কোরবানি ও আকিকা – ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা
কোরবানির সংজ্ঞা
কোরবানি শব্দটির উৎপত্তি ‘ক্বুরবুন’ মূল শব্দ থেকে। কোরবানি অর্থ নিকটবর্তী হওয়া, নৈকট্য লাভ করা, উৎসর্গ করা। যেহেতু মুসলমান ব্যক্তি তার প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে প্রমাণ করে, সে সবকিছুর ঊর্ধ্বে আল্লাহ্কে বেশি ভালোবাসে এবং এরই মাধ্যমে সে আল্লাহর নিকটবর্তী হয়, এজন্য এ ইবাদতকে কোরবানি বলে। একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট দিনের নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট পশুকে আল্লাহর নামে জবেহ করাকে কোরবানি বলে।
যাদের উপর কোরবানি ওয়াজিব
১। নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া। অর্থাৎ যার উপর সদকায়ে ফিতর ওয়াজিব, তার উপর কোরবানিও ওয়াজিব। তবে যাকাত ওয়াজিব হওয়ার জন্য যেমন পূর্ণ বছর মাল হাতে থাকা শর্ত, কোরবানির ক্ষেত্রে তেমন শর্ত নেই।
২। স্বাধীন হওয়া, সুতরাং ক্রীত দাস-দাসীর উপর কোরবানি ফরজ নয়।
৩। মুসলমান হওয়া।
৪। মুকিম (স্থানীয়) হওয়া, অতএব মুসাফিরের উপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।
কোরবানি করার উত্তম সময় ও মেয়াদকাল
কোরবানির সময়কাল মাত্র তিন দিনের মধ্যে সীমিত। এ দিনগুলো হলো ১০, ১১ ও ১২ই জিলহজ। উক্ত দিনগুলোর যে কোনো দিন কোরবানি করতে পারবেন। কোরবানির দিনগুলোতে অর্থাৎ জিলহজের ১০ তারিখ ঈদের নামাজের পর হতে ১২ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত যে কোনো সময় কোরবানি করা যায়। তবে রাতে কোরবানি না করাই উত্তম।
প্রথম দিন অর্থাৎ ঈদুল আজহার নামাজের পর শীঘ্র শীঘ্র কোরবানি করে নেওয়া উত্তম। তারপর পর্যায়ক্রমে ১১ ও ১২ তারিখেও কোরবানি করা যায়। কিন্তু বিনা কারণে কোরবানি করতে বিলম্ব করবেন না। ঈদের নামাজ আদায় করে কোরবানি করবেন। যদি কোনো কারণবশত প্রথম দিন ঈদের নামাজ না হয়ে থাকে, তাহলে নামাজের সময় অতিবাহিত হওয়ার পরে কোরবানি করবেন।
কোরবানির পশুর বিবরণ
১। একটি উট, একটি গরু, কিংবা একটি মহিষ একজন থেকে সর্বোচ্চ সাতজনের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি করবেন।
২। একটি ছাগল, একটি ভেড়া, কিংবা একটি দুম্বা কেবল একজনের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি করবেন।
৩। ভাগে কোরবানি দিলে প্রত্যেকেরই সমান মূল্য ও কোরবানির খালেছ নিয়ত থাকতে হবে। কোরবানির ক্ষেত্রে স্মরণ রাখা কর্তব্য, বান্দার নামে নয়, বরং বান্দার পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি করতে হয়।
কোরবানি করার নিয়ম
মনে রাখবেন, যার উপর কোরবানি করা ওয়াজিব, তার কর্তব্য নিজের কোরবানির পশুর জবেহ নিজের হাতে সম্পন্ন করা। কোরবানি করার সময় পশুর মাথাকে দক্ষিণ দিকে, পা উত্তর দিকে রাখবেন। অতঃপর পশু জবেহকারী কেব্লামুখী অবস্থায় ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে পশু জবেহ করবেন। এটি সুন্নতে রাসুল (সা.)। কেননা আল্লাহর রাসুল (সা.) নিজের হাতে কোরবানি করতেন।
হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন “একদা আল্লাহর রাসুল (সা.) ধূসর বর্ণের দুই শিংবিশিষ্ট দুটি মেষ কোরবানি করলেন। আর তিনি জবেহ করার প্রাক্কালে ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বললেন। এ সময় আমি হযরত রাসুল (সা.)-কে নিজের হাতে কোরবানি করতে দেখেছি, আর তখন তিনি তাঁর কদম মোবারক জন্তুটির পাজরের উপর রেখেছিলেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা ২২৫) আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন কোরবানি করতেন, তখন তিনি বলতেনÑ [উচ্চারণ: “ইন্নী ওয়াজ্জাহতু ওয়াজহিইয়া লিল্লাযী ফাত্বারাস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ্বা হানীফাও ওয়ামা আনা মিনাল মুশরিকীনা” “ইন্না সালাতী ওয়া নুসুকী ওয়া মাহইয়াইয়া ওয়া মামাতী লিল্লাহি রাব্বিল ‘আলামীন, লা শারীকা লাহূ, ওয়া বিযালিকা উমিরতু ওয়া আনা আওয়্যালুল মুসলিমীন” আল্লাহুম্মা মিনকা ওয়ালাকা ‘আন মুহাম্মাদিও ওয়া উম্মাতিহী বিসমিল্লাহি ওয়াল্লাহু আকবারু ছুম্মা যাবাহা।]
অর্থাৎ- “নিশ্চয়ই আমি আমার চেহারাকে সেই সত্তার চেহারা মোবারকের দিকে ফিরালাম, যিনি আসমান ও জমিন সৃষ্টি করেছেন। আর আমি মুশরিকদের দলভুক্ত নই। নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার কোরবানি, আমার জীবন ও আমার মরণ বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য। তাঁর কোনো শরিক নেই, আর আমি এরই জন্য আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই মুসলিমদের মধ্যে প্রথম। হে আল্লাহ্! (এই পশু) তোমার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এবং তোমারই উদ্দেশে উৎসর্গিত। মোহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে এবং তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে। আল্লাহ্ তোমার নামে কোরবানি করছি এবং আল্লাহ্ই মহান। অতঃপর রাসুল (সা.) জবেহ করতেন।” (আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমী শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ১২৮) তবে কোরবানির জন্য আরবিতে নিয়ত করা শর্ত নয়। আপনি আপনার ভাষায় নিয়ত করবেনÑ ‘হে আল্লাহ্! আমি কেবলমাত্র আপনার সন্তুষ্টির জন্য আপনার নামে এ জন্তুটি কোরবানি করছি, আপনি দয়া করে আমার পক্ষ থেকে এ কোরবানি কবুল করুন।’ অতঃপর ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে পশুটি জবেহ করবেন।
কোরবানির মাংস বণ্টনের নিয়ম
কোরবানির মাংসের আহার ও বণ্টন প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন “অতঃপর তোমরা উহা হতে আহার করো এবং দুঃস্থ ও অভাবগ্রস্তকে আহার করাও।” (সূরা আল হাজ ২২: আয়াত ২৮) আল্লাহর রাসুল (সা.) কোরবানির গোশত সম্পর্কে বলেছেনÑ “তোমরা নিজেরা খাও, অন্যকে আহার করাও এবং সংরক্ষণ করো।” (বোখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৩৫) কোরবানির মাংস তিন ভাগ করা উত্তম। একভাগ নিজের পরিবারের আহারের জন্য। আরেক ভাগ আত্মীয়-স্বজনদের জন্য। অন্য ভাগটি গরিব-মিসকিনদের জন্য। এ প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছেÑ “হযরত রাসুল (সা.) কোরবানির মাংস এক ভাগ নিজের পরিবারকে খাওয়াতেন, এক ভাগ প্রতিবেশিদের দিতেন এবং বাকি এক ভাগ দিতেন গরিব-মিসকিনদের।”
কোরবানির হাকিকত
কোরবানি হচ্ছে নিজের প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে উৎসর্গ করা। নিজের জীবাত্মার পশু প্রবৃত্তিকে আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করা, অর্থাৎ নিজের স্বেচ্ছাচারিতাকে পরিত্যাগ করে আল্লাহর ইচ্ছার উপর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য হাসিল করাই হাকিকতে কোরবানি। আপনি মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী একজন আশেকে রাসুল হিসেবে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করে এসে নিজের কোরবানি নিজের হাতে করার চেষ্টা করবেন। সেই সাথে মনে মনে আজিজি করে বলবেনÑ হে আল্লাহ্! এ পশু কোরবানি কবুল করে এর বিনিময়ে তুমি আমার নফ্স তথা আমার জীবাত্মার পশু প্রবৃত্তিকে কোরবানি করে দিয়ে আমাকে তোমার প্রতি পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণকারী বানাও।
আকিকা
আকিকার বিবরণ: মোহাম্মদী ইসলামের শরিয়ত অনুযায়ী কোনো শিশু জন্মগ্রহণ করলে সপ্তম দিনে তার মাথার চুল কামিয়ে দিতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। এ সময় সন্তান লাভের আনন্দে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া হিসেবে সন্তানের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, গরু, মহিষ, উট ইত্যাদি জবেহ করা সুন্নত। ইসলামের পরিভাষায় একেই আকিকা বলে।
হযরত আলী ইবনে আবী তালেব র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেনÑ “হযরত রাসুল (সা.) ইমাম হাসান (রা.)-এর আকিকায় একটি বকরি জবেহ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, ‘হে ফাতিমা! তাঁর মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের সমপরিমাণ রৌপ্য আল্লাহর রাস্তায় সদকা করে দাও।’ হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু বলেনÑ ‘আমি ওজন করে দেখলাম তার চুল এক দিরহাম বা এক দিরহামের কিছু অংশ পরিমাণ হলো।” (তিরমিযী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৮) আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেনÑ [উচ্চারণ: ‘আনিল গুলামি শাতানি ওয়া ‘আনিল জারিইয়াতি শাতুন লা ইয়াদ্বুররুকুম যুকরানান কুন্না আম ইনাছা।] অর্থাৎ- “পুত্র সন্তানের আকিকায় দুটি ছাগল এবং কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগল জবেহ করতে হবে তা নর হোক অথবা মাদা।” (সুনানে নাসায়ী শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৮) এমনিভাবে “সাহাবি হযরত সালমান ইবনে আমের দাব্বী (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছিÑ শিশুর জন্মের সাথে আকিকা জড়িত। সুতরাং তার পক্ষ থেকে তোমরা রক্ত প্রবাহিত করো (অর্থাৎ আকিকার উদ্দেশ্যে পশু জবেহ করো)। আর তার শরীর থেকে কষ্ট দূর করে দাও (অর্থাৎ তার মাথার চুল কেটে দাও)।” (বোখারী শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৬২)
আকিকার পশু: যে সকল পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ, সে সকল পশু দ্বারা আকিকা করা জায়েজ। আর যে সকল পশু দ্বারা কোরবানি করা জায়েজ নয়, সে সকল পশু দ্বারা আকিকা করাও জায়েজ নেই। কোরবানির পশুর ক্ষেত্রে যে সকল শর্ত রয়েছে, আকিকার পশুর ক্ষেত্রেও হুবহু সেই সকল শর্ত প্রযোজ্য। যদি আপনি সামর্থ্যবান হন, তাহলে ছেলের জন্য দুটি বকরি, অথবা দুটি ভেড়া, অথবা দুটি দুম্বা জবেহ করবেন অথবা কোরবানির উপযুক্ত কোনো বড়ো পশুটির অংশ আকিকা হিসেবে দেবেন। আর যদি আপনার সামর্থ্য না থাকে, তাহলে একটি বকরি, অথবা একটি ভেড়া, অথবা একটি দুম্বা, অথবা কোরবানির উপযুক্ত কোনো বড়ো পশুর এক অংশ আকিকা হিসেবে দেবেন। মেয়ের জন্য আকিকা হলো ছেলের অর্ধেক অর্থাৎ ছেলের জন্য যেখানে দুটি পশু উল্লেখ করা হয়েছে, সেখানে মেয়ের জন্য একটি বকরি, অথবা একটি ভেড়া, অথবা একটি দুম্বা, অথবা কোরবানির উপযুক্ত বড়ো কোনো পশুর এক অংশ আকিকা করবেন। তবে বকরি দ্বারা আকিকা দেওয়া সর্বোত্তম। উল্লেখ্য যে, গরু, মহিষ ও উট দ্বারা একাধিক সন্তানের আকিকা দেওয়া যায়।
আকিকার পশু জবেহ করার নিয়ম: যে নিয়মে কোরবানির পশু জবেহ করতে হয়, ঐ একই নিয়মে আকিকার পশু জবেহ করবেন। এক্ষেত্রে কোরবানির স্থলে আপনি যে আপনার সন্তানের পক্ষ থেকে আকিকা করছেন, কেবল তা উল্লেখ করবেন।
আকিকা করার সময় : সন্তান ভ‚মিষ্ঠ হওয়ার পর সপ্তম দিনে আকিকা করা এবং তার নাম রাখা সুন্নত। তবে সপ্তম দিনে আকিকা করতে না পারলে চৌদ্দ তারিখ, অথবা একুশ তারিখে আদায় করে নেবেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেনÑ “আকিকার পশু সপ্তম দিবসে জবেহ করবে, অথবা চৌদ্দ তারিখে অথবা একুশ তারিখে জবেহ করবে।” (ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত ফাতাওয়া ও মাসাইল ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭৫)
আকিকার মাংসের বিধান: আকিকার মাংসের বিধান কোরবানির মাংসের বিধানের অনুরূপ। আকিকার মাংসের এক তৃতীয়াংশ গরিব-মিসকিনদের দান করা উত্তম। অবশিষ্ট দুই তৃতীয়াংশ নিজের ও নিজের আত্মীয়-স্বজনের জন্য রেখে দেবেন। তবে কেউ যদি আকিকার সকল মাংস রেখে দিয়ে নিজেরা খেয়ে ফেলে, অথবা মেহমানদারিতে ব্যয় করে ফেলে তাতেও আকিকা হয়ে যাবে। যদিও এই ধরনের কাজ সৌন্দর্যের বিপরীত। আকিকার মাংস কাঁচা অথবা পাক করে বণ্টন করা অথবা দাওয়াত করে খাইয়ে দেওয়া সবই জায়েজ। (ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত ফাতাওয়া ও মাসাইল ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৭৬) আপনি মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী একজন আশেকে রাসুল হিসেবে নিয়ম অনুযায়ী আকিকা করবেন। অতঃপর আপনি ইচ্ছা করলে আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশী, ধনী-গরিব সকলকে দাওয়াত দিয়ে মোহাম্মদী ইসলামের মিলাদ শরীফ পাঠ করবেন এবং মিলাদ ও মোনাজাত শেষ করে সকলকে তৃপ্তির সাথে আহার করিয়ে দিতে পারেন।
আকিকার মাংসের ব্যাপারে প্রচলিত কুসংস্কার: আমাদের সমাজে আকিকার মাংসের ব্যাপারে কুসংস্কার রয়েছে যে, আকিকার মাংস সন্তানের মাতা, পিতা, দাদা, দাদি, নানা, নানি কেউ খেতে পারে না। বস্তুত এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল, এটি ইসলামি শরিয়ত পরিপন্থী। বরং সকলেই আকিকার মাংস খেতে পারবে। মূলত আকিকা হচ্ছে সন্তান লাভের আনন্দে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া হিসেবে পশু জবেহ করা। একটু চিন্তা করে দেখুন তো, সন্তানের জন্মে পিতা-মাতা, দাদা-দাদি ও নানা-নানির চেয়ে বেশি খুশি কেউ হতে পারে কি? নিশ্চয়ই না। সুতরাং তাদেরকে এ আনন্দ থেকে বঞ্চিত রাখার চেয়ে বড়ো ভুল আছে কি? তাছাড়া আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল যা হালাল করেছেন, তা হারাম করার অধিকার অন্য কারো আছে কি? এটি সুস্পষ্ট গোমরাহি। সুতরাং পিতা-মাতা, দাদা-দাদি ও নানা-নানি সকলেই আকিকার মাংস খেতে পারবেন।
আকিকা উপলক্ষ্যে শিশুদের প্রদত্ত হাদিয়া: আকিকা বা সুন্নতে খাৎনা প্রভৃতি অনুষ্ঠানে বাচ্চাদেরকে হাদিয়া বা উপঢৌকন দেওয়া হয়। এটি মূলত বাচ্চাদেরকে দেওয়া হয় না, বরং তাদের পিতা-মাতাকেই দেওয়া হয়। এ কারণে সেই সম্পদের মালিক মূলত বাচ্চাদের পিতা-মাতাই। তারা এ সম্পদ স্বাধীনভাবে ভোগ করতে পারবেন। তবে কেউ বিশেষভাবে বাচ্চাদের জন্য কোনো হাদিয়া বা উপঢৌকন নিয়ে আসলে পিতা-মাতার দায়িত্ব এটি সন্তানের জন্য নির্ধারণ করে সংরক্ষণ করা। যথাসময়ে তাদের প্রাপ্য সম্পদ তাদের ফিরিয়ে দেওয়া।
[লেখক: মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম; পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ; প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।]