অলী-আল্লাহ্গণ জগতের জন্য রহমতস্বরূপ
ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা
‘অলী-আল্লাহ্’ আরবি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে আল্লাহর বন্ধু। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে নবি-রাসুলগণ সমকালীন যুগের মানুষকে হেদায়েতের পথ দেখিয়েছেন। তাঁরা প্রত্যেকেই ছিলেন আল্লাহর বন্ধু। সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব হযরত রাসুল (সা.)-এর পর থেকে নবুয়তের যুগ সমাপ্ত হয়েছে এবং খুলে গেছে বেলায়েত বা বন্ধুত্বের দ্বার। এ যুগের হেদায়েতের কাণ্ডারী হলেন অলী-আল্লাহ্গণ। অলী-আল্লাহ্গণের মর্যাদা স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালাই দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে “সাবধান! নিশ্চয়ই আল্লাহর অলীগণের কোনো ভয় নেই এবং তাঁরা দুঃখিতও হবেন না।” (সূরা ইউনুস-১০ : আয়াত ৬২)
এ বিশ্বজাহানে সৃষ্টির প্রথম থেকেই অলী-আল্লাহ্ ছিলেন, বর্তমানেও আছেন এবং ভবিষ্যতেও থাকবেন। এক কথায়, কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহর সৃষ্টিজগৎ পরিচালনার ক্ষেত্রে অলী-আল্লাহ্গণ বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছেন। মহান সংস্কারক মোহাম্মদী
ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (২য় খণ্ড) আল্লাহর গুণাবলির পরিচয় খণ্ডে (৮০২ থেকে ৮০৮ পৃষ্ঠা পর্যন্ত) অলী-আল্লাহ্গণের শ্রেণী বিন্যাস করে তাঁদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন। তিনিই প্রথম মহামানব, যিনি অলী-আল্লাহ্গণ কীভাবে আল্লাহর সৃষ্টিজগত পরিচালনার দায়িত্বে আত্মনিয়োগ করছেন, তার বিস্তারিত বিবরণ মানবজাতির কাছে তুলে ধরেছেন। ফলে মানুষ অলী-আল্লাহ্গণের মর্যাদা সম্পর্কে জানার সুযোগ পাচ্ছেন।
‘তাজকেরাতুল আউলিয়া’ থেকে জানা যায়, অলী-আল্লাহ্গণের মর্যাদা এত বেশি যে, তাঁরা যখন কবরস্থানের নিকট দিয়ে হেঁটে যান, তাঁদের সম্মানে বিনা প্রার্থনায় মহান আল্লাহ্ ঐ কবরস্থানের মৃত ব্যক্তিদের কবর আযাব মাফ করে দিয়ে থাকেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, অলী-আল্লাহর মর্যাদা আল্লাহর কাছে কত বেশি। আমাদের এ দেশে সুদূর আরব এবং পারস্য থেকে
অলী-আল্লাহ্গণ আগমন করেছেন। অলী-আল্লাহ্গণের অলৌকিক ঘটনা এবং তাঁদের আদর্শ দেখে বিধর্মীরা ইসলাম গ্রহণ করেছে। হযরত শাহজালাল (রহ.) আরবের ইয়েমেন থেকে সিলেটে আসেন। তখনকার হিন্দু রাজা গৌর গোবিন্দ সুরমা নদীর সকল নৌকা বন্ধ করে দিলেও আল্লাহর অলী হযরত শাহজালাল (রহ.) ৩৬০ জন ভক্তসহ জায়নামাজে বসে অলৌকিকভাবে নদী পার হয়ে আসেন এবং সেখানে ইসলাম প্রচার করেন। হযরত শাহ মখদুম রূপোশ (রহ.) কুমিরের পিঠে চড়ে পদ্মা নদী পাড়ি দিয়ে রাজশাহী আসেন এবং ইসলাম প্রচার করেন। হযরত খানজাহান আলী (রহ.) অলৌকিক শক্তি দিয়ে নদীতে পাথর ভাসিয়ে এনে বাগেরহাটে ষাট গম্বুজ মসজিদ নির্মাণ করেন। ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর পূর্বপুরুষও আরব হতে এদেশে এসে ইসলাম প্রচার করেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের পূর্বপুরুষ আরবের কাতার হতে এদেশে এসে ইসলাম প্রচার করেছেন। যার ধারা আজও অব্যাহত রয়েছে।
আমাদের একটা বদ্ধমূল ধারণা এই যে, আমরা কুরআন-হাদিস পড়ব, নামাজ-রোজা পালন করব, অলী-আল্লাহর কাছে যাওয়ার প্রয়োজন কী?
আমরা জানি, ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে ৫টি। যথা-কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত। মুখে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’ বললে কালেমা পাঠ করা হয় বটে, কিন্তু কালেমার বাস্তবতা উপলব্ধি করা যায় না। এজন্য প্রয়োজন অলী-আল্লাহর কাছে গিয়ে কালেমা পড়া। তাহলে কালেমার বাস্তবতা উপলব্ধি করা সম্ভব হবে। তেমনিভাবে হাকিকতে নামাজ, রোজা, হজ এবং যাকাতের শিক্ষা লাভ করতে হলে মহামানবগণের সান্নিেেধ্য যাওয়া একান্ত প্রয়োজন। তাঁরা মানুষকে প্রেমপূর্ণ ইবাদতের শিক্ষা দিয়ে থাকেন, যাতে করে মানুষ মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভ করতে পারে। সুফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান রাসুল (সা.)-কে শুধু ভালোবাসার শিক্ষাই দেন না, মানুষকে রাসুল (সা.)-এর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁর নিকট আসলে ধর্মের পাঁচটি রোকন যথা- কালেমা, নামাজ, রোজা, হজ ও যাকাত হাকিকতের সাথে পালন করা সম্ভব।
কালেমা হলো- “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মোহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।” অর্থাৎ- আল্লাহ্ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, হযরত মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল। এ কালেমা শুধু মুখস্থ করলেই আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-এর প্রতি ইমান আনা হয় না। আল্লাহ্ এবং রাসুল (সা.)-কে চিনে ইমান আনতে হবে। আর যিনি চিনেন, তাঁর নিকট গিয়েই চিনতে হবে। এজন্য আমাদের মহান মোর্শেদ সুফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মানুষের ক্বালবে ‘আল্লাহ্’ নামের জ্বিকির জারি করে ইমানের বীজ বপন করে দেন। ফলে মানুষ আল্লাহ্ এবং হযরত রাসুল (সা.)-কে চিনে ইমান আনতে সক্ষম হয়। অনুরূপভাবে, একাগ্রতা বা হুজুরি দিলের সাথে হাকিকতে নামাজ আদায়ের শিক্ষা সূফী সম্রাটের নিকট থেকেই পাওয়া যায়। আমরা নামাজে দাঁড়ালে দুনিয়াবী যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা মনে আসে।
হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- “লা সালাতা ইল্লাবি হুজুরীল ক্বালব।” অর্থাৎ- একাগ্রতা বা হুজুরি দিল বিহনে নামাজ শুদ্ধ হয় না। তাই অলী-আল্লাহ্গণ একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায়ের শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
নামাজ সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন- “আসসালাতু মে’রাজুল মু’মেনীন।” অর্থাৎ- নামাজ মু’মেন ব্যক্তির জন্য মেরাজ।
উহুদ যুদ্ধে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু-এর দেহ মোবারকে ১৬টি ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল এবং তাঁর কদমপাকে তির
বিদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে যখন সাহাবিরা তাঁর কদম মোবারক থেকে তির বের করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু অসহ্য যন্ত্রণার কারণে তিরে হাত দেওয়া যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায় হযরত রাসুল (সা.) সাহাবিদের বললেন, আলী যখন নামাজরত অবস্থায় থাকবে, তখন তোমরা তাঁর পায়ের তির বের করবে। পরবর্তীতে দেখা গেল, হযরত আলী (রা.) যখন নামাজ আদায় করছিলেন, ঠিক সেই সময় সাহাবিরা তাঁর কদম মোবারক থেকে তির বের করে আনলেন, অথচ হযরত আলী (রা.) বিন্দুমাত্র টের পেলেন না। এতটা হুজুরি দিল অর্থাৎ একাগ্রচিত্তে তিনি নামাজ আদায় করছিলেন যে, নামাজে মহান প্রভুর এশকে দেওয়ানা হয়ে প্রভুকে হাজির-নাজির জেনে নামাজ আদায় করছিলেন। অলী-আল্লাহর শিক্ষা বিহনে এরূপ হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করা সম্ভব নয়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শিক্ষানুযায়ী নামাজ আদায় করলে এর বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়। একইভাবে আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান হাকিকতে রোজা পালনের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। শুধু পানাহার, পাপাচার, কামাচার থেকে বিরত থেকে নয়, বরং পানাহার, কামাচার ও পাপাচারের চিন্তামুক্ত হয়ে আল্লাহ্ এবং রাসুল (সা.)-এর ধ্যানে থেকে হাকিকতে রোজা পালনের শিক্ষা দেন। তিনি রোজাকে ৩টি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছেন।
যথাক্রমে-
১। সাধারণ মানুষের রোজা;
২। মধ্যম শ্রেণির রোজা ও
৩। উত্তম শ্রেণির রোজা তথা অলী-আল্লাহ্গণের রোজা।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, শুধুমত্র পানাহার ও কামাচার থেকে বিরত থাকা হলো সাধারণ মানুষের রোজা। পানাহার ও কামাচার পরিত্যাগ করে যাবতীয় পাপের কল্পনা থেকে মনকে পবিত্র রাখা হলো মধ্যম শ্রেণির রোজা। পানাহার ও কামাচার
পরিত্যাগ করত যাবতীয় পাপের কল্পনা থেকে মনকে পবিত্র রেখে সর্বক্ষণ আল্লাহর স্মরণে নিমগড়ব থাকাকে উত্তম শ্রেণির রোজা বলে। কিন্তু রোজা আল্লাহর দরবারে কবুল না হলে সারাদিনের উপবাস বৃথা যাবে। কীভাবে রোজা পালন করলে আল্লাহ্ কবুল
করবেন, অলী-আল্লাহ্গণ সেই পদ্ধতি শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অলী-আল্লাহর সান্নিধ্য ব্যতীত হাকিকতে রোজা পালন সম্ভব নয়। তাই সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের শিক্ষা মোতাবেক রোজা পালন করলে তার পুরস্কারস্বরূপ আল্লাহ্কে লাভ করা যায়। হাদিসে কুদসিতে রোজা সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন “আসসাওমু লী ওয়া আনা আযযী বিহী।” অর্থ: রোজা আমার জন্য এবং আমিই তার প্রতিদান।
‘হজ’ হচ্ছে ইসলামের চতুর্থ স্তম্ভ। মূলত মহামানবগণের অনুসরণের শিক্ষা হৃদয়ে ধারনের জন্যই হজ পালন করতে হয়। তাই আজও মহামানবগণের অনুসরণে বিশে^র মুসলমানগণ হজ পালন করে থাকেন। হাজরে আসোয়াদ বা কালো পাথরে হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর কদম মোবারকের স্পর্শ লেগেছিল। তাঁর সম্মানে হাজিরা আজও উক্ত পাথরে গুনাহ মাফের আশায় চুম্বন করে থাকেন। হযরত মা হাজেরা (আ.) স্বীয় পুত্রের জন্য পানি সংগ্রহের উদ্দেশ্যে সাফা-মারওয়া দৌড়িয়ে ছিলেন। হাজিরা আজও তাঁকে অনুসরণ করে সাফা-মারওয়া দৌড়িয়ে থাকেন। হযরত রাসুল (সা.) জাবালে রহমতে দাঁড়িয়ে আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত সাহাবিদের উদ্দেশে বিদায় হজের খুৎবা প্রদান করেছিলেন। এখনো হাজিরা তাঁকে অনুসরণের জন্য আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাঁর পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে কোরবানি করতে প্রস্তুত হয়েছিলেন।
আল্লাহর অশেষ মেহেরবাণিতে হযরত ইসমাঈল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়। তাঁর অনুকরণে আজও হাজিরা মিনায় গিয়ে কোরবানি করে থাকেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, হজের মাধ্যমে মহামানবগণের অনুকরণ ও অনুসরণের শিক্ষাই আল্লাহ্ তায়ালা মানবজাতিকে দিয়ে থাকেন।
‘যাকাত’ ইসলামের পঞ্চম স্তম্ভ। যাকাত প্রদানকারী ব্যক্তির ধন-সম্পদ পবিত্র হয়ে যায়। অপরদিকে, মানুষকে আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভের যে শিক্ষা অলী-আল্লাহ্গণ দিয়ে থাকেন সেটাও এক প্রকারের যাকাত বলে গণ্য। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের দরবার শরীফ আল্লাহ্কে পাওয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে ধনী-গরিবের মাঝে কোনো বৈষম্য নেই। বান্দা
যেমন নিজেকে আল্লাহর সম্মুখে নিকৃষ্ট গোলাম মনে করে, ঠিক তেমনিভাবে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের দরবারে ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সকল শ্রেণি-পেশার মানুষ এক কাতারে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্কে পাওয়ার শিক্ষা গ্রহণ করে থাকেন, মোর্শেদের দরবারে বৈষম্যহীন শিক্ষার মাধ্যমে সকল স্তরের মানুষের সাথে সৌহার্দ্য ও ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। যাকাতের প্রকৃত শিক্ষাটি অর্থাৎ ধনী-
গরিবের বৈষম্য দূর করার শিক্ষা সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান দিয়ে থাকেন। এক কথায়, অলী-আল্লাহ্গণের সমস্ত শিক্ষাই মানবজাতির জন্য অতীব কল্যাণকর ও বরকতময়।
যাকাত হলো ধনীর সস্পদ গরিবদের মাঝে বণ্টন করা। সমাজে যাতে ধনী-গরিবের বৈষম্য দূর হয়ে সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা হয়, এজন্যই যাকাতের বিধান দেওয়া হয়েছে। যাতে করে ধনী-গরিবে কোনো ভেদাভেদ না থাকে। অলী-আল্লাহ্গণ হলেন আল্লাহর বন্ধু এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর উত্তরসূরি। তাঁদের আদর্শ ও শিক্ষা মানুষকে চরিত্রবান করে গড়ে তোলে। ফলে মানুষ
হতে পারে আল্লাহ্ প্রেমিক। অপরদিকে, তাঁরা হলেন রাসুল (সা.)-এর উত্তরসূরি তথা সিরাজাম মুনিরার ধারক ও বাহক। তাই তাঁদের শিক্ষা গ্রহণ করলে মানুষ হতে পারে আশেকে রাসুল। জাগতিক শিক্ষার জন্য স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসা রয়েছে, কিন্তু আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-কে পাওয়ার কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো অলী-আল্লাহর দরবার শরীফ মসজিদ ও মাদ্রাসায় শিক্ষা দেওয়া হয় এলমে শরিয়ত বা জাহেরি এলেম। পক্ষান্তরে, অলী-আল্লাহ্গণ এলমে মারেফতের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। হযরত
রাসুল (সা.) বলেছেন- “আস শারীয়াতু আকওয়ালী, ওয়াতারীক্বাতু আফ’আলী ওয়াল হাকীকাতু আহওয়ালী ওয়াল মা’রিফাতু আসরারী।” অর্থাৎ- শরিয়ত আমার কথা, তরিকত আমার কাজ, হাকিকত আমার অবস্থা এবং মারেফত আমার নিগূঢ় রহস্য।
শরিয়তের শিক্ষার জন্য দেশ-বিদেশে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে বটে, কিন্তু মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে পাওয়ার শিক্ষা তা হচ্ছে এলমে তাসাউফ। এ তাসাউফ শিক্ষার জন্য অলী-আল্লাহ্গণের দরবারে যাওয়া একান্ত অপরিহার্য। কেননা অলী-আল্লাহ্গণ একদিকে যেমন এলমে শরিয়তের শিক্ষায় শিক্ষিত, অপরদিকে তাঁরা এলমে মারেফতের গভীর জ্ঞানে জ্ঞানী।
তাই তাঁদের সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁদের আদর্শ গ্রহণ করে একজন মানুষ হতে পারে আল্লাহ্ওয়ালা এবং আশেকে রাসুল। আমাদের মহান মোর্শেদ মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পাশাপাশি হযরত রাসুল (সা.)-এর চরিত্রে চরিত্রবান করার জন্য
আত্মশুদ্ধি, দিল জিন্দা, নামাজে হুজুরি ও আশেকে রাসুল হওয়ার শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে মহান রাব্বুল আলামিন এরশাদ করেন- “তারাই সফলকাম যারা আত্মা শুদ্ধ করেছে, প্রভুর নামে জি¦কির করে ও নামাজ কায়েম করে।” (সূরা আ’লা- ৮৭ : আয়াত ১৪-১৫)
মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের সুমহান শিক্ষা নিমেড়ব সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হলো-
১। আত্মশুদ্ধি: এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- ‘‘যে ব্যক্তি আত্মাকে পুতঃপবিত্র রাখল, সে সাফল্য লাভ করলো। আর যে ব্যক্তি আত্মাকে কলুষিত করলো, সে ধ্বংস হয়ে গেল।” (সূরা শামস-৯১ : আয়াত ৯-১০) পবিত্র কুরআনে অন্যত্র বর্ণিত হয়েছে- “সেই দিন (কেয়ামত) ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোনো উপকারে আসবে না কেবল সেই ব্যক্তি লাভবান হবে, যে আল্লাহর নিকট পরিশুদ্ধ হৃদয় (আত্মা) নিয়ে হাজির হবে (সূরা শুআরা-২৬ : আয়াত ৮৮-৮৯) এজন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মানুষকে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর ওয়াজিফা আমলের মাধ্যমে আত্মিক পরিশুদ্ধতা অর্জন করে আদর্শ চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দিয়ে থাকেন।
২। দিল জিন্দা: সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অন্যতম শিক্ষা দিল জিন্দা বা ক্বালবে আল্লাহর জি¦কির জারি করা। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “যাদের ক্বালব আল্লাহর জি¦কির থেকে গাফেল রয়েছে, তারা প্রকাশ্য গোমরাহ বা পথভ্রষ্ট।” (সূরা যুমার-৩৯ : আয়াত ২২) তাই সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মানুষকে ক্বালবে আল্লাহর জি¦কির জারির
শিক্ষা দিয়ে গোমরাহি থেকে উদ্ধার করে ইমানের পথে চলার শিক্ষা দেন। মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন- “তোমরা যখন নামাজ শেষ করো তখন দাঁড়ানো, বসা ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহর জি¦কির করো।” (সূরা নিসা-৪ : আয়াত ১০৩)
মহান রাব্বুল আলামিনের এ নির্দেশ পালন করে মানুষ যেন সর্বসময় ক্বালবে আল্লাহর জি¦কির জারি রেখে অজ্ঞান অবস্থায়ও ইমানের সাথে মৃত্যুবরণ করতে পারে, এজন্য তিনি মানুষকে সার্বক্ষণিকভাবে ক্বালবে আল্লাহর জি¦কির জারির শিক্ষা দেন।
সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান দিল জিন্দার প্রয়োজনীয়তা সম্বন্ধে ‘আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ পথ’- গ্রন্থে একটি ঘটনা উল্লেখ করেন। নিম্নে তা উপস্থাপন করা হলো-
এক দেশে একজন বিখ্যাত আলেম ছিলেন। তিনি দেশ-বিদেশে ওয়াজ নসিয়ত দ্বারা নাম করেছিলেন। ওয়াজ নসিয়ত করে তিনি হাজার হাজার লোককে ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছিলেন। কিন্তু তিনি কোনো অলীয়ে কামেলের সংস্রবে থেকে নিজের আত্মাকে জিন্দা করার প্রয়োজন মনে করতেন না। ঘটনাক্রমে তিনি এক অন্ধকার রাতে এক স্থানে ওয়াজ মাহফিল শেষ করে গৃহে ফিরে যেতে ইচ্ছা করলেন। মাহফিলের উদ্যোক্তারা তাকে রাতে ফিরে যেতে নিষেধ করে বললেন, হুজুর! দিনকাল ভালো
না। আপনি এ অন্ধকার রাতে একা একা যাবেন না। রাস্তার পাশেই শ্মশান খোলা আছে। ওখানে অন্ধকার রাতে লোক ভয় পেয়ে থাকে। এমনকি অনেককে ভূতে ভয় দেখিয়েছে। মাওলানা সাহেব গম্ভীর স্বরে বললেন, আরে মিয়ারা! আমার কাছে ভূত
আসতে সাহস পাবে না। যদি ভুলক্রমে এসেও পড়ে, দোয়া পড়ে তাদেরকে পুড়িয়ে ফেলবো। ভূত আমার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না। এ কথা বলে মাওলানা সাহেব অন্ধকার রাতে একা একা বাড়ির দিকে রওয়ানা হলেন। তিনি যখন একা একা পথ চলতে লাগলেন এবং চিন্তা করতে লাগলেন, সত্যিই কি মানুষকে শ্মশান খোলায় ভূতে ধরে? ভূতের কথা বারবার মনে পড়ে তাকে দুর্বল ও ভীত করে তুললো।
মাওলানা সাহেব দোয়া দরূদ পড়ে নিজের শরীরে ফুঁ দিয়ে শরীর বন্ধ করলেন এবং ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে অতি কষ্টে পথ চলতে লাগলেন। ঐ শ্মশান খোলার পাশেই নানা রকম ঘাস জন্মাতো। তাই কোনো এক লোক তার ঘোড়াকে সেখানে ঘাস খাওয়ার জন্য বেঁধে রেখেছিল। মাওলানা সাহেব ঐ ঘোড়ার পাশ দিয়ে রাস্তা অতিক্রম করার সময় মানুষ দেখে মনিব মনে করে ঘোড়া জোরে চিৎকার করে ডাক দিয়ে উঠলো। মাওলানা সাহেব পিছনে ফিরে সাদা একটা ঘোড়ার মূর্তির মতো দেখতে পেলেন এবং
তাকে ভূত ভেবে চিৎকার দিয়ে বেহুঁশ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলেন। এমনকি কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাঁর জ্ঞানও ফিরে আসেনি। অন্ধকার রাতে একটি সাদা ঘোড়াকে দেখে যদি একজন আলেম সাহেব আল্লাহ্ নামের ‘আ’ শব্দটি উচ্চারণ করেই বেহুঁশ হয়ে
পড়ে যান, তাহলে মৃত্যুর সময় মালাকুল মউত আজরাঈলের ভয়ংকর চেহারা দেখে কীভাবে সে পুরো কালেমা পড়ে ইমানের সাথে মৃত্যুবরণ করবে?
পুঁথিগত বা জাহেরি বিদ্যা দিয়ে আল্লাহ্ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায় কিন্তু ইমান নিয়ে কবরে যাওয়া যায় না। ইমান নিয়ে কবরে যেতে হলে অলী-আল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে ক্বালবে আল্লাহ্ নামের জি¦কির জারি করত নিজ হৃদয়ে আল্লাহ্কে ধারণ করতে পারলে অর্থাৎ- যে ব্যক্তির হৃদয়ে আল্লাহ্ আছেন, সেই ইমানদার হয়ে কবরে যেতে পারেন।
পাঠকগণ! একটু চিন্তা করে দেখুন। এত বড়ো বিখ্যাত আলেম হওয়া সত্ত্বেও তিনি কাল্পনিক ভূতের ভয়ে জাহেরি এলেম ও দোয়া-দরূদ সব ভুলে বেহুঁশ হযে পড়ে গেলেন। আর মৃত্যুর সময় কী করে মালাকুল মউত আজরাঈল (আ.)-এর বিকট মূর্তির সামনে মৌখিক জি¦কির মনে থাকবে? মৃত্যুর সময় এক হলো আজরাঈলের জান কবজের কষ্ট, অপরদিকে রোগের যাতনা,
ইবলিশের ধোঁকা দেওয়ার ভয়; এরূপ কঠিন সময় অধিকাংশ লোকই মৌখিক জি¦কির মনে রাখতে পারে না। কিন্তু যাদের ক্বালব বা দিলে আল্লাহ্ নামের জি¦কির জারি থাকে, তাদের আর বেইমান হয়ে মরার কোনো ভয় থাকে না।
৩। নামাজে হুজুরি: সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান মানুষকে একাগ্রচিত্তে নামাজ আদায়ের শিক্ষা দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- “লা সালাতা ইল্লা বি হুজুরীল ক্বালব।” অর্থাৎ- একাগ্রতা বা হুজুরি দিল বিহনে নামাজ শুদ্ধ হয় না। মূলত একাগ্রতাবিহীন নামাজ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। মুসলমানগণ যেন দুনিয়ার চিন্তা মুক্ত হয়ে একাগ্রতার সাথে আল্লাহ্ তায়ালাকে হাজির-নাজির জেনে নামাজ আদায় করতে পারেন, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সেই পদ্ধতি শিক্ষা দেন। তাঁর নিয়ম অনুসরণ করলে মুসুল্লিদের নামাজে দুনিয়ার কোনো চিন্তা আসে না। ফলে তারা নামাজে ফায়েজ-বরকত ও রহমত হাসিল করতে পারেন। হযরত রাসুল (সা.) বলেন- “আসসালাতু মে’রাজুল মু’মেনীন।” অর্থাৎ- নামাজ মু’মেন ব্যক্তির জন্য মেরাজ। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শিক্ষা অনুযায়ী নামাজ আদায়
করলে এ হাদিসের বাস্তবতা উপলব্ধি করা যায়।
একগ্রতা বিহীন নামাজের অবস্থা বর্ণনা করতে গিয়ে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান ‘আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহজ পথ’- গ্রন্থে একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যা নিমেড়ব উপস্থাপিত হলো ‘‘এক ব্যবসায়ী প্রতিদিন মাগরিবের নামাজ জামাতে আদায় করতেন। দীর্ঘ ১৫ বছর যাবৎ ঐ ব্যক্তি জামাতের সাথে একই ইমামের পেছনে নামাজ পড়তেন। ঘটনাμমে একদিন ইমাম সাহেব ভুল বশত মাগরিবের নামাজ ৩ রাকাত ফরজ নামাজের পরিবর্তে ২ রাকাত পড়ে সালাম ফিরান। এমন সময় পেছন হতে ব্যবসায়ী মুক্তাদি আওয়াজ দিয়ে বললেন, নামাজ আজ ২ রাকাত পড়া হয়েছে। তখন ইমাম সাহেব বললেন, নামাজ ৩ রাকাত পড়া হয়েছে। নামাজে ভুল হয়নি। প্রত্যুত্তরে ব্যবসায়ী মুসল্লি বললেন যে, হুজুর! আজ প্রায় ১৫ বছর যাবৎ আমি আপনার পেছনে নামাজ পড়ছি, এ শহরে আমার ৩ টি দোকান রয়েছে। আজ ১৫ বছর যাবৎ মাগরিবের নামাজের সময় ৩ রাকাত ফরজ নামাজে আমি আমার ৩টি দোকানের হিসাব মিলিয়ে থাকি। কিন্তু আজ আমি ২টি দোকানের হিসাব মিলিয়েছি। সুতরাং আপনি ২ রাকাত নামাজ পড়িয়েছেন।’’ এ ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয়ে যে নামাজে একাগ্রতা না থাকলে সে নামাজে দুনিয়াবি চিন্তা আসে। ফলে ঐ নামাজ আল্লাহর দরবারে কবুল হয় না। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শিক্ষা গ্রহণ করলে নামাজে কখনো একাগ্রতা নষ্ট হয় না বরং পরিপূর্ণ একাগ্রতা নিয়ে ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।
৪। আশেকে রাসুল হওয়া: দোজাহানের বাদশা হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবাসার নামই ইমান। তাই একজন মানুষ যেন হযরত রাসুল (সা.)-কে ভালোবেসে আশেকে রাসুল হওয়ার গৌরব অর্জন করতে পারেন, এজন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অন্যতম শিক্ষা হলো মানুষকে রাসুলের প্রেমিক বানানো। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “হে হাবিব! আপনি বলে দিন, তোমরা যদি আল্লাহ্কে ভালোবাসতে চাও, তবে আমার অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ্ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দিবেন।” (সূরা আলে ইমরান-৩ : আয়াত ৩১)
হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- “যে ব্যক্তি নিজের জান-মাল, পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি সব মানুষের চেয়ে আমাকে বেশি ভালো না বাসবে সে মু’মেন হতে পারবে না।” বোখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ)
এজন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর মুরিদ সন্তানদের হযরত রাসুল (সা.)-এর মহব্বত হাসিল করার জন্য প্রতিদিন ৭২২ বার দরূদ শরীফ এবং রহমতের সময় অর্থাৎ তাহাজ্জুদের ওয়াক্ত ও এশার ওয়াক্তের নামাজের পর মিলাদ শরীফ পাঠ করার
শিক্ষা দিয়ে থাকেন। মূলত একজন মানুষ সুফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে আশেকে রাসুল হওয়ার গৌরব অর্জন করেন। অলী-আল্লাহ্গণের সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য আল্লাহ্ তায়ালা স্বয়ং নির্দেশ প্রদান করেছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “হে বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো এবং আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্য অসিলা অন্বেষণ করো। (সূরা মায়েদা-৫ : আয়াত ৩৫)
মূলত অলী-আল্লাহ্গণ হলেন আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্য অসিলা স্বরূপ। পবিত্র কুরআনে আরো এরশাদ হয়েছে- “আর রাহমানু ফাসআল বিহি খাবিরা।” অর্থাৎ- তোমরা যদি রহমান (আল্লাহ্) সম্পর্কে জানতে চাও, তবে যিনি তাঁর সম্পর্কে জানেন তাকে জিজ্ঞেস করো। (সূরা ফুরকান-২৫ : আয়াত ৫৯) বন্ধুর পরিচয় যেমন বন্ধু জানেন, অনুরূপভাবে আল্লাহর পরিচয় জানেন অলী-আল্লাহ্ বা আল্লাহর বন্ধুগণ। আমাদের সমাজের এক শ্রেণির লোক অলী-আল্লাহ্গণের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করে না বরং নানাবিধ কটাক্ষ ও সমালোচনা করে থাকে। মূলত তারাই আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর দুশমন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্
ফরমান- “আমি (আল্লাহ্) যাকে পথভ্রষ্ট (গোমরাহ) করেছি, হে রাসুল! তার জন্য কোনো মোর্শেদকে আপনি অভিভাবক হিসেবে পাবেন না।” (সূরা কাহফ-১৮ : আয়াত ১৭) এ আয়াতের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পথভ্রষ্ট ব্যক্তির জন্য কোনো মোর্শেদ বা পথ প্রদর্শক নেই। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন মোর্শেদের গুরুত্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আরো ভিনড়ব ভিনড়ব আয়াত নাজিল করেছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “আমার সৃষ্টির মধ্যে এমন একটি সম্প্রদায় রয়েছে, যারা মানুষকে সৎ পথ দেখায় এবং ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করেন।” (সূরা আরাফ-৭ : আয়াত ১৮১)
মূলত এ সম্প্রদায় হলেন অলী-আল্লাহ্। আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বলেন- আমরা পরশ পাথরের কথা শুনেছি, যার সংস্পর্শে গেলে লোহা স্বর্ণে পরিণত হয়ে যায়। আসলে পরশ পাথর বলতে কোনো পাথর নেই। পরশ পাথর হলেন হযরত রাসুল (সা.)। তাঁর সান্নিধ্যে গিয়ে আরবের বর্বর মানুষগুলো আদর্শ চরিত্রের অধিকারী হয়ে সাহাবার মর্তবা লাভ করেছেন। অনুরূপভাবে, অলী-আল্লাহ্গণের সান্নিধ্যে গিয়ে পাপী-তাপী মানুষ আদর্শ চরিত্রের অধিকারী হতে পারে। কেননা অলী-আল্লাহ্গণ আল্লাহর অত্যন্ত প্রিয়জন এবং তাঁদের মর্যাদা অপরিসীম।
অলী-আল্লাহ্গণের সম্মান ও মর্যাদা সম্পর্কে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- “আল মু’মিনু আকরামু হুরমাতাম মিনাল কা’আবাতি।” অর্থাৎ- মু’মেন ব্যক্তি ক্বাবার চেয়েও সম্মানিত (আবু দাউদ শরীফ)
অলী-আল্লাহ্গণ জীবদ্দশাতে যেমন মানুষকে হেদায়েতের পথ দেখান, তেমনিভাবে ওফাত লাভের পরেও তাঁরা সমান ভাবেই মানুষের উপকার ও কল্যাণ করতে সক্ষম। সেই কারণেই মানুষ অলী-আল্লাহ্গণের রওজা ও মাজার শরীফ জিয়ারত করে।
আবার অনেকে জীবিত অলী-আল্লাহ্গণের দরবারে মানত করে যেমন উপকৃত হয়, তদ্রুপ কোনো অলী-আল্লাহর মাজারেও মানুষ মানত করে সমানভাবেই উপকৃত হয়ে থাকে। আমাদের এ উপমহাদেশে অসংখ্য অলী-আল্লাহর মাজার ও রওজা শরীফ রয়েছে। ‘মাজার’ অর্থ জিয়ারতের স্থান আর ‘রওজা’ অর্থ ফুলের বাগিচা। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- “আলা ইন্না আউলিয়াল্লাহি লা ইয়ামুতু।” অর্থাৎ- সাবধান! নিশ্বয়ই অলী-আল্লাহ্গণ অমর।
বাংলাদেশে যেমন সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজার, বাগেরহাটে হযরত খানজাহান আলী (রহ.)-এর মাজার, রংপুরে হযরত কারামত আলী জৈনপুরী (রহ.)-এর মাজার, রাজশাহীতে হযরত শাহ মখদুম (রহ.)-এর মাজার, ময়মনসিংহের ত্রিশালে ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর সহধর্মিণী হযরত সৈয়দা ছমিরুননেছা খানম বড় মা (রহ.)-এর রওজা শরীফ রয়েছে। ঢাকায় হযরত শাহ আলী বাগদাদী (রহ.)-এর মাজার, হযরত শরফুদ্দীন চিশতি (রহ.)-এর মাজার এবং মতিঝিলের বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বপাশের্^ বাবে মদীনায় সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান-এর সহধর্মিণী কুতুবুল আকতাব হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম দয়াল মা (রহ.)-এর রওজা শরীফ রয়েছে।
এছাড়া ভারতের আজমীরে হযরত খাজা মঈনউদ্দিন চিশতি (রহ.)-এর রওজা এবং পূর্ব পাঞ্জাবে হযরত শেখ আহম্মদ সেরহিন্দি মোজাদ্দেদ আলফেসানি (রহ.)-এর রওজা শরীফসহ অসংখ্য মাজার ও রওজা শরীফ রয়েছে।
অলী-আল্লাহ্গণের মর্যাদা আল্লাহর কাছে এত বেশি যে, যখন কোনো ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে কোনো অলী-আল্লাহর অসিলা ধরে ফরিয়াদ করে অথবা চরম বিপদে পড়ে মানত করে কান্নাকাটি করে, আল্লাহ্ তাঁর অলীর সম্মানের খাতিরে ঐ ব্যক্তির বিপদ দূর করে থাকেন। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান বলেন- অলী-আল্লাহ্গণ মানুষের হৃদয়ে আল্লাহর নুর প্রবেশ করিয়ে দিয়ে তার ক্বালবে আল্লাহ্ নামের জি¦কির জারি করে দেন। ফলে ঐ মানুষ ভালো কাজের প্রতি আগ্রহী হয় এবং পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে। ঐ মানুষটির দ্বারা সমাজের মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে। সুতরাং অলী-আল্লাহ্গণের সান্নিধ্যে গিয়ে মানুষ আত্মশুদ্ধি লাভ করতে পারে। অনুরূপভাবে, তাঁদের রওজা ও মাজার শরীফ জিয়ারত করেও লক্ষ লক্ষ মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে।
নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণের মাজারে গিয়ে এখনও মানুষ ভক্তি-বিশ্বাসের সাথে তাঁদের স্মরণ করে এবং তাঁদের অসিলা ধরে আল্লাহর কাছে প্রার্থনার মাধ্যমে মানুষের বিভিনড়ব বালা-মুছিবত দূর হয় এবং মনোবাসনা পূরণ হয়। কেননা অলী-আল্লাহ্গণ আমাদের মতো রক্ত-মাংসের মানুষ হলেও সাধনার মাধ্যমে তাঁরা আল্লাহর সত্তাকে আপন হৃদয়ে ধারণ করেন ও তাঁর বন্ধুত্ব অর্জনের ফলে অমরত্ব লাভ করেন। সুতরাং অলী-আল্লাহ্গণের রওজা ও মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে,
জিয়ারতকারী তাঁদের রূহানি ফায়েজ হাসিল করে অবারিত রহমত লাভ করে থাকে। অপরদিকে, সাধারণ মানুষ মৃত্যুর পরেও পরমুখাপেক্ষী থাকে। বিশেষত ইমান নিয়ে কবরে যেতে না পারলে অশেষ দুঃখ যন্ত্রণায় পতিত হয়। এমতাবস্থায় উক্ত মৃত ব্যক্তি জিয়ারতকারীর দোয়ার অসিলায় তার আত্মায় শান্তি লাভ হয়। অর্থাৎ কবরবাসী এক্ষেত্রে জিয়ারতকারীর কাছ থেকে লাভবান হয়। এজন্য মৃত আত্মীয়-স্বজন বিশেষত পিতা-মাতার কবর জিয়ারত ও দোয়া করা অবশ্য কর্তব্য।
আল্লাহর বন্ধুগণ জগতের জন্য রহমত স্বরূপ। তাঁদের প্রতি ভক্তি-বিশ্বাস পোষণ করে, তাঁদেরকে অসিলা ধরে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলে আল্লাহ্ খুশি হন এবং তাঁর বন্ধুর সম্মানের খাতিরে বান্দার প্রতি দয়া বর্ষণ করেন এবং বান্দার প্রার্থনা কবুল করে থাকেন। পক্ষান্তরে, অলী-আল্লাহর প্রতি অশ্রদ্ধার মনোভাব পোষণ করলে বান্দার ভাগ্যে আল্লাহর পক্ষ থেকে লানত ছাড়া আর
কিছুই জুটবে না।
আল্লাহর বন্ধুগণের সানিড়বধ্য যে কত বরকতময় এর একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো মক্কার ক্বাবাঘরে রক্ষিত ‘হাজরে আসোয়াদ’বা কালো পাথর, হজ পালনকালে হাজিগণ তাতে পরম ভক্তি ভরে চুম্বন করে থাকেন। সুফিগণের মতে, আল্লাহর বন্ধু হযরত
ইব্রাহীম (আ.)-এর পবিত্র কদম মোবারকের স্পর্শ পেয়ে সাধারণ একটি কালো পাথর আজও সম্মানিত হচ্ছে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) আল্লাহর নির্দেশে বিবি হাজেরা (আ.)-কে শিশু পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-সহ নির্বাসনে পাঠান। কয়েক বছর পর,
পুত্রকে দেখার জন্যে যখন হযরত ইব্রাহীম (আ.) বিবি হাজেরা (আ.)-এর কাছে রওনা করেন, তখন অপর পত্নী বিবি সারা (আ.)-এর কাছে এ প্রতিজ্ঞা করেন যে, তিনি উটের পিঠ থেকে নেমে মাটিতে পা রাখবেন না। বিবি হাজেরা (আ.)-এর কাছে পৌঁছার পর তিনি আল্লাহর নবিকে উট থেকে নামার অনুরোধ করলে হযরত ইব্রাহীম (আ.) বিবি হাজেরা (আ.)-কে স্বীয় প্রতিজ্ঞার কথা জানান। তখন বিবি হাজেরা (আ.) ও পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.) একটি কালো পাথর এনে উটের পাশে রাখলেন, যেন আল্লাহর নবি পাথরটির উপর নেমে দাঁড়াতে পারেন। এভাবে হযরত ইব্রাহীম (আ.) বিবি হাজেরা (আ.)-এর খেদমত গ্রহণ করে পুনরায় বিবি সারা (আ.)-এর কাছে ফিরে যান। অতঃপর বিবি হাজেরা (আ.) ও হযরত ইসমাঈল (আ.) আল্লাহর নবির স্মৃতি বহনকারী ও তাঁর কদম মোবারকের স্পর্শে ধন্য এ পাথরখানা সযত্নে তুলে রাখেন। আর যখনই নবির কথা স্মরণ হতো, এ পাথরে চুমু খেয়ে তাঁরা নবির প্রতি তাঁদের প্রেম ও আনুগত্য প্রকাশ করতেন। আল্লাহর নবির পুণ্যময় স্মৃতি বিজড়িত পাথরটি কালক্রমে ক্বাবাঘর নির্মাণের পর সেখানে স্থান লাভ করে। আজও সারা বিশে^র মুসলমানরা নিজেদের
গুনাহ মাফের আশায় এ পাথরে চুমু খেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করে থাকেন। এ ঘটনা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, নবি-রাসুলগণের মর্যাদা সর্বাপেক্ষা বেশি। হদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- “নিশ্বয়ই আল্লাহ্ জমিনকে তাঁর নবিদের দেহের জন্যে হারাম করে দিয়েছেন।”
মূলত নবিগণের দেহ পবিত্র বিধায় তা ধ্বংসশীল নয়। মাটির সাধ্য নেই যে, সাধারণ মানুষের দেহের ন্যায় তাকে গ্রাস করে। তাই যুগ যুগ ধরে মানুষ অমরত্বের অধিকারী এরূপ মহামানবগণের রওজা ও মাজারের পবিত্রতা রক্ষা ও জিয়ারত করে আসছে। হজ পালনকারী মুসলমানগণ মদিনা শরীফে গিয়ে প্রাণপ্রিয় রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করে থাকেন।
হজ পালন ছাড়াও হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্যে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কর্ম। হাদিস শরীফে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- “আমার ওফাতের পর যে ব্যক্তি আমার রওজা জিয়ারত করল, সে যেন আমার জীবদ্দশাতেই আমার সাক্ষাৎ লাভ করল।” (তিরমিজি শরীফ)
সাধারণ মানুষের কবর জিয়ারতে গিয়ে সালাম ও দোয়া দরূদ পাঠ করলে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায়। আর অলী-আল্লাহর রওজা ও মাজার জিয়ারতের মাধ্যমে জিয়ারতকারীর আত্মা শান্তি পায় এবং তার বিপদ-আপদ, বালা-মুছিবত দূর হয়। এতে জিয়ারতকারীর অন্তরে আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর মহব্বত বৃদ্ধি পেয়ে ইমানের নুর জাগ্রত হয়। সুতরাং আল্লাহর প্রিয় বন্ধুগণের পবিত্র রওজা ও মাজার জিয়ারত আমাদের জন্য পরম উপকারী ও মঙ্গলজনক। হযরত রাসুল (সা.)-এর আহবানে সাড়া দিয়ে যারা তাঁকে বিশ্বাস করেছেন এবং তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে আল্লাহর উপর পূর্ণ আত্মসমর্পণের দৃঢ়তা বা পরিপূর্ণ ইমান হৃদয়ে অর্জন করতে পেরেছেন, তারাই প্রকৃত মুসলমান। অনুরূপভাবে, বেলায়েতের যুগে যারা হযরত রাসুল (সা.)-এর উত্তরসূরি হেদায়েতের দায়িত্বে নিয়োজিত মোর্শেদের সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর আনুগত্যের মাধ্যমে জীবত্মার পাপ-কালিমা বিদূরিত করে অন্তরকে ইমানের নুর দিয়ে আলোকিত করতে সক্ষম হয়েছেন- তারাই হক পথে আছেন, আর তাদের জন্যেই ধর্ম। এরূপ কোনো ব্যক্তি অলী-আল্লাহর রওজা ও মাজার জিয়ারতে গেলে তার ক্বালবে আল্লাহর জি¦কিরের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। তাই অলী-আল্লাহ্গণ যে অমর, একজন জিন্দা দিলওয়ালা ব্যক্তিই কেবল তা বাস্তবে উপলব্ধি করতে সক্ষম। বস্তুত যারা বিশ্বাসী
তারাই অলী-আল্লাহর রওজা ও মাজার জিয়ারতের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে পারেন।
হযরত রাসুল (সা.)-এর মোহাম্মদী ইসলাম ছিল এলমে মারেফত তথা এলমে তাসাউফ সমৃদ্ধ। পক্ষান্তরে, হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ বিবর্জিত এজিদী ইসলাম শুধু শরিয়ত সম্মত। এতে এলমে মারেফতের লেশমাত্র নেই। আর এ এজিদি ইসলামই আজ বিশ্বময় মুসলমানদের মাঝে চালু রয়েছে। ফলে বিশে^ প্রায় ১৬০ কোটি মুসলমান থাকা সত্ত্বেও মুসলমাদের মাঝে শান্তি নেই। হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেম ও আদর্শ হারিয়ে আজ মুসলমানগণ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। এর হাত থেকে মুসলমান জাতিকে রক্ষা পেতে হলে তাদেরকে অবশ্যই মোহাম্মদী ইসলামের অনুসরণ করতে হবে।
এজন্য প্রয়োজন অলী-আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন করা। সুতরাং আমাদেরকে অবশ্যই অলী-আল্লাহর কাছে বায়েত গ্রহণ করে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করতে হবে। তবেই আত্মশুদ্ধি লাভ হবে এবং চরিত্র সংশোধন হবে। তাই আমাদেরকে জীবিত
অলী-আল্লাহর প্রতি যেমন গভীর শ্রদ্ধা রাখতে হবে এবং তেমনি যাঁরা দারুল বাকায় তশরিফ নিয়েছেন, তাঁদের রওজা ও মাজার শরীফে গিয়ে শ্রদ্ধার সাথে জিয়ারত করতে হবে। তবেই আমাদের ইহকালে ও পরকালে লাভ হবে পরম কল্যাণ।
[লেখক: পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ; সহকারী অধ্যাপক, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি]