করোনা হতে আরোগ্য লাভ
শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী (অপু)
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের বন্ধু হলেন অলী-আল্লাহ্গণ। তাঁদের মর্যাদা অপরিসীম। তাঁরা কোনো বিষয়ে কিছু বললে, মহান আল্লাহ্ তাঁদের সম্মানের খাতিরে সেই বিষয়ে সমাধান দিয়ে থাকেন। মানুষ মাত্রই রোগ-শোক, বালা-মুসিবত থাকে। চিকিৎসার জন্য ডাক্তার রয়েছেন। কিন্তু মানুষের এমন কিছু রোগ রয়েছে, যা চিকিৎসকগণ শত চেষ্টা করেও সুস্থ করতে পারেন না। অথচ কোনো অলী-আল্লাহ্ যদি সেই বিষয়ে রোগীকে কোনো নির্দেশনা দেন, তাহলে দেখা যায় বিনা চিকিৎসায় ঐ রোগ থেকে রোগী আরোগ্য লাভ করে থাকেন। এক কথায় বলতে গেলে, ডাক্তারদের যেখানে শেষ, সেখান থেকে অলী-আল্লাহ্গণের কাজ শুরু হয়।
মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত শাহ্ দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের মতে প্রধানত তিনটি কারণে মানুষের মছিবত এসে থাকে। (১) মানুষ যখন আল্লাহর সাথে নাফরমানি করে তখন মছিবত আসে গজব হিসাবে (২) কঠিন বিপদ হতে উদ্ধারের নিমিত্তে মছিবত আসে রহমত হিসাবে (৩) আল্লাহর প্রতি ইমান পরীক্ষার উদ্দেশ্যে মছিবত আসে। কোনো রোগ বা মছিবত কেন আসে, তা সাধারণ মানুষ অনুধাবন করতে পারে না। কিন্তু অলী-আল্লাহ্গণ এ বিষয়ে আল্লাহর পক্ষ হতে অবগত হয়ে থাকেন। অলী-আল্লাহ্গণ হচ্ছেন অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। তাঁরা মানুষকে যে কোনো কঠিন বিপদ হতে উদ্ধার করতে সক্ষম। এমনকি মৃত্যুর ন্যায় কঠিন বিপদ থেকেও আল্লাহর ইচ্ছায় রক্ষা করতে পারেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অসংখ্য ভক্ত ও আশেকান পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাঁকে স্মরণ করে বিপদ থেকে উদ্ধার পেয়েছেন। নিম্নে একটি ঘটনা উপস্থাপন করা হলো-
আশেকে রাসুল মো. আওলাদ হোসেন খোকন, উপপরিচালক হিসাবে পিডিবিতে কর্মরত আছেন। তার বাড়ি ২২৫ ফকিরেরপুল প্রথম গলি, মতিঝিল ঢাকা। তিনি বর্তমানে ফার্মগেটে হলিক্রস কলেজ রোডে বাস করেন। তিনি ১৯৮৭ সালে মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত শাহ দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলা যখন ১৫৪ আরামবাগে বসবাস করতেন, সেখানেই তিনি মোর্শেদের নিকট থেকে তরিকা গ্রহণ করেন। তখন তিনি সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মোর্শেদের দয়া তিনি পেয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে (পিডিবি) চাকরি পাওয়া পর্যন্ত মহান মোর্শেদ তার পথ চলার পাথেয় হিসাবে সবসময়ই তার পাশেই ছিলেন। এর মধ্যে তার জীবনে এক কঠিন সময় উপস্থিত হয় করোনাকালীন। সেটি ২০২১ সালের মে মাসের ঘটনা। আশেকে রাসুল মো. আওলাদ হোসেন খোকন ২০২১ সালের মে মাসের শেষের দিকে হঠাৎ একদিন গলা ব্যথা অনুভব করেন। অফিস থেকে এসে তিনি ঔষধের দোকানে যান। সেখান থেকে তিনি ঠান্ডা এবং গলা ব্যথার ঔষধ সংগ্রহ করে বাসায় চলে আসেন। বাসায় আসার ঘণ্টা খানেক পর তিনি জ্বর অনুভব করেন এবং তিনি জ্বরের ঔষধ সেবন করেন। তাতে জ্বর কিছুটা কমে, কিন্তু আস্তে আস্তে কাশির উদ্ভব হয়। গরম চা আর গরম পানি খেতে শুরু করেন, কিন্তু তাতে কোনো সুফল পাননি, তার কাশি কমে নাই বরং বাড়তে থাকে। তার মা ফকিরাপুলে বসবাস করেন। তার মা পরের দিন তার বাসায় যান। সেখানে তাকে দেখতে গিয়ে তিনি অসুস্থ কিনা তা জানতে চান। আশেকে রাসুল আওলাদ সাধারণ জ্বর এবং ঠান্ডা বলে মাকে জানান। এর মধ্যে সাতদিন চলে যায়।
২০২১ সালের জুন মাসের ৮ তারিখে জ্বরের পরিমাণ যেমন বাড়ে, তেমনি কাশির পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। তিনি প্রচণ্ড দুর্বলতাও অনুভব করতে ছিলেন এবং তার কাশির জন্য বুকে ব্যথা অনুভব করতে ছিলেন। সেই অবস্থায় তিনি রাতে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেন। এই অবস্থায় তিনি মোর্শেদকে স্মরণ করে মোর্শেদের নিকট আজিজি করতে থাকেন, তার যেন একটু ভালো লাগে। এই অবস্থায় তার একটু তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব হয়। সেই অবস্থায় খেয়াল করলেন তার ক্বালবে তার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত শাহ দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলা বসা। তিনি সেখান থেকে বের হয়ে আসেন এবং আশেকে রাসুল আওলাদ হোসেনের সামনে এসে দাঁড়ালেন। তিনি আবেগে আল্পুত হয়ে গেলেন। মহান মোর্শেদ তাকে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরামর্শ দিলেন এবং একটি মানত করতে বললেন। আরও বললেন আমিতো আপনার ক্বালবে আছি। আমার কাজ আমি করব, আর আপনার কাজ ডাক্তারের কাছে যাওয়া, আপনি তা করেন। মোর্শেদ এই নির্দেশ দেওয়ার পর তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব কেটে যায় এবং নিজেকে অনেক হালকা মনে হয়, পরবর্তীতে আশেকে রাসুল আওলাদ হোসেন মোর্শেদের দয়ার কথা মনে করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েন।
আল্লাহর দয়ায় এর পরের দিন থেকে তার শরীর ভালো হতে থাকে। তার জ¦র কমে যেতে লাগলো এবং শরীর আগের চেয়ে অনেক ভালো হতে লাগলো। তিনি যথারীতি পরের দিন ঘুম থেকে উঠে অফিসে যান। জ¦র এবং গলা ব্যথা একটু কম থাকায় কাজের ব্যস্ততায় তিনি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার কথা বেমালুম ভুলে যান। পরবর্তীতে বিকাল ৪টায় তার মহান মোর্শেদের নির্দেশের কথা মনে পড়ে। তিনি দ্রুত তার একজন সহকর্মীর সাথে কথা বলেন। তার সহকর্মী জানালেন আসগর আলী হাসপাতালে করোনার ভালো চিকিৎসা হয়। কারণ আশেকে রাসুল আওলাদ হোসেনের যে উপসর্গ, তা করোনা ছাড়া আর কিছু নয় বলে তার সেই সহকর্মী অভিমত ব্যক্ত করলেন। সেই অনুযায়ী তিনি ডাক্তারের কাছে গেলেন। ডাক্তার তাকে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলেন, কিছুক্ষণ পর তার রিপোর্ট আসলো। যাতে দেখা গেলো তার অবস্থা খুবই খারাপ। অক্সিজেনের মাত্রা ৯০ থেকে ৯৩ পর্যন্ত উঠানামা করছে। ডাক্তার তাকে বুকের সিটি স্ক্যান করাতে বললেন। সাথে সাথে তার বুকের সিটি স্ক্যান করা হলো। ডাক্তার আরো ভয়াবহ তথ্য দিলেন এবং অবাকও হলেন কারণ তার ফুসফুসের ৬০% ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তিনি কীভাবে বেঁচে আছেন। তাকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি হতে বললেন। কিন্তু তার মন সায় দিলো না। তিনি ডাক্তারকে ঔষধ দিতে বললেন এবং তিনি বাসায় চিকিৎসা নিবেন বলে জানালেন। ডাক্তার তাকে বললেন যে আপনার অক্সিজেনের মাত্রা অবশ্যই অনেক কমে গিয়েছিল, যার মাত্রা ৭০ থেকে ৭৫ হয়েছিল, যার কারণে আপনার ফুসফুস এতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সুতরাং আপনাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, অথবা আপনি আপনার নিজ দায়িত্বে বাসায় যাবেন। তিনি মহান মোর্শেদের কথা খেয়াল করে ক্বালবে স্মরণ করলেন এবং বাসায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলেন। তিনি ডাক্তারের কাছ থেকে ঔষধ গ্রহণ করে বাসায় চলে আসেন এবং বাসায় চিকিৎসা নিয়ে তিনি মহান মোর্শেদের অসিলায় সবকিছু আল্লাহর উপর ছেড়ে দেন। চারদিন পর তিনি হাসপাতালে যথারীতি গেলেন এবং তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখালেন যে, অক্সিজেনের মাত্রা ঠিক হয়ে গেছে এবং তার ফুসফুস আগের চেয়ে অনেক ভালো কাজ করছে। এত দ্রুত তিনি যে ঠিক হয়ে গেলেন, তাতে ডাক্তার বিস্ময় প্রকাশ করলেন এবং তার উপর যে মহামানবের দয়ার হাত রয়েছে, সেই কথা বলতে কোনো ভ্রুক্ষেপ করলেন না।
অলী-আল্লাহ্গণ আল্লাহর বন্ধু। তাঁদের অসিলায় মানুষ বিপদ আপদে আল্লাহর সাহায্য লাভ করে থাকে। এ ঘটনা তাই প্রমাণ করে। যেখানে ফুসফুসের এমন খারাপ অবস্থা, সেই অবস্থায় তিনি হাসপাতালে ভর্তি না হয়ে মোর্শেদের অসিলা ধরে আল্লাহর উপর ভরসা করে বাসায় চিকিৎসা করে ভালো হয়েছেন।
আশেকে রাসুল আওলাদ হোসেন পরবর্তীতে দরবারে এসে ঘটনার বর্ণনা করেন এবং মানত আদায় করেন।
[লেখক: ইসলামি গবেষক।]