে রক্ষা করেন। যিনি মুরীদকে নিজের জীবনের চেয়ে বেশি ভালবাসেন। মোর্শেদ এমন একজন মহামানব, মুরীদ যদি লক্ষ মাইল দূর থেকে বিপদে পড়ে তাঁকে ‘বাবা’ বলে ডাকে, তখন তিনি তাকে উদ্ধার করেন।” (মোর্শেদের দরবারে মুরীদের করণীয়, দ্বিতীয় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১৩৬)
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে মোর্শেদের প্রয়োজনীয়তা
মহান রাব্বুল আলামিন মানুষের নিকট তাঁর পরিচয় তুলে ধরার জন্য নবুয়তের যুগে মোর্শেদরূপে যাঁদেরকে প্রেরণ করেছেন, তাঁরা হলেন নবি ও রাসুল। নবুয়তের যুগের পরিসমাপ্তির পর একই দায়িত্ব পালনের জন্য মহান আল্লাহ্ মোর্শেদরূপে যাদেরকে প্রেরণ করেন, তাঁরা হলেন অলী-আল্লাহ্। আল্লাহ্ তায়ালা মোর্শেদের সান্নিধ্যে যাওয়ার বিষয়ে নিজেই হযরত রাসুল (সা.)-এর ক্বালবে ওহি নাজিলের মাধ্যমে পবিত্র কুরআনে সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, যা নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
মহান আল্লাহ্ বলেন- “প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য রয়েছে হাদি বা পথপ্রদর্শক।” (সূরা আর রাদ ১৩ : আয়াত ৭)
“হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো এবং তাঁর নৈকট্য লাভের অসিলা অন্বেষণ করো।” (সূরা আল মায়িদাহ ৫ : আয়াত ৩৫)
“হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য করো আল্লাহর, আনুগত্য করো রাসুলের, এবং তাঁদের, যাঁরা তোমাদের মধ্যে (আল্লাহ্র সাথে যোগাযোগ করে) ফয়সালা দিতে পারেন।” (সূরা আন-নিসা ৪ : আয়াত ৫৯)
“আল্লাহ্ যাকে গোমরাহ করেন, আপনি কখনো তার জন্য কোনো (মোর্শেদ বা ) পথ প্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবেন না।” (সূরা আল কাহ্ফ ১৮ : আয়াত ১৭)
“আর আমি যাদের সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যে এমন একদল আছে, যারা সত্য পথ দেখায়, এবং সেই অনুযায়ী ন্যায়বিচার করে।” (সূরা আল আরাফ ৭ : আয়াত ১৮১)
“জেনে রেখো, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোনো ভয় নেই, এবং তাঁরা দুঃখিতও হবে না।” (সূরা ইউনুস ১০ : আয়াত ৬২)
পবিত্র কুরআনের উল্লিখিত আয়াতসমূহ হতে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহর পরিচয় লাভ করার জন্য মানুষকে আল্লাহ্র মনোনীত মোর্শেদ তথা পথপ্রদর্শকদের নিকট অবশ্যই যেতে হবে। কেননা মোর্শেদের সাথে রয়েছে আল্লাহ্র যোগোযোগ। মোর্শেদই পারেন মুরিদকে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করিয়ে দিতে। যারা মহান আল্লাহ্কে বিশ্বাস করেন এবং আল্লাহর নাজিলকৃত পবিত্র কুরআনকে বিশ্বাস করেন, তারা মোর্শেদের সান্নিধ্যে গমনের বিষয়টির সাথে কখনোই দ্বিমত পোষণ করবেন না। আর যারা মোর্শেদের সান্নিধ্যে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন, মূলত তারা মহান আল্লাহর বাণীকেই অস্বীকার করেন।
যুগের ইমামের সহবতে যাওয়ার বিষয়ে হযরত রাসুল (সা.)-ও তাঁর উম্মতদেরকে দিকনির্দেশনা প্রদান করে বলেন- “যে ব্যক্তি (যুগের) ইমামের আনুগত্য না করে মৃত্যুবরণ করেছে, সে জাহেলি অবস্থা তথা ধর্মহীন বেইমান হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।” (মুসনাদে আহমদ ১৩নং খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৮)
মোর্শেদের সহবতের প্রয়োজনীয়তা
কোনো সাধক একাকী সাধনা করে মহান আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারে না। এই পথ পরিক্রমায় সফলতা অর্জন করতে হলে মোর্শেদের নিকট বাইয়াত গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। এটিই আল্লাহ্ প্রাপ্তির সাধনার চিরন্তন নিয়ম। জগদ্বিখ্যাত অলী-আল্লাহ্গণের জীবনী মোবারক থেকে জানা যায় যে, তাঁরা প্রত্যেকেই আপন মোর্শেদের সান্নিধ্যে গিয়ে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর দরবারে দীর্ঘ ১২ বছর গভীর সাধনা করে মহান আল্লাহর পরিচয় লাভ করেছেন এবং আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ‘মোজাদ্দেদ’ তথা সংস্কারকের সুমহান দায়িত্ব লাভ করেন। সংস্কারকের আগমন প্রসঙ্গে হযরত রাসুল (সা.) বলেন- “নিশ্চয় মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ্ এই উম্মতের জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠাবেন, যিনি তাদের ধর্মকে সংস্কার করে সজীব ও সতেজ করবেন।” (আবু দাউদ শরিফের সূত্রে মেশকাত শরিফ, পৃষ্ঠা ৩৬)
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর মোর্শেদ ছিলেন হযরত ইউনুস আলী এনায়েতপুরী (রহ.), আবার তাঁর মোর্শেদ ছিলেন হযরত সৈয়দ ওয়াজেদ আলী (রহ.), আর তাঁর মোর্শেদ ছিলেন হযরত ফতেহ আলী ওয়ায়েসী (রহ.)। এভাবে প্রত্যেকে অলী-আল্লাহ্ আপন মোর্শেদের সান্নিধ্যে গিয়ে সাধনা ও গোলামির মাধ্যমে নিজের অন্তরে আল্লাহর সুপ্ত নুরকে জাগ্রত করে কামেল ও মোকাম্মেল অলী-আল্লাহ্তে পরিণত হয়েছেন। মূলত সাধককে ক্বালবি বিদ্যা অর্জনের মাধ্যমে মহান আল্লাহর খলিফা হওয়ার পূর্ণ যোগ্যতা লাভের জন্য মোর্শেদের সহবতে যাওয়া অপরিহার্য। তাসাউফের এই বিদ্যা হৃদয়ে ধারণ করার জন্য মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রি অর্জন করা অত্যাবশ্যক নয়। আপন মোর্শেদের সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর প্রতি আদব, ভক্তি, মহব্বত, বিশ্বাস রেখে কঠোর সাধনা এবং তাঁরই গোলামির মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি লাভ করা যায়, এই সদ্গুণগুলো ব্যতীত আত্মশুদ্ধি লাভের কোনো বিকল্প পথ নেই। মোর্শেদের শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে একজন ব্যক্তি শুধু আত্মশুদ্ধি নয়, বরং সে ক্বালবে আল্লাহর জ্বিকির জারি করতে সক্ষম হয়, একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায় করতে সক্ষম হয়। এই ৩টি গুণ যার মাঝে রয়েছে, তিনিই সফল। এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেন- “নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পেরেছে, তার প্রতিপালকের নামে জিকির করে ও সালাত কায়েম করে।” (সূরা আল আ’লা ৮৭ : আয়াত ১৪ ও ১৫)
এই শিক্ষা ৩টি মোর্শেদের সহবতে থেকেই মুরিদকে অর্জন করতে হয়। এই শিক্ষা ৩টি নবি-রাসুলগণও তাঁদের অনুসারীদেরকে দিয়েছেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান প্রদত্ত মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফা যথাযথভাবে আমলের মাধ্যমে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ হযরত রাসুল (সা.)-এর পরিচয় লাভ করে আশেকে রাসুল হওয়ার সুমহান মর্যাদা লাভ করতে সক্ষম হচ্ছেন। জগৎশ্রেষ্ঠ এই মহামানব বর্তমান যুগের শ্রেষ্ঠ ইমাম। হযরত রাসুল (সা.) যুগের তথা ইমামের সান্নিধ্যে যাওয়ার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দান করেন।
এই প্রসঙ্গে আল্লাহ্র রাসুল (সা.) বলেন- “যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে, কিন্তু সে তার যুগের ইমামের পরিচয় লাভ করতে পারেনি, সে জাহেলি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।” (মুসনাদে ইমাম জাফর সাদেক, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৮ ও ৫১৯)
সুতরাং মানুষকে আল্লাহর প্রতিনিধির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য যুগের ইমামের সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর মুরিদ হওয়া অত্যাবশ্যক। কেননা যুগের ইমাম প্রজ্বলিত নুর মুরিদের ক্বালবে প্রবেশ করিয়ে দেন, ফলে ষড়রিপুর বেড়াজালে আবদ্ধ আত্মার কুরিপুসমূহ দমন হয়ে থাকে। তাই যুগের ইমামের সহবত হলো সাধনার পথে উন্নতির সর্বোত্তম মাধ্যম।
এই প্রসঙ্গে বিখ্যাত সাধক জালাল উদ্দিন রুমী (রহ.) বলেন, “এক জামানা সহবতে বা আওলিয়া, বেহেতের আজসাদ সালাতাতে বেরিয়া” অর্থাৎ- “এক মুহূর্ত কোনো অলী-আল্লাহর সহবতে থাকা একশত বছরের অহংকার মুক্ত ইবাদতের চেয়ে উত্তম।” মূলত একজন মুরিদের পাপ মোচনের সর্বোত্তম পন্থা হচ্ছে আপন মোর্শেদের সহবতে থাকা। এ প্রসঙ্গে জনৈক সাধক বলেন, “মোর্শেদের নেক দৃষ্টিতে (তাওয়াজ্জোহ্তে) যত পাপ ঝরে, মুরিদের কি সাধ্য আছে তত পাপ করে!”
ইমান নিয়ে কবরে যাওয়ার জন্য মোর্শেদের সহবত যে কতটা অপরিহার্য, তা বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে জগদ্বাসীর নিকট প্রকাশিত হয়েছে। ইমাম ড. সৈয়দ আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) তাঁর অনবদ্য তাসাউফের কিতাব ‘মোর্শেদের দরবারে মুরীদের করণীয়’-২য় সংস্করণের ১৪০ নং পৃষ্ঠায় মোর্শেদের সহবতের গুরুত্ব সম্পর্কিত একটি ঘটনা উপস্থাপন করেছেন, নিম্নে তা হুবহু তুলে ধরা হলো-
“জগত বিখ্যাত আলেম ইমাম ফখরুদ্দীন রাজী বুঝতে পারলেন যে, মোকামে¥ল মোর্শেদ বিহনে ইমান নিয়ে কবরে যাওয়া সম্ভব নয়। তাই তিনি তৎকালীন যুগের বিখ্যাত অলী-আল্লাহ্ হযরত ইমাম সানজালি (রহ.)-এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করতে গেলেন। কিন্তু ইমাম সানজালি (রহঃ), ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ)-এর জাহেরী এলেমের কথা শুনে তাকে মুরীদ করলেন না। তিনি বললেন’, “বাবা! আপনি বড় আলেম, আপনাকে মুরীদ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আপনার মধ্যে এলেমের অহংকার আছে। তিনি আরও বললেন, আপনাকে আমি এক শর্তে মুরীদ করতে পারি, আপনি এক বছর কোনো এলেম চর্চা না করে নির্জন গভীর জঙ্গলে মোরাকাবা-মোশাহেদা করে কাটাবেন।’ এ কথা শুনে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি মনে মনে ভাবলেন, আমাকে এলেম চর্চা করতে নিষেধ করেছেন, কিন্তু লিখতে তো নিষেধ করেননি। তাই তিনি সঙ্গে কাগজ-কলম নিয়ে নির্জন জঙ্গলে চলে গেলেন এবং সেখানে বসে পবিত্র কুরআনের তাফসীর লিখলেন। এই তাফসীরই ‘তাফসীরে কাবির’ নামে খ্যাত। এক বছর পরে তাফসীরের পাণ্ডুলিপি নিয়ে তিনি হযরত ইমাম সানজালি (রহঃ)-এর কাছে উপস্থিত হলেন। তাঁকে পাণ্ডুলিপিখানা দিলে তিনি বললেন, ‘বাবা! আপনাকে আমি এলেম কমাতে বলেছিলাম, কিন্তু আপনি তা আরো বাড়িয়ে এসেছেন। সুতরাং আপনাকে মুরীদ করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ এ কথা শুনে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ) মনক্ষুণ্ন হয়ে চলে গেলেন।
মৃত্যুর সময় প্রতিটি মানুষকে ঈমানী পরীক্ষা দিতে হয়। ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ) এলেমের অহংকারের বশবর্তী হয়ে ভাবলেন, ইমাম সানজালি (রহঃ) যেহেতু আমাকে তাঁর মুরীদ করলেন না, আমার মোর্শেদের প্রয়োজন নেই। তিনি শরীয়ত তথা কিতাবী বিদ্যা দিয়েই ঈমানী পরীক্ষায় পার হতে পারবেন, এ বিশ্বাসে আল্লাহর একত্ববাদের ৩৬০ খানা দলিল মুখস্থ করলেন।
মৃত্যুর সময় তাঁর ঈমানী পরীক্ষা শুরু হলে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ) এক এক করে আল্লাহর একত্ববাদের উপর দলিল দিতে শুরু করলেন। সেসময় শয়তান তাঁর প্রতিটি দলিল খণ্ডন করলে তিনি অসহায় হয়ে পড়েন। অতঃপর তাঁর মুখস্থ করা দলিল একে একে শেষ হয়ে গেল। অবশেষে শয়তান আরও একখানা দলিল দিয়ে পুনরায় প্রমাণ করল যে, আল্লাহ্ একাধিক। এমতাবস্থায় জগৎ বিখ্যাত আলেম ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ)-এর আমিত্ব, অহংকারের সকল বাঁধ ভেঙে গেল, তাঁর মধ্যে অনুশোচনার সৃষ্টি হলো। তিনি দু চোখের পানি ফেলে বলতে লাগলেন- ‘হায় আফসোস! হায় আফসোস! আমার এলেম আজ আমাকে মুক্তি দিতে পারল না। হায়রে! আজ যদি আমার মোর্শেদ থাকত, তাহলে আমাকে ঈমানহারা হয়ে কবরে যেতে হতো না।’ তখন তিনি অসহায় নিরুপায় হয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে ইমাম সানজালি (রহঃ)-এর দয়া কামনা করলেন।
মোর্শেদ অন্তর্যামী, শত সহস্র মাইল দূরে থেকেও মুরীদের খবর তিনি রাখেন। ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ)-এর মৃত্যু শয্যার চোখের পানি দেখে ইমাম সানজালি (রহঃ)-এর অন্তরে দয়ার উদ্রেক হলো। তখন তাঁর মনে পড়ল সেদিনের কথা, যেদিন ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ) তাঁর নিকট এসেছিলেন মুরীদ হওয়ার জন্য কিন্তু তিনিইতো তাকে মুরীদ করেননি। আজ জগৎ বিখ্যাত আলেম মোর্শেদ বিহনে ঈমান হারা হয়ে কবরে যাচ্ছে, এই ভেবে ইমাম সানজালি (রহঃ) আর স্থির থাকতে পারলেন না।
ঠিক ঐ সময় ইমাম সানজালি (রহঃ) ওযু করছিলেন এবং কয়েকশত মাইল দূর থেকে অন্তরের চোখ দিয়ে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ) ও শয়তানের বাদানুবাদ দেখছিলেন। শয়তানের কাছ থেকে মুরীদকে রক্ষা করার জন্য তিনি তাঁর ওযুর ঘটি শয়তানের দিকে নিক্ষেপ করে বললেন- ‘হে ফখরুদ্দীন! বলো, বিনা দলিলে আমার আল্লাহ্ এক।’
মোর্শেদের নিকট থেকে এ নির্দেশ পাওয়া মাত্র ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ) শয়তানকে বললেন, ‘আমার মোর্শেদের দোহাই দিয়ে বলছি! বিনা দলিলে আমার আল্লাহ্ এক।’ এ কথা বলা মাত্র শয়তান বলল,
‘হে ফখরুদ্দীন আজ যদি তোমার মোর্শেদ ইমাম সানজালি (রহঃ) তোমার পাশে না থাকতেন, তাহলে আমি শয়তান দেখতাম, তুমি কিভাবে ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করো।’ জীবনের এই চরম অন্তিম মুহূর্তে আল্লাহ্র বন্ধু ইমাম সানজালি (রহঃ)-এর দয়া পেয়ে ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ)-এর দুচোখ দিয়ে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় জীবনের শেষলগ্নে শরিয়তের আলেম ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ) উপলব্ধি করতে পারলেন যে, একমাত্র মোর্শেদই পারেন মুরীদের মৃত্যুর সময় বেঈমান হয়ে মরে যাওয়া থেকে মুরীদকে রক্ষা করতে।
প্রিয় পাঠক! ভেবে দেখুন, বিখ্যাত আলেম হযরত ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ)-এর মতো ব্যক্তির যদি ঈমান নিয়ে কবরে যাওয়ার জন্য মোর্শেদের সাহায্য ও দয়ার প্রয়োজন হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের অবস্থা কী হতে পারে? আসলে মোকাম্মেল অলী-আল্লাহ্ বা মোর্শেদের সোহবতে না গেলে কারো পক্ষেই ঈমান নিয়ে কবরে যাওয়া সম্ভব নয়।
উল্লেখ্য যে, ইমাম ফখরুদ্দীন রাজি (রহঃ) মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তাঁর মোর্শেদ ইমাম সানজালি (রহঃ)-এর দয়ায় বদৌলতে ঈমানের পরীক্ষায় কৃতকার্য হয়েছেন, ঘটনাটি তিনি জাতিকে জানানোর জন্য দয়াময় আল্লাহ্র নিকট আরজ করলেন, ‘হে দয়াময় খোদা! আপনি দয়া করে কিছুটা সময় আমাকে দান করুন, যেন আমি জাতিকে মহান মোর্শেদের সান্নিধ্যে যাওয়া প্রতিটি মানুষের জন্য যে অপরিহার্য, তা জানাতে পারি।’ দয়াময় খোদা তাঁর প্রার্থনা কবুল করলেন এবং মৃত্যুর পূর্বে আপন মোর্শেদের নেকদৃষ্টি ও দয়ার কথা তিনি জাতিকে বিস্তারিত বলে গেলেন।
বিখ্যাত আলেম হযরত ফখরুদ্দিন রাজী (রহ.)-এর এই ঘটনাটি থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, মোর্শেদের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমাদের সকলকে যুগের শ্রেষ্ঠ ইমাম মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-খোদা (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের সান্নিধ্যে এসে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সত্যিকার আশেকে রাসুল হওয়ার তওফিক দান করুন। আমিন।
[লেখক: সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ]