Cancel Preloader

‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ প্রণয়নের ইতিবৃত্ত

আজ থেকে ৩৩ বছর পূর্বে আমি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের পরিচয় তুলে ধরার অত্যাবশ্যক কাজ শুরু করেছিলাম। আর এ কাজ করার প্রেরণা অশেষ দয়াময় আল্লাহ্ই আমার অন্তরে সৃষ্টি করে দেন। অতঃপর তাঁরই অপার দয়া ও সাহায্যে সুদীর্ঘ এ পথ অতিক্রম করে আজ আমি আমার কাক্সিক্ষত মঞ্জিলে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছি, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন।

আমি আমার মুর্শেদ পীরানে পীর, দস্তগীর, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদীয়া তরীকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর সহবতে থাকাকালীন, ১৯৮৩ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রহমতের সময়, মহান রাব্বুল আলামিনের পক্ষ থেকে আমাকে মোজাদ্দেদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ১৯৮৫ সালের ২৮ মার্চ মুর্শেদের দরবার শরীফ থেকে ঢাকায় চলে আসার পর, আমি মোজাদ্দেদের দায়িত্ব পালনার্থে ইসলাম ধর্মে অনুপ্রবেশ করা কুসংস্কার চিহ্নিত করে পবিত্র কুরআনের আলোকে তা সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করি।

ফলশ্রুতিতে ১৯৮৬ সালে ‘কুরআনের আলোকে জীবন-বিধান’ নামক একখানা কিতাব লেখার কাজে হাত দিয়ে যাত্রা শুরু করি। তখন আমার লক্ষ্য ছিলোÑ একজন মানুষের জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত যাবতীয় কর্মকাণ্ড পবিত্র কুরআনের আলোকে সাজিয়ে দেওয়া, অর্থাৎ মানুষের জীবনের প্রতিটি স্তরে তার কি করণীয়, সে স্তরগুলো চিহ্নিত করে, কুরআন থেকে সেটি বের করে বিষয়ভিত্তিক সাজিয়ে দিতে পারলে, মানুষ কুরআনের আলো দিয়েই পথ চলতে পারবে। কিন্তু কুরআনের আলোকে জীবন-বিধান লেখার কাজ শুরু করতে গিয়ে, আমার মনে বারবার একটি কথা ভেসে উঠছিলÑ জীবন-বিধান লেখার পূর্বে যিনি এ বিধান দিয়েছেন, সে বিধাতার পরিচয় লিপিবদ্ধ করুন। কেননা মানুষ আল্লাহ্র পরিচয় না জানলে, আল্লাহ্র দেওয়া বিধানের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারবে না। তখন আমার আর বুঝতে বাকী রইল না, মহিমান্বিত আল্লাহ্ চাচ্ছেনÑ আমি যেন সর্বাগ্রে তাঁর পরিচয় লিপিবদ্ধ করি।

অতঃপর কুরআনের আলোকে জীবন-বিধান ‘আল্লাহ্র জাত-পাকের পরিচয়’ লিখতে মনস্থির করি। সে লক্ষ্যে ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদানকারী পণ্ডিতবর্গকে একত্রিত করে গবেষণা টিমে সম্পৃক্ত করি। পাশাপাশি কুরআন ও হাদিস সম্পর্কে সুপণ্ডিত ওলামায়ে কেরামকেও অন্তর্ভুক্ত করি।

এ সময় গবেষণা টিমের সামনে আমি আমার ইচ্ছা ও পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করি যে, আমি পরম করুণাময় আল্লাহ্র জাত-পাকের পরিচয় লিপিবদ্ধ করতে চাই। তারপর আমি আল্লাহ্কে যে রূপে দেখেছি, সে রূপের বর্ণনা দিয়ে বলি, আমার ইচ্ছাÑ আমি যে রূপে আল্লাহ্কে দেখেছি, সে রূপের বর্ণনা পবিত্র কুরআনে আছে কি না, এটি খুঁজে বের করে, তা দ্বারা আমার বাস্তব দর্শনকে কুরআনের আলোকে উপস্থাপন করা। এক্ষেত্রে আমি আল্লাহ্র পরিচয় এতটাই সুস্পষ্ট করতে চাই যে, আমি অশেষ দয়াময় আল্লাহ্কে কুরসি মোবারকে বসিয়ে তাঁর নুরের কদম মোবারকে সিজদা দিয়ে বলবÑ দয়াময়! আমি আমার জীবনকে আপনার কদম মোবারকে উৎসর্গ করলাম, আর আপনি আপনার সুমহান ইচ্ছা অনুযায়ী আপনার সৃষ্টিজগৎ পরিচালনা করুন।

উচ্চশিক্ষিত পণ্ডিতবর্গ আমার জবানে মহিমান্বিত আল্লাহ্র পরিচয় এবং আমার পরিকল্পনার কথা শুনে অত্যন্ত খুশি হলেন। অতঃপর তারা আমার এ কাজের ভূয়সী প্রশংসা করলেন। কিন্তু তাদেরকে যখন লিখতে বললাম, আমার ইচ্ছা ও পরিকল্পনাকে পবিত্র কুরআন দ্বারা বাস্তবে রূপ দিতে নির্দেশনা দিলাম, তখন তারা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন। আমি তখন বুঝতে পারলামÑ কাজটি তো আমার! আমার কাজ তারা কিভাবে করবে? প্রবাদ আছেÑ ‘যার কাজ তারই সাজে, অন্যে গেলে লাঠি বাজে।’ ফলে সম্মানিত পণ্ডিতবর্গকে বিদায় দিয়ে আমি আমার নিজের লোকদের নিয়েই গবেষণার কাজ শুরু করি।
অতঃপর আমি নিজেই প্রতিনিয়ত আমার গবেষণা টিমকে সময় দিতে থাকি এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেই এভাবে, পরম করুণাময় আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁর অপরূপ সুন্দর নুরের সুরত আছে, তিনি দেখতে অবিকল মানুষের মত; তবে তিনি রক্ত-মাংসের দেহধারী নন, তিনি নুরের। এ সময় আমি আমার গবেষণা টিমকে একখানা হাদিস স্মরণ করিয়ে দেই, যে হাদিসে অশেষ দয়াময় আল্লাহ্র রূপের বর্ণনা দেয়া হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, আল্লাহ্র রাসুল (সা.) ফরমানÑ “মহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আ.)-কে তাঁর নিজের সুরতে সৃষ্টি করেছেন।” (বোখারী ও মুসলিমের সূত্রে মেশকাত শরীফ-৩৯৭ পৃষ্ঠা)

এ পর্যায়ে আমি আমার বাস্তব অভিজ্ঞতা ও হাদিস শরিফের বাণী মোবারক সামনে রেখে গবেষণা টিমকে বলি, উপমাস্বরূপ আপনারা ধরে নিনÑ আদম সন্তান তথা একজন মানুষ, যার সুন্দর একটি চেহারা আছে, তার চোখ, কান ও জবান আছে, এবং হাত-পাসহ পরিপূর্ণ একটি অবয়ব রয়েছে; একইভাবে পরম করুণাময় আল্লাহ্র সুরত বা অবয়ব অবিকল মানুষের মত, তবে তিনি মানুষের মত রক্ত-মাংসের দেহধারী নন; তিনি নুরের।

এ সময় আমি আমার গবেষণা টিমকে মহান রাব্বুল আলামিনের নুরের সুরত সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে গিয়ে আরো একটি উপমা দেই। আর তা হলোÑ টেলিভিশনের পর্দায় যে মানুষটি সংবাদ পাঠ করে, এটি ঐ মানুষটির আলোক দেহ, আর আলোক দেহের অধিকারী মানুষটিকে দেখা যায়, তার কথা শোনা যায়, কিন্তু তাকে ধরা বা ছোঁয়া যায় না। তদ্রƒপ নুরময় সত্তা আল্লাহ্কে দেখা যায়, তাঁর কথা শোনা যায়, কিন্তু তাঁকে ধরা বা ছোঁয়া যায় না।

এভাবে উপমার মাধ্যমে, আমি মহিমান্বিত আল্লাহ্র স্বরূপ আলোচনা করে গবেষণা টিমকে আল্লাহ্ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা দিতে চেষ্টা করি। আর এ কাজটি পরম করুণাময় আল্লাহ্ আমার জন্য সহজ করে দিয়েছিলেন। কেননা আমি তো আল্লাহ্কে না দেখে তাঁর রূপের বর্ণনা দিচ্ছি না। আমি আমার হায়াতে তাইয়্যেবায় বহুবার, বহু ঘটনায় আল্লাহ্র দীদার লাভ করেছি। তিনি দয়া করে আমাকে তাঁর দীদার দিয়ে ধন্য করেছেন, আমি তাঁর সাথে কথাও বলেছি। মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় আমি তাঁকে এমনভাবে চিনি, যেমনিভাবে সন্তান তার পিতাকে চিনে থাকে।

এ প্রসঙ্গে ১৯৯২ সালের দুটি ঘটনা পাঠকদের জ্ঞাতার্থে এখানে উল্লেখ করছি, যে ঘটনায় মহিমান্বিত আল্লাহ্ আমাকে স্বরূপে তাঁর দিদার দিয়েছেন এবং দয়া করে আমার সাথে কথা বলেছেন। আর তা হলো,
প্রথম ঘটনাটি ১৯৯২ সালে আয়োজিত বিশ্ব সূফী সম্মেলনকে কেন্দ্র করে ঘটেছিল। আমি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতিঝিল টিএন্ডটি কলেজ সংলগ্ন সড়কে বিশ্ব সূফী সম্মেলন আহ্বান করি। এদিকে সম্মেলনের কয়েক দিন পূর্বে তরিকত ও অলী-আল্লাহ্ বিদ্বেষী একটি সংগঠন সম্মেলনকে নস্যাৎ করার গভীর চক্রান্তে লিপ্ত হয়। ফলে আমি একদিন ফজরের নামাজের পর ‘বাবে রহমত’-এ বসে, সম্মেলনে কোনো রকম সমস্যা সৃষ্টি হয় কি না, এ বিষয়ে খুবই চিন্তামগ্ন ছিলাম। এমন সময় আমি দেখতে পাই, আমার মহান মালিক পরম দয়াময় আল্লাহ্ দয়া করে সম্মেলন চত্বরে তশরিফ নিয়েছেন। সাথে আমার মুর্শেদÑ পীরানে পীর, দস্তগীর, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদীয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) রয়েছেন। অতঃপর পরম করুণাময় আল্লাহ্ দয়া করে সম্মেলন চত্বরের প্রধান তোরণ, মঞ্চ ও প্যান্ডেল ঘুরে ঘুরে দেখলেন। তারপর তিনি দয়া করে আমার সাথে কথা বললেন এবং অভয় দিয়ে সুসংবাদ দিলেন, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। সম্মেলনে কোনো রকম অসুবিধা হবে না। অতঃপর বাস্তবে হয়েছেও তাই। আমার আহ্বানে অনুষ্ঠিত বিশ্ব সূফী সম্মেলনটি অত্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে স্বর্গীয় পরিবেশে সুসম্পন্ন হয়।

দ্বিতীয় ঘটনাটিও ১৯৯২ সালের। বাবে জান্নাত, দেওয়ানবাগ শরীফ নিয়ে আমি তখন ভীষণ চিন্তিত। উল্লেখ্য, ১৯৮৫ সালে নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর উপজেলাধীন দেওয়ানবাগ গ্রামে ‘বাবে জান্নাত’ নামে এ দরবার শরীফটি আমি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। ১৯৯০ হতে ১৯৯২ সাল এ দু’বছর স্বার্থান্বেষী মহল বিভিন্নভাবে দরবার শরীফকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য অপচেষ্টা চালায়। ফলে এ দু’বছর সেখানে মোহাম্মদী ইসলামের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এমনি দুঃসময়ে একদিন আমি বাবে রহমতের হুজরা শরীফে খাটের উপর বসে দরবার শরীফ নিয়ে চিন্তা করছিলাম। এ সময়ে মহিমান্বিত আল্লাহ্ তায়ালা আমার প্রতি তাঁর দয়ার হস্ত মোবারক প্রসারিত করলেন। তিনি দয়া করে আমার সামনে স্বরূপে উপস্থিত হলেন এবং আমাকে অভয় দিয়ে বললেনÑ ‘আপনি কোনো চিন্তা করবেন না। এই যে দেখেন, আমার ডান হাতের তালুর নিচে আপনার দরবার শরীফ’। এ সময় আমি দেখতে পাই, পরম করুণাময় আল্লাহ্ আমার সামনে রয়েছেন। আর তিনি এখান থেকেই তাঁর ডান হাত মোবারক বাড়িয়ে দিলেন, সাথে সাথে তাঁর ডান হাত মোবারক এতটাই প্রসারিত হলো যে, অশেষ দয়াময় আল্লাহ্র ডান হস্ত মোবারকের তালুর নিচে আমি নারায়ণগঞ্জের বাবে জান্নাত, দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ দেখতে পাই।

মহিমান্বিত আল্লাহ্র এরূপ দীদার ও অভয়বাণীতে আমি নিশ্চিন্ত ও আশ্বস্ত হলাম। এ ঘটনার পরই নারায়ণগঞ্জ জেলার বাবে জান্নাত, দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে পুনরায় মোহাম্মদী ইসলামের কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়, যা বর্তমানেও অব্যাহত আছে।

প্রিয় পাঠক! ফিরে আসি পূর্বের কথায়। আমি যখন আমার নিজের লোকদের নিয়ে গবেষণার কাজ আরম্ভ করি, আর তারা আমার প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় কাজ শুরু করে, তখনই একে একে সফলতা আসতে থাকে। আর তা এভাবেÑ আমি আমার গবেষণা টিমকে বলেছিলামÑ আমি মহিমান্বিত আল্লাহ্র চেহারা মোবারক দেখেছি, সুতরাং আপনারা দেখুন ‘ওয়াজহুল্লাহ’ আল্লাহ্র চেহারা মোবারকের বর্ণনায় পবিত্র কুরআনে তিনি নিজে কোথায় কি বলেছেন। তখন গবেষণা করে গবেষণা টিম আমাকে জানালেনÑ পরম করুণাময় আল্লাহ্র চেহারা মোবারকের বর্ণনা খুঁজতে গিয়ে আমরা পবিত্র কুরআনে ১৪ (চৌদ্দ) খানা আয়াত খুঁজে পেয়েছি। এরই ধারাবাহিকতায়, গবেষণা টিম গবেষণা করে ওহীর বাণী আল কুরআনে অশেষ দয়াময় আল্লাহ্র চক্ষু মোবারকের বর্ণনায় ৬৩ (তেষট্টি) খানা আয়াত, শ্রবণেন্দ্রিয় বা কান মোবারকের বর্ণনায় ৪৮ (আটচল্লিশ) খানা আয়াত, জবান মোবারক তথা কথা বলার বিষয়ে ৪৭৭ (চারশ’ সাতাত্তর) খানা আয়াত, নফস্ বা দেহ মোবারকের বর্ণনায় ৬ (ছয়) খানা আয়াত এবং অশেষ দয়াময় আল্লাহ্র কদম মোবারকের বর্ণনায় ২ (দুই) খানা আয়াতের সন্ধান লাভ করে। আমি যখন দেখতে পেলামÑ আমি সুমহান আল্লাহ্কে যে রূপে দেখেছি, সে রূপের বর্ণনা তিনি নিজেই বহু পূর্বে তাঁর পাক জবানে ওহীর বাণী আল কুরআনে দিয়ে রেখেছেন। তখন আমার আনন্দের আর সীমা রইল না। এমনিভাবে আমাদের গবেষণায় একের পর এক সফলতা আসতে থাকে। আমি আমার গবেষণা টিমকে আরো বলেছিলামÑ মহান আল্লাহ্ দেখতে অবিকল মানুষের মতো হলেও, তিনি রক্ত-মাংসের দেহধারী নন, তিনি নুরের। অতঃপর গবেষণা করে গবেষণা টিম এ বিষয়ে ওহীর বাণী আল কুরআনে ১৮ (আঠারো) খানা আয়াত খুঁজে পায়। এরই ধারাবাহিকতায় গবেষণা টিম পরম করুণাময় আল্লাহ্র রূহ মোবারকের বর্ণনায় ২০ (বিশ) খানা আয়াত যেমন খুঁজে পায়, তেমনি দুনিয়াতে ‘আল্লাহ্র দীদার লাভ করা যে সম্ভব’ এ বিষয়ে ৩০ (ত্রিশ) খানা আয়াতের সন্ধানও লাভ করে। এ পর্যায়ে আমি আমাদের গবেষণায় খুঁজে পাওয়া আয়াতসমূহ একে একে সাজানোর কাজ শুরু করি। আর সেটি এভাবেÑ মহান রাব্বুল আলামিনের জাত-পাকের পরিচয়, অর্থাৎ তাঁর নফ্স বা দেহ মোবারকের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে মিল করে কুরআনে খুঁজে পাওয়া আয়াতসমূহ এক একটি অধ্যায় আকারে বিন্যাস করি। এভাবে আল্লাহ্র চেহারা মোবারকের বর্ণনায় যে ১৪ (চৌদ্দ) খানা আয়াত আমরা খুঁজে পেয়েছি, সেটি একত্রে সাজিয়েছি, অতঃপর চেহারা মোবারকের বর্ণনায় কয়েকটি হাদিস খুঁজে বের করে ১৪ (চৌদ্দ) খানা আয়াত উপস্থাপনের পর হাদিসের ভিন্ন শিরোনাম দিয়ে হাদিসগুলো একত্রে অন্তর্ভুক্ত করেছি। অতঃপর বিষয়বস্তুটি সুস্পষ্ট করার জন্য প্রতিটি অধ্যায়ের শুরু ও শেষেÑ ভূমিকা ও উপসংহার দিয়ে এক একটি অধ্যায় চূড়ান্ত করি। এমনিভাবে পরম করুণাময় আল্লাহ্র জাত-পাকের পরিচয়ের প্রতিটি অধ্যায় সম্পন্ন হলে, আমি এ পাণ্ডুলিপির নামকরণ করিÑ ‘স্রষ্টার স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট : আল্লাহ্ সত্যিই কি নিরাকার?’

বিগত ২২ রমজান ১৪৩০ হিজরি, ১৩ সেপ্টেম্বর-২০০৯ খ্রিষ্টাব্দ রোববার, ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে কুরআনের আলোকে আল্লাহ্র পরিপূর্ণ রূপের বর্ণনা সংবলিত কিতাবÑ ‘স্রষ্টার স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট : আল্লাহ্ সত্যিই কি নিরাকার?’-এর কাজ সম্পন্ন হয়। এদিন আমি ইফতারের পর আমার সহধর্মিণী আওলাদে রাসুল, কুতুবুল আকতাব, দুররে মাকনুন, খাতুনে জান্নাত হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-কে জানালাম যে, একটি সুসংবাদ আছে। তিনি অত্যন্ত আগ্রহভরে বিষয়টি জানতে চাইলে, আমি বললামÑ আজ আমি মহান রাব্বুল আলামিনের পরিপূর্ণ রূপের বর্ণনা পবিত্র কুরআন থেকে বের করতে সক্ষম হয়েছি। এ সংবাদ শুনে তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হলেন। আর এ রাতটিই ছিল তাঁর জীবনের শেষ রাত। এ রাতের শেষ প্রহরে সুবহে সাদিকের সময় লক্ষ কোটি আশেকে রাসুলকে শোক সাগরে ভাসিয়ে তিনি দারুল বাকায় তশরিফ নেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রা‘জি‘ঊন)।
প্রিয় পাঠক! তখন পর্যন্তও আমি জানি না যে, ‘স্রষ্টার স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট : আল্লাহ্ সত্যিই কি নিরাকার?’ এ কিতাবখানাই যথাযোগ্য কলেবরে ‘আল্লাহ্র জাত-পাকের পরিচয়’ সংবলিত তাফসির আকারে শীঘ্রই আত্মপ্রকাশ করতে চলেছে। উল্লেখ্য যে, বছরের পর বছর ধরে প্রায় প্রতিদিন সকাল, বিকাল ও রাত অবধি আমি ‘আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্রে’ আমার গবেষণা টিমকে সাথে নিয়ে আল্লাহ্র পরিচয় সংবলিত কিতাব লিখছি, অথচ আমার মনে হতোÑ আমি তাফসির লিখছি। গবেষণা কেন্দ্রের কাজ সম্পন্ন করে যখন দরবার শরীফে আগত আশেকে রাসুল জাকেরবৃন্দকে সাক্ষাৎ দিতাম, তখন অনেক সময় তাদেরকেও বলতামÑ আমি এতক্ষণ তাফসিরের ক্লাসে ছিলাম, অতঃপর তাফসিরের ক্লাসে আলোচ্য বিষয়ও তাদেরকে জানাতাম। এমনিভাবে বারবার তাফসিরের ক্লাস, আমি তাফসির লিখছি, ইত্যাদি শব্দগুলো আমার অজান্তেই মন থেকে আসতে থাকে। অবশেষে আমি উপলব্ধি করলাম, পরম করুণাময় আল্লাহ্ তাঁর পরিচয় সংবলিত এ কিতাবকে তাফসির শরিফে রূপ দিতে চাচ্ছেন। যদিও আমি তাফসির লেখার পরিকল্পনা করিনি, আমি চেয়েছিলাম আল্লাহ্র পরিচয় লিখতে, কিন্তু মহিমান্বিত আল্লাহ্র ইচ্ছা ছিলো, তাঁর পরিচয় তাফসির আকারে প্রকাশিত হোক। অতঃপর বাস্তবে হলোও তাই। দেখা গেলোÑ ‘স্রষ্টার স্বরূপ উদ্ঘাটনে সূফী সম্রাট : আল্লাহ্ সত্যিই কি নিরাকার?’ এ কিতাবখানাই পরবর্তীতে তাফসীর আকারে সাজিয়ে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী : আল্লাহ্র জাত-পাকের পরিচয়’-১ম খণ্ড হিসেবে প্রকাশ করেছি।

প্রিয় পাঠক! ১২ রবিউল আউয়াল ১৪৩২ হিজরী মোতাবেক ১৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১১ খ্রিষ্টাব্দে আমি যখন আল্লাহ্র জাত-পাকের পরিচয় সংবলিত তাফসির শরিফ, আপনাদের হাতে তুলে দিলাম, তখন আমি ধারণা করেছিলাম যে, আমার কাজ শেষ হয়েছে। কেননা পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে আল্লাহ্র জাত-পাকের পরিচয় লিপিবদ্ধ তো সুসম্পন্ন করেছি। কিন্তু না, আমার কাজ শেষ হলো না। এরপর আমার মনে হলোÑ কেবল তো জাত-পাকের পরিচয় লিখলাম, সিফাত বা গুণের বর্ণনা ছাড়া জাত-পাক তো অসম্পূর্ণ থেকে যায়। অতঃপর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করলামÑ হাদিসে বর্ণিত মহান আল্লাহ্র ৯৯টি গুণবাচক নামের তাফসির লিখব। আমি আমার গবেষণা টিমকে নিয়ে নতুনভাবে গবেষণায় বসলাম এবং অশেষ দয়াময় আল্লাহ্র আসমাউল হুসনা তথা সুন্দর সুন্দর গুণবাচক নামসমূহের প্রতিটি নাম মোবারকের গুণ ও বৈশিষ্ট্য সংবলিত আয়াত পবিত্র কুরআন থেকে খুঁজে বের করতে লাগলাম। এ কাজে হাত দিয়ে আমি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাই, কেননা এ সময় আমি আল্লাহ্র গুণবাচক নামের উপর এত বেশি সংখ্যক আয়াতের সন্ধান লাভ করি যে, অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছিলÑ পবিত্র কুরআন যেন আল্লাহ্র পরিচয়ের বিশ্বকোষ। অতঃপর আয়াতগুলো বের করা শেষ হলে, প্রতিটি আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-এর দু’টি করে হাদিস খুঁজে বের করি। এমনিভাবে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ‘আল্লাহ্র গুণবাচক নামের পরিচয়’ সংবলিত তাফসীর লেখা শুরু করি এবং ধারাবাহিকভাবে ২য়, ৩য়, ৪র্থ ও ৫ম খণ্ড লেখা ও প্রকাশের কাজ সম্পন্ন করি। এভাবে যখন আমি আল্লাহ্র ৯৯টি গুণবাচক নামের তাফসির একের পর এক লিপিবদ্ধ করছিলাম, আমার জানা ছিল না, আল্লাহ্র জাত-পাক ও তাঁর গুণবাচক নামের পরিচয় সংবলিত তাফসির লেখার যে কাজ আমি শুরু করেছি, এ কাজ সুসম্পন্ন করতে তাফসির শরীফ সর্বমোট কতটি খণ্ড হতে চলেছে! এরই মধ্যে ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ৫ ফেব্রুয়ারি আমি হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হই এবং ২৮ ফেব্রুয়ারি সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাবে রহমতে ফিরে আসি। আমার এ সাময়িক অনুপস্থিতিতে গবেষণার কাজও প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। অতঃপর আমি ফিরে এসে আমার গবেষণা টিম নিয়ে পুনরায় গবেষণার কাজ শুরু করি। আমি শুরুতেই গবেষণা টিমকে নির্দেশ করি, এ পর্যন্ত আমি যা লিখেছি, সমস্ত পাণ্ডুলিপি বের করুন এবং আমাকে জানান। তাফসির শরিফের ৫টি খণ্ড এ পর্যন্ত লেখা ও প্রকাশিত হয়েছে। অবশিষ্ট আর কতগুলো সিফাত রয়েছে, এতে আর কয় খণ্ড তাফসির হবে? এ সময় গবেষণা টিমের দেয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে আমি সিদ্ধান্ত নেই, সর্বমোট তাফসির হবে আট খণ্ড। অতঃপর ঐ বছরই, অর্থাৎ ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর তাফসির শরিফের ৬ষ্ঠ খণ্ডটি প্রকাশ করি এবং ২০১৮ খ্রিষ্টাব্দের রমজানে ৭ম ও সর্বশেষ এ ৮ম খণ্ডটি ১০ই মুহররম-২০১৮ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশ করলাম।
প্রিয় পাঠক! এটিই তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ‘আল্লাহ্র জাত-পাকের পরিচয়’-১ম খণ্ড এবং তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ‘আল্লাহ্র গুণবাচক নামের পরিচয়’-২য়, ৩য়, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ, ৭ম ও সর্বশেষ ৮ম খণ্ড লেখার ইতিবৃত্ত।

মহান রাব্বুল আলামীনের অপার দয়ায় আমি আমার জীবনের সুদীর্ঘ ৩৩টি বছর যাবৎ এ কাজে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছি। অতঃপর সুদীর্ঘ এ সময়ে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে আল্লাহ্র পরিচয় সংবলিত তাফসির শরিফের ৮টি খণ্ড সুসম্পন্ন করতে সক্ষম হলাম।
উল্লেখ্য, আজ থেকে নয় বছর পূর্বে মাহে রমজানের যে তারিখে আল্লাহ্র পরিপূর্ণ রূপের বর্ণনা পবিত্র কুরআন থেকে বের করতে সক্ষম হয়েছিলাম, নয় বছর পরের রমজানে ঐ একই তারিখে আল্লাহ্র পরিচয় সংবলিত তাফসির শরিফের আট খণ্ডের কাজ সমাপ্ত করতে সক্ষম হলাম। আর এ তারিখটি ছিলোÑ ২৩ রমজান ২০০৯, আমার সহধর্মিণীÑ আওলাদে রাসুল, কুতুবুল আকতাব, দুররে মাকনুন, খাতুনে জান্নাত হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম (রহ.)-এর ওফাত দিবস এবং নয় বছর পর তাঁর ঐ ওফাতের তারিখেই তাফসিরের কাজ সমাপ্ত হয়।

উপরন্তু মহান রাব্বুল আলামিনের মহিমা ও প্রশংসা করে শেষ করা কোনো মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। পরম করুণাময় আল্লাহ্ নিজেই বলেনÑ “হে রাসুল (সা.)! যদি আল্লাহ্র প্রশংসাবাণী লিপিবদ্ধ করার জন্য পৃথিবীর সকল বৃক্ষ কলম হয়, আর সাত সমুদ্রের সাথে আরো সাত সমুদ্রের পানি কালি হয়, তবুও আল্লাহ্র প্রশংসাবাণী লিপিবদ্ধ করা শেষ হবে না। নিশ্চয় আল্লাহ্ মহাশক্তিশালী ও মহাবিজ্ঞানী।” (সূরা লুকমান ৩১ : আয়াত ২৭)

আল্লাহ্র এ বাণী মোবারকে বিষয়টি সুস্পষ্ট, তিনি এতই সুমহান, সুউচ্চ মর্যাদা ও অনন্য প্রশংসার অধিকারী যে, তাঁর যথাযোগ্য প্রশংসা করার জন্য পৃথিবীর সকল বৃক্ষ দ্বারা যদি কলম তৈরি করা হয়, আর সাত সমুদ্রের সাথে আরো সাত সমুদ্র যোগ করে চৌদ্দ সমুদ্রের সকল পানি যদি কালিতে রূপান্তরিত করা হয়, অতঃপর আল্লাহ্র প্রশংসা লেখার কাজ শুরু করা হয়, তবে পৃথিবীর সকল বৃক্ষ নিঃশেষ হয়ে যাবে, চৌদ্দ সমুদ্র শুকিয়ে যাবে, তবুও আল্লাহ্র প্রশংসা লিখে শেষ করা যাবে না। সুতরাং আল্লাহ্র প্রশংসা করে শেষ করা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।

প্রকৃতপক্ষে আমি আমার এ আট খণ্ড তাফসির শরিফে মহান আল্লাহ্র পরিচয় ও তাঁর গুণের বর্ণনায় যা কিছু উপস্থাপন করেছি, এসব শুধুমাত্র পবিত্র কুরআনে বর্ণিত পরম করুণাময় আল্লাহ্ তায়ালার বাণী ও হাদিস শরিফে বর্ণিত রাহমাতুল্লিল আলামিন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর বাণীসমূহ এবং আমার প্রত্যক্ষ দর্শন ও সাধনালব্ধ জ্ঞানেরই প্রতিফলন। অতঃপর আমি আমার এ আট খণ্ডণ্ড তাফসির শরিফে আল্লাহ্ ও তাঁর রাসুল (সা.)-এর বাণীর দ্বারা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিÑ আল্লাহ্র নুরের রূপ আছে; তিনি নিরাকার নন। তবে অশেষ দয়াময় আল্লাহ্ মানুষের মত রক্ত-মাংসের দেহধারী নন; তিনি নুরের। তিনি স্বীয় আরশে আজীমে স্বরূপে বিদ্যমান থেকেই সৃষ্টিজগতের সকলকে লালনপালন করছেন।
পরিশেষে মহান রাব্বুল আলামিনের নুরের কদম মোবারকে লক্ষ কোটি সিজদা পেশ করছিÑ হে দয়াময় খোদা! আপনি দয়া করে আমার এ খেদমতকে কবুল করুন। আমি আমার এ কর্ম শেষে আপনার কদম মোবারকে সিজদা দিয়ে আমার জীবন উৎসর্গ করলাম। আপনি দয়া করে আপনার সৃষ্টিজগৎ আপনার সুমহান ইচ্ছা অনুযায়ী পরিচালিত করুন। আমীন!!!
তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ৮ম খন্ড থেকে সংকলিত

সম্পর্কিত পোস্ট

11 Comments

  • আমীন

  • Amin

  • আমিন

  • আমিন

  • মারহাবা ইয়া শান্তির দূত যুগের ইমাম সূফী সম্রাট জগতশ্রেষ্ঠ তাসাউফ বিঞ্জানী হযরত শাহ্ দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) দয়াল বাবাজান।
    এক কিতাব সৃজন করলেন আমাদের মোর্শেদ সূফীদের সম্রাট দেওয়ানবাগী। আসলে যিনি নিজে আল্লাহকে পেয়েছেন তিনিই তো আল্লাহর ঠিকানা বলতে পারেন।যাকে দেখা যায় পূর্ণিমার চাঁদে।লক্ষ কোটি শুকরিয়া ও কদমবুচি জানাই

  • আলহামদুলিল্লাহ্‌

  • এই তাফসীর সকল তাফসীর থেকে আলাদা ।

  • শুকরিয়া জানাই এই অন্যতম ও অদ্বিতীয় কিতাব তাফসীর রচনা করায়। এই কিতাবের দ্বারা মহান প্রভু সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য জানতে ও শিখতে পারলাম ।

  • আল্লাহ্‌ দয়া করে মহামানবদের বোঝার যোগ্যতা আমাদেরকে দান করুক আমিন ।

  • আলহামদুলিল্লাহ্‌ অনেক ভালো লাগলো । অনেক শিক্ষনীয় উপদানে ভরপুর ।

  • আমিন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *