পরম সত্যের সন্ধানে
এম সাইদুর রহমান রংপুরী
বিশ্বের অধিক সংখ্যক মানুষ ধর্মের নামে দিকবিদিক ঘুরে বেড়াচ্ছে। ধর্মের সুবাস তারা পাচ্ছে না। কারণ ধর্মের মালিককে তালাশ না করে, ধর্ম করে শান্তি লাভ করা যায় না। ধর্মের পথ সত্যের পথ, আলোর পথ, সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করার পথ। কিতাবে বর্ণিত হয়েছে- “আল ঈমানু নূরুন ওয়াল কুফরু জুলমাত।” অর্থাৎ- ইমান হলো আলো এবং কুফর অন্ধকার। অতএব হৃদয়ের ঘরে আলো জ্বালিয়ে পরম সত্য ও মহান সত্তাকে তালাশ করার নামই ধর্ম। সুতরাং নিজ হৃদয়ে আলো না জ্বালিয়ে ধর্মের ঢাক ঢোল পিটালে কিংবা ধর্মের বেশভুষা পরে ঘুরে বেড়ালে আলো জ্বলবে না। যেখানে ধর্মের আলো থাকে না, সেখানে ধর্মের নামে সৃষ্টি হয় নৈরাজ্য, হিংসা, হানাহানি, দাঙ্গা-হাঙ্গামা। ফলে ধার্মিক না হয়ে দলমত প্রতিষ্ঠা করাই হয়ে উঠে তাদের মূল বৈশিষ্ট্য। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন- “আর যখন তাদের বলা হয় দুনিয়ায় তোমরা ফ্যাসাদ সৃষ্টি করো না, তখন তারা বলে, আমরা তো কেবল শান্তি স্থাপনকারী। সাবধান! তারাই ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, কিন্তু তারা তা বুঝতে পারে না।” (সূরা বাকারা ২: আয়াত ১১-১২) মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে অন্যত্র বলেন- “নিঃসন্দেহে ইসলামই হলো আল্লাহর কাছে একমাত্র ধর্ম। যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তাদের কাছে প্রকৃত জ্ঞান আসার পর শুধু পরস্পর বিদ্বেষবশত তারা মতবিরোধে লিপ্ত হয়েছিল।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ১৯)
এ কারণে ইসলাম একটি সর্বজনীন ধর্ম। এটিকে মানুষের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান (Complete Code of Life) বলা হয়। ইসলামের আদর্শ এবং মুসলমানদের উত্তম চরিত্র দেখে পূর্ব যুগের বিধর্মীরাও এর সুশীতল ছায়া তলে আশ্রয় নিয়ে ধন্য হয়েছে। কিন্তু কালক্রমে মুসলমানগণ ইসলামের সেই আদর্শ ও ঐতিহ্য হারিয়ে আজ মণিহারা ফণীর (মাথার মণি হারানোর ফলে অস্থিরচিত্ত সাপের) ন্যায় নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। (শান্তি কোন পথে? পৃষ্ঠা ১৩) বর্তমানে মানুষ ভোগবিলাসের জন্য পাগল হয়ে গেছে। আল্লাহ দেওয়া অফুরন্ত নাজ-নিয়ামত পেয়েও তাঁর শুকরিয়া আদায় করে না। মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে তালাশ করে না। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন- “হে রাসুল (সা.)! আপনি বলুন- নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ- জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্ই জন্য।” (সূরা আল আন‘আম ৬: আয়াত ১৬২) মুসলমানদের এমন অবস্থায় বুঝা যায় এদের ইবাদত বন্দেগির উদ্দেশ্য আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-কে পাওয়া না কেবল বেহেস্ত পাওয়াই মূল লক্ষ্য।
পৃথিবীতে মুসলমানগণ আল্লাহ্কে পাওয়ার বদলে বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে ধর্মের নামে অধর্ম করছে। এরা সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে পরিচালিত হতে পারছে না। অথচ মহাগ্রন্থ আল কুরআনে এ বিষয়ে বহু দিক নির্দেশনা রয়েছে। পবিত্র কুরআনের শুরুতে সূরা আল ফাতিহায় বলা হয়েছে- “আমাদের সরল-সোজা পথ দেখাও। সে লোকদের পথ যাদের তুমি অনুগ্রহ করেছ। তাদের পথ নয় যাদের উপর তোমার গজব পড়েছে এবং তাদের পথও নয় যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে।” মূলত এপথই হচ্ছে নবি-রাসুল ও আউলিয়ায়ে কেরামের পথ।
পরম করুণাময় আল্লাহ্, যিনি আমাদের সবচেয়ে নিকট আপনজন। তার পবিত্র বাণী থেকে উচ্চারিত হয়েছে, “ওয়া ফী আনফুসিকুম, আফালা তুবসিরূন।” অর্থাৎ- আমি (আল্লাহ্) তোমাদের ক্বালবের (সপ্তম স্তর) নাফসির মোকামে বিরাজ করি, তোমরা কি দেখো না? (সূরা আয যারিয়াত ৫১: আয়াত ২১)
মানব মুক্তির পথ সম্পর্কে বিশ্বজাহানের মহান স্রষ্টা মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু আমরা নিজেদের অজ্ঞতা ও গোঁড়ামির কারণে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ পাচ্ছি না। এজন্য যুগে যুগে মহান আল্লাহ্ নবুয়তের যুগে নবি-রাসুল ও বেলায়েতের যুগে আউলিয়ায়ে কেরামকে পাঠান। তাঁদের সহবতে গিয়ে সাধনার মাধ্যমে নিজ হৃদয়কে আলোকিত করে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে পরিচালিত হওয়া যায়।
প্রকৃতপক্ষে পরম সত্যের পথ তথা সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ হচ্ছে আল্লাহকে পাওয়ার পথ। এই পথে সাধনা করলে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের প্রদর্শিত পথ হচ্ছে সিরাতুল মুস্তাকিমের পথ। বর্তমানে তাঁর উত্তরসূরি মোহাম্মদী ইসলামের নের্তৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর এই সিরাতুল মুস্তাকিমের পথে মানুষকে পরিচালিত করার জন্য নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যাতে মানুষ মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে লাভ করতে পারে।
[লেখক: ইসলামি গবেষক]