Cancel Preloader

আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভ


অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এ জগতে নবুয়তের যুগে নবি-রাসুল এবং নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েত বা বন্ধুত্বের যুগে অসংখ্য অলী-আল্লাহ্ প্রেরণ করছেন। তারই ধারাবাহিকতায় রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান জগতে তাশরিফ গ্রহণ করেন। তিনি একদিকে যেমন হযরত রাসুল (সা.)-এর বংশধারার ২৩তম মহাপুরুষ, অপরদিকে সেজরা শরীফ অনুযায়ী ৩৬তম মহাপুরুষ। তাই বংশধারা এবং রুহানি জগত, এই উভয়দিকেই তিনি হযরত রাসুল (সা.) এবং হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বংশধর ও রুহানি সন্তান।
হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের ১৩১৭ বছর পর আল্লাহ্র মহান বন্ধু, আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান এই বাংলায় আগমন করেন। তিনি বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জাগরণ করেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান মহান রাব্বুল আলামিন এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে বিভিন্ন লকব প্রাপ্ত হন। তাঁর মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর দরবারে থাকা অবস্থায় গভীর সাধনা ও রিয়াজতের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে ১৯৮৩ সালে ১৬ই ডিসেম্বর সংস্কারক অর্থাৎ মোজাদ্দেদের দায়িত্ব লাভ করেন। তিনি আল্লাহ্ তায়ালার পক্ষ থেকে তিনি এই দায়িত্ব লাভের পর পবিত্র কুরআন ও হাদিস বহির্ভূত ইসলাম ধর্মে প্রবিষ্ট বিভিন্ন কুসংস্কার দূর করে সংস্কারের কাজ করেন।
১৯৮৮ সালের ১০ই মহররম পবিত্র আশুরার দিবসে তিনি যুগের ইমামের দায়িত্ব লাভ করেন। তখন তিনি এজিদী ইসলাম ও মোহাম্মদী ইসলামের পার্থক্য নিরূপণ করে একটি কিতাব রচনা করেন, যার নাম ‘এজিদের চক্রান্তে মোহাম্মদী ইসলাম’। তিনি বলেন- ইসলাম দু’ধারায় বিভক্ত, এজিদী ইসলাম ও মোহাম্মদী ইসলাম।
পরবর্তীতে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান হযরত রাসুল (সা.)-এর পক্ষ থেকে ১৯৮৯ সালে ‘মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী’ হিসেবে দায়িত্ব লাভের পর থেকে মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ, চরিত্র ও বাস্তব শান্তি সমাজে পুনর্জাগরিত করেছেন। তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুলে আকরাম (সা.)-এর পক্ষ থেকে মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী দায়িত্ব লাভের পর বলেন, আমাদের ধর্মের নাম হচ্ছে ‘মোহাম্মদী ইসলাম’। আমরা হযরত রাসুল (সা.)-এর রেখে যাওয়া ধর্ম মোহাম্মদী ইসলাম পালন করছি।
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর সকল ধর্মাবলম্বীর পথপ্রদর্শক হিসেবে হযরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক সকল নবি-রাসুলগণের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত প্রাপ্ত হন। সর্বশেষ মহান আল্লাহ্র প্রকৃত স্বরূপ- ‘তিনি নিরাকার নন, তাঁর নুরের রূপ আছে’ এই মহাসত্যটি পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে মানবজাতির নিকট প্রকাশ করার পুরস্কারস্বরূপ মহান রাব্বুল আলামিন ২০০৮ সালের ১০ই অক্টোবর, শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে অদ্যাবধি পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রবন্ধে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভ সম্পর্কিত ঘটনাটি উল্লেখ করা হলো-
মুসলিম জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) ১৯৯৬ সালের ২রা অক্টোবর, বুধবার সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানকে ‘আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত’ দান করেন। ঘটনাটি ছিল এরূপ- সেদিন শেষ রাতে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান স্বপ্নে দেখতে পান, একটি বিরাট এলাকা জুড়ে অসংখ্য ইমারত। সেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল পুরো এলাকাটা যেন একটা প্রাচীন নগরী। ঐ ইমারতগুলো পৃথিবীতে আগমনকারী সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামের আবাসগৃহ। প্রত্যেক পয়গম্বররের জন্য নির্ধারিত রয়েছে এক একটি ইমারত। সেখানে তাঁদের নিজস্ব সম্পদ তথা হীরা, মণি, মুক্তা পরিপূর্ণ করে রাখা আছে। ঐ ইমারতগুলো ভাঙ্গা না হলেও দেখতে বেশ পুরোনো শেওলা পড়া। কিন্তু বিল্ডিংগুলোর ভিতরে হীরা, মণি-মুক্তাগুলো খুব সুন্দর ঝকঝকে দেখাচ্ছিল। দয়াল বাবাজান আম্বিয়ায়ে কেরামের ইমারতগুলো ঘুরে ঘুরে দেখছিলেন। তিনি যখন হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর বাসগৃহের ছাদে যান, তখন হযরত ইব্রাহিম (আ.) দয়াল বাবাজানের কাছে এসে এই ইমারতগুলো দেখিয়ে বললেন, এগুলো নবি-রাসুলগণের ধর্ম। এগুলো আপনাকে দেওয়া হলো। এখন থেকে আপনি এগুলোর মালিক। ইচ্ছা করলে আপনি এগুলো রাখতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে এগুলো ভেঙ্গে আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন করে তৈরি করতে পারেন। আপনাকে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত প্রদান করা হলো। আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহিম (আ.) দয়াল বাবাজানকে এ দায়িত্ব প্রদান করার পর তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেল। জেগে উঠে তিনি দেখেন তখন রাত ৩টা বাজতে ৫ মিনিট বাকি।
নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মকে যথার্থরূপে সমাজের মানুষের নিকট তুলে ধরেছেন, মানুষের মাঝে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা দূর করেছেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের কাছে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল ধর্মের মানুষ আসতেন। তাঁর সহবতে এসে মানুষ অবারিত প্রশান্তি লাভ করতেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান প্রত্যেক ধর্মের মানুষকে স্রষ্টাকে পাওয়ার পদ্ধতি শিক্ষা দিতেন। তাঁর শাহাদত আঙ্গুলের স্পর্শে সকলের ক্বালবে আল্লাহ্ নামের জিকির জারি হতো। আসলে সৃষ্টির মূল লক্ষ্যই হলো তার নিজের মাঝে স্রষ্টাকে খুঁজে পাওয়া।
মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) ২০২০ সালের ২৮শে ডিসেম্বর, সোমবার ওফাত লাভ করেন। তিনি সঠিকভাবে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার জন্য তাঁর ওফাতের একদিন পূর্বে ২৭শে ডিসেম্বর রবিবার তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরকে মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানের দায়িত্ব অর্পণ করেন। এই দায়িত্ব অর্পণের মাধ্যমে সিরাজুম মুনিরার ধারক ও বাহক হিসেবে ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর দেশে বিদেশে মানুষকে তরিকা শিক্ষার মাধ্যমে চরিত্রবান করে তাদের হৃদয়কে আলোকিত করছেন। তিনি বিশ্বময় মোহাম্মদী ইসলাম প্রচার ও প্রসারের জন্য জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ যেন চরিত্র সংশোধন করে মনুষ্যত্ব বিকাশের মাধ্যমে নিজেকে আলোকিত করতে পারে, সেই প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
মহান আল্লাহ্ যেন মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরকে এই মহান দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করে দেশ-বিদেশের অগণিত আশেকে রাসুলকে সত্যের পথে পরিচালিত করার তাওফিক দান করেন। আমিন।
[লেখক: সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা]

সম্পর্কিত পোস্ট