‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ : এক অনবদ্য তাফসীর শরীফ
ইমাম ড. সৈয়দ এ. এফ. এম. ফজল-এ-খোদা
মহান স্রষ্টা পরম দয়ালু আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এ বিশ্ব জাহানের সৃষ্টিকর্তা এবং প্রতিপালক। তিনি ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করে তাদের প্রতিপালন করছেন। অথচ বর্তমান মুসলিম সমাজে বহুল প্রচলিত একটি ধারণা হলো- বিশ্ব জগতের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন নিরাকার! তাঁকে দেখা সম্ভব নয়। কেউ যদি তাঁকে দেখতে পায়, সে ইমানহারা হয়ে যাবে।’ বহুকাল ধরে এ ধারণাটি আামাদের সমাজে প্রচলিত হয়ে আসছে। এটিকে আমরা বিশ্বাস করে নিয়েছি। অতঃপর আমরা সরল মনে নিরাকার ও অদৃশ্য আল্লাহর ইবাদত করে যাচ্ছি। একবারও ভেবে দেখি না, আল্লাহ্ নিরাকার হলে মানুষ কার ইবাদত করে? হযরত রাসুল (সা.) মিরাজে গিয়ে আল্লাহর দর্শন লাভ করে কীভাবে তাঁর সাথে কথাবার্তা বলেছিলেন?
মহান আল্লাহ্ মানুষের সবচেয়ে কাছে অবস্থান করার পরেও মানুষ মনে করে তিনি সাত আসমানের উপরে আছেন। পরম স্রষ্টার সাথে যোগাযোগের পন্থা হারিয়ে ফেলার কারণে আজ আমাদের সকল ইবাদত নিস্ফল হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানকে জামানার ইমাম, মহান সংস্কারক ও মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী রূপে জগতের বুকে প্রেরণ করেন।
যুগশ্রেষ্ঠ এ মহামানব যখন জনসমক্ষে ঘোষণা করলেন- ‘আমি আল্লাহ্কে দেখেছি’, তখন অলী-আল্লাহ্ বিদ্বেষী আলেম সমাজ প্রতিবাদের ঝড় তোলে। এমতাবস্থায় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বলিষ্ঠ কণ্ঠে বললেন- ‘আমি আল্লাহ্কে এমনভাবে চিনি, যেভাবে সন্তান তার পিতাকে চেনে।’ এ লক্ষ্যে তিনি দীর্ঘদিন ধরে সমাজে প্রচলিত কুসংস্কার ও অন্ধ বিশ্বাস দূরীভূত করার জন্য পবিত্র কুরআনের আলোকে জীবন বিধান ‘আল্লাহর জাত-পাকের পরিচয়’ লিখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশের স্বনামধন্য বিশ^বিদ্যালয়ের আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের অভিজ্ঞ শিক্ষকবৃন্দের সমন্বয়ে একটি গবেষণা টিম গঠন করেন। এছাড়া পবিত্র কুরআন ও হাদিস সম্পকির্ত বিষয়ে প্রজ্ঞাবান ওলামায়ে কেরামকেও সম্পৃক্ত করেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান গবেষণা টিমের নিকট মহান আল্লাহ্কে তিনি যে রূপে দেখেছেন সেরূপের বর্ণনা দেন। অতঃপর আল্লাহর রূপের বর্ণনা পবিত্র কুরআনে আছে কিনা, তা খুঁজে বের করে পবিত্র কুরআন দ¦ারা বাস্তবে রূপ দেওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকবৃন্দ ও ওলামায়ে কেরাম চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাদের বিদায় দিয়ে নিজেই তাঁর লোকদের নিয়ে পুনরায় গবেষণা টিম গঠন করেন। অতঃপর সেই টিমকে তিনি প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দেন এভাবে- আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁর অপরূপ সুন্দর নুরের রূপ আছে, তিনি দেখতে অবিকল মানুষের মতো; তবে তিনি রক্ত মাংসের দেহধারী নন, তিনি নুরের। এছাড়া তিনি গবেষণা টিমকে আল্লাহর রূপের বর্ণনা সম্মিলিত একটি হাদিস স্মরণ করিয়ে দেন, যা হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- ‘‘মহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আ.)-কে তাঁর নিজ সুরতে সৃষ্টি করেছেন।’’ (বোখারী ও মুসলিম শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৯৭) এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তাঁর বাস্তব অভিজ্ঞতা ও হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিসের আলোকে গবেষণা টিমকে বলেন, আদম সন্তান তথা একজন মানুষের সুন্দর একটি চেহারা আছে, তার চোখ, কান ও জবান আছে এবং হাত-পাসহ পরিপূর্ণ একটি অবয়ব রয়েছে; একইভাবে মহান আল্লাহর সুরত বা অবয়ব অবিকল মানুষের মতো, তবে তিনি মানুষের মতো রক্ত মাংসের দেহধারী নন; তিনি নুরের।
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের প্রত্যক্ষ নির্দেশনায় ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে গবেষণা টিম পবিত্র কুরআন থেকে আল্লাহ্র নুরের চেহারা মোবারকের বর্ণনায় ১৪ খানা আয়াত; শ্রবণেন্দ্রিয় বা কান মোবারকের বর্ণনায় ৪৮ খানা আয়াত, জবান মোবারকের বর্ণনায় ৪৪৭ খানা আয়াত; হাত মোবারকের বর্ণনায় ১৭ খানা আয়াত; কদম মোবারকের বর্ণনায় ২ খানা আয়াত এবং নফস বা দেহ মোবারকের বর্ণনায় ৬ খানা আয়াত এবং মহান আল্লাহর দর্শন লাভ প্রসঙ্গে ৩০ খানা আয়াতও খুঁজে পাওয়া যায়। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান পবিত্র কুরআনের উল্লিখিত আয়াতসমূহ এবং আয়াত সমূহের ব্যাখ্যায় হযরত রাসুল (সা.) যে হাদিস বর্ণনা করেছেন তা সন্নিবেশিত করে আল্লাহর জাত-পাকের পরিচয় সম্বলিত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ ১ম খণ্ড প্রণয়ন করেন। এ তাফসীর শরীফের মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেন- মহান আল্লাহ্ রূপহীন নিরাকার নন, তাঁর নুরের রূপ আছে। এরপর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে আল্লাহর ৯৯টি সিফাত বা গুণবাচক নামের পরিচয় তুরে ধরে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামে আরো ৭ খণ্ড তাফসীর প্রণয়ন করেন। এভাবে ৮ খণ্ড তাফসীর প্রণয়নের মাধ্যমে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান জাতির নিকট আল্লাহর স্বরূপ ও প্রকৃত পরিচয় উপস্থাপন করেছেন।
বস্তুত এ তাফসীর শরীফ সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম, এ যাবৎ প্রকাশিত গতানুগতিক কোনো তাফসীর গ্রন্থের মতো নয়। এর পটভুমিতে রয়েছে জগৎশ্রেষ্ঠ তাসাউফ বিজ্ঞানীর সুদীর্ঘ ৩৩ বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং নিরলস সাধনা। হেরা গুহায় হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর নিকট যে ক্বালবী বিদ্যা প্রকাশিত হয়েছিল, তা তাফসীর শরীফে সেই সত্যের দিকটি পুনরায় উন্মোচিত হলো। প্রকৃতপক্ষে নবুয়তের যুগে নবি ও রাসুলগণএবং নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে অসংখ্য অলী-আল্লাহ্ যে আদর্শ শিক্ষা দিয়েছেন, তার সঠিক ব্যাখ্যার মাধ্যমেই মহান স্রষ্টার প্রকৃত স্বরূপটি উদঘাাটিত হয়েছে।
যুগের ইমাম হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান তাঁর দৈনন্দিন সকল কাজ অপেক্ষা তাফসীর রচনার কাজে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন। এ জন্য দেখা গেছে, ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর মহান রাব্বুল আলামিনের সাথে মহামিলনকালেও তাফসীর রচনা এক মুহূর্তের জন্যও বিলম্বিত হয়নি। দয়াল মায়ের ওফাতের কিছুদিন পূর্ব হতে রাব্বুল আলামিন প্রায়শ সূফী সম্রাটকে দিদার দিতেন। ফলে তাঁর জাগতিক কোনো বিষয়ে চিন্তা-ভাবনার অবকাশ ছিল না। ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ সেপ্টেম্বর ছিল ২২ রমজান, রবিবার; ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান কুরআনের আলোকে আল্লাহর জাত-পাকের পরিচয় সংবলিত পাণ্ডুলিপির কাজ সুসম্পন্ন করেন। অতঃপর তিনি ইফতার করার উদ্দেশ্যে বাবে রহমতের দোতলার ‘আল-কুরআন গবেষণা কেন্দ্র’ ত্যাগ করে ভিতর বাড়ির হুজরা শরীফে তশরিফ গ্রহণ করেন। হযরত দয়াল মা (রহ.) আল্লাহর জাত-পাকের পরিচয় সংবলিত তাফসীরের কাজ সুসম্পন্ন হওয়ার সংবাদ পেয়ে, শরীর মোবারক অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও অত্যন্ত আনন্দিত হলেন। আর এ রাতটিই ছিল হযরত দয়াল মা (রহ.)-এর জীবনের শেষ রাত। পরবর্তী দিন সকালেই দয়াল মা (রহ.) ওফাত লাভ করেন।
প্রাণপ্রিয় সহধর্মিণীর ওফাত লাভের পরেও আল্লাহর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের তাফসীর প্রণয়নের কাজ বন্ধ হয়নি। বরং তিনি মহান আল্লাহর জাতপাকের পরিচয় তুলে ধরার জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে পড়েন। তারই ফলশ্রুতিতে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আল্লাহর জাত ও সিফাতের বর্ণনা উপস্থাপন করে ৮ খণ্ড তাফসীর শরীফ প্রণয়ন করতে সক্ষম হয়েছেন। আর তাঁর এ অতুলনীয় অবদানের পুরস্কার স্বরূপ মহান রাব্বুল আলামিন তাঁকে এমন এক বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেছেন, যা পূর্ববর্তী কোনো অলী-আল্লাহর ক্ষেত্রে দেখা যায়নি। মহান মালিকের অসীম রহমতে বিগত ১০ অক্টোবর ২০০৮ খ্রিষ্টাব্দ থেকে দেশ-বিদেশের অগণিত মানুষ পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাটের নুরানিময় চেহারা মোবারক অবলোকন করে আসছেন, যা থেকে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়, তিনি প্রকৃতপক্ষেই আল্লাহর মহান বন্ধু।
আল্লাহ্র এ মহান বন্ধুর লিখিত- ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’-৮ খণ্ড হওয়ায় মহান রাব্বুল আলামিনের নুরের কদম মোবারকে জানাই লাখোা শোকর, আল্হামদুলিল্লাহ। আল্লাহর পরিচয় সংবলিত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নিঃসন্দেহে মানবজাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ উপহার। সূফী সম্রাট প্রণীত এই মহামূল্যবান তাফসীর শরীফ অধ্যয়ন করে জগতের মানুষ উপকৃত হবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস। অদূর ভবিষ্যতে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর প্রণীত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হবে, আর তা নিয়ে বহু গবেষক গবেষণা করবেন বলে আমি প্রত্যাশা করছি। সেই সাথে এই বিখ্যাত তাফসীর প্রণয়ন করার জন্য আল্লাহর এই মহান বন্ধু সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করছি।
[লেখক: সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান ও কুতুবুল আকতাব হযরত সৈয়দা হামিদা বেগম দয়াল মা (রহ.)-এর সেজো সাহেবজাদা; পরিচালক, অর্থ ও পরিকল্পনা বিভাগ, কেন্দ্রীয় দরবার; পরিচালক, বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফ]