অলৌকিক কারামত
মোর্শেদের দয়ায় বিপদ থেকে মুক্তি লাভ
শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী
আলোকিত মানুষ হলেন অলী-আল্লাহ্গণ। মূলত তাঁরাই মহামানব। তাঁদের নির্দেশিত পথে চললেই সুন্দর চরিত্রের অধিকারী হওয়া সম্ভব। তাই অলী-আল্লাহ্র সহবতে গিয়ে নিজের কুরিপুকে দমন করতে পারলে সমাজে শান্তি নেমে আসবে। অলী-আল্লাহ্গণের মাধ্যমে অসংখ্য অলৌকিক কারামত প্রকাশিত হয়। যার দ্বারা সাধারণ মানুষ উপকৃত হয়ে থাকে। এটা হচ্ছে প্রকৃত অলী-আল্লাহ চেনার অন্যতম লক্ষণ। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের কাছে এসে অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিপদ-আপদ বালা মুছিবতে পড়ে প্রতিনিয়ত মহান মোর্শেদের রূহানি দয়া ও সাহায্য লাভ করেছেন। তেমনি আশেকে রাসুল নুরু মিয়ার দয়াল বাবাজানের নিকট থেকে সাহায্য পাওয়ার ঘটনাটি উপস্থাপন করা হলো-
আশেকে রাসুল নুরু মিয়া ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার মাঝিয়ারা গ্রামে বাস করতেন। তার জীবনগঞ্জ বাজারে একটি দোকান ছিল। তিনি ব্যবসার সাথে অনেক আগে থেকেই সম্পৃক্ত ছিলেন। যার কারণে তাকে বাজার কমিটির সদস্য করা হয়।
ঘটনাটি ২০০৮ সালের। বাজার কমিটিতে আরো সদস্য ছিল। তাদের পার্শ্ববতীর্ গ্রামে প্রতি মাসে দেওয়ানবাগ শরীফের মিলাদ মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হতো। বাজার কমিটির সবার সাথে সবার ভালো বোঝাপড়া ছিল। কিন্তু বাজারের কমিটির সদস্যরা দেওয়ানবাগ দরবার শরীফের বিপক্ষে নানা কথা বলছে, যা তাকে ব্যথিত করে। তিনি ব্যাপারটি তিন-চারদিন খেয়াল করলেন। তিনি তাদেরকে বুঝাতে চেষ্টা করেন এবং দেওয়ানবাগ শরীফের কার্যক্রম সম্পর্কে তারা না বুঝে তার সাথে তর্কে লিপ্ত হয়। কমিটির প্রায় সকল সদস্য তার বিরুদ্ধে কথা বলতে লাগলো । বিশেষ করে মসজিদ কমিটির হুজুর তার সমালোচনা করেন। আশেকে রাসুল নুরু মিয়া হুজুরসহ কমিটির অন্যান্য সদস্যদের বুঝাতে পারলেন না। সবাই তার বিপক্ষে অবস্থান নিলো। পরবতীর্ পর্যায়ে তারা তাকে মারার জন্য উদ্যত হলে তিনি তার দোকানের ভিতরে চলে যান। এদিকে তারা একত্রিত হয়ে তার দোকানের দিকে আসছে দেখে তিনি খুব ভয় পেয়ে যান এবং আপন মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের কাছে আজিজি করতে থাকেন এই মহাবিপদ থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য। তিনি মোর্শেদ কেব্লার কাছে মনে মনে বলেন, তিনি এখন একা। এখানে তাকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই। মোর্শেদ কেব্লা যেন এই বিপদে রূহানিভাবে দয়া করে তাকে রক্ষা করেন। তখন তিনি অনুভব করেন যে, তাকে বলা হচ্ছে তিনি যেন এখনই দোকান থেকে চলে যান। সে নির্দেশনা অনুযায়ী তৎক্ষণাৎ তিনি দোকান পরিত্যাগ করে বাসায় চলে যান। সেই পর্যায়ে তিনি একটি বড়ো বিপদ থেকে রক্ষা পান। কারণ তারা শুধু তাকে মারতো না, তার দোকানও ভেঙ্গে দিতে পারতো এবং তার ব্যবসায়িক ক্ষতিসাধন করতো। মোর্শেদ কেবলার রূহানি নির্দেশে তিনি রক্ষা পান।
এই ঘটনা ঘটার চার থেকে পাঁচ দিন পর ঐ বাজারের মসজিদ কমিটির হুজুরকে কিছু দোকানদার চোর বলে দোষী সাব্যস্ত করে। এই ঘটনায় কমিটির সদস্যরা আরো ক্ষিপ্ত হয়। তারা ধারণা করে আশেকে রাসুল নুরু মিয়া দোকানদারদের দিয়ে হুজুরকে চোর সাব্যস্ত করেছে। ফলে তারাতার বিচারের সিন্ধান্ত গ্রহণ করে। তারা একটি বিচারের দিন ধার্য করে। কিন্তু সেই বিচারেআশেকে রাসুল নুরু মিয়া হাজির হননি। এতে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয় এবং রাতের আঁধারে তার বাড়ির কাছাকাছি এসে তাকে খুঁজতে থাকে। তিনি বিপদের আঁচ করতে পেরে দয়াল মোর্শেদের কাছে অসিলা নিয়ে আল্লাহ্র নিকট চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে রোনাজারি করেন এবং আজিজি করতে থাকেন, যেন তিনি এ বিপদ থেকে রক্ষা পান। তিনি নিয়ত করেন বিপদ থেকে রক্ষা পেলে দরবারে গোলামিতে অংশগ্রহণ করবেন। যারা তাকে খুঁজতে এসেছিল মহান মোর্শেদের অসিলায় আল্লাহ্র রহমতে তারা তাকে না খঁুজে চলে যায়। তিনি আরেকবার বিপদ থেকে রক্ষা পান। তার প্রাণ সংশয় ছিল, অথচ মোর্শেদের অসিলায় তিনি গোলামি করার নিয়ত করে বড়ো একটি বিপদ থেকে রক্ষা পান।
কিছুদিন পর তিনি খেদমত করে আজিজির সাথে ভয়ে ভয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলেন, এরপর কমিটির সদস্যরা ভুল বুঝতে পেরে আশেকে রাসুল নুরু মিয়ার কাছে ক্ষমা চান। কমিটির সকল সদস্য অবাক হন যে তিনি একজন মাত্র ব্যক্তি কীভাবে এতোগুলো ব্যক্তির বিপরীতে গিয়ে একাই বিজয় লাভ করে। তারা বুঝতে পারলো যে আশেকে রাসুল নুরু মিয়া একজন খাঁটি অলী-আল্লাহ্র সহবতে আছেন। পরবর্তর্ীতে তারা সবাই দরবার শরীফের পক্ষে চলে আসেন।
তিনি মোর্শেদের কদমে ক্রন্দনরত অবস্থায় ঘটনাটি জানান এবং মানত আদায় করেন। মোর্শেদ যে কঠিন বিপদের সময় মুরিদকে রূহানিতে দয়া করতে পারেন তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে তিনি এবং তার পরিবার সারা জীবন মোর্শেদের কদমে থাকতে চির প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন।
[লেখক: ইসলামি গবেষক]