নামাজে হুজুরি: সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অন্যতম শিক্ষা
ড. পিয়ার মোহাম্মদ
নামাজ ফারসি শব্দ, যার আরবি প্রতিশব্দ হলো সালাত। সালাত বলতে বুঝায়- দোয়া, রহমত, সংযোগ স্থাপন বা ক্ষমা প্রার্থনা করা। সালাত বা নামাজ মুসলমানদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে নামাজ অন্যতম। আমাদের প্রিয় রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা.) মি‘রাজের মাধ্যমে আল্লাহর দিদার লাভ করেন। মহান আল্লাহর সাথে হযরত রাসুল (সা.)-এর সেই দিদার লাভের পর থেকেই তিনি নামাজ আদায়ের তাগিদ প্রদান করেন। তখন থেকেই হযরত রাসুল (সা.)-এর অনুসারীদের মধ্যে শুরু হয় প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ। গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হিসেবে নামাজ যথাযথভাবে আদায় করা জরুরি। সেই পরিপ্রেক্ষিতে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান অগণিত মানুষকে হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করার শিক্ষা দিয়েছেন।
এখন দেখা যাক, হুজুরি দিলে নামাজ বা নামাজে হুজুরি বলতে কী বুঝায়? সহজ ভাষায় হুজুরি দিলে নামাজ বলতে একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায়কে বুঝায়। নামাজে হুজুরি দিল না থাকলে নামাজ শুদ্ধ হয় না। নামাজের মধ্যে মন সর্বদা খোদার ধ্যানে একাগ্র না হলে নামাজ শুদ্ধ হতে পারে না। যে নামাজে দুনিয়ার চিন্তা আসে সেই নামাজ কবুল হয় না। অর্থাৎ হুজুরি দিল ব্যতীত নামাজ শুদ্ধ হওয়ার সুযোগ নেই। নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য মনে সর্বদা খোদা তায়ালার ধ্যান থাকা ও খোদার প্রতি প্রেম ও ভালোবাসা থাকা এবং দুনিয়ার চিন্তামুক্ত হওয়া পূর্বশর্ত। মহান আল্লাহ্ পাক বলেন, “[হে রাসুল (সা.)!] আপনি বলুন, আমি আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণ করেছি এবং আমার অনুসারীরাও।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ২০)। বান্দা যখন মহান আল্লাহর এ নির্দেশ মোতাবেক সম্পূর্ণরূপে তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করতে পারে, কেবল তখনই একাগ্রতার সাথে নামাজ আদায় করা সম্ভব হয়। সেজন্য একজন মানুষ যেন দুনিয়ার চিন্তামুক্ত হয়ে একাগ্রতার সাথে আল্লাহ্ তায়ালাকে হাজির নাজির জেনে নামাজ আদায় করতে পারেন, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) সেই পদ্ধতি শিক্ষা দিয়েছেন। এ পদ্ধতি অনুসরণ করে হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করা সম্ভব।
নামাজ সম্পর্কে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন- “নিশ্চয় নামাজ মু’মিন ব্যক্তির জন্য মি‘রাজ।” (তাফসীরে মাজহারী ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪১৩) অর্থাৎ-নামাজের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ পাক মু’মিন ব্যক্তিকে তাঁর সাথে সাক্ষাৎ লাভের সুযোগ করে দিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে, আল্লাহ্ এবং বান্দার কথোপকথন হলো নামাজ। নামাজের মাধ্যমে বান্দা দিনে পাঁচবার মহান প্রভুর সামনে হাজির হয়ে স্বীয় কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন, যেন পরিপূর্ণ মু’মিন হতে পারেন। নামাজকে অত্যধিক গুরুত্ব প্রদান করে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “[হে রাসুল (সা.)!] বলে দিন- ‘আমার প্রতিপালক ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়েছেন। প্রত্যেকে তোমাদের নামাজের সময় লক্ষ্য স্থির রাখবে এবং তাঁরই আনুগত্য সহকারে বিশুদ্ধচিত্তে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁকে ডাকবে। যেভাবে তিনি তোমাদেরকে প্রথমে সৃষ্টি করেছিলেন, তাহলে তোমরা সেভাবেই ফিরে আসবে।” (সূরা আ‘রাফ ৭: আয়াত ২৯) ইসলামের প্রথম যুগে হযরত রাসুল (সা.) নামাজের গুরুত্ব বিবেচনা করে নিজেই সাহাবায়ে কেরামকে নামাজ শিক্ষা দিয়েছেন। নামাজ শিক্ষার জন্য সাহাবায়ে কেরামকে তাঁর নিকট প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়েছে। অতঃপর যখন তারা পরিপূর্ণ মু’মিনে পরিণত হয়েছেন, তখন নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে আল্লাহর দিদার লাভের সৌভাগ্য অর্জন করেছেন। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর নিয়ম অনুসরণ করে নামাজে দাঁড়ালে দুনিয়ার কোনো চিন্তা আসে না এবং তাঁর শিক্ষা মোতাবেক নামাজ আদায় করলে নামাজের উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব হয়।
আল্লাহ্ তায়ালা পবিত্র কালামে বলেছেন, “আমাকে স্মরণ করার জন্য নামাজ কায়েম করো।” (সূরা ত্বাহা ২০: আয়াত ১৪) এতে বুঝা যায় নামাজে আল্লাহর স্মরণ ও ধ্যানের মাধ্যমেই নামাজের আসল উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব। এ সম্পর্কে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান, “তুমি এমনভাবে আল্লাহ্ তায়ালার বন্দেগি করো, যেন তুমি আল্লাহ্কে দেখছ। যদি তা না পারো, তবে এরূপভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন আল্লাহ্ তোমাকে দেখছেন। (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ১১) মহান আল্লাহ্কে হাজির নাজির জেনে তাঁর ধ্যানে ও নামে বিভোর হয়ে নামাজ আদায় করতে পারলেই নামাজ কবুলিয়াতের ফায়েজ পাওয়া যায়। কামেল মোকাম্মেল মোর্শেদের তাওয়াজ্জোহ গ্রহণ করে কঠোর সাধনা ও চেষ্টা করলেই তা সম্ভব হয়। মুখে আল্লাহর উদ্দেশ্যে নামাজ আর মনে দুনিয়াদারীর চিন্তা থাকলে সেই নামাজ থেকে কোনো ফল পাওয়া সম্ভব নয়।
নামাজের সময় আমাদের প্রিয় রাসুল (সা.)-এর কী অবস্থা হতো তার বিবরণ দিতে গিয়ে হযরত মা আয়েশা (রা.) বলেছেন, “আমি ও হযরত রাসুল (সা.) যখন আলাপরত থাকতাম, এমন অবস্থায় যদি নামাজের সময় আসতো, তবে তিনি আমাকে চিনতে পারতেন না।” অর্থাৎ নামাজের ডাক এলে সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ পাকের দরবারে হাজির হয়ে পরম করুণাময়ের সান্নিধ্য লাভের আকাঙ্খায় এমন মাতোয়ারা হয়ে পড়তেন যে, তখন ইহলৌকিক কোনো বিষয় তাঁর হৃদয়কে স্পর্শ করতে পারতো না। এটিই প্রকৃতপক্ষে হাকিকতে নামাজের প্রতি প্রেমের নিদর্শন। দেহ ও মন একত্রিত করে নামাজ আদায় করতে পারলে মানুষের মাঝে আহম্মদি চরিত্র ফুটে উঠে। বস্তুত নামাজ মানুষকে আহম্মদি চরিত্র শিক্ষা দিয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “তোমাদের জন্য অবশ্যই উত্তম আদর্শ রয়েছে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর মধ্যে।” (সূরা আযহাব ৩৩: আয়াত ২১) যখন আমাদের মাঝে আহম্মদি চরিত্র প্রকাশ পাবে, তখনই নামাজে মি‘রাজ হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিবে, তার আগে নয়। সেজন্য দেহ ও মন একত্রিত করে নামাজ আদায়ের মাধ্যমে আহাম্মদি চরিত্র অর্জন করা জরুরি।
দুনিয়ার মোহে ডুবে থেকে লোভের বশবর্তী হয়ে নামাজে দাঁড়ালে নামাজের মধ্যেই শুরু হয়ে যায় নানান হিসাব নিকাশ এবং দুনিয়াদারীর নানান যোগ-বিয়োগ। যার ফলে নামাজের মাধ্যমে অর্জিত হয় না কিছুই। নামাজের সময় আল্লাহ্ তায়ালা হাজির থাকেন, অথচ নামাজের মধ্যে মানুষ আল্লাহ্কে ভুলে অন্য চিন্তায় মগ্ন হয়ে পড়ে। অন্য জনের চেহারা মনে পড়ে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয় অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে নামাজ বিরত রাখে।” (সূরা আনকাবুত ২৯: আয়াত ৪৫) অথচ তা হচ্ছে না। মানুষ নামাজ পড়ছে আবার এই সাথে ঘুষ গ্রহণ করছে, মিথ্যা বলছে, ধোঁকাবাজি করছে এবং পরকে ঠকাচ্ছে। যত প্রকার গুনাহ আছে তার কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। তাহলে কারণ কী? নামাজ মানুষকে পাপ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রাখে, মহান আল্লাহ্ পাকের এ বাণী অবশ্যই সত্য। তাহলে নিশ্চয় আমাদের নামাজে সমস্যা রয়েছে, সেজন্য নামাজ আমাদের চরিত্রের পরিবর্তন আনতে পারছে না। আর সেই সমস্যা হলো, নামাজে হুজুরি দিলের অভাব। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেন, “হুজুরি দিল ছাড়া দায়সারা গোছের নামাজ পড়ে কোনো লাভ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।”
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, “যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সহিত সাক্ষাৎ লাভের আশা রাখে, সে যেন নেক কাজ করে এবং তার রবের ইবাদতে অন্য কাউকে শরিক না করে।” (সূরা কাহাফ ১৮: আয়াত ১১০) অথচ আমরা একদিকে মন্দ কাজে নিয়োজিত আবার নামাজে দাঁড়িয়েও আল্লাহর স্মরণ বাদ দিয়ে অন্যের কথা স্মরণ করছি। এ অবস্থায় নামাজের ফল আমরা পাব কীভাবে? এ ধরনের ভুল ও বেখেয়ালি নামাজিকে শাস্তির সংবাদ দিয়ে আল্লাহ্ তায়ালা ফরমান, “দুর্ভোগ ঐসব নামাজির জন্য, যারা নিজেদের নামাজ সম্বন্ধে উদাসীন। যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে।” (সূরা মাউন ১০৭: আয়াত ৪-৬) আমরা যেহেতু নামাজে খোদার ইবাদত করতে গিয়ে অন্যের ধ্যানে চলে যাচ্ছি সেহেতু চরম পাপে নিপতিত হচ্ছি। যে নামাজি স্বীয় নামাজকে বাজে কল্পনা ও নানাবিধ চিন্তা থেকে মুক্ত রাখতে চেষ্টা করে না এবং একাগ্রতার সাথে হুজুরি দিলে নামাজ পড়ে না, সে নামাজি নামাজ থেকে কী ফল পাবেন, মহান আল্লাহ্ই ভালো জানেন।
উহুদ যুদ্ধে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজাহাহু-এর দেহ মোবারকে ১৬টি ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল এবং তাঁর কদম পাকে তির বিদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধ শেষে সাহাবিরা তাঁর কদম মোবারক থেকে তির বের করার চেষ্টা করলেন, কিন্তু অসহ্য যন্ত্রণার কারণে তিরে হাত দেওয়া যাচ্ছিল না। এমতাবস্থায়, হযরত রাসুল (সা.) সাহাবিদের বললেন, আলী যখন নামাজরত থাকবে, তখন তোমরা তাঁর পায়ের তির বের করবে। পরবর্তীতে দেখা গেল হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজাহাহু যখন নামাজ আদায় করছিলেন, ঠিক সেই সময় সাহাবিরা তাঁর কদম মোবারক থেকে তির বের করে আনলেন অথচ হযরত আলী (রা.) বিন্দুমাত্র টের পেলেন না। এতটা হুজুরি দিল অর্থাৎ একাগ্রচিত্তে তিনি নামাজ আদায় করছিলেন যে, নামাজে মহান প্রভুর এশকে দেওয়ানা হয়ে প্রভুকে হাজির নাজির করে নামাজ আদায় করছিলেন। এভাবে হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করতে পারলেই প্রকৃতপক্ষে নামাজের বাস্তবতা খুঁজে পাওয়া যায়। এ প্রসঙ্গে হযরত আলী (রা.) বলেন, “আমি এমন প্রভুর ইবাদত করি না, যাঁকে আমি দেখি না।” (সূত্র: শরহে ফেক্হ আকবর) হযরত ওমর (রা.) বলেন, “আমার প্রভুর নুরের দ্বারা আমি আমার ক্বালবে আপন প্রভুকে দেখেছি।” (সূত্র: শরহে ফেক্হ আকবর) তাহলে বুঝা যায়, হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করতে পারলেই নামাজের মাধ্যমে পাপ কাজ থেকে বিরত থেকে প্রকৃত মু’মিন হয়ে মি‘রাজ অর্জন করা সম্ভব।
হযরত রাসুল (সা.) কোনো সমস্যায় পড়লে দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন, এতে সমস্যা দুর হয়ে যেতো। তাহলে নিশ্চয় তিনি নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর কাছ থেকে পরামর্শ পেতেন, যার দ্বারা সমস্যা দূর হতো। নবুয়তের যুগে সকল নবি রাসুলের ক্ষেত্রেই এ ঘটনা ঘটেছে। তাহলে কি এখন নামাজের মাধ্যমে মহান প্রভুর সাহায্য ও দিদার লাভ করা সম্ভব নয়? অবশ্যই সম্ভব। আমাদের মহান দরদি মোর্শেদ, দ্বিন দুনিয়ার কোহিনুর, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানের চারটি মৌলিক শিক্ষার মধ্যে রয়েছে নামাজে হুজুরি অর্জন। এ শিক্ষা মতো আমল করলে নামাজে পরিপূর্ণ ফায়েজ, বরকত ও রহমত হাছিল করা যায়। নামাজের আসল উদ্দেশ্য অর্জন করা সম্ভব হয়। সেজন্য প্রয়োজন তাঁর নির্দেশিত পন্থায় হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করা।
এ কথা সত্য যে, যারা মুসলমান হিসেবে দাবী করেন, তারা সবাই কমবেশি নামাজ আদায় করে থাকেন এবং নামাজ থেকে উপকৃত হতে চান, কিন্তু নামাজ সঠিকভাবে আদায় করতে না পারায় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন। হুজুরি দিলে নামাজ পড়ার বড়ো বাধা হলো- মানুষের ক্বালবের সুদুরের মোকামে শয়তানের ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা। প্রকৃতপক্ষে, মানুষের ক্বালবেই শয়তানের অবস্থান। মহান আল্লাহ্ বলেন, “যে শয়তান কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের অন্তরে।” (সূরা নাস ১১৪: আয়াত ৫) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “শয়তান আদম সন্তানের ক্বালব বা দিলের মাঝে বসা থাকে। যখন সে আল্লাহর জ্বিকির করে, শয়তান তখন সরে যায়। আর যখন সে আল্লাহর জ্বিকির থেকে গাফেল থাকে, তখন শয়তান তার ক্বালব বা দিলে ওয়াসওয়াসা বা কুমন্ত্রণা দিতে থাকে।” (বোখারি শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ১৯৯) সেজন্য হুজুরি দিল বা একাগ্রতা অর্জনের জন্য কুমন্ত্রণাদানকারী শয়তানকে দিল থেকে বিতাড়িত করা দরকার। শয়তানের কুমন্ত্রণামুক্ত এক আল্লাহর প্রতি নিমগ্ন জ্বিকিরকারীর দিলই হুজুরি দিল। এ হুজুরি দিল থেকে শয়তান বিতাড়িত হয়ে মহান আল্লাহর বাসস্থান হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। হুজুরি দিল অর্জনের জন্য প্রয়োজন অলী-আল্লাহর সাহচর্য। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুরি দিল অর্জনের শিক্ষা প্রদানকারী একজন উচ্চ শ্রেণির অলী-আল্লাহ্ ছিলেন।
অনেক লোক আছেন, যারা নিজে নিজে নামাজে হুজুরি দিলের জন্য খুব চেষ্টা করে থাকেন, কিন্তু কোনো কামেল অলীর সাহায্য নিতে চান না। তারা বলে থাকেন, নামাজে হুজুরি দিলের নির্দেশ আছে এবং তারা হুজুরি দিল অর্জনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। কাজেই হুজুরি দিল না হলে আল্লাহ্ তাদের দায়ী করবেন না। এ ধারণা ঠিক নয়। কেননা, মহান আল্লাহ্ যেমন হুজুরি দিলে নামাজের নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনি তিনি যুগে যুগে নবি-রাসুল এবং বেলায়েতের যুগে অসংখ্য অলী-আল্লাহ্ প্রেরণ করে তাঁদের কাছে হুজুরি দিলে নামাজ শেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। কাজেই নিজে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও জবাবদিহী করতে হবে যে, হুজুরি দিল শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষক প্রেরণ করা সত্ত্বেও কেন তাঁদের শিক্ষা গ্রহণ করা হয়নি। আমরা প্রায় সব কিছুই অন্যের কাছ থেকে শিখে থাকি, তাতে কোনো দ্বিধা থাকে না, অথচ আখিরাতের পাথেয় অর্জনের শিক্ষা গ্রহণে অলী-আল্লাহর কাছে যেতে কেন এতো আপত্তি? এটি শয়তানের ধোকা ছাড়া কিছু নয়। মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি মহব্বত বাড়ানোর জন্য এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। সেজন্য যিনি হুজুরি দিলে নামাজ আদায়ের শিক্ষা দিতে পারেন, তাঁর কাছে গিয়ে হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করা সবার কর্তব্য।
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) দয়াল বাবা কেবলাজান মানুষের মুক্তির জন্য মানুষকে মহান স্রষ্টার কাছে পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পণের মাধ্যমে হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করে সফল হওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর শিক্ষা গ্রহণ করে নামাজে হুজুরি অর্জনের মাধ্যমে সফল হচ্ছেন অসংখ্য পাপিতাপি মানুষ। তাঁর নির্দেশিত পথে হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করে মহান আল্লাহর দিদার লাভ করে ধন্য হচ্ছেন অনেকে। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন, আমরা যেন তাঁর প্রিয় বন্ধুর দেখানো পথে হুজুরি দিলে নামাজ আদায় করে পাপমুক্ত হয়ে মহান আল্লাহর দিদার লাভে সফলকাম হতে পারি। আমিন।
[লেখক: অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।]