অলৌকিক কারামত
মহান মোর্শেদের দয়ায় অভাব দূর
আশেকে রাসুল জাহাঙ্গীর আলম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় বসবাস করেন। জীবন-জীবিকার প্রয়োজনে তিনি দীর্ঘদিন সিঙ্গাপুরে কর্মরত ছিলেন। এসময় চাকরির পাশাপাশি তিনি ডলার ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবসা করতেন। এ ব্যবসাটাই তার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। ব্যবসায় এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন যে, রিক্তহস্তে দেশে ফিরে আসেন। হাত এতটাই খালি যে, ঈদের দিন শূন্য হাতে তার ছেলেকে নিয়ে স্থানীয় ঈদগায়ে নামাজ পড়তে যান। নামাজ শেষে তার ছেলে তার কাছে মাত্র দুটি টাকা আবদার করেছিল। কিন্তু সেই মুহূর্তে তিনি তা দিতে পরেননি। সেই ব্যথা ভুক্তভোগী পিতা-মাতা ছাড়া কারো বোঝার কথা নয়। এই কঠিন অবস্থায় জাহাঙ্গীর আলম আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলেন না। এমতাবস্থায় তিনি তার মহান মোর্শেদ যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজানের অসিলা ধরে মহান আল্লাহর দরবারে রোনাজারি শুরু করেন। এভাবে মহান মোর্শেদের কাছে আজিজি করতে করতে ৭/৮ দিন অতিবাহিত হয়ে গেল। একদা রাতে তিনি স্বপ্ন দেখেন, তিনি নদীর পানিতে একটি নৌকায় ভাসছেন। নৌকাটি চলমান। কিন্তু তিনি নৌকা থেকে হঠাৎ ছিটকে পড়ে গেলেন। অতঃপর জাহাঙ্গীর আলম হাতের কাছে আটি বাঁধা বাঁশের একটি স্তুপ দেখতে পেলেন। তিনি বাঁশের স্তুপের উপর উঠে বসলেন। মহান মোর্শেদের অপার দয়ায় তৎক্ষণাৎ আটি বাঁধা বাঁশের স্তুপটি তাকে নিয়ে ভেলার মতো চলতে লাগলো। অতঃপর তার ঘুম ভেঙ্গে যায়।
ঘুম থেকে জাগ্রত হয়ে তিনি বিছানায় বসেই চিন্তা করছেন বাঁশের ভেলা কীভাবে চলতে পারে? বিষয়টি তার কাছে পরিষ্কার ছিল না। ফলে স্বপ্নের ব্যাখ্যা বোঝার জন্য তিনি খেয়াল ক্বালবে ডুবিয়ে মহান মোর্শেদ বাবা দেওয়ানবাগীর চেহারা মোবারক স্মরণ করে আজিজি করতে লাগলেন। আরজ করলেন ওগো দয়াল বাবাজান! আমার কী করতে হবে, দয়া করে বুঝিয়ে দিন। মুহূর্তে মহান মোর্শেদ তাকে সাহায্য করলেন। তাকে বোঝানো হলো- বাজারে যাও, বাঁশ কেনা-বেচার ব্যবসা করো। মহান মোর্শেদের এরূপ নির্দেশের প্রেক্ষিতে ঋণ করা মাত্র ৮৪০ টাকা মূলধন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা থানার মন্দবাগ গ্রামে বাঁশের আড়তের উদ্দেশে রওনা হলেন। যাওয়া আসার ভাড়া বাবদই খরচ হয়ে গেল ১২০ টাকা। অবশিষ্ট সামান্য টাকা দিয়ে মাত্র কয়েকটি বাঁশ ক্রয় করে আনেন। তাদের স্থানীয় বাজার তথা নবীনগরের ইব্রাহীমপুরে নিয়ে আসেন। বাবা দেওয়ানবাগীর অপার দয়ায় বাজারে আসা মাত্র তার সবগুলো বাঁশ বিক্রি হয়ে যায়। ১ হাজার ৭০০ টাকা বিক্রি করার পর দেখেন তার প্রায় এক হাজার টাকা লাভ হয়েছে। পরের দিন বাঁশের আড়তে গিয়ে দেখেন, তার চাচাতো ভাই এত সংখ্যক বাঁশ দরদাম করছে যে, তা দিয়ে ছোটোখাটো একটা আড়ত করা সম্ভব। তার চাচাতো ভাই তাকে দেখে অত্যন্ত আগ্রহ ও বিনয়ের সাথে বলে, ‘‘ভাই! আপনাকে আমার সাথে থাকতে হবে। দুজনে মিলে আমরা বাঁশ কিনব।’ জাহাঙ্গীর আলম বললেন, ‘আমার কাছে তো এত টাকা নেই।’’ সে বলল, ‘‘এখন আপনাকে এক টাকাও দিতে হবে না। আপনি শুধু আমার সাথে থেকে সর্বপ্রকার সাহায্য করবেন। যা লাভ হবে অর্ধেক আপনার, আর বাকী অর্ধেক আমার।’’
জাহাঙ্গীর আলম তখন হৃদয় মাঝে পরম শান্তি অনুভব করছিলেন। মুহূর্তেই তিনি রাজি হয়ে গেলেন। ১০ হাজার টাকার বাঁশ কেনা হলো। তার কাছে যে ১ হাজার ৭০০ টাকা ছিল, তা দিয়েও বাঁশ কিনলেন। অতঃপর ইব্রাহীমপুর বাজারে এনে তা বিক্রি করলেন। বাবা দেওয়ানবাগীর অপার দয়ায় ঐ দিন ৫ হাজার টাকা লভ্যাংশ পেলেন। মোর্শেদের এরূপ দয়া দেখে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন, তার চোখ তখন পানিতে ভরে যায়। তারপর এই লভ্যাংশ পুঁজি করেই মূল ব্যবসা শুরু করলেন। দেখা যায়, প্রত্যেক শনিবার পাইকারি হাটে গিয়ে বাঁশ ক্রয় করেন। আর স্থানীয় হাটে সোমবার ও শুক্রবার বাজার বসে সেদিন বাঁশ বিক্রি করেন। মহান মোর্শেদের অপার দয়ায় অবস্থা এমন হলো যে, তিনি পাইকারি বাজার থেকে ছোটো বা মাঝারি সাইজের বাঁশ ক্রয় করেন, কিন্তু খুচরা বাজারে আনার পর তা অলৌকিকভাবে আকারে অনেক বড়ো হয়ে যায়। তিনি নিজেই তার ক্রয় করা বাঁশ চিনতে পারেন না। এমনিভাবে বাজারের অন্যান্য বাঁশ বিক্রেতারা প্রায় অধিকাংশ সময়ই ক্রেতার আশায় বসে থাকে। কিন্তু তার দোকানে ভীড় লেগেই থাকে। তার বাঁশের দিকে কোনো ক্রেতা একবার তাকালে সে অন্য বাঁশ আর কিনতে চায় না। মহান মোর্শেদের এরূপ দয়া দেখে তিনি প্রায়ই লোকচক্ষুর অন্তরালে কেঁদে কেঁদে মহান আল্লাহ্র শুকরিয়া আদায় করতেন। এভাবে মাস কয়েক ব্যবসা করার পর হঠাৎ চিন্তা করলেন, কী আয়-ব্যয় হয়েছে একটু হিসাব করে দেখি। অতঃপর হিসাব করে হতবাক হয়ে যান যে, সংসারের সমস্ত খরচাদি বাদ দিয়েও তার হাতে প্রায় এক লক্ষ টাকার মূলধন হয়। এদিকে তাদের এলাকায় বছরে মাত্র ৬ মাস বাঁশের সিজন। তিনি মনোযোগের সাথে পুরো সিজন বাঁশের ব্যবসা করেন। এভাবে বছর দুয়েকের মাথায় তার মূলধন প্রায় ৩ লক্ষ টাকায় পৌঁছে যায়। উপরস্তু বছরে পরিবার পরিচালানায় তিনি যেমন লক্ষাধিক করে টাকা খরচ করেছেন, তেমনি মোহাম্মদী ইসলামের ডাকে সাড়া দিয়ে বিভিন্ন মিলাদ মাহ্ফিলসহ তরিকার কাজেও বিভিন্ন শরিক দিয়েছেন। এভাবেই মহান আল্লাহ্ ও আল্লাহর বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অপার দয়ায় মৃত গাছে ফুল ফুটে। এভাবেই মোর্শেদের দয়ায় আশেকে রাসুল জাহাঙ্গীর আলমের রিক্ত হস্ত সম্পদের প্রাচুর্যে ভরে উঠে।