Cancel Preloader

ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা


মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত
সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান

[সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান রচিত ‘শান্তি কোন পথে?’ থেকে প্রবন্ধটি সংকলন করা হয়েছে।-সম্পাদক]
পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন নিঃসন্দেহে ইসলামই হলো আল্লাহর কাছে একমাত্র ধর্ম। যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তাদের কাছে প্রকৃত জ্ঞান আসার পর শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশত তারা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছিল।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১৯) এ কারণে ইসলাম একটি সর্বজনীন ধর্ম। এটিকে মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধানও বলা হয়। ইসলামের আদর্শ এবং মুসলমানদের উত্তম চরিত্র দেখে পূর্ব যুগের বিধর্মীরাও এর সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নিয়ে ধন্য হয়েছে। কিন্তু কালক্রমে মুসলমানগণ ইসলামের সেই আদর্শ ও ঐতিহ্য হারিয়ে আজ মণিহারা ফণীর (মাথার মণি হারানোর ফলে অস্থিরচিত্ত সাপের) ন্যায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। খোলাফায়ে রাশেদিনের সময় ইসলাম তার সকল আদর্শ ও বৈশিষ্ট্য নিয়েই বিরাজমান ছিল।
হযরত জাবের (রা.) বলেন “আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে দেখেছি, তিনি বিদায় হজে আরাফাতের দিন তাঁর কাসওয়া নামক উষ্ট্রীর উপর সওয়ার অবস্থায় খুৎবা দান করেছিলেন। আমি শুনেছি, তিনি খুৎবায় বলেছেনÑ হে লোকসকল! আমি তোমাদের নিকট যা রেখে যাচ্ছি, তা আঁকড়ে ধরলে তোমরা কখনো পথভ্রষ্ট (ধ্বংস) হবে না। আর তা হলোÑ আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইত।” (তিরমিযী শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৫৬৯)


এমনিভাবে হযরত আবু যর গিফারী (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন “জেনে রেখো, নিশ্চয় আমার আহলে বাইত তোমাদের জন্য হযরত নূহ (আ.)-এর কিস্তি বা নৌকা তুল্য। যে সেটিতে আরোহণ করেছে, সেই রক্ষা পেয়েছে। আর যে সেটিতে আরোহণ করতে পারেনি, সেই ধ্বংস হয়েছে।” (মুসনাদে আহমদের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৫৭৩)
তবে খোলাফায়ে রাশেদিনের সময় ইসলাম তার সকল আদর্শ-বৈশিষ্ট্য নিয়ে বিরাজমান থাকলেও, পরবর্তীকালে এটি স্বধর্মীদের অজ্ঞতা ও বিধর্মীদের চক্রান্তের ফলে লেবাসসর্বস্ব বা নামসর্বস্ব হয়ে পড়েছে। আমাদের নিকট ইসলাম পৈত্রিক সম্পত্তির মতো। পিতামাতা মুসলমান ছিলেন বলে আমরা নিজেদেরকে মুসলমান দাবি করে থাকি এবং সেই হিসেবে আমাদের ধর্ম ইসলাম। অবশ্য এই ভ্রান্ত ধারণার সূত্রপাত উমাইয়াদের শাসনামল থেকেই শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে এজিদসহ উমাইয়ারা ছিল নামধারী মুসলমান। ইসলামের চরিত্র ও মাহাত্ম তাদের ভিতরে ছিল না। শাসন ক্ষমতায় থেকে এজিদসহ উমাইয়া শাসকগোষ্ঠী তাদের মতকে প্রতিষ্ঠা করার প্রয়াস চালাতে থাকে। ফলে উমাইয়া শাসন আমল থেকে মুসলমানগণ ইসলামের প্রকৃত আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে মুসলমানের চরিত্র হারিয়েছে।


‘খিলাফতের ইতিহাস’ নামক পুস্তকের ১১৮ পৃষ্ঠায় লেখক মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ্ বলেন “ইয়াজিদের আচরণ ছিল অমানুষিক ও নিষ্ঠুর। স্বীয় বিরুদ্ধ দল বা ব্যক্তির জীবন নাশ করিতে তিনি একটুও কুণ্ঠিত হইতেন না। এমনকি কাহাকেও বিচার-বিবেচনা করিয়া ‘হাঁ’ কিংবা ‘না’ করিবার অবসরটুকুও দিতেন না। প্রকৃতপক্ষে ইয়াজিদের আমলাদারীতেই আরব জাতির প্রাচীন বন্য স্বভাব ও হিংস্র প্রবৃত্তিসমূহ পুনরায় মাথাচাড়া দিয়া আত্মপ্রকাশ করে। যাহা রাসুলে করীম (সা.) অশেষ মেহনত করিয়া দমন করেছিলেন।”
‘ইমাম হাসান ও হোসাইন (রা.)’ জীবনী নামক পুস্তকে এজিদ সম্পর্কে বলা হয়েছে, সেটি হুবহু তুলে ধরা হলো


“হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) শাহাদতবরণ করার পর ইয়াজিদ এমন স্বৈরাচার ও বেপরোয়া হয়ে পড়ে যে, তার মধ্যে ধর্মের নাম-গন্ধও ছিল না। যাহা খুশি তাই সে নির্দ্বিধায় করত। ব্যাভিচার, পুং মৈথুন, ভাই-বোনের মধ্যে যৌন সম্ভোগ, মাদক দ্রব্য সেবন ইত্যাদি ছিল তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। নামাজ আদায়ের প্রতি কোনো খেয়ালই সে দিতো না। শেষ পর্যন্ত ইয়াজিদ খোদাদ্রোহিতায় মেতে উঠল। সে মদীনা আক্রমণ করার জন্য ৬৩ হিজরিতে মুসলিম ইবনে আকাবার অধীনে বারো হাজার সৈন্য প্রেরণ করে। মদীনা নগরীতে এরা অত্যাচার, অনাচার, জুলুম, নির্যাতন ও উৎপীড়নের মধ্য দিয়ে এমন ত্রাসের সঞ্চার করেছিল, যার ফলে মদীনাবাসী দিশাহারা হয়ে পড়ে। ইয়াজিদের সৈন্যরা এ নিপীড়ন চালিয়ে প্রায় দশ হাজার নিরীহ জনসাধারণকে হত্যা করেছিল। এদের মধ্যে সাতশ’ সাহাবিও নিহত হন। তারা মসজিদে নববিকে আস্তাবল হিসাবে ব্যবহার করল। তিনদিন যাবৎ কোনো মুসল্লিই মসজিদে নামাজ আদায় করতে যেতে সাহস করেনি। মদীনায় তারা যে রকম অত্যাচার চালিয়েছিল এ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হানযালা কেবল এটি বলেই ক্ষান্ত রইলেন যে, ‘তাদের অত্যাচারের পরিণাম হিসেবে আসমান থেকে পাথর বর্ষিত হয় কিনা, একমাত্র এটিই আমার ভয় (আশংকা)’।” (ইমাম হাসান ও হোসাইন (রা.) জীবনী, পৃষ্ঠা ২০৩ ও ২০৪)
এ প্রসঙ্গে মুসনাদে আহমদের ৯ম খণ্ডের ৫৫৯ পৃষ্ঠায় হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেনÑ “উমাইয়া বংশের নিষ্ঠুর শাসকগণ আমার সিংহাসনে বসবে এবং রক্ত প্রবাহিত করবে।’ বর্ণনাকারী বলেনÑ এমন এক ব্যক্তি আমার নিকট আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, যে ব্যক্তি আমর ইবনে সাইদ ইবনে আস-কে হযরত রাসুল (সা.)-এর সিংহাসনে উঠতে দেখেছেন, অতঃপর সে সেখানে রক্ত প্রবাহিত করেছে, সেটিও দেখেছেন।”
এ প্রসঙ্গে তাফসীরে কাবীর-এর ১১নং খণ্ডের ৭১১৩ ও ৭১১৪ নম্বর পৃষ্ঠায় হযরত ঈসা ইবনে মাজেন (রহ.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ইমাম হাসান ইবনে আলী (রা.)-কে জিজ্ঞেস করলাম আপনি মুসলমানদের মুখে কালিমা লেপনকারী এ অপদার্থ মুয়াবিয়ার সাথে চুক্তি করলেন কেন? জবাবে ইমাম হাসান (রা.) বললেন “আল্লাহর রাসুল (সা.) স্বপ্নে দেখেন বনি উমাইয়ারা একের পর এক তাঁর পবিত্র মিম্বর পদদলিত করছে। অন্য বর্ণনায় এসেছে আল্লাহর রাসুল (সা.) স্বপ্নে দেখেন যে, উমাইয়া বংশের বানরগুলো একের পর এক লাফিয়ে তাঁর সিংহাসনে উঠছে আবার নামছে। আর এ স্বপ্ন দেখার পর রাসুল (সা.) মনে খুবই কষ্ট পান।”


এমনিভাবে তাফসীরে ইবনে কাছীর-এর ৪র্থ খণ্ডের ৭৪৪ নম্বর পৃষ্ঠায় হযরত ইউসুফ ইবনে সাদ (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেনÑ“মুয়াবিয়ার সাথে সন্ধি চুক্তি করার পর হযরত ইমাম হাসান ইবনে আলী (রা.)-এর নিকট এক ব্যক্তি এসে বলল সংঘটিত এ ঘটনায় মু’মিনদের মুখে চুনকালি মাখিয়ে দেওয়া হয়েছে, কিংবা সে বলল চুক্তিটি মু’মিনদের মুখে কলঙ্ক লেপনকারী! উত্তরে [রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর দৌহিত্র] ইমাম হাসান (রা.) বললেন আল্লাহ্ তোমার উপর রহম করুন, তুমি আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দাঁড় করিও না। (প্রকৃত ঘটনা এরূপ আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে দেখানো হয়েছিল যে, বনি উমাইয়ার খলিফাগণ তাঁর মিম্বরের উপরে অবস্থান করছে। আর এর দৃশ্য দেখে রাসুল (সা.) ব্যথিত হয়ে পড়েন।”
এ প্রসঙ্গে মুসনাদে আহমদের ৯ম খণ্ডের ৭৩ ও ৭৪ পৃষ্ঠায় হযরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেন “অবশ্যই উমাইয়া বংশের নিষ্ঠুর শাসকগণ আমার এই মিম্বরের উপর জবরদস্তিমূলক উঠে বসবে।”


হযরত ঈসা ইবনে মাজেন (রহ.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন “আমি ইমাম হাসান ইবনে আলী (রা.)-কে বললাম, আপনি মুসলমানদের মুখে কালি লেপনকারী, এই অপদার্থ লোক মুয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ানের সাথে চুক্তি করলেন কেন? জবাবে ইমাম হাসান (রা.) বললেন আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে যে, উমাইয়া বংশের লোকেরা তাঁর মিম্বরের উপর আরোহণ করে একের পর এক খলিফা দাবী করছে। আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর কাছে বিষয়টি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক অনুভূত হলো। তখন আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর রাসুল (সা.)-এর সান্ত্বনা দেওয়ার উদ্দেশ্যে অবর্তীণ করেন সূরা-আল কাওছার ‘নিশ্চয়ই আমি আপনাকে কাওছার দান করেছি’ এবং সূরা-আল ক্বদর ‘নিশ্চয়ই আমি কুরআন ক্বদরের রাতে নাজিল করেছি। আপনি কি জানেন, ক্বদরের রাতটি কী? ক্বদরের রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম।” (তাফসীরে তাবারী ৩০নং খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৬০)


পরবর্তীতে বিধর্মীদের চক্রান্তে ইসলামের মূল আদর্শের পরিপন্থী ব্যবস্থা অবলম্বন করে, মুসলমানগণ প্রকৃত ইসলাম থেকে দূরে সরে পড়েছে। অথচ মহান আল্লাহ্ নির্দেশ দিয়েছেন “হে মু’মিনগণ! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ২০৮)
বস্তুত মুসলমান ওয়ারিশ সূত্রে হওয়া যায় না, বরং সঠিক পথে সাধনার দ্বারা মুসলমান হতে হয়। যেমন ডাক্তার ও ইঞ্জিনিয়ারের ছেলে বিদ্যার্জন না করে, পৈত্রিক পেশা লাভ করতে পারে না, তদ্রুপ মুসলমানের সন্তানকেও উত্তম চরিত্র অর্জনের মাধ্যমে মুসলমান হতে হয়। এ কারণে আল্লাহ্ বলেন “ইয়া আইয়্যুহাল্লাযীনা আমানুত্তা ক্বুল্লাহা ওয়াকূনূ মা’আস সাদিক্বীন।” অর্থাৎ : “হে মু’মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্কে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গ লাভ করো।” (সূরা আত তাওবাহ-৯: আয়াত ১১৯)
সুতরাং প্রকৃত মুসলমান হতে হলে, রাসুলের চরিত্রের অধিকারী অলী-আল্লাহর সহবতে যাওয়া অপরিহার্য।


ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ত্রুটি
আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন “শরিয়ত আমার কথা, তরিকত আমার কাজ, হাকিকত আমার অবস্থা ও মারেফাত আমার নিগূঢ় রহস্য।” (নূরুল আসরার বা নূরতত্ত্ব ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪)
ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা পূর্ণ বাস্তবায়িত হয়েছে শরিয়ত এবং মারেফাত উভয় বিদ্যায় যারা বিদ্বান ও আমলকারী, তাদের জীবনে।
হযরত হাসান (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেনÑ “এলেম হলো দুপ্রকার যথা (১) ক্বালবী এলেম, আর এ এলেমই হচ্ছে পরম উপকারী এলেম, (২) মুখের এলেম তথা কিতাবী এলেম; আর এ এলেমই মাখলুকাতের উপর আল্লাহ্র দলিল।” (তিরমিযী ও মুসতাদরাকে হাকেমের সূত্রে তাফসীরে দুররে মানছুর-২২নং খণ্ড, পৃষ্ঠা ২১)
শরিয়ত ও মারেফত উভয় বিদ্যায় বিদ্বান মহাপুরুষ বা সাধকদের সাহচর্যে গিয়ে শরিয়ত ও মারেফাত চর্চার মাধ্যমেই মানুষ নিজেদের চরিত্র সংশোধন করত ধর্মের প্রকৃত স্বাদ উপলব্ধি করতে পারে। আল্লাহ্ বলেন “নিশ্চয় সাফল্য লাভ করবে সে, যে নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পেরেছে, তার প্রতিপালকের নামের জিকির করে ও নামাজ কায়েম করে।” (সূরা আল আ’লা ৮৭: আয়াত ১৪ ও ১৫)


হযরত রাসুল (সা.) ও খোলাফায়ে রাশেদিনের যুগেও শরিয়ত এবং মারেফাত, উভয় বিদ্যা চর্চার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। সে যুগে এ উভয় বিদ্যায় পারদর্শী শিক্ষকের গুরুত্ব ছিল সর্বাধিক এবং তাদের জীবন ছিল সকলের জন্য উত্তম আদর্শ স্বরূপ। অশেষ দয়াময় আল্লাহ্ বলেন “তোমাদের জন্য তো আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর জীবনে রয়েছে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল আহযাব ৩৩: আয়াত ২১)
কিন্তু বর্তমানে প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রধানত কিতাবভিত্তিক। এ শিক্ষায় মারেফাত বা তাসাউফের আদর্শ নেই। এ ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা মানুষের আত্মা এবং চরিত্রকে উন্নত করে ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান দিতে পারে না। বস্তুত কিতাব মানুষকে হিদায়েত করতে পারে না। সুমহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন “তিনিই রহমান, তাঁর সম্বন্ধে যিনি অবগত আছেন, তাঁকে জিজ্ঞেস করো।” (সূরা আল ফুরকান ২৫: আয়াত ৫৯)


সুতরাং চরিত্র সংশোধন এবং ধর্মের প্রকৃত জ্ঞান লাভের জন্য তাসাউফের কোনো সাধককে আত্মিক শিক্ষক হিসেবে গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন। আমাদেরকে লক্ষ্য করতে হবে- নবি ও রাসুলগণ কোন বিদ্যায় জ্ঞানী ছিলেন। খুঁজলে দেখা যাবে, তাঁরা ছিলেন এলমুল ক্বালবের বিদ্যায় জ্ঞানী। সুতরাং আমাদেরকে আল্লাহ্কে পেতে হলে নবি ও রাসুলগণ যে বিদ্যায় জ্ঞানী ছিলেন, একই বিদ্যায় জ্ঞানী আওলিয়ায়ে কেরামের সহবতে গিয়েই আল্লাহ্কে পেতে হবে।
উপমাস্বরূপ বলা যায়, একজন ছাত্রকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বইপুস্তকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্যের নাম, ফল ও ফুলের নাম বিবরণসহ দেওয়া থাকে, যাতে শিক্ষার্থী এগুলোর সাথে পরিচিত হয়ে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারে। তবে এ জ্ঞান ততক্ষণ পূর্ণতা লাভ করবে না, যতক্ষণ না শিক্ষার্থী বাস্তবে খাদ্য গ্রহণ করবে, ফল ও ফুলের স্বাদ ও গন্ধ উপলব্ধি করবে। তদ্রƒপ ইসলাম সম্পর্কে প্রচলিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যবস্থায় কেবল ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু এ শিক্ষা ব্যবস্থায় মহান আল্লাহ্ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ, অতঃপর নিজের মাঝে আল্লাহ্র অস্তিত্ব উপলব্ধি করে, তাঁর ইচ্ছায় নিজেকে পরিচালিত করার মধ্য দিয়ে ধর্ম পালনে স্বনির্ভর হওয়ার সুযোগ নেই। [লেখক: দেওয়ানবাগ শরীফের প্রতিষ্ঠাতা]

সম্পর্কিত পোস্ট