বিশ্বব্যপী মহামারি করোনা
আশেকে রাসুল তরিকুল ইসলাম তারিফ
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন দয়া করে মানুষকে তার প্রতিনিধি করে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। পাশাপাশি মানুষকে আল্লাহর স্মরণে নিমগ্ন হয়ে কেবলমাত্র তাঁরই ইবাদত করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ যখন মহান আল্লাহ্কে ভূলে গিয়ে দুনিয়াতে পাপ সাগরে নিমজ্জিত হয়ে সুদ, ঘুষ, মিথ্যা, জুলুম, অত্যাচার, অনাচার, অবিচার, ব্যভিচার, ধর্ষণ, খুন, অশ্লীলতার মতো পাপ অহরহ করতে থাকে, তখনই বিশ্বে মানব জাতিকে সংশোধন করে আল্লাহ্র নিকট আত্মসমর্পণ করে নিজেদের কৃতকর্মের জন্য কাকুতি-মিনতি করে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য মহামারি দিয়ে থাকেন। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে বল্লে “স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ্ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে। (সূরা আর রূম-৩০ : আয়াত ৪১)
এ মহামারি কখন বিস্তৃতি লাভ করে এ প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে মহানবি (সা.) এরশাদ করেন-“যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে, তখন তাদের মধ্যে দুর্ভিক্ষ ও মহামারি ব্যাপক আকার ধারণ করে, যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিল না।’’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪০১৯)
আমরা ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি, চীনের উহান প্রদেশ থেকে মহামারি করোনা ভাইরাসের রোগ সূচনা হলেও বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ২০৯টি দেশে মহামারি করোনা ভাইরাস বিস্তার লাভ করেছে। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় দেশগুলোতে ব্যাপক প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। ইতালি, স্পেন, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র-সহ বিশ্বের অধিকাংশ শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো আজ আল্লাহর সৃষ্টি করোনা ভাইরাসের নিকট পর্যুদস্ত। বর্তমানে যখন লিখছি তখন বিশ্বে প্রায় পনেরো লক্ষ রোগীর করোনা ধরা পড়েছে ।
নতুন নতুন সৃষ্টি বিভিন্ন ভাইরাস, রোগব্যাধি ও মহামারি কিছুদিন পরপর আমাদেরকে এই জানান দেয়, আমরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির দিক থেকে যত উন্নতির শিখরে আরোহণ করি না কেন, মহান আল্লাহর করুণা ছাড়া আমাদের বাঁচার কোনো উপায় নেই। আমাদের উচিত ছোটো-বড়ো সব ধরনের পাপ থেকে আল্লাহ্র কাছে তওবা করা; কৃতকর্মের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। কারণ পাপের জন্যই বিভিন্ন আজাব ও মহামারি নেমে আসে বলে হাদিসে উল্লেখিত হয়েছে।
পবিত্র কুরআনে বর্ণিত মহামারিতে আক্রান্ত জাতি
পাপাচারের শাস্তি হিসেবে অতীতেও আল্লাহ্ তায়ালা মহামারি দিয়ে অবাধ্য জাতিকে ধ্বংস করেছেন। হযরত দাউদ (আ.)-এর যুগের একটি ঘটনা পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘তুমি কি তাদের দেখোনি যারা মৃত্যুভয়ে হাজারে হাজারে স্বীয় আবাসভূমি ত্যাগ করেছিল। অতঃপর আল্লাহ্ তাদের বলেছিলেন, তোমাদের মৃত্যু হোক। তারপর আল্লাহ্ তাদের জীবিত করেন।” (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ২৪৩)
অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাছিরে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হয়েছে, ‘‘তারা সংখ্যায় ছিল চল্লিশ হাজার। মহামারির ভয়ে পালিয়ে ছিল। তারা বলেছিল, আমরা এমন ভূমিতে যাব যেখানে মৃত্যু নেই। তারপর তারা এক স্থানে একত্র হলে আল্লাহ্ তাদের ওপর মৃত্যুর ফরমান জারি করেন। ’’ (তাফসীরে ইবনে কাছির ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৩৪) পাশাপাশি হাদিসের একটি বর্ণনা থেকে জানা যায় আল্লাহ্ তায়ালা অতীতের বিভিন্ন জাতি-গোত্রকে মহামারির মাধ্যমে শাস্তি দিয়েছেন। মহানবি (সা.) প্লেগ সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন, ‘‘এটি আল্লাহর এক গজব বা শাস্তির অবশিষ্টাংশ যা আল্লাহ্ বনি ইসরাঈলের এক গোষ্ঠীর প্রতি পাঠিয়েছেন।” (তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ১০৬৫)
মহামারি দেখা দিলে করণীয়
বেশির ভাগ মহামারিই সংক্রামক। তাই হযরত রাসুল (সা.) মহামারির সংক্রমণ রোধে আক্রান্ত অঞ্চলে যাতায়াত নিষিদ্ধ করেছেন। মু’মিন মুসলমানগণ ইমান ও ইখলাসের সঙ্গে ধৈর্য ধারণ করবে। তাই মহামারির ব্যাপারে মহানবি (সা.) এরশাদ করেন- “কোথাও মহামারি দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থানরত থাকলে সে জায়গা ছেড়ে চলে এসো না। আবার কোনো এলাকায় এটা দেখা দিলে এবং সেখানে তোমরা অবস্থান না করে থাকলে, সে জায়গায় গমন করো না।’’ (তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং ১০৬৫)
সুতরাং হাদিস শরীফে মহামারি কবলিত স্থানে কেউ থাকলে তাকে সেখান থেকে বের হয়ে আসতে নিষেধ করা হয়েছে এবং বাহিরের কাউকে মহামারি কবলিত স্থানে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে হযরত উসামা ইবনে যাইদ (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি আল্লাহ্র নবি (সা.) থেকে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহর রাসুল (সা,) এরশাদ করেছেন- إذَا سمِعْتُمْ الطَّاعُونَ بِأَرْضٍ، فَلاَ تَدْخُلُوهَا، وَإذَا وقَعَ بِأَرْضٍ، وَأَنْتُمْ فِيهَا، فَلاَ تَخْرُجُوا مِنْهَا
অর্থাৎ-“যখন তোমরা শুনবে যে, কোনো স্থানে প্লেগ রোগ হয়েছে, তাহলে সেখানে প্রবেশ করো না। আর যখন কোনো স্থানে সেই রোগের প্রাদুর্ভাব হয় এবং তোমরা সেখানে থাকো, তাহলে সেখান হতে বের হয়ে যেয়ো না।”
(বুখারী শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৫৩)
তাই যেখানে মহামারির প্রাদুর্ভাব দেখা দেবে, সেখানে যাতায়াত উচিত নয়। ইতিমধ্যে বিভিন্ন রাষ্ট্র সরকারিভাবে করোনা আক্রান্ত দেশগুলোতে যাতায়াতে সতর্কতা জারি করেছে। সেইসাথে আক্রান্ত দেশে হোম কোয়ারান্টাইন, লকডাউনের নির্দেশনা জারি করেছে। আবার কোনো কোনো দেশ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। চিকিৎসকদের মতে এই করোনা ভাইরাসটি একজনের দেহ থেকে অন্যজনের দেহে ছড়ায়, অন্যজনের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ, হাত মেলানো ও কথাবার্তায় সতর্কতা অবলম্বন জরুরি। সুতরাং নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান করাটাও আবশ্যক ।
মহামারি করোনার সময় হোম কোয়ারান্টাইন
মহামারির সময় ঘরে অবস্থান খুবই জরুরি। এতে সকল মানুষ মহামারিতে আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেকে নিরাপদে রাখতে পারে। বর্তমানে মহামারি করোনার সময়ের হোম কোয়ারান্টাইন বা গৃহে অবস্থানের সূত্র আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর আগে হযরত মোহাম্মদ (সা.) দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে উম্মুল মু’মিনিন হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, আমি আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-কে মহামারি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। উত্তরে তিনি বলেন- “মহামারি হলো আযাব। যাদের উপর ইচ্ছে আল্লাহ্ এ আযাব পাঠান। পরিশেষে, তিনি তা ইমানদারদের জন্য রহমত রূপে দেন এভাবে যে, কোনো ব্যক্তি যদি মহামারি আক্রান্ত এলাকায় থাকে এবং নিজ বাড়িতে ধৈর্য সহকারে প্রতিদানের আশায় এ বিশ্বাস বুকে নিয়ে অবস্থান করে যে, আল্লাহ্ তায়ালা তকদির বা ভাগ্যে যা চুড়ান্ত রেখেছেন তার বাইরে কোনো কিছু তাকে আক্রান্ত করবে না, তাহলে তার জন্য রয়েছে একজন শহিদের মতো সমান প্রতিদান।” (মুসনাদে আহমদ-১৮নং খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৫ ও ১৪৬, হাদিস নং ২৬০১৭)
অত্র হাদিসটিতে নিজ বাড়িতে অবস্থান করার প্রসঙ্গেও সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। যাকে ইংরেজিতে হোম কোয়ারান্টাইন বলা হয় ।
মহামারিতে মৃত মু’মিন ব্যক্তি শহিদের মর্যাদা লাভ করে
মহামারি এক মহামুসিবত বা বিপদ। আর বিপদ মহান আল্লাহর নির্দেশেই আসে। মহামারির এ বিপদে মু’মিন মৃত্যুবরণ করলেও মহামারিতে আক্রান্ত মৃত ব্যক্তিকে পাপী-জাহান্নামি মনে করা যাবে না। মহানবি (সা.) মহামারিতে মারা যাওয়া ব্যক্তিকেও শহিদ বলে গণ্য করেছেন। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “পাঁচ প্রকার মৃত শহিদ। যথা- মহামারিতে মৃত, পেটের পীড়ায় মৃত, পানিতে ডুবে মৃত, ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে মৃত এবং যে আল্লাহ্র পথে মৃত্যুবরণ করেছে।” (তিরমিজি শরীফ, হাদিস নং-১০৬৩)
এমনিভাবে হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন – “মহামারির কারণে মারা যাওয়া প্রতিটি মুসলিমের জন্য শাহাদাত হিসেবে গণ্য।” (বোখারী শরীফ-২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৫৩)
মহামারি থেকে পরিত্রাণের উপায়
বর্তমানে প্রচলিত মহামারি করোনা ভাইরাস থেকে বাঁচার জন্য মহান করুণাময় আল্লাহর করুণা বা দয়া লাভ করা অপরিহার্য। তাঁর দয়া বিহনে একজন মানুষ করোনা থেকে বাঁচতে পারবে না। যে মহান আল্লাহর হাতে বান্দার জীবন ও মরণ, সে মহান আল্লাহর দয়াতেই বান্দা দুনিয়াতে বেঁচে থাকে। সুতরাং করোনা হলেই মৃত্যু হবে এমনটা নয়, মৃত্যুদাতা আল্লাহ্ যাকে যখন যেভাবে মৃত্যু দিবেন, তার মরণ সেভাবেই হবে। তবে বর্তমানে করোনা ভাইরাসের রোগ থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে আল্লাহর রহমত প্রয়োজন। কারণ রহমত ব্যতীত গজব থেকে বাঁচা যায় না। মহান আল্লাহর রহমত পেতে হলে রহমতের নবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-কে ভালোবেসে আশেকে রাসুল হয়ে তাঁর উপর অধিক পরিমাণে দরূদ ও মিলাদ শরীফ পাঠ করতে হবে ।
করোনা ভাইরাসের রোগ থেকে পরিত্রাণ লাভ প্রসঙ্গে মহান সংস্কারক, যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান বলেন, “বালা মসিবতে অধিক পরিমাণে আল্লাহ্কে স্মরণ করুন, তিনিই রক্ষা করবেন।”
তিনি আশেকে রাসূলগণকে প্রতিদিন যে আমলের নির্দেশনা দিয়েছেন সেগুলো হলো-
১. নিয়মিত মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফা আমল করতে হবে। (অর্থাৎ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করার পাশাপাশি মোরাকাবা করতে হবে)
২. সকাল সন্ধ্যায় মিলাদ পাঠ করতে হবে ।
৩. মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য লাভের জন্য মানত করতে হবে ।
পরিশেষে মহান আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা জানাই তিনি যেন আমাদেরকে করোনা ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখেন এবং বাকি জিন্দেগী তাঁকে ভালোবেসে তাঁরই সন্তুষ্টির উপর কায়েম থাকার তাওফিক দান করেন। হে আল্লাহ্ আপনি দয়া করে হযরত মোহাম্মদ (সা.) এবং আপনার প্রিয় বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অসিলায় আমাদেরকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
[লেখক: সদস্য আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্র, দেওয়ানবাগ শরীফ]
8 Comments
আমীন
আল্লাহর প্রিয় বন্ধু সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অসিলায় আমাদেরকে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।
Alhamdulillah, Mohan Malik amader sohay hok. Amin
দয়াময় রাব্বুল আলামীন আমাদের সবাইকে মাফ করে এই ভয়ানক মহামারী থেকে রক্ষা করেন সেই আরজী, কাকুতি, মিনতি করছি যুগ শ্রেষ্ঠ মহামানব সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মাঃ আঃ) হুজুর কেবলাজানের পরশময় কদম মোবারকে।
Amin
হে আল্লাহ্ সূফি সম্রাটের উসিলায় করোনা নামক মহামারি বাইরাচতে আমাদেরকে দয়া বিক্ষা দাও।
আমিন
আমিন