অলৌকিক কারামত
ক্যান্সার থেকে আরোগ্য লাভ
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের বন্ধু হলেন অলী-আল্লাহ্গণ। তাঁদের মর্যাদা অপরিসীম। তাঁরা কোনো বিষয়ে কিছু বললে, মহান আল্লাহ্ তাঁদের সম্মানের খাতিরে সেই বিষয়ে সমাধান দিয়ে থাকেন। মানুষ মাত্রই রোগ-শোক ও বালা-মুসিবতে থাকে। চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রয়েছেন। কিন্তু মানুষের এমন কিছু রোগ রয়েছে, যা চিকিৎসকগণ শত চেষ্টা করেও সুস্থ করতে পারেন না। অথচ কোনো অলী-আল্লাহ্ যদি সেই বিষয়ে রোগীকে কোনো নির্দেশনা দেন, তাহলে দেখা যায় বিনা চিকিৎসায় ঐ রোগ থেকে রোগী আরোগ্য লাভ করে থাকেন। এক কথায় বলতে গেলে, ডাক্তারদের চিকিৎসা বিদ্যা যেখানে শেষ, সেখান থেকে অলী-আল্লাহ্গণের কাজ শুরু হয়। এমন একটি ঘটনা উপস্থাপন করা হলো-
আশেকে রাসুল সেলিম ১৪৩/৯, ঢাকার দক্ষিণ কমলাপুরে বসবাস করেন। ঘটনাটি ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের। তার ভায়রার মেয়ের নাম শাকিলা আক্তার। তার বয়স তখন ২০ বছর। তিনি পরিবারসহ চট্টগ্রামে বসবাস করতেন। আকস্মিকভাবে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লেন। তিনি পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করলেন এবং কিছু খেলে তার বমি হয়ে যেতো। ডাক্তাররা প্রথমে এটিকে গ্যাস্টিক আলসার হিসাবে সনাক্ত করে তাকে ওষুধ প্রদান করেন। কিন্তু কোনো কিছুতেই কোনো কাজ হলো না। পরবর্তীতে ডাক্তাররা তাকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা করলেন এবং তার ক্যান্সার ধরা পড়লো। যার কারণে তাকে প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাকে ৩ থেকে ৪ দিন রাখা হলো ও ভালোভাবে তাকে আরো পরীক্ষা এবং বিভিন্ন প্রকার ওষুধ প্রদান করা হলো। কিন্তু ডাক্তারী চিকিৎসা ব্যর্থ হলো। ডাক্তাররা বোর্ড বসালেন এবং সবিস্তারে তাকে নিয়ে আলোচনা করলেন, কিন্তু সবকিছু বিফলে গেলো, কোনো কিছুই আলোর মুখ দেখলো না।
পরবর্তীতে পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যেতে থাকলে তাকে এনে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হলো। সেখানে চিকিৎসা চলতে থাকলো। ডাক্তারগণ সেখানে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন এবং তার খাদ্যনালী ক্যান্সার হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়। নিয়মিত চিকিৎসা চলছিল, কিন্তু অবস্থার কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। শাকিলা আক্তার দীর্ঘ চার মাস হাসপাতালে ভর্তি থাকলেন। সেখানেও ডাক্তাররা বোর্ড বসালেন। আলোচনায় তারা নিশ্চিত হলেন যে, মেয়েটিকে তাদের পক্ষে বাঁচানো সম্ভব নয়। কোনো চিকিৎসকই তাকে সুস্থ করতে পারবে না।
এদিকে আশেকে রাসুল সেলিম সাহেবের ভায়রার মেয়ে তাদের পুরো পরিবারের খুব আদরের মেয়ে। তাছাড়া সে পড়াশুনায়ও খুব ভালো ছিল। যার কারণে তার স্ত্রী এবং সেলিম ভাইও মেয়েটিকে খুব ভালোবাসতেন। মেয়েটি তাকে পিতার মতো ভালোবাসতো। তারও খুব মায়া লাগতো। যার ফলে সেলিম ভাইয়ের স্ত্রী মেয়েটির জন্য সূফী সম্রাট হযরত দয়াল বাবাজানের অসিলা ধরে সেলিম ভাইকে মহান আল্লাহ্র নিকট আজিজি করতে বলেন। কিন্তু তিনি তার ভায়রার মেয়ের জন্য দয়াল মোর্শেদের অসিলা ধরে কোনো আজিজি করেননি। তিনি শুধু মনে মনে বলেছিলেন, আপনার যা ভালো মনে হয় তাই করেন, আমার কিছু বলার নেই। হঠাৎ একদিন রাতে স্বপ্নে দয়াল বাবাজান সামনে উপস্থিত হলেন। তিনি তাঁর জবান মোবারকে আশেকে রাসুল সেলিমকে বললেন, তিনি যেন রোগীর বিছানায় বসে ফাতেহা শরীফ পাঠ করে মোনাজাত করেন। এতেই সে সুস্থ হয়ে যাবে।
এদিকে ডাক্তাররা তাদের অপারগতার বিষয়টি পরিবারকে জানিয়ে দিলেন। সেলিম সাহেব মেয়েটির পিতাকে বললেন ডাক্তারী চিকিৎসাতো শেষ, সে তো আর বাঁচবে না। তিনি তা স্বীকার করে নিলেন। তখন সেলিম সাহেবের মোর্শেদের স্বপ্নের কথা মনে পড়লো। তিনি মেয়েটির বাবাকে পরামর্শ দিলেন যে, যার সাথে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রকাশ্যে যোগাযোগ রয়েছে, ঐ জগৎশ্রেষ্ঠ অলী-আল্লাহ্ বলেছেন মেয়েটি বাঁচবে এবং স্বপ্নে তিনি পদ্ধতিও বলে দিয়েছেন। সেই অনুযায়ী সেলিম সাহেব তার ভায়রাকে সেই বিষয়টি বললেন। কথা শেষে তিনি নিজে ফাতেহা শরীফ পাঠ করে মোনাজাত করে মহান প্রভুর কাছে সাহায্য চাইলেন এবং দরবারে একটি মানত করেন। আর মেয়েটিকে বললেন, মানুষ মরণশীল। একদিন তাকে অবশ্যই মৃত্যুবরণ করতে হবে। কিন্তু মহান মোর্শেদের অসিলায় মহান আল্লাহ্ এ রোগ থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই তোমাকে মুক্তি দিবেন। এ রোগে তোমার মৃত্যু হবে না।
মহান আল্লাহর কী দয়া, এর পরের দিন থেকে তার শরীর ভালো হতে থাকে। তার ব্যথা কমে যেতে লাগলো এবং শরীর আগের চেয়ে অনেক ভালো হতে লাগলো। তিনদিন পর ডাক্তার যথারীতি আসলেন এবং তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখলেন যে, তার কোনো রোগ নেই। ডাক্তাররা মেয়েটিকে সুস্থ বলে ঘোষণা করেন। মহান মালিকের নেক দৃষ্টির বদৌলতে রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় তিনি পরের দিন বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হন। শাকিলা আক্তার পরবর্তীতে বিশ^বিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি লাভ করেন।
অলী-আল্লাহ্গণ আল্লাহর পক্ষ থেকে এক বিশেষ বাতেনি ক্ষমতা লাভ করেন। তাই তারা তাদের ভক্তের বিপদে আপদে, যে কোনো অবস্থায় দয়ার হাত প্রসারিত করে দেন। এ ঘটনা তাই প্রমাণ করে, যেখানে ডাক্তাররা তাদের চিকিৎসা দ্বারা কিছু করতে পারেননি, সেখানে ক্যান্সারের মতো একটি জটিল রোগ মোর্শেদের দয়া লাভ করার মাধ্যমে রাব্বুল আলামিন ভালো করে দিয়েছেন।
আশেকে রাসুল সেলিম তার ভায়রাকে সাথে নিয়ে মোর্শেদের কাছে এসে ঘটনার বর্নণা দেন। পরবর্তীতে নিজে এসে মানত আদায় করে যান।
সংকলনে: আশেকে রাসুল শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী (অপু)