Cancel Preloader

বান্দার নামে নয়, আল্লাহর নামে কোরবানি – ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা

ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা

স্রষ্টার নৈকট্য লাভই সৃষ্টির লক্ষ্য। নিজেকে সম্পূর্ন রূপে প্রভুর নিকট আত্মসমর্পণ করে তাঁর দাসত্ব করাই মানুষের ইবাদত। এখন প্রশ্ন আসতে পারে মানুষ কীভাবে তার প্রভুর দাসত্ব করবে? মানুষের মাঝে নফ্স তথা জীবাত্মা এবং রূহ তথা পরমাত্মা বিদ্যমান। জীবাত্মা স্থূল উপাদান যথা-আগুন, পানি, বায়ু ও মাটির সমন্বয়ে সৃষ্ট একটি সূক্ষ শক্তি এবং পরমাত্মা মহান আল্লাহর তরফ থেকে মানুষের ভেতর ফুঁকে দেওয়া রূহ, যা নুরময় সত্তা আল্লাহরই নুর বিশেষ। মূলত দাসত্ব হলো জীবাত্মা কর্তৃক পরমাত্মার আনুগত্য স্বীকার করে নেওয়া। স্থূল উপাদান থেকে সৃষ্ট জীবাত্মায় ঐ উপাদানসমূহের বৈশিষ্ট্য তথা রিপুসমূহ বিদ্যমান থাকে। জীবাত্মা যখন পরমাত্মার আনুগত্য স্বীকার করে, তখন এই রিপুগুলোই মানুষকে আল্লাহর নৈকট্য লাভের শক্তি জোগায়। এ অবস্থায় মানুষের যাবতীয় কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্যই হয়ে থাকে, লক্ষ্য হলো- ইবাদত আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য করা। প্রভুর কাছে ইবাদত গ্রহণযোগ্য না হলে সেই ইবাদতের কোনো মূল্য নেই।


মহামানবগণের পবিত্র স্মৃতি বিজড়িত জিলহজ মাস। এ পবিত্র মাসের নির্ধারিত দিনসমূহে আমরা হালাল পশু কোরবানি করে থাকি, যা ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় বিধান। আরবি ‘কুরবুন’ শব্দ থেকে ‘কোরবানি’ শব্দের উৎপত্তি, যার আভিধানিক অর্থ হলো- আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। কোরবানির মূল শিক্ষাকে যদি আমরা হৃদয়ে ধারণ করি তাহলে দেখতে পাবো, এর মূলে রয়েছে নিজের ভিতরের পশু প্রবৃত্তিকে বিসর্জন দেওয়া। পশু প্রবৃত্তিকে বিসর্জন দিয়ে নফসের কৃপ্রবৃত্তির সাথে যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে পরমাত্মার আনুগত্য করতে পারলেই মানুষ হয়ে উঠেন প্রকৃত ‘আল্লাহর প্রতিনিধি’।

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন- “[হে রাসুল (সা.)!] আপনি বলুন- নিশ্চয় আমার নামাজ, আমার যাবতীয় ইবাদত, আমার জীবন ও আমার মরণ- জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য।” (সূরা আল আন‘আম ৬: আয়াত ১৬২)

নিজের জীবাত্মার পশু প্রবৃত্তিকে আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করে, স্বেচ্ছাচারিতাকে পরিত্যাগ করে দয়াময় আল্লাহর ইচ্ছার উপর আত্মসমর্পণই হাকিকতে কোরবানি। কোরবানি সুন্নতে ইব্রাহিম। মহান আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু আল্লাহর নামে কোরবানি করে বিশ্বস্ততার প্রমাণ দেওয়ার। হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রাণাধিক প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে আল্লাহর নামে কোরবানি করেন এবং পুত্র কোরবানি হতে রাজি হয়ে বিশ্বস্ততার প্রমাণ দিয়েছিলেন। এ অসাধারণ ত্যাগের পুরস্কার হিসেবে দয়াময় আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে ‘খলিলুল্লাহ্’ ও হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে ‘জবিহুল্লাহ্’ উপাধি প্রদান করেছেন। এখান থেকেই শুরু হয়েছে কোরবানি এবং যুগ যুগ ধরে আমরা এ পবিত্র ধর্মীয় বিধান পালন করে যাচ্ছি। কোরবানির মাঝে ধর্ম পালনের পাশাপাশি প্রেমের সুমহান নিদর্শনও রয়েছে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন- “আল্লাহর নিকট কখনই পৌঁছায় না এটির (কোরবানিকৃত পশুর) গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া (খোদাভীতি)।” (সূরা আল হাজ্জ ২২: আয়াত ৩৭)


উল্লেখ্য যে, হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে তিনদিন ৩শত পশু কোরবানি করেন। কিন্তু তার পরও কোরবানি কবুল হয়নি। মহান আল্লাহ্ চাচ্ছেন তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বস্তু। পিতার মুখে প্রভুর নির্দেশ শোনামাত্র পূর্ণ আত্মসমর্পণকারী হযরত ইসমাঈল (আ.) নিজেকে আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করার জন্য রাজি হয়ে যান। হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী পুত্রের স্নেহ-মমতা পরিত্যাগ করে হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে পবিত্র মক্কার নির্জন মরু প্রান্তর মীনা উপত্যকায় নিয়ে যান। পুত্রের কথানুযায়ী পুত্রের হাত-পা এবং নিজের চোখ কাপড় দিয়ে বেঁধে নেন। পিতা-পুত্রকে কোরবানি দেন। চোখ খুলে হযরত ইব্রাাহিম (আ.) দেখলেন কালো রংয়ের বিরাট শিং বিশিষ্ট একটি দুম্বা কোরবানি হয়েছে, আর ছেলে পাশেই দাঁড়ানো। পিতা-পুত্র উভয়েই আত্মসমর্পণের অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আল্লাহর বন্ধু খেতাবে ভূষিত হলেন এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সক্ষম হলেন। দয়াময় আল্লাহ্ তাঁদের কোরবানি কবুল করে নিলেন। ত্যাগের সেই পবিত্র স্মৃতি বহন করে আমরা মুসলিম জাতি আজও কোরবানি দিয়ে থাকি। এ ছিল খোদা প্রেম এবং আত্মসমর্পণের অনন্য দৃষ্টান্ত।


কোরবানি গ্রহনযোগ্য হতে হলে আমাদের মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসূল (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী কোরবানি সম্পন্ন করতে হবে। হযরত দয়াল রাসুল (সা.) নিজেই উম্মতে মোহাম্মদীকে কোরবানি করার শিক্ষা দিয়েছেন। হযরত জাবের (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) কোরবানির পশু জবেহ করার সময় বলতেন- “হে আল্লাহ্! (এই পশু) তোমার পক্ষ থেকে প্রাপ্ত এবং তোমারই উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত। তুমি এটি কবুল করো, মোহাম্মদ (সা.)-এর পক্ষ থেকে এবং তাঁর উম্মতের পক্ষ থেকে। আল্লাহ্ তোমার নামে কোরবানি করছি এবং আল্লাহ্ই মহান। অতঃপর হযরত রাসুল (সা.) জবেহ করতেন।” (আহমদ, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমী শরিফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ১২৮)।

পশু কোরবানি করার মাধ্যমে আমরা আত্মসমর্পণের হুকুম লাভ করেছি। আমাদের সমাজে প্রচলিত কোরবানির রীতি অনুযায়ী, কোরবানিদাতা ব্যক্তিগণ বলেন, আমি নিজ নামে অথবা পিতা বা মাতার নামে কোরবানি করেছি, এমনিভাবে অনেকে বলেন সাত নামে কোরবানি করেছি। অথচ এভাবে বলা মারাত্মক ভুল। ফলে আমরা পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বিধান হতে দূরে সড়ে পড়েছি। কোরবানির প্রচলিত এই ভ্রান্ত রীতির সংশোধন করে আমার মহান মোর্শেদ মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, “কোরবানি বান্দার নামে নয়, বরং বান্দার পক্ষ হতে আল্লাহর নামে দিতে হয়।” কারণ একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো নামে কোরবানি করা সম্পূর্ণ অবৈধ। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ সুস্পষ্ট ঘোষণা দেন, “নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের মাংস এবং সেই পশুর মাংস, যেটির উপর জবেহের সময় আল্লাহর নাম ছাড়া অন্যের নাম উচ্চারিত হয়েছে।” (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ১৭৩) তাই যে কয়জন মিলে একটি গরু বা মহিষ কোরবানি করা হয়, তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি করে, কোরবানি কবুল করানোর জন্য আল্লাহর কাছে অনুনয় বিনয় করে কোরবানি দাতাদের মনে মনে বলতে হবে, কেবল আল্লাহর নামে এ পশু জবেহ করা হচ্ছে। এর ভিন্নতা অর্থাৎ অজ্ঞতার কারণে নিজের নামে কোরবানি করা হলে তা কবুল হবে না। অতএব বান্দার নামে নয়, আল্লাহর নামে কোরবানি দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য সচেষ্ট হতে হবে।


আল্লাহর দেওয়া জন্তু নিজের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামেই কোরবানি করতে হবে। আর নিজের হাতে কোরবানি করা সুন্নত। হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, “একদা আল্লাহর রাসুল (সা.) ধূসর বর্ণের ২ শিংবিশিষ্ট দুটি মেষ কোরবানি করেন। আর তিনি জবেহ করার প্রাক্কালে ‘বিস্মিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলেন। আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে স্বহস্ত মোবারকে কোরবানি করতে দেখেছি, আর তখন তাঁর কদম মোবারক জন্তুটির পাঁজরের উপর রেখেছিলেন।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, পৃষ্ঠা ২২৫, ইফাবা কর্তৃক অনূদিত সুনানে ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড পৃষ্ঠা ১৩৩, হাদিস নং ৩১২০)

যে কয়জন মিলে একটি গরু বা মহিষ কোরবানি করা হয়, তাদের পক্ষ থেকে আল্লাহর নামে কোরবানি করে, কোরবানি কবুল করানোর জন্য মহান আল্লাহর দরবারে মিনতি করা উচিত। নিজের হাতে কোরবানি করার সময় স্রষ্টাকে স্মরণে রেখে বলতে হবে- দয়াময় প্রভু কেবল আপনার নামে পশু জবেহ করা হচ্ছে। আপনি এ পশু কোরবানি কবুল করে এর বিনিময়ে আমার জীবাত্মায় যে পশু প্রবৃত্তি রয়েছে তা এইভাবে কোরবানি করে দিয়ে আমাকে আপনার ইচ্ছায় পরিচালিত হওয়ার তাওফিক দান করুন। কোনো ভাবেই আল্লাহর নামের সাথে নিজেদের নাম সংযুক্ত করে কোরবানি করা যাবে না।


কোরবানি হলো- মানুষের ভিতরে পশু প্রবৃত্তিকে দূর করে আল্লাহর প্রেম হাসিল করা। জীবাত্মার কুরিপুসমূহ, যথা- কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্যকে কোরবানির মাধ্যমে পরিশুদ্ধ করা। যখন অন্তরে আল্লাহর প্রেম প্রবল হয়ে চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে, তখন পশু প্রবৃত্তি আপনা-আপনিই দূর হয়ে যায়। কোরবানির বাহ্যিক অনুষ্ঠান সাধারণ মানুষের কুরিপুকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে মানসিকতা তৈরি করার একটি বিশেষ প্রশিক্ষণ। সমাজে নিজেকে প্রচার করার মানসিকতা নয়, বরং নিকৃষ্ট দাস হিসেবে প্রভুর প্রেম ও তাঁর নৈকট্য হাসিলের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণ পূর্ণতা পাবে। নিজে নিজে হাজারো চেষ্টা করে কখনোই তা সম্ভব নয়, মহামানবের সংস্পর্শে এসে তাঁর ফায়েজ ও দয়া নিয়ে, তাঁর শিক্ষা ও অনুপম আদর্শ হৃদয়ে ধারণ করলে প্রভুপ্রেম, নৈকট্য হাসিল হবে এমনকি দয়াময় আল্লাহর দিদারও নসিব হবে।

যখন একজন সাধক তাঁর ক্বালবে কোনো অলী-আল্লাহর ক্বালব থেকে আল্লাহ্ শব্দের বীজ বপন করে নেন, তখন সে নিজের অস্তিত্বকে মোর্শেদের কাছে বিলীন করে দেন। যেমন- একটি বীজ মাটির সাথে নিজেকে বিলীন করে দেয়, তেমনি সেই বীজকে যত্ন করলে অর্থাৎ- তাতে পানি, রোদ, বাতাস এবং সঠিক পরিচর্যা করলে সেই বীজ গাছে পরিণত হয়ে তা ফুলে ও ফলে সুশোভিত হয়। তেমনি একজন সাধককে মহান মোর্শেদের মাধ্যমে আল্লাহ্ নামের বীজ বপন করে নিয়মিত তরিকার আমল তথা ওয়াজিফা, মোরাকাবা-মোশাহেদা এবং মোর্শেদের দরবারে গোলামি করে নিজের আমিত্বকে বিসর্জন দিতে হয়। মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রেমের ফায়েজে দিওয়ানা বেকারার হয়ে নিজের জীবনের গুনাহর কথা স্মরণ করে চোখের পানি ফেলতে হয়। এভাবে গভীর সাধনার মাধ্যমে অন্তরচক্ষু জাগ্রত করতে পারলেই আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়। দয়াময় আল্লাহর প্রতিটি নির্দেশের মর্মবাণীও তাই। পবিত্র কোরবানি মহান আল্লাহর পক্ষ হতে তেমনই একটি ফজিলতপূর্ণ ধর্মীয় বিধান- যা আমাদেরকে দয়াময় আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ এনে দিয়েছে।


হাকিকতে কোরবানি সম্পর্কে সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজান বলেন- “আপনার কোরবানি আপনি নিজেই করুন। ক্বালবে খেয়াল করে বলেন, হে দয়াময় খোদা! হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে তাঁর পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) যেমন তোমার নামে উৎসর্গ করেছিলেন। আমি আমার জীবাত্মাকে তোমার নামে উৎসর্গ করলাম। এ জীব কোরবানির মাধ্যমে তুমি আমার পশু প্রবৃত্তিকে কোরবান করে দাও। আর আমাকে মু’মিন বানিয়ে দাও। তারপর নিজের জীবাত্মায় পশু প্রবৃত্তিটাকে কোরবানির পশুর সাথে ছুরির নিচে শুইয়ে দিয়ে আল্লাহু আকবার বলে জবাই করুন। আপনি যদি এই নিয়মে কোরবানি করেন অবশ্যই আল্লাহ্ দয়া করে আপনার কোরবানি কবুল করবেন।”


মহান আল্লাহ্ আমাদের সকলকে তাঁর প্রিয় বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী কোরবানি করার তৌফিক ভিক্ষা দিন। আমিন।


[লেখক: মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী, পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ; সহকারী অধ্যাপক, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি]

সম্পর্কিত পোস্ট