কঠিন চর্মরোগ থেকে মুক্তি
আশেকে রাসুল জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ১৯৯৬ সালে সিঙ্গাপুরে কর্মরত থাকার সময় তার হঠাৎ একটি কঠিন চর্মরোগ দেখা দেয়। প্রথম অবস্থায় তার সারা শরীর ঘামাচির মতো গোটায় ভরে যায়। এরপর কয়েক দিন যেতে না যেতেই ঘামাচির গোটাগুলো বড় হয়ে লালচে বড় দানায় পরিণত হয়। এমনিভাবে শুধু চামড়ার উপরে নয়, এগুলো মাংসের ভিতর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। গোটাগুলো ধীরে ধীরে বড় হয়ে মহিলাদের কানের দুলের ন্যায় শরীরের চামড়ার উপর দুলতে থাকে। এগুলোর ভিতরে পুঁজ হয় এবং ভয়ঙ্কর রকম যন্ত্রণাদায়ক অনুভূতি হতে থাকে। তার পায়ের তালু থেকে মাথার চামড়া পর্যন্ত এমন পচা মাংস দুলতে থাকায় তাকে ভয়ানক দেখাতো এবং এগুলো থেকে মাঝে মাঝে রক্তও ঝরতো। তখন তার শরীর থেকে বাজে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। তার সহকর্মী, পরিচিতজন সবাই তাকে দেখে ভয় ও ঘৃৃণাভরা দৃষ্টিতে তাকাতে থাকে। কেউ এগিয়ে এসে সাহায্য পর্যন্ত করতে ভয় পেত।
সিঙ্গাপুরে তখনকার বড় বড় কয়েকজন ডাক্তারকে দেখালে সেখানকার ব্যয়বহুল চিকিৎসায় তার প্রতিমাসে ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা খরচ হতে থাকে। কিন্তু রোগ-যন্ত্রণার কোনো উপশম হলো না। ডাক্তাররা সঠিক রোগটি কি তাও বুঝতে পারছিল না। এদিকে ব্যয়বহুল চিকিৎসা ও ঠিকমতো কাজ করতে না পারায় তার জমানো অর্থও শেষ হয়ে আসে। তিনি কোনো উপায়ন্তর না দেখে দেশে ফোন করে পরিবারকে জানালে তারা বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজের পরামর্শ মতো ঔষধ সিঙ্গাপুরে পাঠায়। সেগুলোতেও কাজ হয় না। তার মন তখন অলী-আল্লাহ্গণের প্রতি ঝুঁকে যায়। তার মাকে বলেন অলী-আল্লাহর দরবারে যেতে। তারা বহু দরবারে ঘুরে মানত দেয়। এমনকি ইব্রাহিমপুর এতিমখানায় তার বাবা মা ও তার স্ত্রী আলাদাভাবে গরু দেয়। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। অবশেষে কোনো উপায় না দেখে জাহাঙ্গীর আলম নিজ দেশে ফেরত আসে। এরপর নিজেই বিভিন্ন ডাক্তার কবিরাজের শরণাপন্ন হয়। এভাবে ৪ বছর মারাত্মক যন্ত্রণা ও কষ্টের অভিশাপ সহ্য করেন। এরপর একদা ঢাকা হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ এম. কবীর চৌধুরীকে দেখালে দেহের বিভিন্ন স্থান থেকে পচা মাংস কেটে নিয়ে পরীক্ষা করেন। তিনি রোগের নাম বলেন, গাটেট সরিয়াসিস। এ রোগটি বংশগত, তার দাদারও এমন হতো, যা কখনো সম্পূর্ণ ভালো হয় না, দমিয়ে রাখা যায়। সে এম. কবীর চৌধুরীর প্রেসক্রিসশন অনুযায়ী ঔষধ খেলে রোগটি স্থির থাকে, যন্ত্রণা কমে। ঔষধ বন্ধ করলে আবার বাড়তে থাকে। প্রতিদিন দেড়শ’ থেকে দুইশ টাকার ঔষধ খেতে হয়। এদিকে তিনি কোনো কাজ কর্মও করতে পারে না। এমতাবস্থায় তিনি চরম আর্থিক সংকটে পড়ে যান।
২০০৪ সালের দিকে তার চাচতো ভাইয়ের কাছে যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান সম্পর্কে জানতে পারেন এবং তাঁর কদম মোবারকে এসে তরিকার সবক গ্রহণ করে আর্থিক সমস্যার সমাধান চান। তখন তার বদ্ধমূল ধারণা ছিল, এই দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে কখনোই তিনি পরিত্রাণ পাবে না, সুতরাং আর্থিক সমস্যার সমাধান হলেই হয়। তারপর থেকেই তিনি নিয়মিত তরিকার আমল করতে থাকেন। কিন্তু তার অসুখ এ সময় আরো বাড়তে থাকে এবং তার কষ্টে পরিবারের সবাই অত্যন্ত বিচলিত হয়ে পড়ে। তখন মনে হয়, তার বাঁচার একটাই উপায়, আর তা হলো- যদি তার দয়াল দরদী বাবাজান তাকে সুস্থ করে দেন।
তার বিশ্বাস ছিল-যিনি আল্লাহর বন্ধু তিনি জগতের সবকিছুই করতে পারেন। এভাবে প্রায় ৯ বছর ভীষণ রোগ- যন্ত্রণায় ভোগার পর এবং তরিকা নেয়ার আরো প্রায় ৯ মাস পর তিনি একদিন ঢাকার মতিঝিলের বাবে রহমতে ছুটে আসেন দয়াল বাবাজানের কদম মোবারকে। দয়াল বাবাজানের কদমে হাত রেখে বলেন, “বাবা! দীর্ঘদিন যাবৎ এ অসহ্য রোগ যন্ত্রণা ভোগ করছি, আমি আর পারছি না, এখন আপনি ছাড়া আর গতি নাই।”
বাবাজান মায়াভরা দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে বলেন, “কই! দেখি কি রোগ?” জাহাঙ্গীর আলম সাথে সাথে তার গায়ের জামা খুলে ফেলেন। দয়াল বাবাজান অপলক মায়াভরা দৃষ্টিতে তার সমস্ত গায়ের পচা-গলা ক্ষতগুলোর দিকে তাকালেন। তিনি তখন দেখতে পেলেন, বাবাজান তাকানোর সাথে সাথে একটা আলোর ঝলক এসে তার সমস্ত দেহে পড়লো। অতঃপর তার উপর থেকে এতদিনের কষ্ট ও যন্ত্রণার বোঝা সরে গেলো। বাবাজান বললেন, একটা জান মানত করেন। তিনি বাবাজানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাবে রহমত থেকে বের হলেন সম্পূর্ণ নতুন মানুষ হিসেবে। শরীরে যদিও ক্ষতগুলো ছিল কিন্তু তার কোনো যন্ত্রণা অনুভব হচ্ছিল না। তখন সামান্য রোগ-যন্ত্রণাও অনুভব করেনি। মনে হচ্ছিল, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ একজন মানুষ। সবচেয়ে অলৌকিক বিষয় হলো, বাবাজানের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসার পর থেকেই ক্ষতগুলো শুকাতে থাকে এবং মাত্র ৮/৯ দিনের মাথায় দেহের চামড়া দেখে আর বুঝার উপায় থাকল না, তার কি কঠিন অবস্থা ছিল! এ ঘটনায় তার পিতা-মাতা, স্ত্রীসহ গ্রামবাসী সবাই অবাক হয়ে দয়াল বাবাজানের প্রশংসা করতে থাকে। তার জীবনে ঘটে যাওয়া এ ঘটনা লিখে জমা দেওয়ার সময় পর্যন্ত বিগত আড়াই বছর যাবত তিনি বাবাজানের দয়ায় সম্পূর্ণ সুস্থ জীবন যাপন করছে।