বায়াত গ্রহণে সন্তানকে উদ্বুদ্ধ করার আবশ্যকতা
মানুষ আল্লাহর প্রতিনিধি বিধায় আল্লাহর প্রতিনিধিত্বের গুণ অর্জন করা তার জন্য ফরজ করা হয়েছে। হযরত আদম (আ.)-এর যুগ থেকে শুরু করে মানবিক চরিত্র অর্জন করার বিদ্যা এসেছে ক্বালব থেকে। আল্লাহ্ তায়ালা হযরত আদম (আ.)-কে শিক্ষা দিলেন ক্বালবের জ্ঞান অর্থাৎ যে জ্ঞান ক্বালবের মাধ্যমে সরাসরি আল্লাহর কাছ থেকে লাভ হয়ে থাকে। আল্লাহ্ নিজে হলেন ক্বালবের জ্ঞানের শিক্ষক। ক্বালবের জ্ঞান হলো সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান। এ জ্ঞানের সাথে অন্য কোনো জ্ঞানের তুলনা হয় না। ক্বালবের জ্ঞানের অধিকারী হওয়ার জন্যই হযরত আদম (আ.) ফেরেশতাদের চেয়ে অধিক মর্যাদাশীল হয়েছিলেন, আর ফেরেশতাগণ হযরত আদম (আ.)-এর শ্রেষ্ঠত্ব স্বীকার করে নিয়ে আনুগত্য প্রকাশের নিদর্শন হিসেবে আল্লাহর হুকুমে হযরত আদম (আ.)-কে সেজদা করেছিলেন। এই ক্বালবের বিদ্যা শিক্ষা করা ফরজ। অথচ আমরা ক্বালবের জ্ঞানকে ছেড়ে দিয়েছি। ক্বালব যে আমাদের জ্ঞানের উৎস হতে পারে, সেই চিন্তা আমাদের মাঝে নেই।
সন্তানকে কিতাবি বিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার গুরুত্ব আমাদের কাছে এত বেশি যে, তাকে বিদ্যালয়ে ভর্তি করেও আমরা সন্তুষ্ট থাকতে পারি না। বাড়িতে পড়ানোর জন্য প্রাইভেট টিউটরের ব্যবস্থা করি। কিন্তু চরিত্রবান হওয়ার বিদ্যা শেখার জন্য ঐ সন্তানকে কোনো অলী-আল্লাহর সান্নিধ্যে পাঠানো প্রয়োজন মনে করছি না। এই শিক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা যদি কেউ বলেন, তাহলে আমরা জবাব দিয়ে থাকি মা-বাবা থাকতে পিরের কাছে যেতে হবে কেন? সন্তানের জন্যে পিতা-মাতাই তো শ্রেষ্ঠ পির। আমরা এমনভাবে অজ্ঞতায় ডুবে রয়েছি, চরিত্রবান হওয়ার জন্য যে ভিন্ন এক প্রকার বিদ্যা বা ক্বালবের জ্ঞান আছে এবং অলী-আল্লাহর কাছে গিয়ে আমাদের সন্তানকে এই বিদ্যা শিক্ষা করতে হবে- তা আমরা স্বীকার করি না। অর্থাৎ আমাদের সন্তান চরিত্রবান হওয়ার চেয়ে বেশি পড়ালেখা শিখে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক, অধিক উপার্জনক্ষম হয়ে নিজেকে গড়ে তুলুক- সেটাই আমাদের কাছে অধিকতর কাম্য। এত ত্যাগ স্বীকার করে যে সন্তানকে পড়ালেখা শেখানো হলো, বড়ো হয়ে সেই সন্তান পর হয়ে যায়, পিতা-মাতার খোঁজ খবর পর্যন্ত রাখে না। ফলে পিতা-মাতার সংসারে অশান্তির আগুন জ্বলতে থাকে। চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা যদি সন্তানকে দেওয়া হতো তাহলে পরিস্থিতি এমনটি হতো না। যে সকল মানুষ বাল্যকালে চরিত্রবান হওয়ার শিক্ষা দেন, এমন শিক্ষকের সংস্পর্শে গিয়ে উত্তম চরিত্র গঠনের শিক্ষা লাভ করেছেন, তাদের জীবনে এমন ঘটনা খুঁজে পাওয়া যাবে না যে, তারা পিতা-মাতার মনে কষ্ট দিয়েছেন। বরং উত্তম চরিত্রবান মানুষ আজীবন পিতা-মাতার সেবা করে, তাদের প্রতি অনুরক্ত থেকে তাদের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে নিজেকে ধন্য করে থাকে।
১৯৯৩ সালের ২৮শে অক্টোবর বৃহস্পতিবার বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত সাপ্তাহিক জলছা মোবারকে মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, “প্রত্যেক পিতা মাতার দায়িত্ব¡ ও কর্তব্য হচ্ছে তাদের সন্তানকে চরিত্রবান হিসেবে গড়ে তোলা। সন্তান ভ‚মিষ্ঠ হওয়ার পর পিতা-মাতার ওপর তিনটি হক বা দায়িত্ব বর্তায়। প্রথমটি হলো সন্তানের জন্যে ইসলামি নাম রাখা। দ্বিতীয়টি হলো-সন্তানকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করা। অর্থাৎ তাকে আদর্শ চরিত্রের অধিকারী করে গড়ে তোলা। তৃতীয় দায়িত্ব হলো- সন্তান বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তার বিবাহের ব্যবস্থা করা। আর পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব হলো- পিতা-মাতা বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের উপযুক্ত সেবা-যতœ করা এবং শৈশবকালে সন্তান পিতা-মাতার কাছ থেকে যে সহিষ্ণুতা, ত্যাগ, আদর ও সোহাগ লাভ করেছে, সে কথা মনে রেখে বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি সহানুভ‚তিপূর্ণ এমন সদ্ব্যবহার করা, যেন তারা মনে কোনোরকম কষ্ট না পায়।”
আমরা যদি পিতা-মাতা হিসেবে স্বীয় সন্তানের প্রতি এবং সন্তান হিসেবে বৃদ্ধ পিতা-মাতার প্রতি নিজ নিজ কর্তব্য যথাযথ পালন করতে পারি, তাহলে আমাদের পরিবারে অশান্তি থাকার কথা নয়। এভাবে প্রত্যেক পরিবার যদি স্বীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য প্রতিপালনে সজাগ হয়, তাহলে সমাজ থেকে অশান্তি দূর হয়ে নেমে আসবে ইসলামের প্রকৃত শান্তি। হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু করে যুগে যুগে আল্লাহর মনোনীত নবি-রাসুলগণ মানুষকে এ শিক্ষাই দিয়েছেন যে, একজনের প্রতি আরেকজনের দায়িত্ব কীভাবে পালন করতে হয়। তাঁরা কেউ কিতাবি বিদ্যা শিক্ষা দেওয়ার জন্য জগতে প্রেরিত হননি, বরং বাস্তব আমলের মাধ্যমে কীভাবে আদর্শ চরিত্রের অধিকারী হওয়া যায়, সেই শিক্ষা প্রদানের জন্যই প্রেরিত হয়েছিলেন। যারা এ সকল মহামানবের সংস্পর্শে গিয়ে নিজেদের চরিত্র সংশোধন করতে পেরেছেন, তাঁদেরকে সাহাবি বলা হয়েছে। যারা হযরত রাসুল (সা.)-এর সংস্পর্শে গিয়ে সাহাবির মর্যাদা অর্জন করেছিলেন, তাঁদেরকে অনুসরণ করে পরবর্তী যুগের মানুষ চরিত্রবান হতে সক্ষম হয়েছে।
পিতা-মাতা সন্তানকে জন্ম দেন বটে, কিন্তু আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাকে শিক্ষকের হাতে তুলে দিতে হবে। উপযুক্ত শিক্ষকই কেবল পারেন একজন মানব শিশুকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে। যে সন্তান বাল্যকালে সুশিক্ষা লাভ করা থেকে বঞ্চিত থাকে, ভবিষ্যতে সে-ই পিতা-মাতার জন্যে কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমন ছেলে বড়ো হয়ে পিতা-মাতার ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করে থাকে। মানব সমাজে বাস করেও তার আচরণ পশুর মতো হয়ে যায়। তাকে শাসন করেও তার কাছ থেকে মানবীয় আচরণ আশা করা যায় না। কারণ তাকে মানবীয় মূল্যবোধ শিক্ষা দেওয়া যায়নি। পিতা-মাতার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব, সমাজের প্রতি, দেশের প্রতি এমনকি অন্যান্য প্রাণীর প্রতি তার আচরণ কেমন হবে- এগুলো শিক্ষা করার জন্য সন্তানকে আমরা শিক্ষকের কাছে পাঠিয়ে থাকি। শুধু ভাষা শেখার জন্য আমাদের সন্তানকে ওস্তাদের কাছে পাঠানো হয় না। একটি পোষা ময়না পাখীকেও বুলি শেখানো সম্ভব। বুলি শিক্ষা করলেই পাখীকে শিক্ষিত বলা যাবে না। ময়না আল্লাহর নাম কিংবা কালেমা পড়তে শিখলেই তাকে মুসলমান বলা যাবে না। বুলি শেখায় কিছু যায় আসে না। প্রকৃত বিদ্যার্জন করা বলতে চরিত্র অর্জন করাকে বোঝায়। মনুষ্য চরিত্র অর্জন করাই আমাদের বিদ্যা শিক্ষা করার মূল উদ্দেশ্য।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান হযরত রাসুল (সা.)-এর মাহাত্ম্য সম্পর্কে বলেন, “বর্বর আরব জাতি, যাদের মাঝে মায়া-মমতা, প্রেম-প্রীতি ছিল না, যাদের চরিত্র ছিল পশুর মতো, আল্লাহর রাসুল (সা.) এসে তাদের মাঝে মনুষ্য চরিত্র বিকাশ ঘটানোর পর ঐ বর্বর চরিত্রের মানুষগুলো হয়ে উঠেছে আদর্শ চরিত্রের অধিকারী। একজন সাহাবি রাসুলের প্রেমে হাসিমুখে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে শহিদ হয়ে গেছেন। একজন মুসলমান অন্য মুসলমান ভাইয়ের জন্যে নিজের সর্বস্ব বিলিয়ে দিতেও কুণ্ঠিত হননি। এরূপ উত্তম চরিত্র তাদেরকে শিক্ষা দিয়েছিলেন আল্লাহর প্রিয় হাবিব হযরত রাসুল (সা.)। এই উত্তম চরিত্র শিক্ষা করার জন্য উপযুক্ত শিক্ষকের সান্নিধ্যে যাওয়া ফরজ। আর এই চরিত্র হারিয়ে ফেলার জন্যই আজ আমাদের সমাজে অশান্তি, অত্যাচার ও বিশৃঙ্খলা এতদূর বিস্তার লাভ করেছে যে, ধর্ম কর্ম করেও আমরা শান্তি পাচ্ছি না।”
আমি নিজে যদি জন্মসূত্রে মুসলমান হয়ে থাকি, আর হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শের শিক্ষাদাতা কোনো মহামানবের সান্নিধ্যে গিয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রকৃত আদর্শ নিজে শিক্ষা না করে থাকি, তাহলে আমার সন্তানদেরকে কীভাবে আমি ইসলামের আদর্শ শেখাতে সক্ষম হবো? একথা আমাদের স্বীকার করতেই হবে যে, উত্তরাধিকার সূত্রে মুসলমান হওয়া যায় না, মুসলমানের চরিত্র অর্জনের মাধ্যমে সত্যিকার মুসলমান হতে হয়। এজন্য মহান আল্লাহর প্রেরিত মহামানবের সান্নিধ্যে গিয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ ও শিক্ষা অর্জন করে মুসলমান হতে হয়। দেড় হাজার বছর আগে আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন ইসলামের দাওয়াত দিতে শুরু করলেন, তখন আরববাসী ছিল মূর্তিপূজক বা পৌত্তলিক। তখন হযরত রাসুল (সা.)-এর ডাকে সাড়া দিয়ে যারা ইসলামের দাওয়াত কবুল করেছিলেন, তারা মা-বাবার পৌত্তলিকতার ধর্ম ছেড়ে দিয়ে, মা-বাবার মতের বিরুদ্ধেই মুসলমান হয়েছিলেন। আল্লাহর রাসুল (সা.) এই শিক্ষাই দিয়ে গেছেন যে, চরিত্র সংশোধন করতে হলে, আল্লাহর পরিচয় পেতে হলে, প্রতিনিধির গুণ অর্জন করতে হলে এবং আল্লাহর চরিত্রে চরিত্রবান হতে হলে, আমাদেরকে আল্লাহর প্রতিনিধির কাছে যেতেই হবে। তাঁর কাছে বায়াত গ্রহণ করে, তার নির্দেশমতো চলে আমাদেরকে চরিত্রবান হতে হবে। পিতা-মাতার মতামতের অপেক্ষায় বসে থাকলে মানুষ মুসলমান হতে পারতো না। তাই আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন মহাসত্যের প্রতি আহ্বাবান জানালেন তখন দলে দলে লোক তাদের পিতা-মাতার অজান্তে, এমনকি পিতা-মাতার মতের বিরুদ্ধে গিয়েও ইসলাম গ্রহণ করেছেন। আমাদের এই উপমহাদেশে আল্লাহর অলীগণ ইসলামের আদর্শ এনেছিলেন। আমাদের পূর্বপুরুষের ইতিহাস তালাশ করলে দেখা যায়, তারা অধিকাংশই ছিলেন ভিন্ন ধর্মাবলম্বী। তাদের মধ্যে যারা ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন তারা আল্লাহর অলীর কাছে গিয়ে বায়াত গ্রহণ করেছিলেন। কেননা তখন অনেক পিতা-মাতাই চায়নি যে, তাদের সন্তান একজন মুসলমান অলী-আল্লাহর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করুক। যুগে যুগে আল্লাহর বন্ধু মহামানবগণ তাদের আদর্শ চরিত্র দিয়ে মানুষের মন জয় করে প্রেমের মাধ্যমে তাদেরকে আল্লাহর মহাসত্যের প্রতি আহ্বাবান করেছেন বিধায় দলে দলে মানুষ তাদের নিজ ধর্ম ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর মনোনীত বন্ধুর কাছে গিয়ে পরম শান্তি লাভ করেছে এবং ইসলামের চরিত্রে নিজেকে চরিত্রবান করেছে। ইসলামের প্রকৃত আদর্শ শিক্ষা করতে হলে আল্লাহর বন্ধুর কাছ থেকে সেই আদর্শ শিক্ষা করতে হবে। আল্লাহ্কে পাওয়ার জন্য আল্লাহর বন্ধুর সান্নিধ্যে যাওয়া যারা প্রয়োজন মনে করে না, এমন মনোভাব সঠিক নয়।
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান সমাজে প্রচলিত একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রসঙ্গে যা বলেছেন, তার মূল কথা হলো- পিতা-মাতা জীবিত থাকতে অলী-আল্লাহর কাছে যাওয়া যাবে না- সমাজে প্রচলিত এ ধারণাটি সম্পর্কে আমরা বলতে পারি যে, কথাটি ভুল। আমাদের জানা দরকার যে, আল্লাহর বন্ধুর কাছে গিয়ে আমরা ষড়রিপু নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা লাভ করে অত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারি। কুরিপুর প্ররোচনাকে জয় করতে না পারলে মানুষ পাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে পারে না। আল্লাহর বন্ধু আমাদেরকে রিপু নিয়ন্ত্রণের কৌশল শিক্ষা দিয়ে থাকেন। কীভাবে ইবাদত-বন্দেগি করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, তা আমাদের জানা নেই। ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি না জেনে ইবাদত করলে তা নিষ্ফল হয়ে যায়। আল্লাহর বন্ধু জানেন ইবাদতের সঠিক পদ্ধতি, তাঁর কাছ থেকে আমরা শুদ্ধভাবে ইবাদত করার পদ্ধতিসমূহ শিক্ষা নিতে পারি।
মুসলমান শব্দের অর্থ হলো আত্মসমর্পণকারী। ধৈর্য সহিষ্ণুতা অর্জনের মাধ্যমে জীবনে সকল অবস্থাতেই আল্লাহর ওপর আত্মসমর্পণ করে চলা যায়, সেই শিক্ষা অলী-আল্লাহ্গণ মানুষকে দিয়ে থাকেন। তাঁরা শিক্ষা দিয়ে থাকেন কীভাবে আল্লাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা যায় এবং কীভাবে আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্দেশ প্রাপ্ত হয়ে জীবনের পথে চলা যায়। উল্লিখিত বিষয়গুলো অর্জিত না হলে একজন মানুষ পূর্ণ মু’মিনে পরিণত হতে পারে না। একথা অবশ্যই সত্য যে, এ সকল বিষয় আল্লাহর বন্ধু ব্যতীত অন্য কোনো শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠান থেকে লাভ করা যাবে না। সুতরাং অলী-আল্লাহর সান্নিধ্যে গমন অপরিহার্য। এমন অনেক ঘটনার বর্ণনা আমাদের কাছে আসে যে সন্তান পিতা-মাতাকে মারধর পর্যন্ত করে থাকে। অর্থাৎ এ সকল পিতা-মাতা সন্তানকে আদব শেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন, ব্যর্থ হয়েছেন ইসলামের চরিত্র শিক্ষা দিতে। ছোটোবেলা থেকে যারা অলী-আল্লাহর সান্নিধ্যে গিয়ে চরিত্র গঠনের শিক্ষা গ্রহণ করেছে, তারা কখনো বেয়াদব হবে না, তারা পিতা-মাতাকে কষ্ট দেবে না। তাই পিতা-মাতার জীবদ্দশায়ই আমাদেরকে ধর্মের সঠিক জ্ঞান অর্জন করতে হবে, যে জ্ঞান অর্জন করলে আমরা চরিত্রবান হতে পারবো, যে জ্ঞান অর্জন করলে আমরা নিজে শান্তিতে বসবাস করতে পারবো। এই জ্ঞান আমাদেরকে পিতা-মাতা, পরিবার-পরিজন এবং প্রতিবেশীর প্রতি আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন করে তুলবে। আমরা সঠিকভাবে তাদের হক আদায়ে সক্ষম হবো। তাই আমরা নিজেরা যেন অলী-আল্লাহ্গণের সান্নিধ্যে গিয়ে আদর্শ চরিত্র গঠনের শিক্ষা গ্রহণ করি এবং আমাদের সন্তানকেও এই শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ করতে পারি মহান আল্লাহ্ আমাদের সেই তৌফিক দান করুক। আমিন।
লেখক: অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
ইসলামি গবেষক; সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা