ইসলামের মূল শিক্ষা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
ইমাম ড. সৈয়দ এ.এফ.এম. নূর-এ-খোদা আল আজহারী
ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম মানবতার ধর্ম। সকল সৃষ্টির প্রতি প্রেম ভালোবাসাই ইসলামের শিক্ষা। কিন্তু আজ আমরা সেই ইসলামের আদর্শ শিক্ষা থেকে দূরে সরে পড়েছি। তাই আমাদের মাঝে আজ চরম, দ্বন্দ্ব কলহ ও হানাহানি বিরাজমান। এটা কখনো ইসলামের শিক্ষা হতে পারে না। বর্তমান পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে অনেকে ফিরে যাচ্ছে মধ্যযুগীয় বর্বরতার যুগে অর্থাৎ- আইয়্যামে জাহেলিয়ার যুগে। হযরত রাসুল (সা.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবে অশান্ত পরিবেশ ছিল। কেউ কাউকে মানত না। সামান্য বিষয় নিয়েই গোত্রে গোত্রে ঝগড়া বিবাদে জড়িয়ে পড়ত। সেই ঝগড়ার জের ধরে চলত যুগের পর যুগ যুদ্ধ। কথিত আছে- কার উট আগে পানি পান করবে, এই নিয়ে বিবাদের কারণে দুই গোত্রের মধ্যে ৪০ বৎসরের দীর্ঘ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হয়েছিল। একে অপরকে দেখলে যখন বীরত্ব প্রকাশের জন্য কুৎসা রটনা ও গালিগালাজ করত, সেখানে হযরত রাসুল (সা.) একে অপরকে দেখে সালামের প্রচলন চালু করেন। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “আল্লাহ্র কসম! যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা ততক্ষণ পর্যন্ত জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা মুমিন হবে। আর তোমরা ততক্ষণ মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ তোমরা পরস্পরকে ভালো না বাসবে। হে আমার উম্মতগণ! আমি তোমাদেরকে কি বলে দেবো না, কোন কাজ করলে তোমরা পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসবে? আর তা হলো- তোমরা একে অন্যকে অধিক সালাম দিবে।” এ রকম অশান্ত ও বর্বর আরব জাতির মাঝে আল্লাহ্ তায়ালা শান্তির দূত হিসেবে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবকে প্রেরণ করেছিলেন। হযরত রাসুল (সা.) তাঁর দয়া, মায়া, সৌন্দর্য্য, সহমর্মিতা ও ভালোবাসা দিয়ে সকলের হৃদয় জয় করেছিলেন। তাঁর সান্নিধ্যে এসে বর্বর আরব জাতি নিজেদেরকে সাহাবার মর্যাদায় উন্নীত করতে পেরেছিলেন।
বলা হয় যে, হযরত আবু বকর (রা.)-এর এক রাতের ইবাদত উম্মতে মোহাম্মদির সারা জীবনের ইবাদতের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। সেটা কোন রাত? যেই রাতে তিনি হযরত রাসুল (সা.)-এর সাথে হিজরত করেছিলেন। পথিমধ্যে হযরত আবু বকর (রা.) হযরত রাসুল (সা.)-কে নিয়ে গারে সুর নামক পর্বত গুহায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। গুহার মুখে কবুতর ডিম পেড়ে ও মাকরশা জাল বুনে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করেছিল। গুহায় অসংখ্য সাপের গর্ত দেখে হযরত আবু বকর (রা.) তাঁর পাগড়ি দিয়ে এবং জামার কিছু অংশ ছিড়ে গর্তের মুখ বন্ধ করেছেন, কিন্তু একটি গর্ত তিনি তাঁর পা দিয়ে তা বন্ধ করলেন। যখন সাপ আখেরি নবির দিদারে ব্যাকুল, কিন্তু গর্তের মুখ বন্ধ থাকায় সাপটি বের হতে না পেরে হযরত আবু বকর (রা.)-এর পা ঠেলে প্রবেশ করতে চাইলো। কিন্তু সাপটি না পেরে হযরত আবু বকর (রা.)-কে দংশন করল। বিষের যন্ত্রণায় তাঁর চেহারা নীল হয়ে গেল। তাঁর চোখ থেকে এক ফোটা পানি টপকে পড়ল হযরত রাসুল (সা.)-এর ললাটে। তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেল। তখন হযরত রাসুল (সা.) তাঁর মুখ থেকে সামান্য থুতু মোবারক হযরত আবু বকর (রা.)-এর ক্ষত স্থানে লাগিয়ে দিলে সংগে সংগে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার কারণে তিনি বিষেয় যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে ‘উহ্’ শব্দটি পর্যন্ত করেননি। কেননা তাতে আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-এর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটবে। তাই বলা হয়েছে যে, হযরত আবু বকর (রা.)-এর এক রাতের ইবাদত উম্মতে মোহাম্মদির সারা জীবনের ইবাদতের চেয়ে শ্রেষ্ঠ।
হযরত ওমর (রা.) হযরত রাসুল (সা.)-এর মাথা মোবারক কাটতে এসেছিলেন; পরবর্তীতে হযরত রাসুল (সা.)-এর ঐশী ক্ষমতায় হযরত ওমর (রা.) নিজের মাথাকে রাসুলের কদম মোবারকে সপে দিলেন। অতঃপর তিনি হযরত রাসুল (স.)-এর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে মুসলিম জাহানের খলিফার আসন অংলকৃত করে অর্ধ জাহান শাসন করেছিলেন। সেই হযরত ওমর (রা.) সাড়ে ৯ শত মাইল দূরে সেনাপতি শারিয়াকে রূহানি নির্দেশ প্রদান করে যুদ্ধে জয়ী হতে সাহায্য করেছিলেন। এমনকি মিশরের নীল নদে চিঠি দিয়ে জোয়ার বইয়ে দিয়েছিলেন। হযরত ওসমান (রা.)-কে হযরত রাসূলুল্লাহ্ (সা.) ভালোবেসে তাঁর দুই কন্যাকে একজনের ওফাতের পর আরেকজনকে তাঁর নিকট বিয়ে দিয়েছিলেন।
হযরত রাসূল (স.)-এর আদর্শের অনুসারী হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু সাড়ে ৮শত মণ ওজনের খামুস দুর্গের লৌহ কপাট বাম হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছিলেন; তা কোন শক্তির বদৌলতে? অবশ্যই রূহানি শক্তির দ্বারা। মানুষের শারীরিক শক্তির একটি সীমা-পরিসীমা আছে, কিন্তু রূহানি শক্তিতে সে আল্লাহ্র শক্তিতে বলিয়ান হয়।
তাইতো হযরত আলী (রা.) হয়েছিলেন আল্লাহ্র শক্তিতে বলিয়ান। ফলে তিনি অসীম সম্মান ও ক্ষমতার অধিকারী হতে পেরেছেন। তাঁদের শানে মহান আল্লাহ্ বলেন, রাদিয়াল্লাহু আলহু ওয়া রাদু আনহু।” অর্থাৎ- তাঁদের উপর আল্লাহ্ সন্তুষ্ঠ এবং তাঁরাও আল্লাহ্র উপরে সন্তুষ্ট। মদীনার আনসার ও মক্কার মুহাজির মুসলিম ভাইদের মধ্যে এত ভালোবাসা ছিল যে, তাঁরা নিজেদের সহায় সম্পদ ও নিজেদের জমার অর্ধেক আনসারগণ তাদের মুহাজির ভাইদের দান করেছিলেন। এমনকি যাদের একাধিক স্ত্রী ছিল, তারা তাদের একজন স্ত্রী রেখে অন্যজন তালাক দিয়ে মুসলিম মুহাজির ভাইকে দিয়েছিলেন বিয়ে করার জন্য।
এক যুদ্ধে এক মুসলমান তৃষ্ণায় কষ্ট পেয়ে ‘পানি’ ‘পানি’ বলে চিৎকার করছেন, তার সামনে পানি নিয়ে যাওয়া হলো, তখন সে দেখল আরেক ভাই আহত ও পানির কষ্টে কাতরাচ্ছে। তাই তিনি ঐ পানি অপর মুসলিম ভাইকে দিতে বলে নিজে পানি পান থেকে বিরত থাকলেন। এভাবে একে একে ১৭ জন শহিদ হয়ে গেলেন, তবুও তিনি পানি পান করলেন না।
তায়েফবাসী হযরত রাসুল (সা.)-কে রক্তাক্ত ও আহত করল। এমনকি তাঁর মাথা মোবারকের রক্তে পায়ের জুতা জমাট বেঁধে গিয়েছিল, যা খোলা কষ্টকর হয়ে পড়েছিল। এমতাবস্থায় হযরত জায়েদ (রা.) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! এই বর্বর জাতি যারা আপনাকে এত কষ্ট দিয়েছে, আপনি তাদেরকে অভিশাপ দেন, যাতে তারা ধ্বংস হয়ে যায়। জিব্রাঈল (আ.) আসলেন এবং বললেন- ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আপনি আমাকে হুকুম দেন, আমি এই তায়েফবাসীকে গজব দিয়ে ধ্বংস করে দেই। আল্লাহ্ তায়ালা অপেক্ষা করেছিলেন যদি রাসুলুল্লাহ্ (স.) তখন অভিশাপ দিতেন আল্লাহ্ তায়ালা সাথে সাথে তাঁর দোয়া কবুল করতেন এবং তায়েফবাসীকে ধ্বংস করে দিতেন। কিন্তু ঐ মুহূর্তেও আল্লাহ্র রাসুল (সা.) তাদেরকে অভিশাপ দেননি, বরং তাদের জন্য দোয়া করেছিলেন।
সেই সিলসিলা ধরে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হাসান (রা.) যখন বিষ প্রয়োগে শাহাদত বরণ করলেন এবং ইমাম হোসাইন (রা.) ৭২ জন সঙ্গী নিয়ে এজিদ বাহিনীর ২২ হাজার সৈন্যের সাথে অসম যুদ্ধ করে শাহাদতবরণ করলেন। তবুও তিনি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করেননি। সেই থেকে ইসলাম দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, যথা- মোহাম্মদী ইসলাম ও এজিদি ইসলাম। মোহাম্মদী ইসলাম হচ্ছে ত্যাগ, সততা, প্রেম, ভালোবাসার, আর এজিদি ইসলাম হচ্ছে মিথ্যা, প্রতারণা, ছলচাতুরি, ধোঁকাবজি ও ফতোয়াবাজির। সেই হযরত রাসুলুল্লাহ্ (সা.)-এর অনুসারীগণ দেশে বিদেশে ‘সুফি’ নামে পরিচিতি লাভ করেছেন। যাদের শিক্ষা গ্রহণ করে হিন্দু, বৌদ্ধ অধ্যুষিত এই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র। যার বর্ণনায় প্রখ্যাত গবেষক ও লেখক অধ্যাপক গোপাল হালদার লিখেছেন, “বৌদ্ধদের প্রতি ব্রাহ্মণরা অত্যাচার করতে নিরঞ্জন রুষ্ট হয়ে ব্রাহ্মণদের বিরুদ্ধে দেবতাদের নিয়োজিত করলেন; দেবতারা এলেন মুসলমানরূপে।” এই মুসলিম মনীষীগণ এসে দেশে-দেশে রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর সেই হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামের দাওয়াত দিয়েছেন। একজন আশেকে রাসুল যিনি ইমাম হোসাইন (রা.)-এর পতাকাবাহী ছিলেন, তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হলো, তুমি সত্যকে কীভাবে পেয়েছ? তিনি বললেন, আমি সত্যকে পেয়েছি খণ্ড-বিখণ্ড। আমি সত্যকে পেয়েছি ধুলায় লুণ্ঠিত। আমি সত্যকে পেয়েছি অত্যাচারিত। আমি সত্যকে পেয়েছি বর্শার আগায়। যার কারণে আজ সমাজের বুকে পাশ্চাত্যের ইসলাম প্রতিষ্ঠিত। আর মোহাম্মদী ইসলাম অত্যাচারিত ও অবহেলিত। সুফিরা ঘুরে বেরিয়েছে দ্বারে-দ্বারে। আর এজিদপন্থিরা বসেছে ক্ষমাতার মসনদে। ক্ষমতালোভী যে ইসলাম, সেই ইসলাম এজিদি ইসলাম। যেভাবে সত্য ও মিথ্যা একই সাথে সহ অবস্থান করতে পারে না, ঠিক সেভাবে ধর্ম ও প্রতারণা এক সাথে চলতে পারে না। যেভাবে এক মণ দুধের মধ্যে এক ফোটা গো-চনা পড়লে সেটা হয় দুষণীয়। সেভাবে সত্য ধর্ম ও মিথ্যার রাজনীতিকে মিশ্রণ করা দূষণীয়।
আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর সান্নিধ্যে গিয়ে কাফের মুমিনে পরিণত হয়েছে। তিনি কোনো মুসলমানকে কাফের ফতোয়া দেননি। হাদিসে বলা হয়েছে- “যদি কেউ এক মুসলমানকে কাফের ফতোয়া দেয়, তাহলে উক্ত ফতোয়া তার মাথার উপরে ঘুরতে থাকে।” যদি উক্ত ব্যক্তি কফের না হয়ে থাকে, তাহলে উক্ত ফতোয়া, ফতোয়াদানকারীর মাথার উপরে পতিত হয়। তাই কোনো মুসলমানকে কাফের ফতোয়াকারী ব্যক্তি উক্ত ফতোয়া দ্বারা নিজেই কাফের হয়ে যাবে। অতএব ধর্মের নামে সন্ত্রাস, বোমাবাজি, ফতোয়া, হত্যা ও নারী নির্যাতন কখনো ইসলামের অংশ হতে পারে না। হাদিস শরিফে আছে- “আল্ মুসলিমু মান সালিমাল মুসলিমুনা মিল লিসানিহি ওয়া ইয়াদিহি।” অর্থাৎ- যার হাত ও জবানের অনিষ্ট থেকে অন্য মানুষ নিরাপদে থাকে, সেই প্রকৃত মুসলমান।
অতএব ধর্মের নামে সন্ত্রাস, জঙ্গীবাদ, মসজিদ-মন্দিরে হামলা ও সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন কখনই প্রকৃত ইসলামের রূপ রেখা হতে পারে না। এটাই এজিদি ইসলাম। ক্ষমতার লোভে মানুষের বাড়ি-গাড়ি পুড়িয়ে, মানুষকে নির্যাতন করে কখনোই দেশে শান্তি আসতে পারে না। ইসলাম শুধু পরকালে নয়, দুনিয়াতেও শান্তি দিতে সক্ষম। সত্যিকারের মুসলমান ব্যক্তি নিজেও শান্তিতে থাকবে এবং অন্যকেও শান্তিতে থাকতে দিবে। সে নিজে সবাইকে ভালোবাসবে এবং সবাই তাকে ভালোবাসবে। এই বিষয়ে হযরত রাসুল (সা.) বলেন- “ইরহাম মান ফিল আরদে ইয়ারহামুকা মান ফিস সামায়ি।” অর্থাৎ- তুমি জগদ্বাসীর প্রতি দয়াশীল হও, তাহলে নভোমণ্ডলের অধিকারী মহান আল্লাহ্ তোমার প্রতি দয়া করবেন।
কবির ভাষায়- তসবি এবং সেজদা দেখে খোদ এলাহি ভুলবে না, মানব সেবার কুনজি ছাড়া স্বর্গ দুয়ার খুলবে না।
হযরত রাসুল (সা.) বর্বর আরব জাতিকে দাঁড়ি, টুপি, জোব্বা-পাগড়ি পড়াতে আসেননি, বরং তিনি তাদেরকে আদর্শ চরিত্র শিক্ষা দিতে এসেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন- “লাক্কাদ কানা লাকুম ফি রাসুলিল্লাহে উসওয়াতুন হাসানাহ।” অর্থাৎ হে রাসুল! আপনাকে আল্লাহ্ উত্তম চরিত্রাদর্শ দ্বারা প্রেরণ করেছে। যার কারণে হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ।
আজ ইসলামের একটি শ্রেণি হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শের বিরোধিতা করছে। এরাই জঙ্গি, এরাই সন্ত্রাসী, এরাই এজিদি ইসলামের অনুসারী। মোহাম্মদি ইসলামের রূপরেখা কখনই এই রকম নয়। ক্ষমতা লিপ্সু এই সমস্ত এজিদের দল মসজিদে, মাজারে বোমাবাজী করে মানুষ হত্যা করে থাকে। সুফিগণ কখনই এরকম করেন না। সুফিরা হন নম্র, ভদ্র, দয়ালু এবং তাদের অনুসারীগণের মাঝেও সেই আদর্শ লক্ষ্য করা যায়। পক্ষান্তরে সুফি মতবাদ বিরোধী চক্রের মাঝে উগ্রতা, নাশকতা ও নিষ্ঠুরতা দেখা যায়। তাদের অনেকেই আমল করে, কিন্তু তাদের চরিত্র শুদ্ধ হয় না। হযরত (সা.) বলেন, “খারিজি সম্প্রদায় তারা, যারা হারাম রক্ত প্রবাহিত এবং লোকজনের চলাচলের পথকে প্রতিকুল ও দুর্গম করে দিয়েছে এবং তাদের সম্পদ লুণ্ঠন করেছে। তারা হচ্ছে তোমাদের নিকটতম শত্রু। আমি ভয় পাচ্ছি যে, যদি তোমরা তাদের কাছে যাও, তবে তারা তোমাদের আক্রমণ করে বসতে পারে।” হযরত আলী (রা.) হতে বর্ণিত, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, অচিরেই তোমাদের মাঝে এমন একটি সম্প্রদায় আবির্ভুত হবে, তারা হচ্ছে খারিজি সম্প্রদায়। যাদের নামাজ এমন হবে, যাতে তোমাদের কাছে এমন মনে হবে তোমাদের নামাজ তাদের তুলনায় অতি নগন্য। তাদের রোজা এমন হবে, যাতে মনে হবে তোমাদের রোজা কিছুই নয়। আর তাদের কুরআন তেলাওয়াত এমন সুমধুর হবে, যেন আমাদের কাছে মনে হবে তোমাদের তিলাওয়াত একবোরে অযোগ্য। কিন্তু প্রকৃত অর্থে তাদের তেলাওয়াত তাদের কন্ঠনালীর নিচে প্রবেশ করবে না। অর্থাৎ- কুরআনের হাকিকতের আচরণ তাদের মধ্যে প্রবেশ করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমন করে বেরিয়ে পড়বে যেমনিভাবে তির ধনুক থেকে বেরিয়ে পড়ে। (তথ্য সূত্র: মুসনাদে আহমদ, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৭৪-৭৫)। অন্য হাদিসে বলা হয়েছে, কুরআনের এমন কিছু পাঠক আছে, যারা কুরআন পড়ে, অথচ কুরআন তাদেরকে লানত করে। কারণ কুরআনের আমল তাদের ভিতরে নেই। তৎকালীন জামানার শান্তির দূত হিসেবে আল্লাহ্ তায়ালা অশান্ত আরবে হযরত রাসুল (সা.)-কে প্রেরণ করেছিলেন। তারই সিলসিলা ধরে বর্তমান জামানায় হযরত রাসুল (সা.)-এর সুযোগ্য প্রতিনিধি ও উত্তরসূরি মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান মানুষকে আশেকে রাসূল বানিয়ে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন, “অন্যান্য নবির উম্মতের মাঝে ৭২ ফেরকা ছিল, আর আমার উম্মতের মাঝে ৭৩ ফেরকা হবে।” এর একট মাত্র ফেরকা বা দল নাজাত প্রাপ্ত। বাকি ৭২ দলই জাহান্নামি। বর্তমানে ইসলামে অনেক দল মত আছে। তারা ইসলামের কথা বলে, আবার একে অপরকে কাফের, মুরতাদ ও নাস্তিক বলে ফতোয়া দেয়। অথচ ভুলে যায় আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-এর আচরণ কখনোই এরকম ছিল না। হযরত রাসুল (সা.) বলেন- “শীঘ্রই মানুষের জন্য এমন এক জামানা আসবে যখন নাম ব্যতীত ইসলামের কিছুই বাকী থাকবে না। অক্ষর ব্যতীত কুরআনের কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না। তাদের মসজিদসমূহ হবে ইমারত অথচ (উহার ভিতর) হবে হেদায়েত শূন্য, তাদের আলেমরা হবে আকাশের নিচে সর্বাপেক্ষা মন্দ লোক। তাদের নিকট হতে ফেৎনা প্রকাশ পাবে। অতঃপর সে ফেৎনা তাদের প্রতি প্রত্যাবর্তন করবে” (তথ্য সূত্র: বায়হাকি শরিফ ও মেশকাত শরিফ- পৃষ্টা-৩৮)।
অতএব, ধর্মের নামে যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে, তাদের প্রতি আহ্বান, আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর আদর্শের পথে আসুন। যুগে যুগে সুফি-সাধক অলী-আল্লাহ্গণ সেই আদর্শের পথের অনুসারী হওয়ার জন্যই সাধনা করেছেন এবং সাধারণ মানুষকে তা শিক্ষা দিয়েছেন। যার ফলে সুফি সাধক অলী-আল্লাহ্গণের অনুসারীগণের মাঝেই নেমে আসে শান্তি এবং তাদের মাধ্যমেই জগতে মানবতা প্রতিষ্ঠা লাভ করে থাকে।
[লেখক: সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের জ্যেষ্ঠ সাহেবজাদা, পরিচালক, দেওয়ানবাগ শরীফ।
7 Comments
আমি মহান মালিকের কাছে লাখও কোটি ছালাম ও কদম মুচি জানাই,
Extraordinary writing Dr Boro Huzur Imam Nur E Khuda (M:A:). World will be truly guided with your prudent writing. Amin
মহা মূল্যবান বানী মোবারক
মহান আল্লাহতালার দরবারে লাক্ষো কোটি শুকরিয়া জানায়। এই আত্মার বানী পত্রিকার মাধ্যেমে মোহাম্মদী ইসলামের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারবো।
খুব সুন্দর কথা লিখেছেন দয়াল বড় হুজুর..
আলহামদুলিল্লাহ
আলহামদুলিল্লাহ