আত্মশুদ্ধি: তাসাউফভিত্তিক পর্যালোচনা
ড. মুহাম্মদ নাছিরউদ্দীন সোহেল
‘আত্মা’ ও ‘শুদ্ধি’ এই দুটি শব্দের সমন্বয়ে ‘আত্মশুদ্ধি’ শব্দটি গঠিত। ইংরেজিতে একে ঝবষভ-Self-Purification বলা হয়। মানবজীবনে আত্মশুদ্ধি শব্দটির তাৎপর্য ও গুরুত্ব অপরিসীম। কেননা মানুষের চরিত্র মাধুর্যের মূলভিত্তি হলো আত্মশুদ্ধি। আত্মশুদ্ধি লাভকারী ব্যক্তি সমাজে আদর্শ চরিত্রের অধিকারী হিসেবে খ্যাতি লাভ করে থাকেন। আমাদের সমাজে বহুল প্রচলিত একটি কথা রয়েছে- ‘আলোকিত মানুষ চাই’। একজন মানুষ নিজেকে আলোকিত মানুষ হিসেবে তখনই গড়ে তুলতে পারেন, যখন তিনি আত্মশুদ্ধি লাভ করতে পারবেন।
আত্মশুদ্ধি সাধারণ কোনো বিষয় নয়, এর ব্যাপকতা অনেক গভীর। আত্মশুদ্ধির সাথে জড়িত রয়েছে মানুষের আত্মা বা সত্তা। মানুষের মূল চালিকা শক্তিই হলো আত্মা। মূলত জীবাত্মা (নফস) এবং পরমাত্মার (রূহ) সমন্বয়ে হলো ‘আত্মা’। জীবাত্মা ৩ ভাগে বিভক্ত, যথা- ১) পশুর আত্মা, ২) হিংস্র জন্তুর আত্মা ও ৩) শয়তানের আত্মা। অন্যদিকে রূহ বা পরমাত্মা ২ ভাগে বিভক্ত, যথা- ১) মানবাত্মা ও ২) ফেরেশতার আত্মা।
মানুষ জীবাত্মার কারণেই নানাবিধ পাপ কর্মে জড়িয়ে পড়ে। জীবাত্মাকে বেষ্টন করে রেখেছে ষড়রিপু। এই ষড়রিপু (Six Instincts) হচ্ছে- কাম (Lust), ক্রোধ (Anger), লোভ (Greed), মোহ (Illusion), মদ (Vanity) ও মাৎসর্য (Envy)। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর প্রণীত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ তাফসীর শরীফের ২য় খণ্ডের ৪৬৩ পৃষ্ঠায় ষড়রিপুর ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। তিনি বলেন-
১. কাম রিপু বলতে বুঝায়- কামনা ও কামাচার তথা অসংযমী কাম প্রবৃত্তি। এ রিপুর প্রভাবে মানুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হয় এবং অন্যায় পথে সম্ভোগেচ্ছা চরিতার্থ করে থাকে।
২. ক্রোধ রিপু বলতে বুঝায়- রাগ, রোষ, গোস্বা ও ক্রোধপ্রবণ প্রবৃত্তি। এ রিপুর প্রভাবে মানুষ মারামারি দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও রক্তপাত ঘটায়।
৩. লোভ রিপু বলতে বুঝায়- লিপ্সা, কামনা, কাম্য বস্তু পাওয়ার প্রবল বাসনা ও পরের দ্রব্য আত্মসাৎ করার প্রবৃত্তি। এ রিপুর প্রভাবে মানুষ চুরি, ডাকাতি, দুর্নীতি তথা অন্যায় পথে সম্পদের মালিক হওয়ার চেষ্টা করে।
৪. মোহ রিপু বলতে বুঝায়- দুনিয়ার প্রভাব-প্রতিপত্তি, ক্ষমতার লিপ্সা, অজ্ঞতা, অবিদ্যা, মূর্খতা, মূঢ়তা, নির্বুদ্ধিতা, বিবেকশূন্যতা, মোহজনিত ভ্রান্তি ও অজ্ঞতাজনিত অন্ধকার। এ রিপুর প্রভাবে পার্থিব প্রভাব-প্রতিপত্তি বিস্তারে সচেষ্ট থাকে। নশ্বর পৃথিবীর মায়ায় সে এমনভাবে ডুবে যায় যে, আপন স্রষ্টাকে স্মরণ করতে পারে না।
৫. মদ রিপু বলতে বুঝায়- আনন্দ-স্ফূর্তি প্রবৃত্তি। এ রিপুর প্রভাবে মানুষ আনন্দে বিভোর হয়ে থাকে। এর ফলে ধরাকে শরা জ্ঞান করে।
৬. মাৎসর্য রিপু বলতে বুঝায়- ঈর্ষা, হিংসা, পরশ্রীকাতরতা প্রবৃত্তি। এ রিপুর প্রভাবে মানুষ অপরের উন্নতি ও সাফল্য পছন্দ করে না এবং অন্যের ভালো দেখতে পারে না। নিজের স্বার্থ ব্যতীত কোনো কিছুই তাকে স্বস্তি দেয় না।”
উল্লিখিত ষড়রিপু হলো আত্মার রোগ। এই প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, “এই রিপুসমূহ মানুষকে খারাপ পথে চালনা করে, মানুষের আত্মাকে অশুদ্ধ করে থাকে। প্রকৃতপক্ষে এ রিপুসমূহের প্রভাবে মানুষ পাপাচারে আসক্ত হয়ে পড়ে। আর পাপের কালিমা মানুষের হৃদয়কে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে, আল্লাহ্ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়।” (শান্তি কোন পথে? পৃষ্ঠা-৯৭)
আমাদের দেহ বা শরীরে রোগ হলে তা থেকে আরোগ্য লাভের জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। তখন বাধ্য হয়ে আমরা চিকিৎসকের (Physician) নিকট যাই। চিকিৎসক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রোগ নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। চিকিৎসকের দেওয়া ব্যবস্থাপত্র (Prescription) অনুযায়ী ঔষধ সেবন করলে আমাদের দেহের রোগ ভালো হয়। রোগী যদি ঔষধ না খেয়ে ব্যবস্থাপত্রে লিখিত ঔষধগুলোর নাম মুখস্ত করেন, তবে তার রোগ সারবেনা, বরং সে মৃত্যুমুখে পতিত হবে। কিন্তু প্রশ্ন হলো আত্মার রোগের চিকিৎসা আমরা কীভাবে করব? শুধু তাই নয়, আত্মার রোগের চিকিৎসার জন্য আমরা কাদের নিকট যাব? মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কুরআনে বলেন, “আমার সৃষ্টির মাঝে এমন এক দল সম্প্রদায় রয়েছে, যারা মানুষকে হেদায়েতের পথ দেখাবে এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবে।” (সূরা আল আরাফ-৭ : আয়াত ১৮১)
পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের মাধ্যমে সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ্ তাঁর মনোনীত মহামানবদের মাধ্যমে মানুষকে আত্মশুদ্ধির শিক্ষা দেন এবং হেদায়েতের পথ দেখান। মূলত হেদায়েতকারী মহামানবগণ মোর্শেদ তথা পথপ্রদর্শক হিসেবে জগতের বুকে আবির্ভূত হন। নবুয়তের যুগে যারা মোর্শেদ হয়ে এসেছেন, তাঁদেরকে নবি-রাসুল বলা হয়। নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে যারা মোর্শেদ হয়ে আসেন তাঁদেরকে আউলিয়ায়ে কেরাম বলা হয়। বর্তমান যুগে অলী-আল্লাহ্গণের সান্নিধ্যে গিয়েই মানুষকে তার আত্মার রোগের চিকিৎসা করতে হয়। আত্মশুদ্ধির জন্য অলী-আল্লাহ্গণের সাহচর্য ব্যতীত বিকল্প কোনো পথ নেই।
এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “আল্লাহ্ যাকে গোমরাহ করেন, আপনি কখনো তার জন্য (মোর্শেদ) পথপ্রদর্শনকারী অভিভাবক পাবেন না।” (সূরা আল কাহ্ফ ১৮ : আয়াত ১৭)
কিন্তু বর্তমান সমাজে অনেকের মাঝে বদ্ধমূল ধারণা এই যে, পবিত্র কুরআন ও হাদিস অধ্যয়নই যথেষ্ট, অলী-আল্লাহ্গণের সান্নিধ্যে যাওয়ার প্রয়োজন নেই! পবিত্র কুরআন ও হাদিস অধ্যয়ন করে ধর্ম বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে জ্ঞানী হওয়া যায়, কিন্তু আত্মশুদ্ধি লাভ করা যায় না। আত্মশুদ্ধি লাভ করার জন্য যিনি পবিত্র কুরআনের আলোকে আলোকিত অর্থাৎ যিনি জীবন্ত কুরআন তাঁর সান্নিধ্যে যেতে হবে এবং তাঁর প্রদর্শিত পথে নিজেকে পরিচালিত করে সঠিকভাবে ধর্ম পালন করতে হবে।
হযরত রাসুল (সা.) ফরমান, “যে ব্যক্তি তার জামানার ইমামকে চিনতে পারল না, আর এমতাবস্থায় যদি তার মৃত্যু ঘটে, তবে তার মৃত্যু জাহেলি অবস্থায় অর্থাৎ সে ইমানহারা হয়ে মৃত্যুবরণ করবে।” (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা- ৩৬)
হযরত রাসুল (সা.)-এর এই বাণী মোবারক থেকে সুস্পষ্ট বুঝা যায় যে, ইমান নিয়ে কবরে যেতে হলে অবশ্যই যুগের ইমামের সান্নিধ্যে যেতে হবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আমরা এত বেশী কিতাব নির্ভর হয়ে পড়েছি যে, আল্লাহর বন্ধুদের সাহচর্যে যাওয়ার প্রয়োজনবোধ করি না। অথচ মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর সকল আসমানি কিতাব তাঁর বন্ধুদের উপর নাজিল করেছেন। সমকালীন যুগের মানুষেরা নবি-রাসুলদের নিকট থেকেই মহান আল্লাহর পরিচয় লাভ করেছেন এবং আল্লাহ্ প্রেরিত নবি-রাসুলদের অনুসৃত পথে পরিচালিত হয়ে আত্মশুদ্ধি লাভ করতে সক্ষম হয়েছেন। আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের (Age of Darkness/Ignorance) বর্বর মানুষেরা হযরত রাসুল (সা.)-এর সহবতে গিয়ে আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে শ্রেষ্ঠ জাতিতে পরিণত হন। হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর তাঁর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শের অনুসারী আউলিয়ায়ে কেরাম-এর নিকট গিয়ে মানুষ আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর পরিচয় লাভ করতে সক্ষম হচ্ছেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, কিতাব তথা বই পুস্তক অধ্যয়ন করে যদি চরিত্রবান হওয়া যেত, তাহলে শৈশব থেকেই মানুষ গ্রন্থে লিপিবদ্ধকৃত বিভিন্ন অমিয় বাণী পাঠ করে চরিত্রবান হয়ে যেত। কেননা প্রাথমিক শিক্ষা থেকেই শিক্ষার্থীরা পড়ে আসছে- চরিত্র মানবজীবনের মুকুটস্বরূপ, “Money is lost nothing is lost, Health is lost something is lost, Character is lost everything is lost” ইত্যাদি। প্রাথমিক শিক্ষা থেকে উচ্চমাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা এই সকল নীতি বাক্য পাঠ করে আসার পরও যুব সমাজের নৈতিক অবক্ষয় কি রোধ হয়েছে? মূলত কিতাব নয়, বরং আল্লাহ্ প্রেরিত মহামানবদের সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁদের সুমহান শিক্ষা গ্রহণ করেই আত্মশুদ্ধি লাভ করতে হবে।
এই প্রসঙ্গে ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর প্রণীত ‘মোর্শেদের দরবারে মুরীদের করণীয়’ গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন, “আইনের গ্রন্থাবলি অধ্যয়ন করে একজন ব্যক্তি বিচারক হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেন। যে কোনো বিচারের রায় বিচারককেই প্রদান করতে হয়। বিচারকের আসনে আইনের সর্বাপেক্ষা মূল্যবান গ্রন্থটিকে রেখে দিলে সেই গ্রন্থ রায় প্রদান করতে পারবে না। তাই যিনি আইনের গ্রন্থ অধ্যয়ন করে আইন বিষয়ক যাবতীয় তথ্যাবলি নিজ হৃদয়ে ধারণ করতে পেরেছেন, তিনিই সঠিকভাবে বিচার কার্য পরিচালনা করতে সক্ষম হবেন। অনুরূপভাবে মহান মোর্শেদ হলেন কুরআনের চরিত্রে চরিত্রবান তথা আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান।” (২য় সংস্করণ, পৃষ্ঠা-১৪৩)
তাঁর এই পর্যবেক্ষণ থেকে বিষয়টি পরিষ্কার যে, মহান মোর্শেদের সান্নিধ্যে গিয়েই মানুষ কুরআনের চরিত্রে চরিত্রবান তথা আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হতে পারেন।
পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “আল্লাহর রঙে রঙিন হও।” (সূরা বাকারাহ ২ : আয়াত ১৩৮ )
হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, “তোমরা আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হও।”
উল্লিখিত পবিত্র কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর হাদীসের মর্মার্থ নিজ হৃদয়ে ধারণ করার জন্য প্রথম শর্তই হচ্ছে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা।
এই প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই সাফল্য লাভ করবে সে, যে আত্মশুদ্ধি লাভ করবে।” (সূরা আল আলা ৮৭ : আয়াত ১৪)
এছাড়া পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ আরো বলেন, “অবশ্যই সফলকাম হয়েছে সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করেছে। আর ব্যর্থ হয়েছে সেই ব্যক্তি, যে নিজেকে পাপাচারে কলুষিত করেছে।” (সূরা আশ শামস ৯১ : আয়াত ৯ ও ১০)
মহান আল্লাহর এই দুটি বাণী মোবারকে সুস্পষ্ট নিদের্শনা রয়েছে যে, আত্মশুদ্ধি লাভকারী ব্যক্তিই কেবল সাফল্য লাভ করবে। আর এই সাফল্য লাভ বলতে বুঝানো হয়েছে নফসের বেড়াজালে আবদ্ধ পরমাত্মাকে মুক্ত করা। কিন্তু সাধক একাকী সাধনা করে কখনই নফসের কুমন্ত্রণা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। এর জন্য প্রয়োজন যুগের ইমামের সান্নিধ্যে গমন। অলী-আল্লাহ্দের সান্নিধ্যে যাওয়ার জন্য মহান আল্লাহ্ স্বয়ং নির্দেশনা দান করেছেন।
এই প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, “হে বিশ্বাসী বান্দারা! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো এবং আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্য অসিলা অন্বেষণ করো।”(সূরা আল মায়িদাহ ৫ : আয়াত ৩৫) অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা যদি রহমান (আল্লাহ্) সম্পর্কে জানতে চাও, তবে যিনি তাঁর সম্পর্কে জানেন, তাঁকে জিজ্ঞাসা করো।” (সূরা ফুরকান ২৫ : আয়াত ৫৯) সুতরাং স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে যে, আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্য অসিলা আবশ্যক, আর এই অসিলা হচ্ছেন অলী-আল্লাহ্গণ। বর্তমান যুগের মানুষের জন্য পরম সৌভাগ্য যে, বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ ইমাম, মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান মানুষকে পবিত্র কুরআনের আলোকে আত্মশুদ্ধি লাভ করার শিক্ষা দিয়ে যাচ্ছেন। জগৎশ্রেষ্ঠ এই মহামানব মানবজাতিকে ৪টি শিক্ষা দিয়ে থাকেন। তন্মধ্যে সর্বপ্রথম শিক্ষাই হচ্ছে ‘আত্মশুদ্ধি’।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন, “মহান আল্লাহ্ তায়ালা মানুষকে তাঁর প্রতিনিধি করে জগতে প্রেরণ করেছেন। কিন্তু মানুষ পরিবেশ ও পারিপার্শ্বিকতার কারণে ষড়রিপুর বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে, প্রতিনিধিত্বের গুণ হারিয়ে ফেলে, যে কারণে আত্মশুদ্ধির প্রয়োজন দেখা দেয়।” (শান্তি কোন পথে? পৃষ্ঠা ৯৫) আত্মশুদ্ধি লাভ করার জন্য ষড়রিপুর সূক্ষ্ম শক্তিকে খারাপ পথ থেকে ফিরিয়ে আল্লাহর প্রেমে নিমগ্ন করার জন্য ফায়েজের সূক্ষ্ম শক্তির প্রয়োজন হয়। কোনো ব্যক্তি একাকী সাধনা করে এই ফায়েজ হাসিল করতে পারে না। আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সান্নিধ্যে এসে অসংখ্য পাপিতাপি মানুষ আত্মশুদ্ধির শিক্ষা গ্রহণ করে আলোকিত মানুষ হচ্ছে। আর এটি সম্ভব হচ্ছে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের দেওয়া ‘মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফা’ আমলের মাধ্যমে। কেননা সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর মুরিদ সন্তানকে প্রতিদিন ৬ বার মোরাকাবায় বসার নির্দেশ প্রদান করেছেন। তাঁর নির্দেশানুযায়ী মুরিদ প্রতিদিন মোরাকাবায় বসে আপন মোর্শেদের নিকট থেকে ফায়েজ হাসিলের মাধ্যমে নিজের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে থাকেন।
এই প্রসঙ্গে ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর প্রণীত ‘মোর্শেদের দরবারে মুরীদের করণীয়’ গ্রন্থে উপস্থাপন করেছেন, “ষড়রিপুর কুমন্ত্রণায় মানুষ যখন প্ররোচিত হয়, তখন সে আপন মোর্শেদের চেহারা মোবারক খেয়াল করে মোরাকাবা করলে মোর্শেদের পক্ষ থেকে তার ক্বালবে ফায়েজ বর্ষিত হয়। এর ফলে রিপুগুলো ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে। মূলত ইরেজার দিয়ে যেমন যে কোনো লেখা মুছা যায়, ঠিক তেমনি মোর্শেদের ফায়েজ হচ্ছে ইরেজারের মতো, যা গুণাহর ময়লাকে ধীরে ধীরে হৃদয় থেকে মুছে দেয়। মুরিদ তখন পরিশুদ্ধ আত্মার অধিকারী হতে সক্ষম হয়।” (২য় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ১৮৯)
পরিশেষে বলা যায় যে, আপন মোর্শেদের সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর প্রদত্ত ওয়াজিফা আমল পূর্বক তাঁরই গোলামির মাধ্যমে নিজের আমিত্বকে বিসর্জন দিতে পারলে আত্মশুদ্ধি লাভ করা যাবে। আর তখন ইবাদত বন্দেগিতেও মন বসবে এবং সকল প্রকার আমলই শুদ্ধ হবে। শুধু তাই নয় আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে সমাজ শুদ্ধ হবে।
[লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, দি পিপলস্ ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ]