অলৌকিক কারামত
অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের কবল থেকে রক্ষা
সাধারণ মানুষ পার্থিব নানা কারণে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং দুনিয়ার কর্ম অনুযায়ী পরকালে নাজাত পাবে কিনা এ ব্যাপারে অত্যন্ত ভীত থাকে। অথচ মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে তাঁর অলীগণের সম্পর্কে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিয়ে মানব জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন, “জেনে রেখো, আল্লাহ্র বন্ধুদের কোনো ভয় নেই এবং তাঁরা দুঃখিতও হবে না।” (সূরা ইউনুস ১০: আয়াত ৬২) মহান আল্লাহ্ তাঁদেরকে সকল প্রকার বিপদ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত রেখেছেন।
অপরদিকে হাদিস শরীফে হযরত রাসুল (সা.) অলী-আল্লাহ্দেরকে অমর বলেছেন। প্রকৃতপক্ষে মানুষ সৃষ্টি করার পর মানবজাতি কোন পথে শান্তি ও মুক্তি লাভ করবে, সেই পথনির্দেশনা দেওয়ার জন্য মহান আল্লাহ্ প্রত্যেক যুগেই শান্তির দূত মহামানবগণকে প্রেরণ করেন। মহান আল্লাহ্ নবুয়তের যুগে শান্তির দূত হিসাবে নবি ও রাসুলগণকে যেমন প্রেরণ করেছেন, তেমনি নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে আওলিয়ায়ে কেরামকে প্রেরণ করে আসছেন। নবুয়তের যুগে নবি-রাসুলগণের মাধ্যমে যে সকল অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল, তাকে মু‘জিজা বলা হয়। আর বেলায়েতের যুগে আওলিয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে সংঘটিত ঘটনাকে কারামত বলা হয়।
মহান সংস্কারক যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের কাছে এসে অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ বালা মুছিবতে পড়ে প্রতিনিয়ত তাঁর অসিলায় মহান আল্লাহ্র সাহায্য লাভ করেছেন। তেমনি একজন আশেকে রাসুল মো. ইসরাইল হোসাইন। তিনি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে কীভাবে রক্ষা পেলেন, সেই ঘটনা এখানে উপস্থাপন করা হলো-
আশেকে রাসুল মো. ইসরাইল হোসাইন, ঢাকায় একটি প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করেন। তার বাড়ি নাটোর জেলার বড়াইগ্রাম থানায়। তিনি ঢাকার রামপুরায় বসবাস করতেন। ঘটনাটি ২০০৯ সালের। তিনি অফিস থেকে বেতন পেয়ে বাসায় আসেন এবং একাই বাসায় রাত্রিযাপন করছিলেন। তখন তার পরিবার গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিল। হঠাৎ রাত সাড়ে তিনটায় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে কয়েকজন সন্ত্রাসী তার বাসায় হানা দেয়। বাসায় যে তিনি একা আছেন এবং ঘুমিয়ে আছেন, তা সন্ত্রাসীরা আগেই টের পেয়েছিল।
দরজার সামনে এসে তারা সরাসরি দরজার তালা কাটা শুরু করে। তিনি তাদের উপস্থিতি টের পেয়ে চুপিসারে তাদের কার্যক্রম দেখতে লাগলেন এবং দয়াল বাবাজানের কথা স্মরণ করে তাঁর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে লাগলেন। দরজার সিটকারির তালা অত্যন্ত মোটা হওয়ায় তাদের কাটতে দেরী হচ্ছিল। কিন্তু তারা কেটেই যাচ্ছে। অবস্থা যখন অত্যন্ত খারাপ অর্থাৎ সিটকারি প্রায় কাটা শেষের দিকে, তখন তার আরো ভয় বেড়ে গেলো। এই বুঝি তারা ঘরে ঢুকে পড়বে এবং তার জানমালের উপর আক্রমণ চালাবে। তখন তিনি আসন্ন বিপদের আঁচ করতে লাগলেন এবং দয়াল বাবাজানকে অসিলা ধরে আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা করেন। এই শব্দ সন্ত্রাসীদের কানে গোচরীভূত হলো। তার এই ডাকাডাকির কারণে তারা আরো জোরে জোরে তালা কাটতে শুরু করল। এভাবে প্রায় দেড় থেকে দুই ঘন্টা চলতে থাকে। কিন্তু তারা দরজার সিটকারি কেটে রুমের মধ্যে প্রবেশ করতে পারছে না। সিটকারি কাটা প্রায় শেষ। তারপরও তারা রুমে প্রবেশ করতে পারছে না। তিনি আবারও জোরে জোরে মহান মোর্শেদকে স্মরণ করছিলেন এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করছিলেন, পাশাপাশি মনে মনে একটি মানত করলেন এবং বাবাজানের অসিলায় আল্লাহর সাহায্য চাইতে লাগলেন। তখন তার মনে হচ্ছিল এই বুঝি তারা রুমে ঢুকবে এবং তার জীবনহানি ঘটাবে। পরবর্তীতে মোর্শেদের অসিলায় মহান আল্লাহর দয়ায় কিছুক্ষণ পর দরজার তালা কাটার শব্দ বন্ধ হয়ে গেল। অতঃপর তিনি টের পেলেন তারা দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করছে।
তখন তিনি দয়াল বাবাজানের অসিলায় বিপদ থেকে মুক্তি লাভের কথা স্মরণ করতে লাগলেন। এর কিছুক্ষণ পরই মসজিদ থেকে ফজরের আজান শোনা গেল এবং লোকজনের আনাগোনা বৃদ্ধি পেল। আশেকে রাসুল মো. ইসরাইল হোসাইনের সাহস বেড়ে গেলো। তিনি দরজা খোলেন এবং দেখেন সিটকারি তারা অপর পাশ থেকে প্রায় কেটে ফেলেছে কিন্তু তারা রুমের ভিতর প্রবেশ করতে পারেনি। মহান মোর্শেদের অসিলা ধরে আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করার ফলে তিনি সন্ত্রাসীদের হাত থেকে রক্ষা পেলেন।
পরবর্তীতে মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের কাছে আশেকে রাসুল মো. ইসরাইল হোসাইন সেই রাতের ভয়ংকর ঘটনার কথা বর্ণনা করেন এবং মানত আদায় করেন।
সংকলনে: আশেকে রাসুল শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী (অপু)