পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাটের নুরানি প্রতিচ্ছবি
প্রফেসর ড. আবদুল মান্নান মিয়া
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এই বিশ্ব জাহান সৃষ্টি করে নদ-নদী, সাগর-মহাসাগর, পাহাড়-পর্বত ও গ্রহ-নক্ষত্ররাজি দ্বারা তা সুশোভিত করেছেন। আমাদের এই পৃথিবীকে বেষ্টন করে আছে সূর্য ও চন্দ্র। সূর্যের আলোতে পৃথিবীর সকল প্রাণী জীবন ধারণ করে এবং বেঁচে থাকে। পক্ষান্তরে চন্দ্রের কিরণ স্নিগ্ধমাখা হয়ে উঠে। আমরা প্রতিদিন সকালে যে সূর্যটি দেখতে পাই এবং রাতে মধুমাখা কিরণ নিয়ে যে চাঁদটি উদিত হয়, সেই সূর্য ও চন্দ্র আজকে নতুন উদিত হয়নি, এই সূর্যটিকে আমাদের মতো আমাদের পূর্বপুরুষগণও দেখেছেন। সূর্য একটি জ¦লন্ত অগ্নিপিণ্ড। কিন্তু চন্দ্র স্নিগ্ধ কিরণ দিয়ে মানব জাতিকে আলো বিতরণ করছে। ১৯৬৯ সালে মহাকাশে বিজ্ঞানিদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে তারা চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করতে সক্ষম হয়েছেন। আজ হতে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে আমাদের প্রিয় নবি হযরত মোহাম্মদ (সা.) কাফের সর্দার আবু জাহেলের দাবীর প্রেক্ষিতে, ডান হাতের শাহাদাৎ অঙ্গুলী মোবারক দিয়ে চাঁদকে ইশারা করা মাত্রই আকাশের চাঁদটি দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায়। কিছুক্ষণের জন্য সমগ্র দুনিয়া অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। এ দৃশ্য বিশ্বের বহু মানুষ প্রত্যক্ষ করেছে। বোখারী শরীফে হযরত ইবনে মাসউদ (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিস হতে রাসুল (সা.)-এর চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার ঘটনা বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে। হযরত রাসুল (সা.)-এর চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার ঘটনা বিশ্বে সত্যিই বিরল। আর কোনো নবির জামানায় এ ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়নি। তবে অল্পক্ষণেই চাঁদটি পূর্বের অবস্থায় ফিরে যায়। রাসুল (সা.)-এর চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করার ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছেন, চাঁদে অবতরণকারী প্রথম মানুষ, নভোচারী নীল আর্মষ্ট্রং। তিনি চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হওয়ার নিদর্শন দেখতে পেয়ে সেখান থেকে মাটি এনে পরীক্ষা করে প্রমাণ পেয়েছেন যে, চাঁদের মাঝে যে ফাটল, তা হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর যুগে প্রায় সাড়ে চৌদ্দশ বছর পূর্বে ঘটেছিল। তবে একথা সত্য যে, বিশ্ব জাহান সৃষ্টির পর থেকে ইতঃপূর্বে চাঁদে কোনো মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়নি। কিন্তু আল্লাহর অপার দয়ায় একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে অর্থাৎ-২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর বিশ্বের বুকে এমন এক অবিস্মরণীয় ঘটনা সংঘটিত হলো, যা দেখে সত্যিই বিশ্ববাসী আনন্দে আত্মহারা। কারণ চাঁদের মাঝে কোনো মানুষের চেহারা জগতের মানুষ কোনো কালেই দেখেনি। আর যে মহামানবের চেহারা মোবারক আল্লাহ্ চাঁদে দেখাচ্ছেন, তিনি হলেন আল্লাহর মহান বন্ধু, যুগের ইমাম, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। তিনি বর্তমান জামানার শ্রেষ্ঠ অলী এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর ২৩তম বংশধর ও উত্তরসূরি। মহান আল্লাহ্ তাঁকে চাঁদে ২০০৮ সাল থেকে অদ্যাবধি দেখিয়ে বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিলেন যে, মহান আল্লাহ্ ও আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে পেতে হলে সূফী সম্রাটের অনুসরণ করে আশেকে রাসুল হতে হবে। মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সূফী সম্রাটকে তাঁর একটি মহান কর্মের পুরস্কারস্বরূপ পূর্ণিমার চাঁদে তাঁর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি দেখাচ্ছেন। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানই একমাত্র মহামানব, যিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁর লিখিত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক তাফসীর গ্রন্থে পবিত্র কুরআন ও হাদিস দিয়ে মহান আল্লাহ্্র জাত-পাকের পরিচয় তুলে ধরেছেন। তিনি প্রমাণ করেছেন যে, মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁর আকার আছে, তাঁর চেহারা মোবারক রয়েছে, তাঁর হস্ত মোবারক, কদম মোবারক, জবান মোবারক ও শ্রবনেন্দ্রীয় রয়েছে। তবে মহান আল্লাহ্ মানুষের মতো রক্ত মাংসের দেহধারী নন, তিনি নুরের।
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এ বিশ্ব জাহান সৃষ্টি করে মানুষসহ সকল সৃষ্টিকে প্রতিপালন করছেন, অথচ মানুষ সেই মহান স্রষ্টাকে নিরাকার ভেবে তাঁকে অস্তিত্বহীন করে দিয়েছে। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান পবিত্র কুরআন ও হাদিস দিয়ে তাঁর তাফসীর শরীফে মহান আল্লাহর অস্তিত্ব ও আকার প্রমাণ করে মানুষের একটি চরম ভুল সংশোধন করে দিলেন। মহান আল্লাহ্ সূফী সম্রাটের এই কাজে খুশী হয়ে তাঁকে চাঁদে দেখিয়ে সম্মানিত করেছেন। এ সম্মান এমনই গৌরবময় যে, পৃথিবী ও মহাকাশের স্থানে অর্থাৎ চাঁদের মাঝে সূফী সম্রাটের চেহারা মোবারক দেখিয়ে আল্লাহ্ তায়ালা তাঁকে শ্রেষ্ঠ মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করলেন। আজ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ এ মহামানবকে দেখে ধন্য হচ্ছেন।
২০০৮ সালের ১০ অক্টোবরের ঘটনা। হঠাৎ করে দরবার শরীফে একটি রব উঠলো- সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী দয়াল বাবাজানকে পূর্ণিমার চাঁদে দেখা যায়। একথা শোনা মাত্রই মন দারূণভাবে উদগ্রীব হয়ে ওঠে। কখন এবং কিভাবে চাঁদের দিকে তাকালে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানকে দেখতে পাবো? সত্যিই অতি আগ্রহ নিয়ে চাঁদ দেখতে গেলাম। একি! এযে সত্যিই বাবাজানকে দেখা যাচ্ছে। মনে মনে ভাবলাম, আমি সত্যিই কি বাবাজানকে দেখছি? বিষয়টি আসলেই বিস্ময়কর। কেননা, চাঁদে কোনো মানুষের প্রতিচ্ছবি দেখার ঘটনা এটিই প্রথম। সুতরাং এমন একটি নতুন বিষয় নিয়ে কৌতুহল হওয়াটাই স্বাভাবিক। আশ্চর্যের বিষয় ছিল এই যে, মহান মুর্শেদ দয়াল বাবাজান রয়েছেন আরামবাগের ‘বাবে রহমত’ ভবনে অথচ একই সময়ে তাঁকে চাঁদে দেখা এটা কি সাধারণ কোনো বিষয় হতে পারে? আসলে মহাপরাক্রমশালী আল্লাহর পক্ষে তো কোনো কিছুই অসম্ভব নয়। যে মহান আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীম (আ.)-কে নমরূদের জ¦লন্ত অগ্নিকুণ্ড থেকে ৪০ দিন পরেও সম্পূর্ণ সুস্থ অবস্থায় রক্ষা করলেন। হযরত ইউনুস (আ.)-কে ৪০ দিন পরেও মাছের পেট থেকে অক্ষত অবস্থায় রক্ষা করেছিলেন। হযরত নূহ (আ.)-কে মহাপ্লাবনের মধ্যেও সাগর থেকে ৬ মাস ১০ দিন পরে নিরাপদে ফিরিয়ে আনলেন। তাছাড়া বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-কে শত্রুর সম্মুখ দিয়ে মদীনায় চলে যাওয়ার সুব্যবস্থা করে দেন এবং ‘সওর’ নামক গুহায় ক্ষুদ্র প্রাণী মাকড়শার জাল দিয়ে শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করেছিলেন, সেই মহাশক্তিধর আল্লাহ্ তায়ালাই তাঁর মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) দয়াল বাবাজানকে চাঁদে দেখিয়ে মহা সম্মানিত করেছেন।
পরের দিন ১১ অক্টোবরের ঘটনা। সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানকে চাঁদে দেখা যায়, একথা শুনে আমাদের দয়াল মা (রহ.) এবং বাবাজানের সাহেবজাদা-সাহেবজাদি ও আহালবর্গ রাতে বাবে রহমতের ৯ তলার ছাদে গমন করেন। তাঁরা দয়াল বাবাজানকে চাঁদে দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হন। বেশ কিছুক্ষণ পরে সম্মানিত মহিলাগণ বাসায় চলে গেলেন। তখনও দয়াল বাবাজান ৯ তলার ছাদে একটি কুরসি মোবারকে বসা আছেন। বাবাজানের সাহেবজাদা, আওলাদ-আহালবর্গের অনেকেই তাঁর সাথে ৯ তলায় উপস্থিত ছিলেন। খবর পেয়ে আমিও ৯ তলার ছাদে বাবাজানের কাছে চলে এলাম। সেখানে প্রফেসর ড. ফিরোজ আই ফারুকী সাহেবও উপস্থিত ছিলেন। এসময় আমি চাঁদের মাঝে দয়াল বাবাজানকে দেখার জন্য চাঁদের দিকে তাকালাম। তখন দয়াল বাবাজান চাঁদে কীভাবে দেখা যেতে পারে, সে সম্পর্কে আমাকে একটা ধারণা দিলেন। দয়াল বাবাজান আমাকে লক্ষ্য করে বললেন- মান্নান মিয়া! চাঁদে কিছু দেখেন? আমি বললাম জি বাবা, আপনাকে দেখা যায়। বাবাজান বললেন-মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর নূরের চেহারা মোবারক দেখাচ্ছেন। তবে মানুষতো আল্লাহ্কে দেখলেও চিনতে পারবে না, সে কারণে তিনি তাঁর কোনো বন্ধুর চেহারায় নিজেকে প্রকাশ করেছেন। আসলে আল্লাহ্তো নুরের, তাঁর চেহারা মোবারকও নুরের। আর নুরের চেহারায় কোনো দাঁড়ি গোঁফ থাকে না। তাই আল্লাহ্কে দাঁড়ি গোঁফ বিহীন সুন্দর আকৃতিতে দেখা যাচ্ছে। ভালো করে তাকান, দেখতে পাবেন। দয়াল বাবাজানের কথা শুনে আমি একাগ্রতার সাথে গভীর মনযোগ সহকারে চাঁদ দেখতে লাগলাম। আল্লাহর কী অপার মহিমা! বাবাজানের বর্ণনা অনুযায়ী চাঁদের মাঝে মহান আল্লাহর নুরানি প্রতিচ্ছবি দেখতে পেলাম। আর তা ছিল অবিকল সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানের চেহারার অনুরূপ। আমরাতো আল্লাহ্কে দেখিনি, তাঁকে চিনি না, তাই যাঁকে আমরা চিনি, মহান আল্লাহ্ নিজেই তাঁর সেই বন্ধুর চেহারায় নিজেকে প্রকাশ করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ এরশাদ করেন- ‘‘হে রাসুল (সা.)! আপনি মানবজাতিকে বলে দিন, আল্লাহ্ শীঘ্রই তোমাদেরকে তাঁর চেহারা মোবারক দেখাবেন আকাশে (চাঁদে) এবং তোমাদের (ক্বালবের সপ্তম স্তর) নাফসির মোকামে। ফলে মানুষের কাছে প্রমাণিত হবে, নিশ্চয়ই এটি সত্য যে, তিনিই আল্লাহ্। আর সর্ব বিষয়ের স্বাক্ষী হিসেবে আপনার প্রতিপালকই যথেষ্ট।” (সূরা হামীম আস সাজদাহ-৪১; আয়াত-৫৩)
হাদিস শরীফে আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত রাসুল (সা.) ফরমান-‘‘আমরা এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর নিকট বসা ছিলাম। তিনি চাঁদের দিকে তাকালেন আর রাতটি ছিল পূর্ণিমার রাত। অতঃপর তিনি এরশাদ করেন-অনতিবিলম্বে তোমরা দুনিয়াতে তোমাদের প্রতিপালককে দেখতে পাবে। যেমনিভাবে তোমরা এই চাঁদটিকে দেখছো। আর তাঁকে দেখতে তোমাদের অসুবিধা হবে না।’’ (বোখারী শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-৭১৯, হযরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত)
মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় আমরা যেহেতু আল্লাহর বন্ধু, যুগের শ্রেষ্ঠ অলী, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) দয়াল বাবাজানকে চিনি, ফলে চাঁদের মাঝে যে চেহারা মোবারকে মহান আল্লাহ্ নিজের নুরের প্রতিচ্ছবি দেখাচ্ছেন, আমরা তাঁকে চিনতে পেরেছি। তাই হাজার শোকরিয়া আদায় করছি এবং সেজদাবনত হচ্ছি সেই মহান আল্লাহর নুরের কদম মোবারকে। পরম দয়ালু আল্লাহর ইচ্ছায় প্রতি মাসে পূর্ণিমার চাঁদে পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ মানুষ আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনকে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানের চেহারায় দেখতে পাছেন। আজ আমাদের কাছে আল্লাহর পবিত্র বাণী মোবারক এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিস সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানকে কেন চাঁদে দেখাচ্ছেন, সেই সম্পর্কে উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন অলী-আল্লাহ্গণ আল্লাহর সাথে যোগাযোগ করে জানতে পেরেছেন যে, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী দয়াল বাবাজান ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাদগী’ নামক তাফসীর শরীফ প্রণয়ন করে এর ১ম খণ্ডে আল্লাহর বাণী পবিত্র কুরআন ও হযরত রাসুল (সা.)-এর হাদিস দ্বারা আল্লাহর আকার প্রমাণ করেছেন। তাছাড়া আল্লাহ্কে মানুষ নুরের সুরতে দেখতে পাবে, একথা তিনি উক্ত তাফসীরে লিখেছেন। সূফী সম্রাট প্রণীত ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ ১ম খণ্ডে ১৫শ ২৭ পৃষ্ঠা লিখে আল্লাহ্ যে আকার, তিনি তা প্রমাণ করেছেন। অপর দিকে আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলি নিয়ে আরো ৭ খণ্ড তাফসীর দয়াল বাবাজান প্রনয়ণ করেছেন। সূফী সম্রাট যখন আল্লাহর জাত-পাকের পরিচয় সুন্দর, সুষ্ঠু ও নিখুঁতভাবে প্রকাশ করলেন, দয়াল বাবাজানের এই কাজে মহান আল্লাহ্ অত্যন্ত খুশী হলেন। তিনি তাঁর অলীগণের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন যে, ‘‘আমি জগৎ সৃজন করে সকল সৃষ্টিকে প্রতিপালন করছি, অথচ মানুষ আমাকে নিরাকার বলে অস্তিত্বহীন বানিয়ে দিয়েছে। সুতরাং সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী আমার জাত-পাকের বর্ণনা দিয়ে আমার অস্তিত্ব তুলে ধরেছেন, আমাকে আকার প্রমাণ করেছেন, আমি তাঁকে চাঁদে দেখিয়ে পুরস্কৃত করেছি। তাই ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর থেকে প্রতি মাসে আমরা দয়াল বাবাজানকে পূর্ণিমার চাঁদে দেখে ‘আল্লাহর দেওয়া পুরস্কার: পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি’ নামক একটি বার্ষিক অনুষ্ঠান শাওয়াল মাসের পূর্ণিমার রাতে উদযাপন করে থাকি। আর প্রতি মাসে পূর্ণিমায় আমরা ২ রাকাত সালাতুশ শোকর আদায় করে থাকি।
আমাদের স্মরণ রাখা দরকার যে, মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন মানব জাতিকে সঠিক পথের সন্ধান দেওয়ার জন্য এ পৃথিবীতে ১ লক্ষ ২৪ হাজার নবি ও রাসুল প্রেরণ করেছেন। সকল নবি-রাসুলের পরে সর্বশেষে যিনি আবির্ভূত হলেন, তিনিই ছিলেন বিশ্বের সর্বকালের, সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মাহামানব। যিনি ইমামুল মুরসালিন অর্থাৎ সকল নবি-রাসুলের ইমাম বা নেতা হিসেবে জগতের বুকে সম্মানিত হলেন, তিনিই আমাদের প্রাণপ্রিয় রাসুল, আল্লাহ্ তায়ালার প্রিয় হাবিব, হযরত মোহাম্মদ (সা.)। মহান আল্লাহ্ তাঁকে জগতের বুকে রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে-‘‘হে রাসুল (সা.)! আমি আপনাকে জগদ্বাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি।’’ সেই রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর সম্মানের খাতিরেই মহান আল্লাহ মানুষ ও জিন জাতিসহ পৃথিবীতে ১৮ হাজার মাখলুকাত সৃষ্টি করেছেন। হযরত রাসুল (সা.)-কে আল্লাহ্ তায়ালা অলৌকিক মোজেযা দিয়ে জগতে প্রেরণ করেছেন। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ মোজেযা হলো- আকাশের চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করা, যা আর কোনো নবি-রাসুলের দ্বারা সংঘটিত হয়নি। আর এ ঘটনা হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। হযরত রাসুল (সা.)-এর আবির্ভাব যেহেতু আজ থেকে প্রায় দেড় হাজার বছর পূর্বে হয়েছিল, তখন যুগের মানুষ শিক্ষা-দীক্ষা এবং জ্ঞান-বিজ্ঞানে বর্তমান যুগের মতো উন্নত ছিল না। তা সত্ত্বেও হযরত রাসুল (সা.) মহান আল্লাহ্কে কীভাবে দেখেছেন, সাহাবাদের কাছে তার বর্ণনা দিয়েছেন। অর্থাৎ- তিনি আল্লাহর রূপের বর্ণনা এবং আল্লাহর আকার কেমন, তার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। হযরত রাসুল (সা.) জানতেন যে, মহান রাব্বুল আলামিন স্বরূপে চন্দ্রের মাঝে আত্মপ্রকাশ করবেন। তাই এ ব্যাপারে তিনি সুস্পষ্ট বর্ণনা দিয়েছেন। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ স্বয়ং ফরমান-‘‘হে রাসুল (সা.)! আপনি মানব জাতিকে বলে দিন, সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য; যিনি অতি শীঘ্রই তাঁর নিদর্শন বা চেহারা মোবারক দেখাবেন। তখন তোমরা তাঁকে চিনতে পারবে।’’ (সূরা নামল-২৭, আয়াত-৯৩)
আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র হাদিস হযরত জারির ইবনে আবদুল্লাহ্ (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে, তিনি বলেন,‘‘আমরা এক রাতে আল্লাহর রাসুল (সা.)-এর নিকট উপস্থিত ছিলাম। তিনি চাঁদের দিকে তাকিয়ে বললেন- অচিরেই তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্কে দেখতে পাবে, যেমনিভাবে তোমরা এই চাঁদটিকে দেখছ।’’ (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৮) হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন-‘‘হে আমার সাহাবিগণ! পূর্ণিমার রাতে তোমাদের চাঁদ দেখতে কি কোনো অসুবিধা হয়? সাহাবায়ে কেরাম বললেন- না, হে আল্লাহর রাসুল (সা.)! কোনো অসুবিধা হয় না। তখন আল্লাহর রাসুল ফরমান-অবশ্যই তোমরা এভাবেই তোমাদের প্রতিপালকের চেহারা মোবারক দেখতে পাবে।’’ (বোখারী শরীফ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা-১১০৬) হযরত রাসুল (সা.) আরো সুস্পষ্ট করে বলেন-‘‘তোমরা আল্লাহকে দেখতে পাবে এবং চিনতে পারবে।’’
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন যেমন পৃথিবীর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সবই জানেন, তদ্রƒপ তাঁর প্রিয় হাবিব হযরত রাসুল (সা.)ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সুস্পষ্ট বাণী প্রদান করেছেন, যাতে তাঁর উম্মতগণ সঠিক পথে পরিচালিত হতে পারে এবং আল্লাহর দর্শন লাভ করে পূর্ণ বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে।
নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণ আল্লাহ্কে নিরাকার নয়, আকারেই দেখেছেন। তবে আল্লাহর রক্ত মাংসের কোনো দেহ নেই, তিনি সম্পূর্ণ নুরের। মহান আল্লাহ্কে মানুষ যেন চিনতে পারে, সেজন্য তিনি বেলায়েতের যুগে তাঁর একজন শ্রেষ্ঠ বন্ধুর সুরতেই দেখা দিয়েছেন। বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ চাঁদে আল্লাহর চেহারা মোবারক তাঁর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের চেহারা মোবারকেই দেখতে পান। তাই বাংলাদেশের ৬৪ টি জেলার আশেকে রাসুলসহ বিশ্বের বহু দেশের আশেকে রাসুল প্রতিনিধিগণ সুদীর্ঘ ৫ মাস ব্যাপী বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফে এসে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানকে পুষ্পার্ঘ্যসহ সংবর্ধনা প্রদান করেন।
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানকে চাঁদে দেখিয়ে মহান আল্লাহ্ বিশ্ববাসীকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, হে দুনিয়ার মানুষ! তোমরা যদি আমাকে পেতে চাও, তাহলে এ যুগের শ্রেষ্ঠ অলী দেওয়ানবাগীর সান্নিধ্যে যাও। কেননা তিনিই হলেন বর্তমান যুগে আমার শ্রেষ্ঠ বন্ধু এবং আমার প্রিয় হাবিব হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরি। অলী-আল্লাহ্গণ আল্লাহর সাথে মিশে একাকার হয়ে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বিদ্যুতের আলো যে রং ও আকারের বাল্বের ভিতরে প্রবেশ করে, মানুষ বিদ্যুৎকে সে আকার ও রং বিশিষ্ট দেখতে পায়। অনুরূপভাবে মহান রাব্বুল আলামিনের নুরের রূপ কেমন, মানুষ তা জানে না। আর সে কারণেই আল্লাহ্ তায়ালা বেলায়েতের যুগে তাঁর শ্রেষ্ঠ বন্ধুর চেহারায় আত্মপ্রকাশ করেছেন। ফলে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ তাঁকে চিনতে পারছে। হাদিস শরীফে আছে, হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন- কুলুবুল মু’মিনিনা আরশুল্লাহ্ অর্থাৎ- মুুমিন বান্দার ক্বালব বা হৃদয়ই আল্লাহর আরশ। সুতরাং যে মু’মিন ব্যক্তি তথা অলী-আল্লাহর ক্বালব আল্লাহর আরশে পরিণত হয়েছে, আল্লাহ্ তাঁর ঐ অলী বা বন্ধুর রূপেই প্রকাশিত হন। আর সে কারণেই সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগীর চেহারায় পূর্ণিমার চাঁদে মহান আল্লাহর আত্মপ্রকাশ।
‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ এর ১ম খণ্ডে তিনি পবিত্র কুরআনের ৭২৩টি আয়াত এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর ২৮০৮টি হাদিস দিয়ে আল্লাহর জাত-পাকের পরিচয় তুলে ধরেছেন। ফলে আল্লাহ্ যে আকার তা জগদ্বাসীর কাছে প্রমাণিত হয়েছে। যার ফলে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সূফী সম্রাটকে পূর্ণিমার চাঁদে দেখিয়ে সম্মানিত করেছেন। চাঁদে কোনো মহামানবকে দেখা যাবে, এসম্পর্কে পবিত্র কুরআনের ২টি আয়াত এবং রাসুল (সা.)-এর ৩০টি হাদিস রয়েছে। ইতঃমধ্যেই সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান মহান আল্লাহ্ এবং হযরত রাসুল (সা.) প্রদত্ত অনেকগুলো মর্যাদা ও সম্মান লাভ করেছেন। তা হলো-
* ১৯৮৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের মোজাদ্দেদ বা সংস্কারক হিসেবে দায়িত্ব লাভ।
*১৯৮৮ সালের ২৪ আগষ্ট (আশুরার দিন) বিশ্বের হাদিগণের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব লাভ।
*১৯৮৯ সালের ৫ এপ্রিল হযরত রাসুল (সা.) কর্তৃক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী খেতাব লাভ।
*১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর হযরত ইব্রাহিম (আ.) কর্তৃক আম্বিয়ায়ে কেরামের বেলায়েত লাভ।
*২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর থেকে অদ্যাবধি বিশ্বের অগণিত মানুষ সূফী সম্রাটের চেহারা মোবারক পূর্ণিমার চাঁদে দেখতে পান।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর, শুক্রবার পূর্ণিমার রাতের আকাশে তাকিয়ে আশেকে রাসুল হুমায়ূন কবির সর্বপ্রথম পূর্ণিমার চাঁদে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের নুরানিময় চেহারা মোবারকের প্রতিকৃতি দেখতে পান, এরপর ১২ বছরের অধিক সময় অতিবাহিত হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ এই মহামানবকে চাঁদে দেখতে পাচ্ছেন। এক গবেষণায় দেখা গেছে, পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফে বহু দলিল রয়েছে যে, শেষ জামানায় মহান রাব্বুল আলামিন চন্দ্রপৃষ্ঠে আপন চেহারা মোবারক তাঁর মু’মিন বান্দাদের প্রদর্শন করাবেন, যেন তাঁদের ইমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধি পায়। সাম্প্রতিক কয়েকজন বিজ্ঞানীর গবেষণাপত্র ব্যাখ্যা করলে বুঝা যায়, কীভাবে চন্দ্রপৃষ্ঠে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা.আ.) হুজুর কেবলার চেহারা মোবারকের আলোকময় প্রতিকৃতি দৃশ্যমান হচ্ছে। এতে আরও জানা গেছে যে, চাঁদের বয়স সাড়ে ৪ লক্ষ বছর হলেও কেবল মাত্র কয়েক বছর যাবৎ এ পবিত্র আলোকিত চেহারা মোবারক দেখা যাচ্ছে?
সামগ্রিকভাবে দেখা যায় যে, উপগ্রহ চাঁদের সাথে পৃথিবীর সম্পর্ক অতি দৃঢ়, বিধায় এ গ্রহের বহুকিছুই চাঁদের সরাসরি প্রভাবে হয়ে থাকে। সাগরের জোয়ার-ভাটা থেকে শুরু করে পৃথিবীর প্রাণীকুল এমনকি মানুষের মনের আবেগ ও রিপু তাড়নার হ্রাস-বৃদ্ধিতে চাঁদের পূর্ণিমা ও অমাবশ্যা প্রভাব বিস্তার করে। সুপ্রাচীনকাল থেকে আধ্যাত্মিক জ্ঞানীরা চাঁদের অবস্থানের উপর ভিত্তি করে মানুষের জীবনযাত্রা ও চরিত্রের ভবিষ্যদ্বাণী করতেন। বর্তমানে চন্দ্রপৃষ্ঠে চেহারা মোবারক দেখা বিষয়টি শুধুু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেবলার ভক্তবৃন্দের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। এটি খালি চোখে ভালো করে লক্ষ্য করলে যেমন দেখা যায়, তেমনি আধুনিক টেলিস্কোপসহ বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে প্রমাণিত হওয়ায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বৈজ্ঞানিক মহলেও বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণভাবে আলোচিত হয়।
সূফী সম্রাটের সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান হলো-তিনি মহান স্রষ্টাকে নিরাকার থেকে আকার প্রমাণ করেছেন এবং মানুষ যে তাঁদের প্রভু মহান আল্লাহ্কে স্বপ্নে দেখতে পারে, তারও প্রমাণ তিনি মানব জাতিকে দিয়েছেন। ফলে মানুষ আজ স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছে যে, আল্লাহ্ নিরাকার নন, তিনি নুরের আকারে স্বমহিমায় বিরাজমান। আর মানুষ সাধনা করেলে তাঁর দর্শন লাভ করতে সক্ষম হয়। মহান আল্লাহর অস্তিত্ব প্রমাণ করার কারণে আল্লাহ্ তায়ালা সূফী সম্রাটকে চাঁদে দেখিয়ে সম্মানিত ও পুরস্কৃত করেছেন। আমরা আল্লাহর এই মহান বন্ধু, যুগের ইমাম সূফী সম্রাট দয়াল মোর্শেদ কেবলাজানের সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘয়ু কামনা করছি।
[লেখক : ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা।]