Cancel Preloader

ক্রোধ রিপুর প্রভাব: নিয়ন্ত্রণের উপায়

ড. পিয়ার মোহাম্মদ: ক্রোধ মানব জীবনের চিহ্নিত ছয় শত্রু বা ষড়রিপুর মধ্যে অন্যতম। ক্রোধ শব্দের অর্থ হলো রাগ, রোষ, দ্বেষ, চোট, ক্ষিপ্ততা, প্রকোপ, উষ্মা, গর্জন, উন্মাদনা, কোপ বা প্রতিশোধ নেবার আবেগ। মানুষ ক্রোধের বশীভূত হয়ে অতি তুচ্ছ বিষয় নিয়ে শয়তানের প্ররোচনায় লঙ্কাকাণ্ড ঘটিয়ে ফেলে। যার ফলশ্রুতিতে সে তার নিজের জীবনে, সংসারে ও সমাজে অশান্তি বয়ে আনে। সেজন্য ক্রোধ অতিশয় ধ্বংসাত্মক বা ক্ষতিকর রিপু।

ক্রোধ বা রাগ একটি পঙ্গু, নষ্ট ও গন্ধযুক্ত আবেগ। রাগ মূর্খতা দিয়ে শুরু হয় আর অনুতাপের সাথে শেষ হয়। মানুষকে ধোঁকা দান বা প্রতারণার ক্ষেত্রে ক্রোধ বা রাগ শয়তানের বড়ো অস্ত্র। শারীরিক কোনো কষ্ট বা যন্ত্রণার অনুভুতি এবং মানসিক সমস্যার কারণে রাগের উদ্ভব। কেউ কেউ সব সময়ই রাগের মধ্যে থাকে। এটা নিতান্তই এক ধরনের বিকৃত অভ্যাস। রাগের কারণে শারীরিক, মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ক্ষতি হতে পারে। মানুষ চায় সব কিছু তার মতো হোক। বাস্তবে তা সম্ভব হয় না। সব ক্ষেত্রে মানুষের আশা পূরণ হয় না। তখনই মানুষের মনে ক্রোধের জন্ম হয়। কামনা, ভোগ, বাসনা, কোনো কিছু পেতে যখন বাধাপ্রাপ্ত হয় বা মনের বাসনা অপূরণ হয় তখনই ক্রোধের উদ্রেক হয়। আমিত্ব মানুষকে ক্রোধের দিকে ঠেলে দেয়।

ক্রোধ একটি তীব্র মানসিক অবস্থা, যা অনুভূতিতে আঘাত প্রাপ্তির ফলে একটি শক্তিশালী অস্বস্তিকর এবং অসহযোগী প্রতিক্রিয়া হিসেবে আবির্ভূত হয়। ক্রোধের সম্মুখীন একজন ব্যক্তি মানসিক অবস্থার পাশাপাশি প্রায়ই শারীরিক অবস্থার উপরও প্রভাব অনুভব করেন। শরীরে হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাড্রেনালিন এবং নোরাড্রেনালিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। পবিত্র কুরআন মজিদে যে কোনো উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মেজাজ শান্ত রেখে সেই পরিস্থিতির মোকাবেলা করার নির্দেশ দিয়ে এরশাদ হয়েছে, “অবশ্যই তোমরা শুনতে পাবে পূর্ববর্তী আহলে কিতাবের এবং মুশরিকদের কাছ থেকে অনেক কষ্টদায়ক কথা। তবে যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং তাকওয়া অবলম্বন করো, তা হবে দৃঢ় সংকল্পের কাজ।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১৮৬) এ প্রসঙ্গে হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “নিশ্চয় ক্রোধ মানুষের ইমানকে নষ্ট করে দেয় যেমনভাবে তিক্ত ফল মধুকে নষ্ট করে।” (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৪৩৪) কারো রাগ উঠলে, মহান আল্লাহর হুকুম আহকাম নিজের লাভ ক্ষতির চিন্তা মাথায় থাকে না। সেজন্য সে তখন কী করে নিজেও বুঝতে পারে না।


মানুষ বিভিন্ন অনুভূতির মিশ্রণে গড়া। রাগও মানব জীবনে এক স্বাভাবিক অনুভূতি, তবে অনিয়ন্ত্রিত রাগ মানসিক রোগ বটে। রাগ একটি সর্বজনিন আবেগ। আমরা সবাই বিভিন্ন কারণে বিরক্ত, হতাশ বা ক্ষুদ্ধ বোধ করি। রাগ জন্মগতভাবে ভালো বা খারাপ নয়। অনেক সময়ই রাগ আমাদের পরিবেশ সম্পর্কে সতর্ক করার জন্য অন্তর্নিহিত গাইড হিসেবে কাজ করে। একেবারে রাগহীন জীবনও হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষোভ প্রকাশের দরকার আছে। মানুষের আত্মরক্ষামূলক রাগ অবশ্যই থাকতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে কোথাও রাগের ব্যবহার হলেও তা হতে হবে নিয়ন্ত্রিত আকারে এবং এ ব্যবহার হতে হবে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে। জাতীয়, ধর্মীয়, মানবিক আদর্শ ও মূল্যবোধ রক্ষার জন্য প্রয়োজনে রাগ কাজে লাগানো যেতে পারে। কখনো ব্যক্তি স্বার্থ রক্ষার জন্য রাগ দেখানোর সুযোগ নেই। রাগের ব্যক্তিগত ব্যবহারই রিপুর কারবার।

রিপু সম্পর্কে কবি শেখ ফজলল করিম লিখেছেন,
“কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষেরি মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর।
রিপুর তাড়নে যখনই মোদের বিবেক পায় গো লয়,
আত্মগøানির নরক-অনলে তখনি পুড়িতে হয়।
প্রীতি ও প্রেমের পুণ্য বাঁধনে যবে মিলি পরস্পরে,
স্বর্গ আসিয়া দাঁড়ায় তখন আমাদের কুঁড়ে ঘরে।”

রাগান্বিত অবস্থায় শয়তান যত সহজে মানুষকে কাবু করতে পারে, অন্য কোনো অবস্থায় পারে না। মানুষ এ অবস্থায় নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকে না, ইবলিসের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। সেজন্য রাগের সময় ধৈর্যধারণ করে অন্যের অপরাধ মাফ করে দিতে পারাটাই মহৎ মানুষের কাজ। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন, “রাগ করবে না তাহলে জান্নাত পেয়ে যাবে।” (মেরকাত শরহে মেশকাত, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ২৯২) মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রাগ হজম করার জন্যও হযরত রাসুল (সা.) নির্দেশনা দিয়েছেন। (মুসনাদে আহমদ)
রাগ বা ক্রোধ মনুষত্ব বিধ্বংসী একটি রিপু। রাগের সময় মানুষের মধ্যে বিদ্যমান পশুর আত্মার বহিঃপ্রকাশ ঘটে। শুধু রাগের কারণে, কর্মস্থলে কত হেনস্তা হতে হয় তা ভুক্তভোগী সকলেই জানেন। সেজন্য হযরত রাসুল (সা.) উম্মতকে যে সকল চরিত্র অর্জন করতে বলেছেন তার একটি হলো সহনশীলতা। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “যে ব্যক্তি নম্রতা থেকে বঞ্চিত, সে প্রকৃত কল্যাণ থেকে বঞ্চিত।” (সহীহ মুসলিম শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২২) ক্রোধ রিপু অসংযমী থাকলে মানুষ ঝগড়া ফ্যাসাদে লিপ্ত হয়ে আত্মাকে কলুষিত করে থাকে। কেবল মানুষ নয়, বরং প্রাণী মাত্রই ক্রোধ থাকে। এ ক্রোধের রয়েছে বহুবিধ গতি ও প্রকৃতি। ক্রোধান্ধ ব্যক্তির বিবেক বুদ্ধি থাকলেও তা সে কাজে লাগাতে পারে না। রাগান্ধ রাগ মানব জীবনের সর্বাঙ্গীন বিকাশ ও কল্যাণে অপ্রতিদ্বন্দ্বী শত্রু হিসেবে বিবেচিত হয়। রাগের কারণে মানুষ যে কোনো অপরাধ করতে পারে। রাগান্বিত অবস্থায় সর্বোচ্চ ধৈর্যের পরিচয় দিতে হয়, বিনয়ী ও নম্র হতে হয়। তা না পারলে ক্রোধ রিপু মানুষের জন্য হয়ে উঠে খুবই বিপদজনক। এটি মানুষের জীবনে অনেক বিপদ ডেকে আনে। যখন কোনো অন্তরে ক্রোধ প্রবেশ করে, তখন তার অন্তর থেকে তাকওয়া দূর হয়ে যায়। মানুষ যখন রাগান্বিত হয় তখন সে যা ইচ্ছা তাই করে ফেলে। তার মধ্যে আর পরহেজগারিতা অবশিষ্ট থাকে না।

কুরআন মজিদে মুত্তাকিদের গুণাবলি ও পরিচয় তুলে ধরে এরশাদ হয়েছে, “যারা ব্যয় করে স্বচ্ছল অবস্থায়ও এবং অস্বচ্ছল অবস্থায়ও আর তারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের অপরাধ ক্ষমাকারী।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১৩৪) হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণের জন্যও পবিত্র কুরআনে নির্দেশ দিয়ে এরশাদ হয়েছে, “তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর জীবনে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আহযাব ৩৩: আয়াত ২১) হযরত রাসুল (সা.) সব সময় মুচকি হাসির অধিকারী ছিলেন। হযরত আনাস (রা.) বলেছেন, ’আমি দশ বছরকাল হযরত রাসুল (সা.)-এর খেদমতে ছিলাম, তিনি কখনো আমার প্রতি উফ (বিরক্ত, উপেক্ষা, অবজ্ঞা, ক্রোধ বা ঘৃণাসূচক কথা) উচ্চারণ করেননি।” (মুসলিম শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৩) হাদিস শরীফে আরো বর্ণিত হয়েছে, “যে ব্যক্তি নিজের রাগকে সংবরণ করে, আল্লাহ্ তায়ালা কিয়ামতের দিন তার নিকট থেকে আজাবকে দূরে রাখেন।” (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৪৩৪) ক্রোধ সংবরণ করে ধৈর্যধারণ করাই জ্ঞানীর পরিচয়।

ক্রোধ বা রাগের আরেকটি বিপরীত রূপ অনুরাগ। অনুরাগ হলো বাস্তব বা কাল্পনিক কোনো বস্তু বা অবস্থার প্রতি এক বিশেষ অনুভূতি, যা ব্যক্তিকে কিছু করতে অনুপ্রাণিত করে। অনুরাগ না থাকলে রাগকে বশীভূত করা যায় না। মানুষ রাগের বশীভূত হয়ে যত খারাপ কাজ করে, আবার অনুরাগের বশবর্তী হয়ে মহৎ কাজ করে সিদ্ধি লাভ করে। ক্রোধ রিপুকে বশীভূত না করতে পারলে জীবনের কোনো কাজেই সফলতা আসে না। ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে তার ভিতরে শিষ্টাচার, ভদ্রতা এবং আত্মপ্রতিষ্ঠা বাড়ে এবং সে সহজে ভালো কাজ করতে পারে। সেজন্য মানুষকে ধৈর্য, সহনশীলতা ও ক্ষমা গুণের অধিকারী হতে হয়। ক্রোধ মানুষের পরম শত্রু। ক্রোধ মানুষের মনুষ্যত্ব নাশ করে। যে লোমহর্ষক কাণ্ডগুলো পৃথিবীকে নরকে পরিণত করেছে, তার মূলে রয়েছে ক্রোধ। ক্রোধ যে মানুষকে পশুভাবাপন্ন করে, তা একবার ক্ষুদ্ধ ব্যক্তির মুখের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই বুঝা যায়। সুন্দরকে মুহূর্তের মধ্যে কুৎসিত করতে অন্য কোনো রিপু ক্রোধের মতো কৃতকার্য হয় না। যে সংযমী ব্যক্তি বাক্যের বেগ, মনের বেগ, ক্রোধের বেগ, জিহŸার বেগ, উদর এবং উপস্থের (যৌনতা) বেগ এই ষড় বেগ দমন করতে সমর্থ তিনি সমগ্র পৃথিবী শাসন করতে পারেন। ক্রোধ রিপু নিয়ন্ত্রণ এমনই গুরুত্বপূর্ণ।

হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “ঐ ব্যক্তি শক্তিশালী নহে, যে প্রতিপক্ষকে মোকাবিলায় পরাভূত করে ফেলে। বস্তুত সেই ব্যক্তি প্রকৃত বীর, যে ক্রোধের সময় নিজকে নিয়ন্ত্রিত রাখতে পারে।” (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৪৩৩) হযরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “তুমি রাগবে না, তাহলেই জান্নাত তোমার জন্য।” (হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/৭০) হযরত রাসুল (সা.) আরো বলেন, “যে ব্যক্তি ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করবে আল্লাহ্ তার দোষ ত্রুটি গোপন রাখবেন।” (হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ৮/১৯১) পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “আর যারা বেঁচে থাকে কবিরা গুনাহ ও অশ্লীল কাজ থেকে এবং ক্রোধান্বিত হয়েও ক্ষমা করে দেয়।” (সূরা শুরা ৪২ : আয়াত ৩৭) পৃথিবীতে সব কিছু মহান আল্লাহ্ পাকের ইচ্ছায় ঘটে থাকে। তাছাড়া, কারো কোনো আচরণে রাগ নিয়ন্ত্রণের কথা আল কুরআন এবং হাদিস গ্রন্থে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এসব দিক বিবেচনা করলে আর রাগ বা ক্রোধ প্রদর্শনের সুযোগ থাকে না।

রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হলে প্রথমেই নিজের অহংকার ত্যাগ করতে হবে। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “যখন তোমাদের কাহারো রাগ আসে তখন যদি সে দাঁড়ানো থাকে, তবে যেন বসে যায়। যদি এতে রাগ চলে যায় ভালো। অন্যথায় যেন শুয়ে পড়ে।” (আহমদ তিরমিজি সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৪৩৪) হযরত রাসুল (সা.) আরো বলেন, “ক্রোধ শয়তানের পক্ষ হতে, আর শয়তান আগুনের তৈরি। বস্তুত আগুন পানি দ্বারা নিভানো হয়। সুতরাং যখন তোমাদের কেহ ক্রোধান্বিত হয় তখন সে যেন ওজু করে নেয়।” (আবু দাউদ সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৪৩৪) রাগের সময় চুপ থাকা বা প্রতিশোধের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও আল্লাহর রাহে মাফ করে দেওয়া উত্তম। রাগান্বিত হলে আমাদের নিজের গুনাহ স্মরণ করে বারবার আল্লাহর ক্রোধ ও শাস্তির কথা ভাবলে অন্যের উপর রাগ কমে যাবে। মানুষকে ভাবতে হবে সব কেন তার মতো হবে। পৃথিবীতে সব কিছু হবে মহান স্রষ্টার ইচ্ছামতো। সেজন্য বিষয়টি উপলব্ধি করে মেনে নেওয়া শিখলে তার জীবনে আর ক্রোধের উদ্ভব ঘটতে পারে না।

ক্রোধ থেকে বাঁচার জন্য কোনো কিছু নিজের মতো না হলেও যিনি করছেন তার হয়তো যুক্তি আছে এমন ভেবে রাগান্বিত না হওয়া উচিৎ। এমন মনোভাব পোষণ করলে রাগ কমে যাবে। ফল পাওয়া যাবে। মনে রাখতে হবে রেগে গেলেনতো হেরে গেলেন। রাগ কমানোর জন্য জায়গা পরিবর্তন করা যায়, কোনো কথা যেন মুখ থেকে বের না হয় তা খেয়াল করতে হয়, চোখ কান বন্ধ রাখার চেষ্টা করা যায়, একটু হেঁটে আসা যায়। বদভ্যাস ত্যাগ করলে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করলে রাগ কমতে পারে বলে অনেকেই পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কেউ বলেন রাগের সময় দোয়া করা যায়, অধিক হারে আল্লাহর জিকির করা যায়, যে সকল আয়াত ও হাদিস ক্রোধের ভয়াবহতা এবং সংবরণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করে সেগুলো হৃদয়ঙ্গম করা যায় এবং শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করা যায়। এতসব করার পরও সাধারণত দেখা যায় মানুষ রাগান্বিত হলে তার আর কিছু খেয়াল থাকে না। সে রাগের বশে অনেক কিছু ঘটিয়ে ফেলে।

প্রকৃতপক্ষে ক্রোধ রিপু থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে যিনি ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছেন এমন একজন অলী-আল্লাহর সংস্পর্শে গিয়ে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হয়। তাঁর শেখানো মতে মোরাকাবার মধ্যেমে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। পৃথিবীর কোথাও ক্রোধের বসবাস নেই। ক্রোধ বাস করে মানুষের মনে। সেজন্য এ মনের চিকিৎসার মাধ্যমে ক্রোধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মানুষ সবাই মনোরম জীবন যাপন করতে চায়, কিন্তু শয়তানের ধোঁকায় রাগান্বিত হয়ে সে শান্তির চরিত্র ধরে রাখতে পারে না। সেজন্য কামেল অলী-আল্লাহর শিক্ষা অনুযায়ী ধ্যান সাধনা করে নিজের মনে শান্তিকে স্থায়ী করতে পারলে সে মন থেকে আর অশান্তির সৃষ্টি হয় না। রাগের উদ্ভব ঘটে না। মানুষের জীবন হয়ে উঠে আনন্দময়। মানুষ যখন মোরাকাবার মাধ্যমে ফায়েজ অর্জন করে নিজ চরিত্রকে শান্তির চরিত্রে রূপান্তর করে তখন আর সমস্যা হয় না। গবেষণায়ও ধ্যান বা মোরাকাবা ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ অনুশীলন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। যে মনে ক্রোধের উদ্ভব সেই মন যদি ঠিক হয়ে যায় তাহলে ক্রোধ আসবে কোথা থেকে।

মোরাকাবার মাধ্যমে ফায়েজ পেয়ে আমিত্বকে বিষর্জন দিতে পারলে তবেই ক্রোধ বা রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আমিত্ব যখন দূর হয় তখন আর কেউ মনের মতো কাজ না করলেও রাগ হবে না, কেউ গালি দিলেও কোনো ক্রোধ আসবে না। কেউ আঘাত করলেও তাকে আঘাত করতে ইচ্ছা হবে না, কেউ ক্ষতি করলেও তাকে ফুল দিয়ে বরণ করতে কষ্ট হবে না। এ যেন মরার আগে মরা হয়ে সংসার জীবনে থাকা। মহামানবগণ এ গুণের অধিকারী বিধায় তাঁরা কারো প্রতি রাগ করেন না। বরং যারা ক্ষতি করেছে তাদের জন্য দোয়া করে। মনের পশুত্ব দূর করে এমন চরিত্র ধারণ করতে পারলে তখনই সে প্রকৃত মানুষ হতে পারে। শয়তান তার থেকে দূরে থাকে। রিপু আর তাকে আক্রমণ করতে পারে না বরং তার বশীভূত হয়ে তাকে সহায়তা করতে থাকে।

আমাদের মহান দরদি মোর্শেদ দ্বিন দুনিয়ার কোহিনুর, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) সারা জীবন মানুষকে ক্রোধসহ সকল রিপু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শান্তির চরিত্র ধারণ করে দয়াল রাসুল (সা.) ও দয়াল মাওলার করুণা পাওয়ার জন্য আশেকে রাসুলদের শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর শিক্ষানুযায়ী আশেকে রাসুলগণ ক্বালবে আল্লাহর জিকির জারি এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ক্রোধ রিপুর প্রভাবমুক্ত হয়েছেন। তাঁর সংস্পর্শে আসলেই অনেকের ভিতর পরিবর্তন এসেছে। অলী-আল্লাহ্গণ ইচ্ছা করলে মুহূর্তের মধ্যেই ক্রোধ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করে দিতে পারেন।

দয়াল মোর্শেদের ওফাতের পর ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর মানুষের মুক্তির জন্য মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে বর্তমানে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ক্রোধ রিপু নিয়ন্ত্রণ করে চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনের শিক্ষা গ্রহণের জন্য সবাইকে তাগিদ দিচ্ছেন। তাঁর মাধ্যমে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর শিক্ষা গ্রহণ করে সফল হওয়া সম্ভব। তাঁর দরজা সকল মানুষের জন্য খোলা। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন আমরা যেন তাঁর কদম মোবারকে হাজির থেকে ক্রোধসহ সকল রিপু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সফলকাম হতে পারি। আমিন।
[লেখক: সাবেক অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার]

সম্পর্কিত পোস্ট