অলৌকিক কারামত – ব্রেইন স্ট্রোকে নির্বাক হওয়া সত্ত্বেও বিনা অপারেশনে যেভাবে সুস্থ – শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী
আশেকে রাসুল জয়নাল আবেদিন, পিতা- মো. সায়েদ আলী, মেরাদিয়া ভূইয়া পাড়া, খিলগাঁও, ঢাকা। তার এই ঘটনাটি ২০১২ সালের। হঠাৎ করে জয়নাল আবেদিন জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত হয়। জ্বর হওয়ার তিন দিন পর চিকিৎসার জন্য খিলগাঁও তালতলায় ডাক্তারের কাছে যান। ডাক্তার তাকে দেখে ১৫ দিনের ঔষধ দেন। ঔষধ খাওয়ার ১০/১২ দিনের মধ্যে জ্বর কাশি ভালো হয়ে যায়, কিন্তু তার শারীরিক দুর্বলতা আর মাথা ঘুরানো রয়ে যায়। জ্বর ভালো হওয়ার আনুমানিক ৫ দিন পর রাতে তার স্ত্রীর সাথে কথা বলা অবস্থায় হঠাৎ করে জয়নাল আবেদিন জ্ঞান হারিয়ে বাসার ফ্লোরে পড়ে যান। তখন তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে ধরাধরি করে তাকে বিছানায় শোয়ায়। তারা তার মাথায় পানি ঢালে ও সারা শরীরে তেল মালিশ করে দেন। এভাবে ঘন্টাখানিক থাকার পরও যখন তার জ্ঞান ফিরছিল না, তখন তারা তাকে খিলগাঁও খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন- ২/৩ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরবে। তারপর ডাক্তার কিছু ঔষধ লিখে দিয়ে জয়নাল আবেদিনকে বাসায় নিয়ে যেতে বলেন। রাত ১২টায় তাকে বাসায় নেওয়া হয়।
অবশেষে ১ রাত ১ দিন পর তার জ্ঞান ফিরে আসে। এ সময় জয়নাল আবেদিনের স্ত্রী তাকে কিছু খেয়ে ডাক্তারের দেওয়া ঔষধ খেতে বলে। তিনি স্ত্রীর কথা শুনলেও মুখে কিছু বলতে পারছিলেন না। হাতের ইশারায় বুঝাতে চাচ্ছিলেন যে তিনি কথা বলতে পারছেন না। তার স্ত্রী তার এ অবস্থা দেখে বিচলিত হয়ে যান। তখন তার স্ত্রী মেয়েদের ও আশপাশের প্রতিবেশীদের ডেকে নিয়ে আসে। সবাই মিলে তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। কিন্তু আশেকে রাসুল জয়নাল আবেদিন কোনো কথার উত্তর দিতে পারছিলেন না। জয়নাল আবেদিন তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন। তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। তারা তাকে অনেক কিছু খাওয়াতে চেষ্টা করেছেন এবং তার বড়ো মেয়ে দুধে পাউরুটি ভিজিয়ে চামচ দিয়ে তাকে খাওয়াতে চেষ্টা করেছে, কিন্তু কোনো ভাবেই হা করতে পারছিলেন না। তার এ অবস্থা দেখে মেয়েরা কান্নাকাটি করছিল। আশেকে রাসুল জয়নাল আবেদিন তার মেয়েদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে শুধু অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছিলেন। এরপর তাকে তার স্ত্রী ও মেয়েরা আঙ্গুর ও মাল্টার রস চামচ দিয়ে অল্প অল্প করে খাওয়াতে চেষ্টা করেছেন।
পরদিন তার আত্মীয়-স্বজনরা এসে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার চিকিৎসকরা তার রক্ত, মাথার সিটি স্ক্যান, এক্সরে-সহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর তার আত্মীয়-স্বজনদের জানায় যে, তার ব্রেইন স্ট্রোক হয়েছিল। এটি থেকে তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেছেন। ডাক্তার ৭ দিনের ঔষধ দিয়ে বললেন যেহেতু তার মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের কারণে এ অবস্থা হয়েছে তাই তাকে পরিপূর্ণ সুস্থ করতে তার মাথায় একটা অপারেশন করতে হবে। অপারেশনটা যত দ্রুত সম্ভব করাতে হবে। তাই এক সপ্তাহ পরে আবার আসতে বললেন।
সাত দিন পর তাকে ঢাকা মেডিকেল নেওয়ার প্রস্তুতি চলছিল, কিন্তু খরচ জোগানো সম্ভব নয় বলে তিনি হাসপাতালে যেতে রাজি হচ্ছিলেন না। সেদিন হাসপাতালে না গিয়ে তিনি সকাল ১০টায় রওয়ানা করে সিলেটে হযরত শাহজালাল (রহ.)-এর মাজারে গিয়ে মাগরিবের নামাজ আদায় করে চোখ বন্ধ করে জিয়ারত করেছিলেন। চোখ বন্ধ অবস্থায় তিনি দেখতে পান তার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) দয়াল বাবাজান তার সামনে উপস্থিত। দয়াল বাবাজানকে দেখে তিনি হতচকিত হয়ে যান এবং তার খেয়াল ভেঙ্গে যায়। জিয়ারত শেষ করে আশেকে রাসুল জয়নাল আবেদিন পরের দিন ফজরের সময় বাড়ি পৌঁছান। বাড়ি পৌঁছে ঐ দিন ৩০শে মার্চ সকাল ১১টায় আশেকে রাসুল কাউসারের সাথে বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে এসে নিচ তলায় দয়াল বাবাজানের সাথে সাক্ষাতের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। যখন সাক্ষাতের জন্য ডাকা হলো তখন তারা দয়াল বাবাজানের কাছে যান। যেহেতু আশেকে রাসুল জয়নাল আবেদিন কথা বলতে পারছিলেন না তাই আশেকে রাসুল কাউসার তার সমস্যার কথাগুলো দয়াল বাবাজানকে বলেন। জয়নাল আবেদিন দয়াল বাবাজানের কদম মোবারক ধরে কান্নাকাটি করেন। তখন বাবাজান বললেন, “উনার মাথার রগ ছিড়ে গেছে।” কাউসার বলেন, “বাবাজান আপনি দয়ার সাগর। আপনি যদি একটু দয়া করেন আল্লাহ্র রহমতে জয়নাল ভাই সুস্থ হয়ে যাবেন।” তখন দয়াল বাবাজান তাকে একটা মানত করে আজিজি করতে বলেন। দেখেন কী হয়। দয়াল বাবাজনের সামনে থাকাবস্থায় জয়নাল আবেদিন দরবার শরীফে একটা গরু মানত করেন। এরপর হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর রওজা মোবারক জিয়ারত করে বাড়ি চলে যান।
পরের দিন জয়নাল আবেদিনের স্ত্রী দরবার শরীফে এসে দয়াল বাবাজানের ছবি মোবারক, ওয়াজিফা ও আত্মার বাণী পত্রিকা নিয়ে আসরের নামাজের পর বাসায় পৌঁছেন। পবিত্র জিনিসগুলো তিনি তার স্বামীর হাতে দেন। দয়াল বাবাজানের ছবি মোবারক হাতে পাওয়ার পর জয়নাল আবেদিন অপলক নয়নে দয়াল বাবাজানের চেহারা মোবারক দেখছিলেন। আর দু চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে মনে মনে আজিজি করে দয়াল বাবাজানকে বলছিলেন, “ওগো দয়াল দরদি বাবাজান! আপনি দয়ার সাগর, আপনি আমাকে দয়া করেন। আমি যেন আবার কথা বলতে পারি।” তখনই আশেকে রাসুল জয়নাল আবেদিন লক্ষ্য করলেন তার সারা শরীর হালকা লাগছে, গলাও পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে এবং কথা বলার জন্য গলায় শক্তি পাচ্ছিলেন। ধীরে ধীরে ‘বাবা’ ‘বাবা’ বলে কথা বলার চেষ্টা করতে করতে তার কন্ঠস্বর পুরোপুরি ভালো হয়ে যায়। তিনি স্বাভাবিকভাবে সবার সাথে কথা বলতে পারছেন।
এ ঘটনার পর তার বাসার আশপাশের মানুষ দয়াল বাবাজানের কাছে আসার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। সকলেই তার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) দয়াল বাবাজানের প্রশংসা করতে থাকেন।
[্ইসলাম বিষয়ক লেখক]