পবিত্র আশুরা: রাব্বুল আলামিনের আরশে সমাসীন হওয়ার দিবস
মুহাম্মদ জহিরুল আলম: মহান আল্লাহ্ নিজেকে প্রকাশ করার লক্ষ্যে বিশ্বজাহান সৃষ্টি করেন। সৃষ্টির শুরু হতেই যুগে যুগে মহামানবগণের মাধ্যমে জগদ্বাসীর নিকট দয়াময় আল্লাহ্ নিজের পরিচয় তুলে ধরেছেন। মহামানবগণ সমকালীন যুগের পথহারা মানুষকে প্রকৃত সত্য শিক্ষাদানের মাধ্যমে মানুষকে মুক্তির মোহনায় পৌঁছে দেন। হিদায়েতের এ ধারাবাহিকতা সৃষ্টির শুরু হতে আজও অব্যাহত রয়েছে। মানুষ যখন স্রষ্টার কোনো নিগুঢ় রহস্য ভুলে যায় সমকালীন যুগের মহামানব সেই বিষয়টি পুনরায় সমাজের মানুষের কল্যাণে প্রতিষ্ঠিত করেন। তেমনি রহমত, বরকত ও কল্যাণময় নিগুঢ় রহস্যমণ্ডিত দিবস আশুরা- মহান রাব্বুল আলামিনের আরশে সমাসীন হওয়ার দিবস।
দয়াময় আল্লাহ্ সৃষ্টির সূচনা থেকেই আমাদের ১২টি মাস দান করেছেন। তার মাঝে চারটি মাসকে পবিত্র ও সম্মানিত বলে ঘোষণা করেছেন। মাস চারটি হল- রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মহররম। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ এরশাদ করেন, “নিশ্চই মাসসমূহের সংখ্যা আল্লাহর কাছে বারো, আর তা সুনির্দিষ্ট রয়েছে আল্লাহর কিতাবে সেদিন থেকে, যেদিন তিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও জমিন; এর মধ্যে চারটি মাস সম্মানিত। এটিই সুপ্রতিষ্ঠিত ধর্মপথ। সুতরাং এ মাসগুলোর ব্যাপারে তোমরা নিজেদের প্রতি জুলুম করো না।” (সূরা আত তাওবাহ ৯: আয়াত ৩৬) হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, “চারটি মাস তথা রজব, জিলকদ, জিলহজ ও মহররম মাসকে আল্লাহ্ তায়ালা সম্মানিত ঘোষণা করেছেন। এ মাসগুলোর মর্যাদা আল্লাহ্ বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি এ মাসসমূহের পাপকর্মকে কঠিন পাপ হিসেবে গণ্য করে থাকেন। এ মাসসমূহের নেক কাজসমূহের প্রতিদানও তিনি অধিক পরিমাণে দিয়ে থাকেন।” (তাফসীরে তাবারী, ১০ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১২৬) চারটি মাসের মধ্যে মহররম হিজরি বর্ষের প্রথম মাস। যা অত্যন্ত রহমত, বরকত ও ফজিলতপূর্ণ। এ মাসের দশ তারিখ পবিত্র আশুরা। আশারা থেকে আশুরা। আশারা মানে দশ। মহরমের দশম দিবস। ইয়াওমুল আশুরা।
আশুরা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় দিবস। শুধু তাই নয়, সৃষ্টিজগতের সমস্ত মানুষের জন্য আশুরার দিন সবচেয়ে সম্মানিত ও পবিত্র। অথচ দেখা যায় ইরান, ইরাক, লেবানন পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও বাহরাইনে যেভাবে এ দিনটিকে পালন করা হয় পৃথিবীর অন্যান্য দেশে তা অনেকটাই নিস্প্রভ। আমাদের সমাজে অনেকের ধারণা আশুরা শিয়াদের অনুষ্ঠান। এ কারণেই সময়ের আবর্তে দিবসটি অনেকাংশে শিয়া মতালম্বীগণের অনুষ্ঠানের দিন হয়ে যায়। তারা বিভিন্ন ধরনের মিছিল, মাতম ও শোক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিনটিকে স্মরণ করেন। আবার পৃথিবীর যে কয়টি দেশে আশুরা পালিত হতো সেখানেও দিবসটির যথাযথ তাৎপর্য ফুঁটে উঠত না। দিবসটি খ্রিষ্টানরা স্মরণ করত কেননা হযরত ঈসা (আ.) এ দিনে জন্ম লাভ করেছিলেন, ইহুদিরাও মনে রাখে কেননা হযরত মূসা (আ.) এ দিবসে নিল নদ পাড়ি দিয়েছিলেন। ইতিহাস না জানার কারণে আমরা দিনটিকে হারিয়ে ফেলেছি। যতটুকু জানা, তাও আবার দিনে দিনে হারিয়ে যাচ্ছিল। আজ হতে কয়েক যুগ আগেও দিনটি গণমানুষের মাঝে অনেক আবেগ নিয়ে প্রকাশিত হতো। ধীরে ধীরে আমরা তা হতে দূরে সরে পড়েছি। মূল বিষয়টি যদি পর্যালোচনা করা হয় তাহলে দেখা যায়, ইসলাম দুভাগে বিভক্ত। একটি হলো হেরা পর্বত হতে উৎসারিত দয়াল রাসুল (সা.)-এর ‘মোহাম্মদী ইসলাম’; ‘নুরে মোহাম্মদী’র অধিকারী মহামানব অর্থাৎ আহলে বাইতের মাধ্যমে যুগের পর যুগ পৃথিবীর পথহারা মানুষকে যে ইসলাম মুক্তির পথ দেখিয়ে যাচ্ছে। দ্বিতীয়টি হলো কারবালার ময়দানে নবি পরিবারকে রক্তে রঞ্জিত করে মুসলিম খিলাফত দখল করে দুরাচারী এজিদের প্রতিষ্ঠিত ‘দ্বিন ইসলাম’; উমাইয়াদের ৮৯ বছর, আব্বাসিয়দের ৫০৮ বছরে, যা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছে; যাদের ইতিহাস হলো আহলে বাইত ও তাঁদের অনুসারী অলী-আল্লাহ্গণের উপর নির্যাতনের ইতিহাস। কাজেই সমাজের প্রচলিত দিন ইসলামে আশুরার প্রকৃত মর্মবাণী যথার্থরূপে উচ্চারিত হবে না এবং এ চক্রান্তের স্বীকার হবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম।
ইসলাম থেকে তাসাউফ বিলুপ্ত হওয়ায় ইসলাম প্রাণহীন হয়ে গিয়েছে। দয়াল রাসুল (সা.)-এর আগমনের প্রায় ১৪০০ বছর পর জগতের বুকে আগমন করেন বেলায়েতের যুগের শ্রেষ্ঠ ইমাম, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান। তিনি দেড় হাজার বছরে হারিয়ে যাওয়া, দয়াল রাসুল (সা.)-এর শিক্ষা ও আদর্শ তথা মোহাম্মদী ইসলামকে জগতের বুকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ধর্মে প্রবিষ্ট কুসংস্কারগুলো মানবজাতির নিকট উপস্থাপন করে তিনি এর সংস্কার সাধন করেছেন। সমাজ থেকে হারিয়ে যাওয়া আশুরার প্রকৃত শিক্ষা ও তাৎপর্য তিনি জগদ্বাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। সূফী সম্রাট ১৯৮৫ সালে সর্বপ্রথম আশুরার গুরুত্ব সংবলিত হ্যান্ডবিল বিতরণ করেন। সমাজের ধর্মপ্রাণ মানুষ যেন দিনটিকে গুরুত্বসহ পালন করে নিজেদের মুক্তির ব্যবস্থা করতে পারেন, সেজন্য তিনি ৮০ লক্ষ হ্যান্ডবিল সারাদেশে বিতরণ করেন। সূফী সম্রাট পবিত্র কুরআন ও হাদিস দিয়ে প্রমাণ করেছেন- পবিত্র আশুরার দিবসে আল্লাহ্ আরশে সমাসীন হয়েছিলেন। যে কারণে দয়াময় আল্লাহর অভিষেক উদ্যাপন উপলক্ষ্যে এদিনে অপরিসীম রহমত ও বরকত অবতীর্ণ হয়। সূফী সম্রাটের উপস্থাপিত আশুরা দিবসের তাৎপর্য উপলব্ধি করে পরবর্তীতে দিনটি সরকারীভাবে বিশেষ গুরুত্ব সহকারে আমাদের দেশে পালন করা হচ্ছে।
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেন, “মহররম মাসের দশ তারিখ পবিত্র আশুরার দিবসেই মহান আল্লাহ্ আসমান ও জমিনের সৃষ্টি কার্যক্রম সম্পন্ন করে সৃষ্টিজগতের প্রতিপালক হিসেবে আরশে সমাসীন হয়েছিলেন।” পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই তোমাদের পালনকর্তা আল্লাহ্, যিনি সৃষ্টি করেছেন আসমান ও জমিন ছয় দিনে। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন এবং তিনি পরিচালনা করেন প্রতিটি কাজ।” (সূরা ইউনুস ১০: আয়াত ৩) সেদিন আরশে সমাসীন হওয়ার মধ্য দিয়ে যে অভিষেক অনুষ্ঠান হয়েছিল সেই অনুষ্ঠানে সকল আদম সন্তানের রুহসমূহ মহান আল্লাহ্কে রব হিসেবে স্বীকার করে নেয়। (তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৯৫) পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, “হে রাসুল (সা.)! আপনি স্মরণ করুন সেই সময়ের কথা, যখন আপনার প্রতিপালক আদম সন্তানদের পৃষ্ঠদেশ থেকে তাদের বংশধরদের বের করলেন এবং তাদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিলেন তাদেরই সম্বন্ধে এবং বললেন- আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা বলল-হাঁ, আমরা সাক্ষী রইলাম।” (সূরা আল আ‘রাফ ৭: আয়াত ১৭২) তাফসীরে দুররে মানসুরের ৮ম খণ্ডের ৪৭২ পৃষ্ঠায় হযরত ইকরামা (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা আসমান ও জমিন এবং এ দু’য়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে, তা (সবকিছু) সৃষ্টির সূচনা করেছেন রোববার দিন। অতঃপর তিনি (সৃষ্টিকার্য সমাপ্ত করে) শুক্রবার দিন (আশুরার দিনে) আরশে সমাসীন হয়েছেন।” হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “আল্লাহ্ তায়ালা হযরত আদম (আ.)-কে শুক্রবার আছরের পর সৃষ্টি করেন। অতঃপর তিনি আরশে সমাসীন হন (বস্তুত দিনটি ছিল মহররম মাসের দশম তারিখ তথা পবিত্র আশুরার দিন)।” (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৫১০ ও মুসলিম শরিফ) গুনিয়াতুত্ব ত্বালিবিন কিতাবের ৩২৬ পৃষ্ঠায় বড়ো পির হযরত আব্দুল কাদের জিলানি (রহ.) লিখেছেন, “আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন আশুরার দিনে আরশে সমাসীন হয়েছেন। আর এ বিশ্বজাহান ধ্বংসও হবে এ দিনে। সর্বপ্রথম বৃষ্টি ও আল্লাহর রহমত দুনিয়াতে বর্ষিত হয় এ আশুরার দিনেই।”
কালের প্রবাহে সৃষ্টিজগতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে দিবসটিকে আমরা শুধুমাত্র কিছু আনুষ্ঠানিকতার মাঝে স্বীমাবদ্ধ রেখেছিলাম, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান বিশ্ববাসীকে প্রমাণ করে দিলেন, সেই দিবসটি ছিল রাব্বুল আলামিনের আরশে সমাসীন হওয়ার দিবস- মহররমের দশ তারিখ । আশুরার এ দিনটির মহিমা অসীম। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেন, “পবিত্র আশুরা মহান রাব্বুল আলামিনের অভিষেকের দিন হওয়ার কারণেই এ দিবসের বুজুর্গি, সম্মান ও মাহাত্ম্যকে বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন, কোনো রাজ্যের রাজার অভিষেকের দিনটি সেই দেশের রাজা ও প্রজাদের কাছে বিশেষ স্মরণীয় ও সম্মানিত দিন। সেই দিনটি প্রজাদের জন্য চাওয়া ও পাওয়ার দিন। এজন্য মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর অভিষেকের দিনকে স্মরণীয় রাখার জন্য সৃষ্টিজগতে অসংখ্য ঘটনার অবতারণা করেন।”
পৃথিবীর ইতিহাসে আশুরার দিনে অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হয়। দয়াময় আল্লাহ্ এ দিবসে যেমন হযরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করেন, তেমনি তাঁকে বেহেশতে প্রবেশও করান, অতঃপর এ দিবসেই তাঁকে দুনিয়াতে প্রেরণ করেন। আশুরার পবিত্র দিনেই হযরত আদম (আ.)-এর অপরাধ ক্ষমা করা হয়। এ দিনেই হযরত নূহ (আ.)-এর নৌকা চল্লিশ দিন পর মহাপ্লাবন শেষে জুদি পাহাড়ের পাদদেশে এসে থেমেছিল। পবিত্র আশুরার দিনেই হযরত ইব্রাহিম (আ.) যেমন ভূমিষ্ঠ হন, তেমনি এ দিবসেই তিনি নমরুদের অগ্নিকুণ্ড থেকে মুক্তি পান। আশুরার এ দিবসেই হযরত আইয়ুব (আ.) রোগমুক্ত হন। হযরত ইদ্রিস (আ.)-কে এ দিবসেই জান্নাতে উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ দিবসেই হযরত দাউদ (আ.) আল্লাহর কাছ থেকে ক্ষমা লাভ করেন এবং হযরত সোলায়মান (আ.) হারানো রাজত্ব পুনরুদ্ধারে সক্ষম হন। এ দিবসেই হযরত ইউনুস (আ.) চল্লিশ দিন মাছের পেটে অবস্থান করার পর মুক্তি লাভ করেন। আশুরার এ দিবসেই হযরত ইয়াকুব (আ.) তাঁর হারানো পুত্র হযরত ইউসুফ (আ.)-কে চল্লিশ বছর পর ফিরে পান। তখন হযরত ইউসুফ (আ.) ছিলেন মিশরের বাদশাহ। এ পবিত্র দিবসেই ফেরাউনের মুমিনা স্ত্রী বিবি আছিয়া (আ.) শিশু মুসা (আ.)-কে গ্রহণ করেন; আবার এ দিবসেই হযরত মুসা (আ.) স্বীয় অনুসারীদের নিয়ে নিল নদ অতিক্রম করেন। পক্ষান্তরে ফেরাউন সদলবলে সেখানে ডুবে মারা যায়। হযরত ঈসা (আ.)-এর জন্ম হয়েছিল আশুরার দিনে এবং আল্লাহ্ পাক আসমানে তুলে নিয়েছিলেন এ দিনেই। ইসলামের লালনভূমি হিসেবে মদীনার মাটি যেদিন দয়াল রাসুল (সা.)-এর পবিত্র পদস্পর্শ পেয়ে ধন্য হলো- সেদিন ছিল আশুরার দিন।
আশুরার দিনটি বিশ্ব মুসলিমের কাছে যে কারণে সবচেয়ে স্মরণীয় ও হৃদয়বিদারক তা হলো, ৬১ হিজরির এ দিনেই হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র, শেরে খোদা হযরত আলী (কা.) ও খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা (রা.)-এর হৃদয়ের ধন, মোহাম্মদী ইসলামের অকুতোভয় বীর সেনানী ইমাম হোসাইন (রা.) মাত্র ৭২ জন সহযোগী নিয়ে দুরাচার এজিদের ২২ হাজার সৈন্যের এক বিশাল বাহিনীর বিরুদ্ধে শাহাদত বরণের মাধ্যমে সত্য ও ন্যায়ের এক মহান আদর্শ স্থাপন করে গেছেন। পৃথিবীর ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা নির্মম ঘটনার সাক্ষী আশুরা।
আশুরার দিনে আল্লাহ্ তায়ালা সৃষ্টিকর্তা ও প্রভু হিসেবে সমগ্র সৃষ্টির মাঝে নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন। এ দিনের সম্মানের খাতিরে অসংখ্য নবি, রাসুল ও মহামানবের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়েছে। তাই এ দিনটি অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ। এ দিনটি যেমন দয়াময় আল্লাহর অভিষেকের দিন, তেমনি এ দিবসেই ২ হাজার শান্তির দূত নবি ও রাসুলের শুভ জন্মদিন। আশুরার দিবসটি আল্লাহর অভিষেকের দিন হওয়ায় সকল নবি-রাসুল এ দিনে রোজা রাখতেন।
তাফসীরে দুররে মানসুর-এর ৩০নং খণ্ডের ৪৯৯ পৃষ্ঠায় হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “আশুরার দিনটি এমন একটি দিন যে, সমস্ত নবি-রাসুল এ দিনে রোজা রাখতেন। সুতরাং তোমরাও এ দিনে রোজা রাখো।” তাফসীরে দুররে মানসুর-এর ৩০নং খণ্ডের ৫০০ পৃষ্ঠায় হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ (রা.), হযরত আবু সাইদ আল খুদরী (রা.) ও হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) কর্তৃক বর্ণনা করা হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি আশুরার দিন নিজ পরিবারের জন্য পর্যাপ্ত ভালো খাবারের ব্যবস্থা করবে, আল্লাহ্ তায়ালা তার জন্য সারা বৎসর পর্যাপ্ত রিজিকের ব্যবস্থা করবেন।”
আশুরা দয়াময় আল্লাহর অভিষেকের দিন, এ বিষয়টি বর্তমান সমাজের মানুষ জানত না। সূফী সম্রাট তাই আশুরার গুরুত্ব ও তাৎপর্য জগদ্বাসীর নিকট তুলে ধরেন। তিনি শিক্ষা দেন-
আশুরার দিবসে আল্লাহ্ বসেন আরশে,
আশুরার উসিলায় পাপী-তাপী মুক্তি পায়।
তাই এ দিনটি আমাদের সঠিকভাবে পালন করতে হবে। আশুরার অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে অশেষ ফায়েজ বরকত ও অফুরন্ত রহমত লাভ করা সম্ভব। আশুরার অনুষ্ঠান মহান রাব্বুল আলামিনের নিজের অনুষ্ঠান। আল্লাহর সৈনিকেরা এ দিনটি পালন করে থাকেন। আল্লাহর সাথে যাঁর যোগাযোগ রয়েছে, তিনিই কেবল পারেন সৃষ্টির নিগুঢ় রহস্য বর্ণনা করতে। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) ধর্মের অসংখ্য সংস্কার করেছেন, যা দেশ ও দেশের বাইরে প্রশংসিত হয়েছে। অনেক সংস্কার রাষ্ট্রীয়ভাবে গৃহীত হয়েছে। পবিত্র আশুরার দিবসটি আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে গিয়েছিল, তিনি পুনরায় এ দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় আমাদের সমাজে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ বিশ্বময় প্রচারের লক্ষ্যে তিনি ১৯৮৫ সালে দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন, সেদিনটিও ছিল আশুরার দিন।
জগৎশ্রেষ্ঠ এ মহামানব ২০২০ সালের ২৮শে ডিসেম্বের, সোমবার ওফাত লাভ করেন। সঠিকভাবে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার জন্য ২৭শে ডিসেম্বর রবিবার উপস্থিত ৪ পুত্র, ২ কন্যা, তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্রবধু ও খাদেমদের সম্মুখে কতিপয় নির্দেশনামূলক অছিয়ত প্রদান করেন। তিনি অছিয়তে স্পষ্ট ঘোষণা দেন, “আমি মেজো হুজুরকে মোহাম্মদী ইসলাম পরিচালনার নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। আর তোমরা ৩ ভাই ও ২ বোন তাঁকে সহযোগিতা করবে।” সূফী সম্রাটের গুণে গুণান্বিত, মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব, পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী ইমাম ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর মহান মোর্শেদের শিক্ষা, আদর্শ ও দর্শন বিশ্বময় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।
[লেখক: পিএইচ.ডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]