তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী : বিশ্ব মানবতার মুক্তির পথ নির্দেশনা
ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান
মহাগ্রন্থ আল কুরআনের সঠিক ব্যাখ্যা প্রদানকারী তাফসীর প্রণেতা, মহান সংস্কারক, বিশ্ব মানবতার মুক্তির কাণ্ডারী, শ্রেষ্ঠ দার্শনিক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান প্রণিত পবিত্র কুরআনের আলোকে জীবন বিধান- বিষয় ভিত্তিক তাফসীর- ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’, যা কালজয়ী ও অমর কীর্তি হিসেবে মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে। এ তাফসীর গ্রন্থটি বাংলা ভাষায় রচিত। যা মোট ৮ খণ্ডে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম খণ্ডটিতে আল্লাহর জাত-পাকের (Holy Spirit) পরিচয় প্রকাশ পেয়েছে। পরবর্তী ৭ খণ্ড ধারাবাহিকভাবে আল্লাহর গুণাবলি তথা সিফাতসমূহ (Attributes) নিয়ে রচিত হয়েছে। তাঁর লেখা তাফসীর শরীফটি আধ্যাত্মবাদ ও মানবজাতির পূর্ণঙ্গ জীবন দর্শনের কোষ Encyclopedia of Spiritualism and Complete Code and Philosophy of life) হিসেবে কেয়ামত অবধি বিশ্ব মানবতার শান্তি ও মুক্তির দিক নির্দেশনা হিসেবে পরিগণিত হবে। Encyclopedia জ্ঞান জগতের এক গুরুত্বপূর্ণ ভাণ্ডার। ইংরেজি Encyclopedia-কে বাংলায় বিশ্ব কোষ বলা হয়। ইহা গ্রিক শব্দ enkyklios (বৃত্তাকারে বা চক্রাকারে) paideia (শিক্ষা) হইতে নির্গত। অর্থাৎ- বিদ্যা শিক্ষা চক্র বা পরিপূর্ণ জ্ঞান সংগ্রহ। আরবিতে ইহাকে ‘দাইরাতুল মা’আরিফ’ অথবা ‘আল মাওসু’আ’ বলা হয়।
তাফসীর প্রণেতা মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর এ কালজয়ী তাফসীর গ্রন্থ ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ ছাড়াও বাংলা ভাষায় সুফিবাদের উপর বহু মূল্যবান কিতাব রচনা করেন। ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ লিখতে গিয়ে তিনি ইসলামের স্বর্ণযুগ হতে শুরু করে আধূুনিক যুগের অনেক তাফসীর, হাদিস ও অন্যান্য গ্রন্থাবলি থেকে সাহায্য নিয়েছেন।
তাফসীর আরবি শব্দ। একবচন, বহুবচনে তাফসীর ব্যবহৃত হয়। আভিধানিক অর্থ হলো- উন্মোচন করা, বর্ণনা করা, গোপনীয় ও অস্পষ্ট বস্তু স্পষ্ট করে দৃশ্যমান করে তোলা, সুস্পষ্ট ও বোধগম্য অর্থ প্রকাশ করা। পরিভাষার তাফসীর এমন এক ব্যাখ্যামূলক বিদ্যার নাম, যার দ্বারা আল কুরআনের অন্তর্নিহিত মর্মভাব উদ্ঘাটন করা যায়। তাফসীর এমন বিদ্যা যাতে মানুষের সাধ্যানুসারে আল কুরআনের কোনো আয়াত বা কোনো শব্দ দ্বারা আল্লাহ্ তাআলা কী বুঝাতে চেয়েছেন সেই সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়। হযরত রাসুল (সা.)-এর আবির্ভাবের পূর্বে আরবি ভাষা ও সাহিত্যে এ শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় না। কেবল আল কুরআনের আয়াতের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ক্ষেত্রেই এ শব্দটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান প্রণীত তাফসীর শরীফে মহান আল্লাহর স্বরূপ, তাঁর অপরূপ সৌন্দর্যমণ্ডিত নুরের চেহারা মোবারকের বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন দেখতে কেমন? এ প্রশ্নের যথাযথ উত্তর মুসান্নেফ তাফসীর প্রণেতা সুন্দরভাবে দিয়েছেন। মহান আল্লাহর জাত-পাকের পরিপূর্ণ রূপের বর্ণনা তাফসীর শরীফের ১ম খণ্ডে উপস্থাপিত হয়েছে। জাত-পাকের বর্ণনা দেওয়ার পর তাফসীর শরীফের প্রণেতা মনোযোগ দেন- আল্লাহর সিফাত বা তাঁর গুণবাচক নামের বাস্তবতা তুলে ধরতে। আল্লাহর গুণবাচক নামের তাফসীর করাতে গিয়ে মুসান্নেফ ৭ খণ্ড সিফাতের তাফসীর করেছেন। যা এ তাফসীর শরীফে গতানুগতিক কোনো ধারা স্থান পায়নি। তিনি ত্রিশ পারা কুরআনের তাফসীর করেননি। বরং সম্পূর্ণ কুরআন খুঁজে আল্লাহর পরিচয় সংবলিত আয়াতগুলো বের করেছেন। তিনি আল্লাহর ভাষায় আল্লাহর বর্ণনায় আল্লাহর পরিচয় বের করে আল্লাহর বান্দাদের সামনে উপস্থাপন করেছেন। এ ক্ষেত্রে তিনি আল্লাহর বাণীর ব্যাখ্যা হযরত রাসুল (সা.)-এর বাণীর দ্বারা উপস্থাপন করেছেন। অর্থাৎ- মহান আল্লাহ্ যখন হযরত রাসুল (সা.)-এর অন্তরে অহি নাজিল করেন, তখন ঐ অহির বাণী হযরত রাসুল (সা.) সাহাবায়ে কেরামের কাছে ব্যক্ত করেছেন। আর এ ব্যক্ত করতে গিয়ে হযরত রাসুল (সা.) যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আল্লাহর বাণীর ব্যাখ্যা হযরত রাসুল (সা.)-এর ঐ বাণী দিয়ে করেছেন। ফলে এই তাফসীর শরীফ অধ্যয়নকালে পাঠকের মনে হবে, সে যেন রাসুল (সা.)-এর যুগের রাসুল (সা.)-এর মজলিসের তাফসীর বা ব্যাখ্যা অধ্যয়ন করছে। বিষয়টি যথাযথভাবে সম্পন্ন করার জন্য সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী তাফসীর ও হাদিসের অনেক দুর্লভ কিতাব সংগ্রহ করেছেন।
ইসলামের স্বর্ণযুগ হতে শুরু করে আধুনিক যুগের দুর্লভ কিতাবগুলো, যা সর্বজন স্বীকৃত মণীষীগণ সংকলন করেছেন। যেমন- তাফসীরে ইমাম হোসাইন, তাফসীরে ইমাম আলী, তাফসীরে ইবনে আব্বাস, মুসনাদে ইমাম আলী, মুসনাদে ফাতেমাতুজ জোহরা, মুসনাদে ইমাম হাসান, তাফসীরে ইবনুল আরাবী, তাফসীরে তুসতুরী ইত্যাদি ছাড়াও চার মাজহাবের ইমামদের সংকলিত তাফসীর ও হাদিসের কিতাব তাঁর সংগ্রহে রয়েছে। এ ছাড়াও সূফী সম্রাটের ব্যক্তিগত লাইব্রেরিতে শত শত তাফসীর ও হাদিসের কিতাব রয়েছে, যার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ উল্লেখ করলে একটি ছোটো পুস্তিকা হয়ে যাবে। তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, সূফী সম্রাটের দর্শন উপস্থাপনে এ বিশাল গ্রন্থশালা সহায়ক ভূমিকা পালন করছে সত্য, কিন্তু পবিত্র কুরআন ও হাদিস দিয়ে আল্লাহর স্বরূপ উপস্থাপনের পূর্বেই সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী আল্লাহ্কে দেখেছেন, তাঁর পরিচয় লাভ করেছেন। তাঁর জ্ঞানের উৎস এলমুল কিতাব নয়। এ মহামানব ঐ বিদ্যায় বিদ্বান, যে বিদ্যায় নবি ও রাসুলগণ বিদ্বান ছিলেন। আর তা হলো- এলমুল ক্বালব। রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.) হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় এলমুল ক্বালবের যে মোকাম খুলে নিয়েছিলেন, জ্ঞানের সেই অফুরন্ত ঝর্ণাধারা দিয়েই তাঁর কাছে কুরআন এসেছিল। নবুয়তের যুগে এ জ্ঞানকে এলমে অহির জ্ঞান বলা হলেও বেলায়েতের যুগে এ জ্ঞানকে এলহামের জ্ঞান বলা হয়ে থাকে।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বেলায়েতের যুগে শ্রেষ্ঠ ইমাম। তিনি রুহুল কুদ্দুস বা রুহুল আমিন বা রূহে আজমের অধিকারী, আল্লাহর যে পবিত্র সত্তা আম্বিয়ায়ে কেরামের ক্বালবের সপ্তম স্তরে নাফসির মোকাম থেকে সুদুরের মোকামে অহি করেছিল। আর এটি এজন্য যে, সূফী সম্রাট প্রতিশ্রুত মহামানব। তিনি আল্লাহর ধর্মের প্রচারক। তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় পরিচালিত। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বলেন- ‘‘শৈশব থেকেই শুনে আসছি আল্লাহ্ নিরাকার। তাঁকে এ দুনিয়াতে দেখা যায় না। কিন্তু এলমুল ক্বালবের সাধনার মাধ্যমে আমি যখন আল্লাহর দিদার লাভ করি, আল্লাহ্ যখন দয়া করে আমার সাথে কথা বলেন, তখন আমি লক্ষ্য করলাম- মহান আল্লাহ্ রূপহীন ও নিরাকার নন। তাঁর নুরের আকার আছে।’’
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আল্লাহর রূপের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেন- ‘‘আল্লাহ্ দেখতে অবিকল মানুষের মতো, তবে মানুষ রক্ত মাংসের দেহধারী আর মহান আল্লাহ্ নুরের।’’ সূফী সম্রাটের এ বাণী বিশ্ব বাসীকে আল্লাহর স্বরূপ উপলব্ধি করতে সাহায্য করছে। তিনি একমাত্র মহামানব যার বাণীতে মহান আল্লাহর পরিপূর্ণ রূপের বর্ণনা ফুটে উঠেছে। আর এ বাণী তাঁর বাস্তব দর্শন, প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও বন্ধুর সাথে বন্ধুর সামনাসামনি কথোপকথনেরই প্রতিফলন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের এ বাণীর সত্যতায় পবিত্র কুরআনে ৭২৩ খানা আয়াত এবং ২৮০৮ খানা হাদীস পাওয়া গেছে, যা তিনি তাঁর তাফসীর শরীফের ১ম খণ্ডে আল্লাহর জাত-পাকের পরিচয় দিতে গিয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। আসলে আল্লাহর পরিচয় দেওয়া কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়। এ কাজ ছিল নবুয়তের যুগে আম্বিয়ায়ে কেরামের। বেলায়েতের যুগে এ কাজ ন্যস্ত হয়েছে আওলিয়ায়ে কেরামের উপর।
‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ গ্রন্থের প্রণেতা সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলেন- ‘‘আমি আল্লাহ্কে এমনভাবে চিনি, সন্তান যেমন তার পিতাকে চেনে।’’ তিনি এলহামপ্রাপ্ত মহামানব। তিনি আল্লাহর ইচ্ছা-অনিচ্ছা জেনে ধর্ম পালন করেন এবং অনুসারীদের নির্দেশ দেন। তিনি তাফসীরের কলেবরের দিকে লক্ষ্য করে মহান আল্লাহ্ তায়ালার সিফাতের মধ্য থেকে ৩৪টি গুণবাচক নামের বর্ণনা দ্বিতীয় খণ্ডে উপস্থাপন করেছেন। তিনি ৩৪টি সিফাতের বর্ণনায় ৫০১ খানা পবিত্র কুরআনের আয়াত এবং ১,৪৩৮ খানা হাদিস উল্লেখ করেছেন। ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ ৩য় খণ্ডে আল্লাহর গুণবাচক নামের পরিচয় সংবলিত গ্রন্থে সর্বমোট পবিত্র কুরআনের ৪৫৩ খানা আয়াত, ১,৩০৬ খানা হাদিস ৪টি অধ্যায়ে ধারাবাহিকভাবে উপস্থাপন করে প্রমাণ করা হয়েছে যে, মহান আল্লাহ্ কুল কায়েনাতের সকল প্রাণির রিজিকদাতা, তিনি সবাইকে দেখেন, তাদের মুখের ও অন্তরের কথা শুনেন এবং তাদের সকলের সার্বিক অবস্থা জানেন এই বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’র ৪র্থ খণ্ডের তাফসীর প্রণেতা মহান রাব্বুল আলামিনের ১৮টি গুণবাচক নামের পরিচয় লিপিবদ্ধ করেছেন। যার মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে মহান আল্লাহর নুরের রূপ আছে, তিনি নিরাকার নন। মহান রাব্বুল আলামিনের ১৮টি গুণবাচক নাম মোবারকের মহিমা, বাস্তবতা ও প্রয়োগ অনুসন্ধান করতে গিয়ে তিনি অহির বাণী আল কুরআনের ৪২১ খানা আয়াত এবং ১৯৬৬টি হাদিসের সমন্বয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’র ৫ম খণ্ডে তিনি মহান রাব্বুল আলামিনের ১৭টি গুণবাচক নাম মোবারককে ১৭টি অধ্যায়ে বিন্যস্ত করেছেন। অর্থাৎ- প্রত্যেকটি সিফাত স্বতন্ত্র অধ্যায়ে উপস্থাপিত হয়েছে। তিনি মহান রাব্বুল আলামিনের ১৭টি সিফাতের পরিচয় সর্বমোট ১৭টি অধ্যায়ের ৫৩টি পরিচ্ছদে পবিত্র কুরআনের ৪৫৮ খানা আয়াত এবং ১,৯৩৩টি হাদিসের সমন্বয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন। ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’র ৬ষ্ঠ খণ্ডে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান মহান রাব্বুল আলামিনের ২৩টি সিফাত তথা গুণবাচক নামের পরিচয় ও স্বরূপ তুলে ধরেছেন। তিনি সর্বমোট পবিত্র কুরআনের ৪৫৯ খানা আয়াত এবং ১,৮৯৪ খানা হাদিসের সমন্বয়ে তাফসীর শরীফের ৬ষ্ঠ খণ্ডে লিপিবদ্ধ করেছেন।
‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’র ৭ম খণ্ডে আল্লাহর ৯টি সিফাতের ৫৪৪ খানা আয়াত এবং ২,২১৯ খানা হাদিস ছাড়াও বিষয় সংশ্লিষ্ট আরও অনেক আয়াত ও হাদিস উপস্থাপিত হয়েছে। এই খণ্ডে প্রতিটি আয়াত ও হাদিস অকাট্যভাবে প্রমাণ করেছে মহিমান্বিত আল্লাহর নুরের রূপ আছে, তিনি নিরাকার নন।
‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’র ৮ম খণ্ডে তাফসীর প্রণেতা সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান মহান রাব্বুল আলামিনের ‘আর রব’ নামক মোবারকের মহিমা ৬২১ খানা আয়াত ও ২,৩৪৩ খানা হাদিস দ্বারা উপস্থাপন করেছেন। মহান আল্লাহ্ মানব সম্প্রদায়-সহ সকল সৃষ্টিকে কীভাবে লালন-পালন করছেন তা এই তাফসীর শরীফে লিপিবদ্ধ করেছেন। ফলে চিন্তাশীল পাঠক বুঝতে পারবেন- আল্লাহ্ই আমাদের সৃষ্টিকর্তা, লালনকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা, জীবন ও মৃত্যুদাতা। এই সুমহান রবের নুরের রূপ আছে। তিনি নিরাকার নন। এই শেষ খণ্ডের শেষের দিকে তাফসীর প্রণেতা নতুন একটি বিষয় সংযোজিত করেছেন। সেটি হলো- তাফসীর শরীফের আট খানা খণ্ড যে অহির বাণী আল কুরআনের দ্বারা লিপিবদ্ধ, সে কুরআনের নাজিলের ক্রমধারা ও সংকলনের ইতিহাস উপস্থাপন করেছেন। এ থেকে পাঠকবৃন্দ কুল কায়েনাতের রহমত হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নবুয়তি জিন্দেগির ২৩ বছর যে ধারাবাহিকতায় অহির বাণী আল কুরআন নাজিল হয়েছে তা, সম্বন্ধে অবগত হতে পারবেন। সর্বশেষ তাফসীর প্রণেতা সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলাজান ‘আল্লাহর পরিচয় সংবলিত আট খণ্ড তাফসীর সম্পর্কে তাফসীর প্রণেতার সমাপনী বাণী মোবারক’ দ্বারা তাফসীর শরীফ সমাপ্ত করেছেন।
তাঁর প্রত্যেকটি বাণীর সমর্থনে পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদিস পাওয়া যায়। তাঁর কোনো বাণীই কুরআনের সাথে গরমিল হয় না। একদা আল-কুরআন গবেষণা কেন্দ্রে সূফী সম্রাটের কাছে এক কারণ জানতে চাওয়া হয়েছিল। তিনি দয়া করে জবাব দিলেন- ‘‘কুরআনের বাণী ও আমার কথা দুরকম হবার কথা না। কেননা যে মহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আ.) হতে শুরু করে হযরত রাসুল (সা.) পর্যন্ত সকল আম্বিয়ায়ে কেরামের মাঝে ছিলেন, সে মহান আল্লাহ্ই আমার মাঝে বিরাজিত। সুতরাং আল্লাহ্ যেহেতু একজনই, বাণী তো দুরকম হবার নয়।’’ এ প্রসঙ্গে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান অন্য একদিন বলেন- ‘‘মোহাম্মদী ইসলাম তো আমার না, এটি আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-এর ধর্ম। সুতরাং, ধর্ম যাঁদের তাঁদেরই দ্বায়িত্ব ধর্মকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। আমাকে সামনে পেশ করা হয়েছে মাত্র। আমি আল্লাহর ইচ্ছার বাইরে কিছুই করতে পারি না।’’
মূলত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ এক অমূল্য গ্রন্থ। যে গ্রন্থে জগত শ্রেষ্ঠ সূফী তাঁর অর্ন্তদৃষ্টি দিয়ে মহান আল্লাহ্কে যেমন দেখেছেন, তা ব্যক্ত করেছেন। সূফী সম্রাট পরকালীন জীবনের চিত্র এবং রূহানি জগতের বাস্তবতাও তাঁর তাফসীর শরীফে তুলে ধরেছেন। প্রকৃতপক্ষে এ তাফসীর শরীফে আল্লাহর ধর্মের রূপরেখা তুলে এনেছেন এমন এক শিল্পী, যে শিল্পী তার পরম প্রেমাস্পদকে (মাশুক) দেখে দেখে তাঁকে সামনে রেখে কলমের আচরে তাঁর স্বরূপ তুলে আনতে সচেষ্ট।
প্রকৃতপক্ষে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের তাফসীর শরীফে মানব মুক্তির সত্য দর্শন উপস্থাপিত হয়েছে। এ দর্শন চিরন্তন, অকাট্য, অলংঘনীয়; এটি পথহারাদের পথের দিশা, আবার পথিকের পাথেয়, আল্লাহ্ প্রেমিকদের শারাবান তাহুরা, এটি অনবদ্য এক জীবন দর্শন।
তথ্য সূত্র :
১। আল-কুরআন
২। আল-হাদীস
৩। তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ১ম খণ্ড থেকে ৮ম খণ্ড
৪। সূফী সম্রাট স্মরণিকা ৬৪তম ও ৬৫তম শুভ জন্মবার্ষিকী
৫। দর্শন ও প্রগতি, গোবিন্দদেব দর্শন কেন্দ্র, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
[লেখক: প্রাবন্ধিক ও গবেষক]