ইমাম মুহাম্মদ বাকের বিন জয়নাল আবেদিন (রহ.)
মুহাম্মদ জহিরুল আলম
হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পরিবার পরিজন হলো আহলে বাইত। আহলে বাইত উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য হযরত নূহ (আ.)-এর কিস্তিতূল্য। যে ব্যক্তি তাতে আরোহণ করতে পারবে সে নিরাপদ। আর যে ব্যক্তি তাতে আরোহণ করতে পারবে না, সে পথভ্রষ্ট হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন, “হে নবি পরিবার! আল্লাহ্ তো তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে চান এবং তোমাদেরকে সর্বতোভাবে পবিত্র রাখতে চান।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ৩৩)।
ইতিহাস প্রমাণ করে হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর হতেই আহলে বাইতের সদস্যদের উপর আঘাত আসতে থাকে। উমাইয়্যা ও আব্বাসিয়রা চক্রান্ত করে আহলে বাইতকে খেলাফত থেকে দূরে রেখে নিজেরা খেলাফতের উপর লাফিয়ে পড়ে এবং খেলাফতকে তাদের ভোগ বিলাস ও আনন্দের হাতিয়ার হিসেবে গ্রহণ করে। ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য আহলে বাইতের সদস্য ও তাঁদের অনুসারীদের উপর রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় জুলুম, নির্যাতন এবং মিথ্যা রটনা শুরু করে। কিন্তু শত প্রতিবন্ধকতার মাঝেও আহলে বাইতের সদস্যগণ, উম্মতে মোহাম্মদীর কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এবং সকল পথভ্রষ্টতা ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন। মসজিদে নববিতে নবিনন্দিনী মা ফাতেমা (রা.)-এর খুৎবা কিংবা মোহাম্মদী ইসলামের সংকটকালে শেরে খোদা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু-এর ভূমিকা কিংবা এজিদের মুখোশ উন্মোচনে কারবালার প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর আত্মত্যাগ কিংবা এজিদের সম্মুখে ইমাম জয়নুল আবেদিন (রহ.)-এর স্পষ্ট উচ্চারণ কিংবা উমাইয়্যা ও আব্বাসিয় দ্বন্দ্বে অধোপতিত মুসলিম বিশ্বে জ্ঞানবিজ্ঞান ও ইসলামি সংস্কৃতি প্রসারে ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.)-এর বলিষ্ঠ নেতৃত্বসহ পরবর্তীতে অসংখ্য ঘটনায় আহলে বাইতের সদস্যগণ মানব মুক্তির পথনির্দেশনা দান করেছেন। প্রত্যেকেই আত্মশুদ্ধি শিক্ষাদানের মাধ্যমে সমকালীন যুগের মানুষকে আলোর পথে আহ্বান করেছেন।
রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর আহলে বাইতের ৫ম ইমাম হলেন ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.)। তিনি ৫৭ হিজরির রজব মাসের ১ তারিখ শুক্রবার মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর নাম মুহাম্মদ, কুনিয়া আবু জাফর। জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে তাঁকে বাকের বা প্রস্ফুটনকারী বলে অভিহিত করা হতো। ইমাম বাকের (রহ.) পিতা এবং মাতা উভয় দিক থেকে হযরত রাসুল (সা.), মা ফাতিমা (রা.) ও হযরত আলী (রা.)-এর সাথে সম্পৃক্ত। তাঁর পিতা ইমাম জয়নাল আবেদিন (রহ.)-এর মাধ্যমে হযরত রাসুল (সা.)-এর বংশ জগতের বুকে প্রকাশ লাভ করেছে। মাতা হযরত ফাতিমা বিনতে হাসান (রহ.) ইমাম হাসান (রা.)-এর কন্যা। অর্থাৎ তাঁর দাদা ও নানা হলেন মহানবি (সা.)-এর দৌহিত্র, শেরে খোদা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু ও মা ফাতেমা (রা.)-এর আদরের দুলাল ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হোসাইন (রা.)। ইমাম জয়নাল আবেদিন (রহ.)-এর সাথে হযরত ফাতিমা বিনতে আসাদ (রহ.)-এর বরকতময় বন্ধন হলো আহলে বাইতের পরিবারের স্মরণীয় বিবাহ। তাঁর জন্মগ্রহণের মাধ্যমে ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম হোসাইন (রা.)-এর বংশের মিলন ঘটে এবং এ বংশধারা পৃথিবীতে অব্যাহত থাকে।
ইসলামের যথার্থ শিক্ষা ও সংস্কৃতিসহ সার্বিক দিকগুলোর সংরক্ষণ, ক্রমবিকাশ এবং ক্রম-অগ্রগতি মহান ইমাম বাকের (রহ.)-এর কাছে চিরঋণী। তিনি প্রকাশ্যে এবং একক নেতৃত্বে তা করেছেন। আর এ জন্যই তাঁকে বাকের আল উলুম বা জ্ঞান বিদীর্ণকারী বলা হয়। তিনি প্রকাশ্যেই ছাত্র ও সমর্থকদের সমাবেশে ইসলামি বিশ্বাস ও কুরআন-হাদিস সম্পর্কে বক্তব্য রেখে, জ্ঞানগত বহু বিতর্কে অংশ নিয়ে তাঁর আলোচনাগুলোর সংকলন করে প্রকাশের অনুমতি দিয়ে ইসলামি জ্ঞান-আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে পেরেছিলেন। হযরত রাসুল (সা.) তাঁর বিশিষ্ট সাহাবি হযরত জাবের (রা.)-কে বলেছিলেন, “তুমি আমার বংশধর বাকেরকে দেখতে পাবে, তাঁর নামও হবে মুহাম্মাদ এবং তাঁর বৈশিষ্ট্যও হবে আমার মতো। সে হবে জ্ঞান-বিদারক বা উন্মোচক তথা বাকের। তুমি তাঁর কাছে আমার সালাম পৌঁছে দিও।” হযরত রাসুল (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী হযরত জাবের (রা.) হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর অনেক দিন জীবিত ছিলেন, তিনি সেই দায়িত্বও পালন করেছিলেন।
একদিন তিনি ইমাম জয়নাল আবেদিন (রহ.)-এর বাড়িতে এসে শিশু অবস্থায় ইমাম বাকের (রহ.)-কে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, “এই শিশু কে?” ইমাম বললেন, “আমার সন্তান যে আমার পরে ইমাম।” হযরত জাবের (রা.) উঠে দাঁড়ালেন এবং ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.)-এর কদম মোবারকে চুম্বন দিয়ে বললেন, “হে নবি (সা.)-এর সন্তান! আপনার জন্যে আমার জীবন উৎসর্গিত হোক, আপনার প্রপিতা নবি (সা.)-এর সালাম ও দরুদ গ্রহণ করুন। কেননা, তিনি আপনাকে সালাম দিয়েছেন।” ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.)-এর দৃষ্টি মোবারক তখন পানিতে ভরে যায়। (আমালী, শেখ সাদুক, পৃষ্ঠা ২১১)।
জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তার অগাধ পাণ্ডিত্য ছিল এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের অনেক জটিল রহস্য তিনি উন্মোচন করেছেন। সেই সময়ের বিখ্যাত পণ্ডিতরা ইমাম বাকের (রহ.)-এর সমূদ্রসম জ্ঞানের কাছে ছিলেন বিন্দুসম পানির মতো । তৎকালীন পণ্ডিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত আব্দুল্লাহ বিন আতা মাক্কি এ সম্পর্কে বলেছেন, ইমাম বাকের (রহ.)-এর সাথে জ্ঞানগর্ভ আলোচনায় বিখ্যাত মনীষীদের যেভাবে অসহায় দেখেছি, অন্য কারো সাথে আলোচনায় সেরকমটি হতে দেখিনি। বিশিষ্ট জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত হাকাম বিন উতাইবাহকে দেখেছি ইমামের পাশে এমনভাবে বসে থাকতে যেমনটি একজন ছাত্র তার শিক্ষকের পাশে বসে থাকে। ইমাম হোসাইন (রা.)-এর পুত্র ইমাম জয়নাল আবেদিন (রহ.)-এর শাহাদতের পর তাঁর সন্তান ইমাম বাকের (রহ.) ১৯ বছর মুসলিম বিশ্বের অতি স্পর্শকাতর সময়ে উম্মাহর নেতৃত্ব ও ইমামতের গুরুদায়িত্ব পালন করেন। এই সময়টিতে মুসলিম বিশ্বে উল্লেখযোগ্য রাজনৈতিক পট পরিবর্তিত হয় এবং আব্বাসিয়রা উমাইয়্যাদের কাছ থেকে ক্ষমতা গ্রহণ করে। ইমাম বাকের (রহ.) এ সময় পরিবর্তিত পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে জ্ঞানবিজ্ঞান ও ইসলামি সংস্কৃতি প্রসারের কাজ করেন। তিনি মুসলিম বিশ্বে জ্ঞানগত ও সাংস্কৃতিক আন্দোলন গড়ে তোলেন, যার ফল পরবর্তী যুগে মুসলিম উম্মাহ পেতে শুরু করে। তিনি ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠির ইসলাম বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান এবং মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা অনুযায়ী বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির প্রসারের কাজে হাত দেন। বিশিষ্ট মুসলিম মনীষী শেখ তুসি ইমাম বাকের (রহ.)-এর ছাত্রসংখ্যা ৪৬২ জন বলে উল্লেখ করেছেন। তৎকালীন বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা জ্ঞানের দীক্ষা নেওয়ার জন্য ইমামের সমীপে উপস্থিত হতেন।
ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.) অনেক মু‘জেজা বা অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। যেমন, তিনি একবার এক অন্ধ ব্যক্তিকে দৃষ্টিশক্তি দান করেন, একবার এক শক্রকে তার মৃত্যুর পর জীবিত করেন, সঙ্গীদের মনের কথা বলে দেওয়া, নিজের শাহাদতের সময়কাল বলে দেওয়া ইত্যাদি। তিনি ছিলেন একদিকে শ্রেষ্ঠ আবেদ ও পরহেজগার এবং অন্যদিকে সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও শ্রেষ্ঠ নেতা, আইনবিদ ও সংস্কারক। তিনি নামাজে আল্লাহর সঙ্গে এমনভাবে কথা বলতেন যেন তিনি সরাসরি আল্লাহ্কে দেখছেন। পরহেজগারদের আদর্শ হওয়া সত্ত্বেও তিনি কঠোর পরিশ্রম করে কায়িক শ্রমের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করতেন। কোনো সাহায্য প্রার্থী বা অভাবগ্রস্থ ব্যক্তি কখনও ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.)-এর কাছে সাহায্য চেয়ে খালি হাতে ফিরেনি।
ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.) কয়েকটি মূল্যবান কিতাবের প্রণেতা। তাঁর একটি কিতাবের নাম ‘মাআসিরুল বাক্বির’। এ গ্রন্থে আত্মার বৈশিষ্ট্য, আলেমদের বৈশিষ্ট্য ও মহান আল্লাহর নানা গুণ এবং তাঁর খোদায়ি সত্তার বিষয়সহ বহু বিষয়ে আলোচনা রয়েছে। তাঁর আরেকটি গ্রন্থের নাম ‘উম্মুল কিতাব’। এতে রয়েছে আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিক নানা প্রতীকের ব্যাখ্যা সম্পর্কিত আলোচনা। এ ছাড়াও পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা বিষয়ে ইমামের একটি সংকলনও রয়েছে, যার নাম ‘তাফসির আল বাক্বির’।
হিজরি শতাব্দির প্রথম দিকে কাগজ শিল্প রোমানদের হাতে থাকায়, কাগজের মুদ্রায় সর্বদা খ্রিষ্টানদের প্রতীক থাকত। এ বিষয়টি নিয়ে উমাইয়্যা শাসক আবদুল মালেকের সাথে রোমের সম্রাটের বিরোধ চরম আকার ধারণ করলে, আবদুল মালেক নিরুপায় হয়ে ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.)-এর শরণাপন্ন হয়ে রোমের সম্রাটের হুমকি সম্পর্কে জানান ও সমাধান চান। ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.) সুন্দর সমাধান দেন। তিনি নতুন মুদ্রা তৈরি করতে বলেন, মুদ্রার এক পিঠে সূরা ইখলাস ও অন্য পিঠে হযরত রাসুল (সা.)-এর নাম লিখতে বলেন। মুদ্রার ওজন সম্পর্কে তিনি বলেন, দশ দিরহাম করে তিন ধরনের মুদ্রা তৈরি করবে, যার প্রতিটির ওজন হবে সাত মিসকাল। তিনি আরো বলেন, যে শহর থেকে মুদ্রা তৈরি করা হবে সেই শহরের নাম, মুদ্রা তৈরির তারিখ ও বছর তাতে উল্লেখ থাকবে। তাঁর এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়ে ইসলামি দেশগুলোতে রোমান মুদ্রার বদলে নতুন ইসলামি মুদ্রার প্রচলন শুরু হয়। (আল মাহাসেন ওয়াল মাসাভী, বাইহাকি, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৩২-২৩৬)।
ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.) বনি উমাইয়্যা শাসকদের নানা কুকীর্তির সমালোচনা করতেন। ফলে উমাইয়্যা শাসক হিশাম বিন আবদুল মালিক তাঁকে সিরিয়ায় নিজ দরবারে তলব করে। ইমাম বাকের (রহ.) সেখানে উপস্থিতি হয়ে বলেছিলেন-“তোমার হাতে রয়েছে ক্ষণস্থায়ী রাজত্ব, কিন্তু আমাদের জন্যই হলো চিরস্থায়ী নেতৃত্ব ও শাসন এবং খোদাভীরুদের জন্যই রয়েছে শুভ পরিণাম।” সিরিয়ায় ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.)-এর উপস্থিতি তাঁর আধ্যাত্মিক ও জ্ঞানগত শ্রেষ্ঠত্বকে সবার কাছেই স্পষ্ট করে দেয়। সেখানে তিনি ইসলামের প্রকৃত রূপকে স্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরেন। ফলে গণজাগরণের ভয়ে ভীত হিশাম ইমামকে মদীনায় ফেরত পাঠায়, কিন্তু তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র করতে থাকে।
ইমাম মুহাম্মদ বাকের (রহ.) ৫৭ বছর বয়সে ১১৪ হিজরির জিলহজ মাসের ৭ তারিখে দুরাচার উমাইয়্যা শাসক হিশাম বিন আবদুল মালিকের চক্রান্তে বিষ প্রয়োগে শহিদ হন। কিন্তু পূর্বেই অর্থাৎ শাহাদতের দিন সন্ধ্যায় তিনি তাঁর সন্তান ইমাম জাফর সাদেক (রহ.)-কে আল্লাহর সান্নিধ্যে যাওয়ার ইঙ্গিত দান করেন। পরদিন এ মহামানবকে জান্নাতুল বাকীতে ইমাম হাসান (রা.) ও ইমাম জয়নাল আবেদিন (রহ.)-এর সমাধিস্থানের পাশে সমাহিত করা হয়।
অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর হতেই আহলে বাইতের সদস্যগণের উপর একের পর এক আঘাত আসতে থাকে, ৫০ বছর পার না হতেই কারবালার নজিরবিহীন ঘটনার মাধ্যমে মুসলমানের লেবাস ধারণ করে, মুসলমানদের খলিফার আসনে বসে উমাইয়্যারা মোহাম্মদী ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র শুরু করে। কিছু মোনাফেক লোভের বশে ও রাষ্ট্রীয় আনুকল্য লাভের আশায় আহলে বাইতের মর্যাদা সম্মন্ধে জেনেও তাঁদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। তবুও আহলে বাইতের সদস্যগণ যুগে যুগে মানুষকে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধ করে যান। এরই ধারাবাহিকতায় একবিংশ শতাব্দীর শিরোভাগে মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান আমাদের মাঝে আগমন করেন। তিনি ঘোষণা করেন চরিত্রহীন ব্যক্তির কোনো ধর্ম নাই, ইসলাম একটি শান্তির চরিত্রের নাম। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান সকল কুসংস্কার দূর করে হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামকে বিশ্বময় প্রতিষ্ঠিত করেন। যুগশ্রেষ্ঠ এ মহামানব ২৮ ডিসেম্বর ২০২০খ্রি, সোমবার ওফাত লাভ করেন। সঠিকভাবে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার জন্য ২৭ ডিসেম্বর ২০২০খ্রি, রবিবার উপস্থিত ৪ পুত্র, ২ কন্যা, তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্রবধু ও খাদেমদের সম্মুখে কতিপয় নির্দেশনামূলক অছিয়ত প্রদান করেন। তিনি অছিয়তে স্পষ্ট ঘোষণা দেন, “আমি মেজো হুজুরকে (ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা) মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। আর তোমরা ৩ ভাই ও ২ বোন তাঁকে সহযোগিতা করবে।” এ অছিয়তনামাই মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার রূপরেখা।
দীর্ঘ পনেরশত বছর পর আজও আমরা ইতিহাসের ব্যতিক্রম কিছু পাই না। হীন স্বার্থের লোভে কিছু মোনাফেক যুগের মহামানবের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পিছপা হয় না, তাদের বিবেকেও বাঁধে না। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, “আল্লাহর বাণী- ‘যদি অছিয়ত শুনার পর কেউ তাতে কোনো রকম পরিবর্তন করে তবে যারা পরিবর্তন করবে এটার পাপ তাদের উপরই বর্তাবে।’ কিন্তু অছিয়তকারী অছিয়তের প্রতিদান আল্লাহর নিকট পাবে এবং সে পাপ মুক্ত থাকবে।” (তাফসীরে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২২; তাফসীরে দুররে মানছুর, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪২৫)। আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, মহান আল্লাহর শক্তিতে বলীয়ান হয়ে ‘নুরে মোহাম্মদী’র আলো সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে যুগে যুগে অক্ষুণ্ন থাকে।
[লেখক: পিএইচ.ডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]