পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি
মুহাম্মদ জহিরুল আলম
মহান রাব্বুল আলামিন এ বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের স্রষ্টা ও প্রতিপালক। সবই তাঁর ইচ্ছার অধীন। তিনি মহা পরাক্রমশালী, যাঁর ডান হাতের মুঠোয় সাত আসমান, আর বাম হাতের মুঠোয় সাত জমিন। জগত সৃষ্টির পূর্বে নুরময়সত্তা আল্লাহ্ স্বরূপে বিদ্যমান ছিলেন, জগত সৃষ্টির মধ্য দিয়ে নিজে প্রকাশিত হলেন। তাই হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন, “আমি ছিলাম গুপ্ত ধনাগার; নিজেকে প্রকাশ করতে ভালোবাসলাম তাই সৃষ্টিজগত সৃজন করলাম।” (সিররুল আসরার, পৃষ্ঠা ১০)। সকল সৃষ্টির জীবনীশক্তি আল্লাহর ঐ নুরময় সত্তা। আল্লাহর নুরময় সত্তা থেকে ‘নুরে মোহাম্মদী’ সৃষ্টি। আর ‘নুরে মোহাম্মদী’ থেকে সমগ্র সৃষ্টিজগৎ সৃজন করা হয়েছে।
মহান আল্লাহর নুরময় সত্তা সর্বকালে মহামানবগণের হৃদয়ে অবস্থান করে সমকালীন যুগের মানুষকে ঐ নুর বা আলোর চরিত্রে চরিত্রবান করে যাচ্ছে। অর্থাৎ আল্লাহর নুরের সত্তা থেকে সৃষ্ট ‘নুরে মোহাম্মদী’-কে ধারণ করেই সর্বকালে সর্বযুগে নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণ হেদায়েতের মহান দায়িত্ব পালন করেন। “মূলত ঐ প্রজ্বলিত প্রদীপ যখন যে মহামানব অর্থাৎ নবি-রাসুল এবং অলী-আল্লাহ্ হৃদয়ে ধারণ করেছেন, তখন ঐ মহামানবের সান্নিধ্যে গিয়ে তাঁর প্রজ্বলিত প্রদীপের আলো দ্বারা নিজের হৃদয়কে আলোকিত করে মুমিন হতে হয়। সর্ব যুগে মু’মিন হওয়ার এটাই খোদায়ি বিধান। এ পদ্ধতি অনুসরণ করেই সাহাবায়ে কেরাম মু’মিন হয়েছেন। তারা হযরত রাসুল (সা.)-এর সহবত লাভ করে তাঁর ক্বালবের প্রজ্বলিত প্রদীপ হতে নিজেদের হৃদয়ে আলো জ্বালাতে সক্ষম হয়েছিলেন।” (তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী- ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ৯৯)। পবিত্র কুরআনে দয়াময় আল্লাহ্ বলেন, “আমি তোমাদের নাফসির মোকামে (ক্বালবের সপ্তম স্তর) অবস্থান করি, তবুও কী তোমরা দেখ না?” (সূরা আয্ যারিয়াত ৫১ : আয়াত ২১) আল্লাহর রাসুল (সা.) ফরমান, “মুমিন ব্যক্তির হৃদয় আল্লাহর আরশ।” অর্থাৎ নুরময় সত্তা আল্লাহ্ মু’মিন ব্যাক্তির হৃদয়কে আরশ বানিয়ে তিনি নিজে তথায় অবস্থান করেন। দয়াময় আল্লাহ্ এ আরশের প্রতিপালক। জগৎশ্রেষ্ঠ সুফিগণ বলেন- “আরশ বলতে আল্লাহর প্রেরিত মহামানব তথা নবি, রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণের ক্বালব বা হৃদয়কে বুঝায়।” এ কারণেই হযরত ইউসুফ (আ.)-কে তাঁর পিতা হযরত ইয়াকুব (আ.), মা ও এগারো ভাই সিজদা করেছিলেন। (সূরা ইউসুফ ১২ : আয়াত ১০০) হযরত ইয়াকুব (আ.) নবুয়তের আলো দ্বারা দেখেছিলেন, “মহান আল্লাহ্ হযরত ইউসুফ (আ.)-এর হৃদয়কে আরশ বানিয়ে তিনি নিজে তথায় অবস্থান করেছেন।” অর্থৎ হযরত ইউসুফ (আ.)-এর ক্বালবে আল্লাহ্কেই দেখেছেন, তিনিই ছিলেন মোর্শেদ।
নবুয়তের যুগে নবি-রাসুলগণ মানবজাতির জন্য মোর্শেদরূপে প্রেরিত হয়েছেন। নবুয়ত পরবর্তী যুগে তাহলে কি হবে? বিশিষ্ট ইসলামি গবেষক ও লেখক ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) বলেন- “হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর জগতে আর কোনো নবি-রাসুল আসবেন না। এরপরে শুরু হয়েছে বেলায়েত বা বন্ধুত্বের যুগ। নবুয়তের ধারা শেষ হওয়ার পর থেকে অলী-আল্লাহ্গণ মানুষের জন্য মোর্শেদ বা পথ প্রদর্শকরূপে সৃষ্টির প্রতি রহমত বিতরণ করে থাকেন। মূলত তাঁরা নবিগণের অনুরূপ দায়িত্বই পালন করে থাকেন।” (মোর্শেদের দরবারে মুরীদের করনীয়, পৃষ্ঠা-১৩৮) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- “নিশ্চয়ই মহাপরাক্রমশালী সম্ভ্রান্ত আল্লাহ্ তায়ালা প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এই উম্মতের জন্য এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন, যিনি ধর্মকে সংস্কার অর্থাৎ- সজীব ও সতেজ করে তোলেন। (আবু দাউদ শরীফ সূত্রে মেশকাত শরীফ; পৃষ্ঠা ৩৬)
বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর শিরোভাগে পৃথিবীর মানুষকে শান্তি, কল্যাণ ও মুক্তির পথ প্রদর্শন করে নুর বা আলোর চরিত্রে চরিত্রবান করে গড়ে তোলার জন্য নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহকরূপে, যুগের ইমামের সুমহান দায়িত্ব নিয়ে প্রেরিত হয়েছেন মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। জগতশ্রেষ্ঠ এ মহামানব ১৯৪৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলাধীন বাহাদুরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর ২৩তম অধ:স্তন মহামানব।
সূফী সম্রাট হুজুর ঙ্কেবলাজান ইসলাম ধর্মে প্রবিষ্ট কুসংস্কারগুলো দূর করে, হযরত রাসুল (সা.)-এর হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামকে জগতের বুকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করেন; দয়াল রাসুল (সা.) সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার অবসান ঘটিয়ে প্রকৃত সত্য তুলে ধরে মানুষকে ‘আশেকে রাসুল’ হওয়ার শিক্ষা দিচ্ছেন। তিনিই পৃথিবীর ইতিহাসে একমাত্র মহামানব যিনি দয়াময় আল্লহর প্রকৃত স্বরূপ জগতবাসীর নিকট তুলে ধরে প্রমাণ করেছেন; মহান আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁর নূরের রূপ রয়েছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান এ বিষয়ে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক ৮ খন্ড তাফসীর শরীফ রচনা করেছেন। মহান আল্লাহ্ মোর্শেদ তথা নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণকে বিশেষ লকব (পদবী) প্রদানের মাধ্যমে তাঁদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত করেন, তেমনি ঘটেছে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের জীবনে। তিনি ১৯৮৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর রহমতের সময় মহান আল্লাহ্র পক্ষ হতে জামানার মোজাদ্দেদ বা সংস্কারকের দায়িত্ব পান; ১৯৮৮ সালের ২৪ আগষ্ট যুগের ইমামের দায়িত্ব লাভ করেন; পরবর্তীতে বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.) তাঁকে ১৯৮৯ সালের ৫ এপ্রিল রহমতের সময় ‘মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী’ খেতাবে বিভূষিত করেন; ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর সমস্ত নবি-রাসুলের বেলায়েত ও তাঁদের ধর্ম পরিচালনার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর, শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি আল্লাহ্ চাঁদে প্রকাশ করেন। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ আজও এই মহামানবের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি পূর্ণিমার চাঁদে দেখতে পাচ্ছেন।
পূর্ণিমার চাঁদে একজন মহামানবের জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর ইতিহাসে দয়াময় আল্লাহ্ এমন ঘটনা আর ঘটাননি। কিন্তু এ ঘটনার মধ্য দিয়ে অল্লাহ্ তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করলেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন- “হে রাসুল (সা.)! আপনি মানব জাতিকে বলে দিন- সকল প্রশংসা আল্লাহ্র জন্য; যিনি অতি শীঘ্রই তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শন বা চেহারা মোবারক দেখাবেন। তখন তোমরা তাঁকে চিনতে পারবে।” (সূরা আন নামল ২৭ : আয়াত ৯৩)
পবিত্র কুরআনে আরো এরশাদ হচ্ছে- “হে রাসুল (সা.)! আপনি মানব জাতিকে বলে দিন- আল্লাহ্ শীঘ্রই তোমাদেরকে তাঁর চেহারা মোবারক আকাশে (চাঁদে) এবং তোমাদের (ক্বালবের সপ্তম স্তর) নাফসির মোকামে দেখাবেন। ফলে মানুষের কাছে প্রমাণিত হবে, তিনি যে আল্লাহ; নিশ্চয়ই এটি সত্য। আর সর্ব বিষয়ে সাক্ষী হিসেবে আপনার প্রতিপালকই যথেষ্ট।” (সূরা হা মীম সাজদাহ্ ৪১ : আয়াত ৫৩) এ আয়াতগুলোতে প্রমাণ হয়, পূর্ণিমার চাঁদে মানুষ দয়াময় আল্লাহর চেহারা মোবারক দেখতে পাবে। আয়াতগুলোর ব্যাখ্যায় কয়েকটি হাদিস উপস্থাপন করা হলো-
তাফসীরে তাবারী’র ২০নং খন্ডের ২৬ পৃষ্ঠায় হযরত মুজাহিদ (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন- “আল্লাহর বাণী- ‘অতি শীঘ্রই আল্লাহ্ তোমাদেরকে তাঁর নিদর্শন বা চেহারা মোবারক দেখাবেন, তখন তোমরা তাঁকে চিনতে পারবে।’ বর্ণনাকারী বলেন, উক্ত নিদর্শন অর্থাৎ চেহারা মোবারক দেখাবেন তোমাদের (ক্বালবের সপ্তম স্তর) নাফসির মোকামে এবং আকাশে (পূর্ণিমার চাঁদে)।”
তাফসীরে তাবারী’র ২৫নং খন্ডের ৫ম পৃষ্ঠায় হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যায়েদ (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন- আল্লাহর বাণী ‘অতি শীঘ্রই আমি তাদেরকে দেখাবো আমার চেহারা মোবারক আকাশে (চাঁদে) এবং তাদের (ক্বালবের সপ্তম স্তর) নাফসির মোকামে।’
বোখারী শরীফের ১ম খন্ডের ৮১ পৃষ্ঠায় হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন- “আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। হঠাৎ তিনি পূর্ণিমার চাঁদের দিকে তাকালেন। অতঃপর বললেন, জেনে রাখ! তোমরা নিশ্চিতভাবে অতিশীঘ্র তোমাদের প্রতিপালককে (আল্লাহর চেহারা মোবারক) দেখতে পাবে, যেমনিভাবে এ চাঁদটিকে দেখতে পাচ্ছ।”
বোখারী শরীফের ২য় খন্ডের ১১০৫ পৃষ্ঠায় হযরত জারীর ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন- “একদা আমরা আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর নিকট বসে ছিলাম। তখন তিনি পূর্ণিমার রাতে চাঁদের দিকে দৃষ্টি দিয়ে এরশাদ করেন- নিশ্চয়ই তোমরা আতি শীঘ্র স্বচক্ষে তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্কে (আল্লাহর চেহারা মোবারক) দেখতে পাবে, যেমনিভাবে এই চাঁদটিকে দেখছো। তখন মহিমান্বিত আল্লাহ্কে দেখতে তোমাদের কোনো অসুবিধা হবে না।”
হাদিসের কিতাব মুসনাদে আহমদ-এর ১ম খন্ডের ৪৪৪ পৃষ্ঠায় বর্ণনা করা হয়েছে। আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য হযরত আলী (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “ইমাম মাহ্দী (আ.) আমার আহলে বাইত হতে আগমন করবেন। আল্লাহ্ তায়ালা এক রাতেই (পূর্ণিমার চাঁদের ভিতর) তাঁর সত্যতা প্রমাণ করে দিবেন।”
পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদিসের ব্যাখ্যায় স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, আল্লাহর নুরময় চেহারা মোবারক আকাশের পূর্ণিমার চাঁদে জগতবাসী প্রত্যক্ষ করবে এবং এটাই সত্য। এখানে যে বিষয়টি তাৎপর্যপূর্ণ তা হলো ঘটনাটির মাধ্যম ‘পূর্ণিমার চাঁদ’ এবং জগতবাসী ‘চিনতে পারবে’-মানে চন্দ্রপৃষ্ঠে দৃশ্যমান মহামানবের প্রতিরূপ জগতেই বিদ্যমান থাকবে, যাঁকে দেখে মানুষ চিনতে পারবে। বিষয়টি অত্যন্ত তাৎপর্যময়। আজ হতে ১৪০০ বছর পূর্বে মহান আল্লাহ্ দয়াল রাসুল (সা.)-কে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন, মহান আল্লাহ্ এ দুনিয়াতে তাঁর দিদার দান করবেন। আর এ দিদার তিনি দয়া করে দু’টি স্থানে দান করবেন-(ক্বালবের সপ্তম স্তর) নাফসির মোকামে এবং আকাশে (পূর্ণিমার চাঁদে)। এই ঘটনাটির ব্যাখ্যায় সুফি মতবাদে বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, মহান আল্লাহর আরশ ধারণকারী মহামানবগণের রূহ যখন যে বাহন বা নফসের ভিতর অবস্থান করে, সে নফসের রূপেই রূহের প্রকাশ পায়। নবি, রাসুল, যুগের ইমাম ও অলী-আল্লাহ্গণ আল্লাহর নুরময় সত্তা আপন হৃদয়ে ধারণ করেন। তাই তাঁদের মাধ্যমেই আল্লাহ্ প্রকাশিত হন। এ কারণেই সকল ফেরেশতা হযরত আদম (আ.)-কে সিজদা করেছিলেন। সে মুহূর্তে হযরত আদম (আ.)-কে যে অস্বীকার করল, মূলত সে তাঁর প্রভুকেই অস্বীকার করল।
২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার চাঁদে মহান আল্লাহ্ নিজেকে প্রকাশ করেন। তখন হতেই প্রতি পূর্ণিমার রাত্রিতে চাঁদে একজন মহামানবের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক দেখা যাচ্ছে। সমগ্র বিশ্বের অগণিত মানুষ পূর্ণিমার চাঁদে যে মহামানবের চেহারা মোবারক দেখছেন তিনি যুগের ইমাম, নুরে মোহাম্মদীর ধারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানাকরী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান-এর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি। যুগে যুগে আল্লাহ্ প্রেরিত মহামানবগণ তাঁদের হৃদয়ে সীরাজুম মুনীরের নুর ধারণ করেন; তাঁরা মানুষ হিসেবে আমাদের মাঝে অবস্থান করলেও দয়াময় আল্লাহ্ তাঁদের সাথে মিশে একাকার হয়ে থাকেন। তাঁদের হৃদয় মহান আল্লাহর আরশ। দয়াময় আল্লাহ্ যখন যে মহামানবের হৃদয়ে অবস্থান করেন, তখন তাঁর রূপেই নিজেকে প্রকাশ করে থাকেন। পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট-এর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখিয়ে মহান আল্লাহ্ প্রমাণ করে দিলেন, যদি আমাকে পেতে চাও তবে এই চেহারার অধিকারী মহামানবের কাছে যাও। তাঁর মাঝেই আমি বিরাজমান। বিশ্ববাসীর জন্য এক অনন্য নেয়ামত।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের কর্মময় গৌরবোজ্জ্বল জীবন বিশ্লেষণ করলে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই স্বীকার করেন, তিনিই যুগশ্রেষ্ঠ মহামানব। যুগ যুগ ধরে আমরা সবাই বিশ্বাস করেছিলাম আমাদের স্রষ্টা অস্তিত্বহীন নিরাকার, সূফী সম্রাট একক ব্যাক্তি হয়ে সমস্ত পৃথিবীর মানুষের এ বিশ্বাসের বিপরীতে অবস্থান করে প্রমাণ করেছেন আমাদের মহান আল্লাহ্ অস্তিত্বহীন নিরাকার নন, তাঁর অপরূপ সুন্দর নুরের আকার রয়েছে। যাঁকে সৃষ্টি না করলে দয়াময় আল্লাহ্ দুনিয়া ও আখেরাত কিছুই সৃষ্টি করতেন না, যিনি সমস্ত বিশ্বের জন্য রহমত, সে দয়াল রাসুল (সা.) সম্পর্কে প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণার অবসান করে সত্য প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তিনি কারবালা প্রান্তরে হারিয়ে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামকে জগতের বুকে পুনরায় উপস্থাপন করেছেন। পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি তারই পুরস্কার। মুক্তিকামী মানুষেরা পূর্ণিমার চাঁদে আল্লাহর দিদার পেয়ে তাঁর প্রেমাকর্ষণে ব্যাকুল হয়ে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুরের নিকট ছুটে এসে আপন মোর্শেদকে সংবর্ধনা দেন। বহির্বিশ্বের ৫০টি দেশসহ বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার আশেকে রাসুলেরা স্বতস্ফূর্তভাবে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। আজও প্রতি পূর্ণিমায় বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখা যায়। তিনিই মোহাম্মদী ইসলামের মহান মোর্শেদ এবং কেয়ামত পর্যন্ত তিনিই মোর্শেদ থাকবেন।
বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবির প্রকাশ জগতবাসীর জন্য মুক্তির বার্তা নিয়ে এসেছে। আমাদের এ পৃথিবী আজ ব্যাধিগ্রস্ত। মহান প্রভু অত্যন্ত স্পষ্টভাবে মানবজাতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন, সৃষ্টি তার স্রষ্টাকে ভুলে গিয়ে কেবল নিজেকে নিয়ে ব্যাস্ত থাকলে তার পরিণাম কি হতে পারে। সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, “মহান আল্লাহ্ আমাদেরকে ধ্বংস করার জন্য প্রেম-ভালোবাসা দিয়ে সৃষ্টি করেননি। আমরা কৃতকর্মের জন্যই ধ্বংসের মুখে পতিত হচ্ছি।” সমস্ত পৃথিবীর জন্য চাঁদ একটিই। পূর্ণিমার চাঁদের স্নিগ্ধ আলোর ঝর্ণাধারা সমস্ত পৃথিবীকেই প্লাবিত করে। দয়াময় আল্লাহ্ যেমন মহাজ্ঞানী, নিজের পরিচয় প্রকাশের জন্য ঠিক তেমনি মনোহর মাধ্যম বেছে নিয়েছেন। তবুও আমরা যদি তাঁর দিদারকে অস্বীকার করি তাহলে বুঝতে হবে, যারা দুনিয়াতে আল্লাহর দিদার লাভের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করে না, তারা সৎপথ প্রাপ্ত নয়, তারা পার্থিব ভোগ বিলাসেই পরিতৃপ্ত ও সন্তুষ্ট। কিন্তু প্রকৃতি এ সন্তুষ্টি দীর্ঘকাল মেনে নেয় না। তাই যুগে যুগে ধরণীর বুকে নেমে এসেছে দুর্যোগ-মহামারি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ ঘোষণা করেন, “হে রাসুল (সা.)! যারা দুনিয়াতে আল্লাহর দিদারকে মিথ্যা বলে অস্বীকার করেছে, তারাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর তারা সৎপথ প্রাপ্ত ছিল না।” (সূরা ইউনুস ১০ : আয়াত ৪৫) মুক্তি পেতে হলে, মানবজাতির মুক্তির জন্য দয়াময় আল্লাহ্ যে মহামানব প্রেরণ করেন তাঁর শিক্ষা ও আদর্শ গ্রহণ করতেই হবে। যুগে যুগে এটিই ছিল বিধান, আজও এর ব্যাতিক্রম নয়। দয়াময় আল্লাহ্, পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাটের জ্যোতির্ময় চেহারা মোবারক দেখিয়ে, ধর্মকে দয়া করে আরো সহজ করে দিলেন। যাতে মুমিন নর-নারীগণ নয়নভরে তা প্রত্যক্ষ করে আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় লাভ করতে পারেন।
[লেখক: প্রাবন্ধিক ও পিএইচ.ডি গবেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়]