অলৌকিক!
অলী-আল্লাহর বিরুদ্ধে ওয়াজ করায় খতিবের জবান বন্ধ হয়ে গেলো
আশেকে রাসুল তালুজ ইসলাম টিটু রাজধানীর বাড্ডার অধিবাসী। ঘটনাটি তার নিজের জীবনের। ২০০৩ খ্রিষ্টাব্দে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.) সম্মেলনের অনুষ্ঠানের পূর্বে উক্ত ঘটনাটি সংঘটিত হয়েছিল। মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, ‘সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ দয়াল রাসুল (সা.)-এর জন্ম ঈদ। মহান মোর্শেদের এ বাণীকে সামনে রেখে আশেকে রাসুল তাজুল ইসলাম টিটু ও এলাকার আশেকে রাসুলগণ রাহ্মাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর পবিত্র জন্মদিনের ঈদ উদ্যাপনের লক্ষ্যে সর্বপ্রকার প্রস্তুতি গ্রহণ করেন।
আশেকে রাসুল তাজুল ইসলাম টিটুর বাসা বাড্ডার ডি.এম.সি. ব-১৩৭, আর তার শ্বশুর বাড়ি পূর্ব বাড্ডার মদীনা নগরে অবস্থিত। আশেকে রাসুল টিটু ঈদের আনন্দ তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে ভাগাভাগি করার উদ্দেশ্যে তার শ্বশুর বাড়িতে আলোকসজ্জা ও মোহাম্মদী ইসলামের পতাকা এবং পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সম্বলিত পতাকা উত্তোলন করেন। তাছাড়া উক্ত বাড়ির ছাদ সাজানো হয়। সম্মেলনের দুদিন পূর্বেই তিনি সাজানোর কাজ সম্পন্ন করেন। বিষয়টি এলাকার সর্বসাধারণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অনেকে কৌতূহলী হয়ে বিষয়টি জানতেও চায়। অতঃপর বিষয়টি জানার পর তারা প্রশংসা করে এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর জন্মদিনে এ জাতীয় আনন্দ প্রকাশ করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে। কিন্তু বাধ সাধে এলাকার মসজিদের খতিব সাহেব।
আশেকে রাসুল তাজুল ইসলাম টিটু সম্মেলনের দিন রাজধানীর বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে তার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) দয়াল বাবাজানের কদম মোবারকে হাজির হন এবং সারাদিন মোর্শেদের সহবতে থেকে হাউস ও মহব্বতের সাথে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-এর সম্মেলন উদযাপন করেন। এদিকে সম্মেলন শেষে তিনি তার শ^শুর বাড়িতে যান। এ সময় তার দুশ্যালক তাকে জানায়, “ভাইয়া! আজ আমাদের মসজিদের খতিব বাবা দেওয়ানবাগী সম্পর্কে কুরুচিপূর্ণ বক্তব্য দিয়েছে, বাজে মন্তব্য করেছে, এমনকি আপনার সম্পর্কে বলেছে যে, আপনিও দেওয়ানবাগীর কাছে গিয়ে নষ্ট হয়ে গেছেন। এমনিভাবে সে আরো অনেক কিছু বলেছে।” এদিকে মসজিদের খতিব সাহেব মিরপুরের একটি বড়ো মাদরাসায় চাকরি করে আর সপ্তাহের একদিন শুক্রবার বাড্ডায় এ মসজিদে খতিবের কাজ করে। জুমার নামাজ শেষ করে সে তার শ্বশুরবাড়িতেই প্রতি শুক্রবার খাওয়া দাওয়া করে। এ ঘটনায় তার অন্তরকে ব্যথিত করে তুলল। তিনি খতিব সাহেবের সাথে কথা বলে এ ঘটনার প্রতিবাদ করার জন্য অস্থির হয়ে উঠেন। পরবর্তী জুমায় তিনি বাবে রহমতে না গিয়ে এলাকার মসজিদের খতিবের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। জুমার নামাজ শেষ করে তিনি তার শ^শুরবাড়িতে বসে আছেন। যথাসময়ে খতিব সাহেব খাওয়া-দাওয়া করার জন্য তার শ^শুরবাড়িতে আসে। খতিব সাহেব বয়স্ক মানুষ। আশেকে রাসুল টিটু জিজ্ঞেস করলেন- “চাচা! আপনি দেওয়ানবাগী সম্পর্কে খুৎবায় খারাপ কথা বলেন কেন? দেওয়ানবাগী যে ভুল পথে আছে আপনি জানলেন কীভাবে? আপনি কি দেওয়ানবাগ শরীফে গিয়েছেন?” খতিব সাহেব তার প্রশ্নের জবাব দিয়ে বলে, “জামাই আপনি ছোটো মানুষ, দেওয়ানবাগী সম্পর্কে আপনি সব জানেন না।” আশেকে রাসুল টিটু বলেন, “আমি ছোটো বেলা থেকেই আমার মোর্শেদের কদম মোবারকে আসা যাওয়া করি। তাহলে দেওয়ানবাগী সম্পর্কে আমি জানি না, আপনি জানেন? চাচা! আমি আপনাকে সাবধান করছি, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান প্রসঙ্গে আর কোনো বাজে মন্তব্য করবেন না।” খতিব সাহেব বলল, “জামাই! আপনি কি আমাকে হুমকি দিচ্ছেন?” আশেকে রাসুল টিটু বলেন- “না, আমি আপনাকে সাবধান করছি। এ সময় আমি খতিব সাহেবকে বুঝিয়ে বলি, চাচা! আল্লাহ্ এত সুন্দর কণ্ঠ আপনাকে দিয়েছেন, আর আপনি যদি আল্লাহ্ প্রদত্ত এ সুন্দর কণ্ঠ দিয়ে ঐ আল্লাহর বন্ধুর বিরুদ্ধে ওয়াজ করেন এবং এতে যদি আল্লাহ্ অসস্তুষ্ট হয়ে আপনার কণ্ঠের বাকশক্তি কেড়ে নেন তবে আপনি কী করবেন?” খতিব সাহেব রেগে গেল, চেঁচামেচি করে উঠল। তাকে বলল, “তাহলে তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছ, ঠিক আছে তুমি পারলে আমাকে কিছু করে দেখিও।” এ সময় খতিব মহান মুর্শেদ বাবা দেওয়ানবাগীকে নিয়ে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের সাথে কথা বলে। এমতাবস্থায় আশেকে রাসুল তাজুল ইসলাম টিটু আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলেন না। খতিবকে লক্ষ্য করে বললেন, “আল্লাহর কসম! আমার মহান মোর্শেদ যদি সত্যিই এ যুগের অলীদের বাদশাহ হয়ে থাকেন তবে আপনি আর একদিন মসজিদের মিম্বরে দাঁড়িয়ে আমার মোর্শেদ সম্পর্কে কটুক্তি করেন আল্লাহ্ আপনার কণ্ঠের বাকশক্তি কেড়ে নেবেন। দেখবেন, সত্যিই আল্লাহ্ আপনার বাকশক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে তাঁর বন্ধুর সত্যতা প্রমাণ করবেন।” এ কথা বলেই তিনি ড্রয়িং রুম থেকে বেরিয়ে যান। এদিকে আশেকে রাসুল টিটু বাবাজানের কাছে আজিজি শুরু করেন। বাবা! আপনি দয়া করেন, আপনি যে মহাসত্য, আপনি যে মহান অলী-আল্লাহ্ এর প্রমাণ আপনি কায়েম করুন।
এদিকে খতিব সাহেব পরবর্তী শুক্রবার জুমার খুৎবা দিতে গিয়ে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বাবাজান সম্পর্কে তার স্বভাবসুলভ অলী-বিদ্বেষী বক্তব্য দিতে শুরু করে। অতঃপর খুৎবা শেষ করে সে নামাজও আদায় করে। এ বিষয়টি সন্ধ্যায় তার শ্যালকরা তাকে অবহিত করে। সেই মুহূর্তে সে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারছিলেন না। তিনি একাকী রুমে প্রবেশ করে মহান মোর্শেদের কাছে কান্নাকাটি করছিলেন। এ সময় তিনি আল্লাহ্কে বলেন, “হে দয়াময় খোদা! দেওয়ানবাগী যদি সত্যিই তোমার বন্ধু হয়, তবে আমি যে চ্যালেঞ্জ করেছি দয়া করে তা বাস্তবায়ন করুন।”
তিনমাস পরের ঘটনা। আশেকে রাসুল টিটু এক শুক্রবার ঐ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে যান। কিন্তু খতিব সাহেবকে দেখতে পেলেন না। তিনি মুসল্লিদের জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার! খতিব সাহেব কোথায়? মুসুল্লিদের মধ্যে কেউ কেউ বললো, উনি তো আজ অনেকদিন মসজিদে আসেন না, উনি অসুস্থ, কথা বলতে পারে না, উনার গলায় যেন কি রোগ হয়েছে। বিষয়টি সবিস্তারে তার শ^শুর তাকে জানালেন যে, খতিব সাহেবের গলায় এক দুরারোগ্য ব্যাধি হয়েছে, অনেক ডাক্তার দেখিয়েছে কিন্তু কোনো ফল হয়নি। এখন মসজিদে খুৎবা দেওয়া তো দূরের কথা সে কোনো কথাই বলতে পারে না। বোবার তো একটা বাকশক্তি থাকে, উনার তাও নেই। যা বলার ইশারায় বলে। এ কথা শুনে আশেকে রাসুল সাথে সাথে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে, মনে মনে মোর্শেদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তার তখন এই ভেবে চোখ থেকে আনন্দ অশ্রু গড়িয়ে পড়ে যে, তার মোর্শেদ যে সত্য, তাঁর প্রচরিত মোহাম্মদী ইসলাম যে সত্য মহান রাব্বুল আলামিন তার প্রমাণ প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি সাথে সাথে বিষয়টি ফোন করে মহান মোর্শেদের কনিষ্ঠ সাহেবজাদা, দেওয়ানবাগ শরীফের পরিচালক ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ. এ মঞ্জুর-এ-খোদা (মা. আ.)-কে অবহিত করেন এবং তাঁর মাধ্যমে মোর্শেদের কদমে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।