অলৌকিক কারামত
মহান মোর্শেদের অসিলায় অলৌকিকভাবে ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর মাহ্ফিলের ব্যবস্থা হলো
শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী (অপু)
মহান আল্লাহর সৃষ্টির প্রক্রিয়ায় সর্বপ্রথম সৃষ্টি হলো ‘নুরে মোহাম্মদী’। এ প্রসঙ্গে হাদিসে কুদসিতে এরশাদ হয়েছে, “লাও লাকা লামা খালাকতুল আফলাক।” অর্থাৎ-(হে হাবিব!) আমি আপনাকে সৃষ্টি না করলে কোনো কিছুই সৃষ্টি করতাম না।” ‘নুরে মোহাম্মদী’ যে সর্বপ্রথম সৃষ্টি এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) ফরমান-“মহিমান্বিত আল্লাহ্ সর্বপ্রথম আমার নুরকে সৃষ্টি করেন।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭০) মহান আল্লাহ্র সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি হলো ‘নুরে মোহাম্মদী’। নিজের পরিচয় প্রকাশের জন্যই তিনি তা সৃষ্টি করেছেন। এজন্যই নুরে মোহাম্মদীর মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে তিনি সমগ্র সৃষ্টিজগৎ সৃজন করেছেন।
আল্লাহ্ তায়ালা ছয়টি ধাপে নুরে মোহাম্মদী হতে সমস্ত সৃষ্টিরাজি সৃজন করেছেন। ঐ ‘নুরে মোহাম্মদী’ প্রতিটি সৃষ্টির মাঝে প্রবাহিত হচ্ছে। তাইতো মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.) সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন, “আমি আপনাকে বিশ^ জাহানের রহমত হিসাবে প্রেরণ করেছি।” (সূরা আম্বিয়া ২১: আয়াত ১০৭) সমগ্র সৃষ্টিজগতের পরম প্রভু আল্লাহ্ তায়ালার অগণিত সৃষ্টিরাজিকে সজীব, সতেজ ও প্রাণবন্ত করে রাখার জন্য অবিরাম রহমত বিতরণ করে যাচ্ছেন। ঐ রহমতের পরশ পেয়েই মানুষ-জিন, পশু-পাখি, কীট-পতঙ্গ, গাছ-পালা, তরু-লতা, আলো-বাতাস, পানি-মাটিসহ যাবতীয় সৃষ্টিরাজি এমনকি বিশ^ জাহানের প্রতিটি অণু-পরমাণু আপন আপন গুণাবলিতে বিভূষিত হয়ে আছে। এক মুহূর্তের জন্য যদি রহমত বন্ধ হয়ে যায়, মহাবিশ^ নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যাবে।
১২ই রবিউল আউয়াল হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর শুভ জন্মদিন। যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর অশেষ বরকতময় শুভ জন্মদিন পবিত্র ঈদে মিলাদুন্িনব (সা.)-এর গুরুত্ব তুলে ধরে একে সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ হিসাবে ঘোষণা করেন। নবুয়তের যুগে নবি-রাসুলগণ আল্লাহর দেওয়া মু‘জিজার মাধ্যমে মানুষকে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে এনেছিলেন। কারণ মু‘জিজা ছিল তাঁদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে দলিলস্বরূপ। তেমনিভাবে বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্গণের কারামতের মাধ্যমে তা প্রকাশ পায়। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত শাহ দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের কাছে এসে অসংখ্য আশেকে রাসুলের মনের আশা অলৌকিকভাবে পূর্ণ হয়েছে। তেমনি একজন আশেকে রাসুল গোলাম ছাদেক। তার টাকা পয়সা না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে তিনি ঈদে মিলাদুন্নবির মিলাদ মাহ্ফিল অনুষ্ঠানের আয়োজন এবং কেক বিতরণ করলেন, সেই ঘটনা এখানে উপস্থাপন করা হলো-
আশেকে রাসুল গোলাম ছাদেক, কুমিল্লা জেলার কোতয়ালী সদর থানার দক্ষিণ ঝাউতলা এলাকায় বসবাস করেন। তার বাড়ি কুমিল্লা জেলার দেবিদ্বার থানার তৈবাড়িয়া গ্রামে। তিনি গ্রুপ-৪ নামে একটি প্রাইভেট সিকিউরিটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতেন। তিনি যে বেতন পান, তা দ্বারা কোনো রকমে তিনি দিনাতিপাত করেন। এলাকার খানকায় তিনি প্রায় সময়ে যাতায়াত করতেন এবং মাসিক অনুষ্ঠানগুলিতে অংশগ্রহণ করতেন। সেখানে মিলাদ শরীফ অনুষ্ঠিত হতো। দেখতে দেখতে রবিউল আউয়াল মাস চলে আসলো। তার মনে বাসনা জাগলো তিনি তার এলাকায় একটি মিলাদ মাহ্ফিল এবং কেক কাটার অনুষ্ঠান করবেন। তার জানা ছিল যে, প্রকৃতপক্ষে হযরত রাসুল (সা.)-এর জন্মকালীন ঘটনাবলি স্মরণ করাকে মিলাদ বলা হয়ে থাকে। এই মিলাদের মাধ্যমে উম্মতে মোহাম্মদীর পক্ষে, হযরত রাসুল (সা.)-এর মহব্বত হাসিলের একটা উপলক্ষ্য সৃষ্টি হয় এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকেও রহমত লাভের আকাঙ্খা সৃষ্টি হয়। কেননা মিলাদ পাঠকালে হযরত রাসুল (সা.)-কে ভক্তি ও মহব্বতের সাথে স্মরণ করে, তাঁর প্রতি দরূদ ও সালাম প্রেরণ করার একটা সুযোগ হয়। তাছাড়া হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উপর দরুদ ও সালাম পেশ করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কুরআনে ঘোষণা করেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ স্বয়ং ও তাঁর ফেরেশতারা নবির উপরে দরুদ পাঠ করেন। হে মু’মিনগণ! তোমরাও তাঁর উপরে দরূদ পড়ো এবং শ্রদ্ধার সাথে সালাম পেশ করো।” (সূরা আল আহযাব ৩৩: আয়াত ৫৬) আশেকে রাসুল ছাদেক মিয়ার সাধ আছে সাধ্য নাই। তিনি খুব সল্প বেতনে কাজ করতেন, যা দিয়ে ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর মতো বড়ো অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিকল্পে কোনো মিলাদ মাহ্ফিল করবেন। এ কারণে তার মন অত্যন্ত খারাপ হয়ে যায়। তিনি আপন মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের অসিলা ধরে আজিজি করতে থাকেন এবং মনে মনে বলতে থাকেন, “হে দয়াল মাওলা! ঈদে মিলাদুন্িনব (সা.) উপলক্ষ্যে অনুষ্ঠান করার খুব ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অনুষ্ঠান করতে পারছি না। আপনি দয়া করে ব্যবস্থা করে দেন।” দেশের বিভিন্ন স্থানে আশেকে রাসুল মিলাদ মাহ্ফিল আয়োজন করা সম্ভব নয়। তাছাড়া তার পার্শ্ববর্তী অন্যান্য অনেক গ্রামেও আশেকে রাসুল মিলাদ মাহ্ফিল অনুষ্ঠান হচ্ছে, যা দেখে তার আরো আফসোস বেড়ে যায়। এই অবস্থায় তিনি মোর্শেদের অসিলা ধরে আল্লাহ্র কাছে আজিজি করতে থাকেন এবং মনের আকুতি জানাতে থাকেন, যেন তার এলাকায় একটি অনুষ্ঠান করতে পারেন সেই ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।
এর কিছুদিনের মধ্যে তার কোম্পানিতে একজন অফিসার বদলি হয়ে ঢাকা থেকে কুমিল্লায় আসেন। আশেকে রাসুল ছাদেকের সাথে তার পরিচয় হয়। আস্তে আস্তে তার সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে। ঐ ব্যক্তি নিজেও ধর্মপরায়ণ ছিলেন। তিনি ঈদে মিলাদুনন্নবি (সা.) সম্বন্ধে তেমন কিছু জানতেন না। কিন্তু আশেকে রাসুল ছাদেকের কাছে শুনে মিলাদ শরীফ এবং ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) সম্বন্ধে তার ধারণা পরিষ্কার হয়। তিনি আশেকে রাসুলদের কিয়ামসহ মিলাদ শুনে মুগ্ধ হন এবং তার চোখ বেয়ে পানি ঝড়ে। যার কারণে বিভিন্ন মিলাদ মাহ্ফিল অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে ছাদেক ভাই যেতেন। তিনি এতে খুবই খুশি হন। হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে যায়।
এদিকে ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) খুবই সন্নিকটে। আশেকে রাসুল ছাদেক ভাইয়ের কাছে টাকা নেই যে, তা দিয়ে তিনি মাহ্ফিলের আয়োজন করবেন। তিনি একটি এলাকার অনুষ্ঠানে যান। কিন্তু তার চেহারায় মলিনতা ফুটে উঠে। তার বুক ফেটে যাচ্ছিল যে, টাকার অভাবে তিনি মিলাদ শরীফের অনুষ্ঠান করতে পারছেন না। যার কারণে তিনি মোর্শেদের অসিলা ধরে আল্লাহ্র কাছে আজিজি করছেন এবং কিছু মানতও করলেন। তখন তার অফিসের সহকর্মী তাকে জিজ্ঞেস করেন কেন তার মন খারাপ? তিনি বিস্তারিতভাবে সবকিছু বর্ণনা করেন, তার মনোবাসনার কথা এবং তার কাছে যে টাকা নেই সেকথাও। তা শুনে তার সহকর্মী তাকে ১০,০০০/- টাকা দিলেন মিলাদ শরীফ এবং কেক কাটার অনুষ্ঠান করার জন্য। তিনি অবাক হয়ে গেলেন মহান আল্লাহ্র কী অপার দয়া, যার সাথে মাত্র কয়দিন আগে পরিচয় তিনি টাকা দিলেন ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর অনুষ্ঠান করার জন্য দিলেন। তিনি মনে মনে মোর্শেদের পরশময় কদম মোবারকে শতকোটি চুম্বন খেয়ে শুকরিয়া আদায় করলেন, আর মহান আল্লাহ্র শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন মোর্শেদের অসিলায় দয়াময় আল্লাহ্ তার মনের আশা পূরণ করলেন। পরবর্তীতে তিনি অনুষ্ঠানটি খুব সফলভাবে সম্পন্ন করেন এবং সেখানে অনেক লোক তরিকা গ্রহণ করেন।
অলী-আল্লাহগণ আল্লাহর রঙে রঙিন। তাই তাঁদের অসিলা ধরে আল্লাহর সাহায্য চাইলে মানুষ আল্লাহ্র সাহায্য পেয়ে থাকে। এ ঘটনা তাই প্রমাণ করে। যেখানে তার টাকা ছিল না, সেখানে মোর্শেদের অসিলায় আল্লাহ্ দয়া করে একজনকে দিয়ে তার মনোবাসনা পূরণ করে দিয়েছেন এবং ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-এর মতো অনুষ্ঠান করার তৌফিক দান করেন। আশেকে রাসুল ছাদেক পরবর্তীতে মোর্শেদের কাছে এসে ঘটনার বর্ণনা দেন এবং মানত আদায় করেন।
[লেখক: ইসলামি গবেষক]