বিশ্ব মানবতার পথ প্রদর্শক সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী
ডা. মোহাম্মদ সেলিম বালী
যুগে যুগে মহান আল্লাহ্ মানুষকে শান্তি ও মুক্তির পথ দেখানোর জন্য অগণিত মহামানব পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। তাঁদের সান্নিধ্যে গিয়ে সাধারণ মানুষ মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভ করেছেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- হযরত রাসুল (সা.) ফরমান, “নিশ্চয়ই মহাপরাক্রমশালী সম্ভ্রান্ত আল্লাহ্ তায়ালা প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এই উম্মতের জন্য এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন, যিনি ধর্মকে সংস্কার করে থাকেন।” (মেশকাত শরীফ ৩৬ পৃষ্ঠা ও আবু দাউদ শরীফ)
বাংলা-ভারত উপমহাদেশে ১৫৬৪-১৬২৪ খ্রি. সময়ে প্রখ্যাত সাধক হযরত রাজীউদ্দীন মোহাম্মদ বাকী বিল্লাহ (রহ.)-এর শিষ্য হযরত মোজাদ্দেদ আল ফেসানী সেরহিন্দ (রহ.)-এর আগমন হয়েছিল সমাজ ও ধর্মের সংস্কার সাধনের জন্য। তেমনি বর্তমান শতাব্দীতে আল্লাহ্ তায়ালার প্রেরিত মোজাদ্দেদ হলেন সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। তিনি তাঁর মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর নির্দেশে বহু ধর্মীয় সংস্কার করে মোহাম্মদী ইসলামের পূর্ণতা দিয়েছেন। শুধু তাই নয়- সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানকে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন ১৯৮৮ সালের ১০ মহররম হাদিদের ইমামের দায়িত্ব প্রদান করেন।
সৃষ্টিলগ্নের সূচনা হতে নবুয়তের যুগে ১ লক্ষ ২৪ হাজার পয়গম্বর এবং নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে অসংখ্য অলী-আল্লাহ্ মানব মুক্তির বিধান নিয়ে এ ধরণীতে আগমন করেছেন। মানব মুক্তির এ ধারাকে অব্যাহত রাখতে এবং পাপসংকুল মানুষকে যাবতীয় বিপদ-আপদ থেকে উদ্ধার করার জন্য মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় আমাদের মাঝে আগমন করেছেন- মোজাদ্দেদে জামান, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্বপ্রাপ্ত ও বেলায়েত লাভকারী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। যুগশ্রেষ্ঠ এ মহামানবের চরণতলে ঠাঁই নিয়ে জাতি, ধর্ম ও বর্ণ নির্বিশেষে সারা বিশ্বের অগণিত মানুষ মুক্তির পথ পেয়েছেন অর্থাৎ মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর দিদার লাভ করছেন এবং আপদে-বিপদে বাবাজানকে স্মরণের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য পাচ্ছেন।
সূফী সম্রাট হয়রত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান ২৭ অগ্রহায়ণ, ১৩৫৬ বঙ্গাব্দ, ১৪ ডিসেম্বর, ১৯৪৯ খ্রি. বুধবার ঊষালগ্নে ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার আশুগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম- আলহাজ হযরত সৈয়দ আব্দুর রশীদ সরকার (রহ.) এবং মাতার নাম- হযরত সৈয়দা জোবেদা খাতুন (রহ.)। পিতা-মাতার ৮ (আট) সন্তানের মধ্যে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (মা. আ.) ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ।
বিশ্বনবি হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা আহমদ মুজতবা (সা.) ৫৭০ খ্রি. জাহিলিয়াতের যুগে আরব দেশে জন্মগ্রহণ করেন। তখন এমন কোনও অপকর্ম ছিল না, যা সংঘটিত হতো না। কন্যা সন্তান জন্ম নিলে তাকে জীবন্ত কবর দেওয়া হতো। সেই অন্ধকার যুগে হযরত রাসুল (সা.)-কে মহান রাব্বুল আলামিন আরব দেশে পাঠালেন মানব মুক্তির দূত হিসেবে। তিনি মহান মালিকের নির্দেশে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে মানব মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন এবং মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে এসেছিলেন।
হযরত রাসুল (সা.)-এর পবিত্র নুরের প্রবাহ নিয়ে ভারত উপমহাদেশে আগমন করেছিলেন- হযরত খাজা মইনুদ্দিন চিশতি আজমিরি (রহ.), হযরত বাকী বিল্লাহ (রহ.), হযরত মোজাদ্দেদ আল ফেসানি (রহ.), হযরত নিজামুদ্দিন আউলিয়া (রহ.), হযরত আমির খসরু (রহ.), হযরত বু আলী শাহ কলন্দর (রহ.) প্রমুখ মহামানবগণ। এ সকল মহামানব পাপী-তাপী মানুষদের আল্লাহ্-রাসুলের পথে নিয়ে এসেছেন এবং যাবতীয় বিপদ-আপদে মানুষকে রক্ষা করেছেন।
হযরত রাসুলে পাক (সা.)-এর ওফাতের পরে পৃথিবীতে অসংখ্য আউলিয়া ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁরা প্রায় সকলেই নিজেদের প্রচেষ্টায় তাঁদের তরিকার প্রচার ও প্রসার করেছেন। কাদেরিয়া, চিশতিয়া, মোজাদ্দেদিয়া, নকশবন্দিয়া, হানাফি, মালিকি, শাফেয়ি, হাম্বলি ইত্যাদি নাম হয়েছে। আমরা অত্যন্ত আনন্দিত ও গর্বিত যে, মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর মহান বন্ধু যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান মহান রাব্বুল আলামিনের নিকট থেকে ১৯৮৯ সালের ৫ এপ্রিল মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী খেতাবে ভূষিত ও দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে সারা বিশ্বের ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে কোটি কোটি মানুষকে আশেকে রাসুল হওয়ার দুর্লভ সৌভাগ্য এনে দিয়েছেন। তিনি জগতের পাপাচার, অনাচারে লিপ্ত অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে প্রতিনিয়ত সাহায্য সহযোগিতা করছেন এবং মোহাম্মদী ইসলামের পতাকা সমুন্নত রেখেছেন।
বিশ্বের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা যায়, যখন সমাজ কুসংস্কার ও অন্ধকারে ছেঁয়ে যায়, তখন আল্লাহ্ তায়ালা একজন মোজাদ্দেদ প্রেরণ করেন, যিনি সমাজ ও ধর্মের সংস্কারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। তেমনি একজন মোজাদ্দেদ হলেন- আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-এর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান। তিনি এমনই একজন মোজাদ্দেদ, যাঁকে আল্লাহ্ এত সম্মান ও মর্যাদা প্রদান করেছেন, যা ইতিপূর্বে আর কোনো অলী-আল্লাহ্কে প্রদান করা হয়নি। এমন মোজাদ্দেদের রূহানি সন্তান হয়েছি যা আমাদের পরম সৌভাগ্যের ও গর্বের বিষয়।
যে সমাজে একজন মোজাদ্দেদের আবির্ভাব হয়- তাঁর নুরের পরশে সমাজের ও ধর্মের যাবতীয় অনাচার, অবিচার দূরীভূত হয়ে যায়। সমাজের মানুষগুলো অন্ধকার থেকে আলোর পথে আসে। তেমনি এ জামানার মোজাদ্দেদ মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান নুরানি পরশে সারা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ পাপ-পংকিলতা পরিহার করে, আল্লাহ্-রাসুলের পথে এসে সুন্দর জীবন যাপন করতে সক্ষম হয়েছেন। কঠিন বিপদে-আপদে সূফী সম্রাটকে স্মরণের মাধ্যমে তাঁর সাহায্য সহযোগিতা পেয়েছেন। তাতে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ।
যে দেশে আল্লাহর মনোনীত মোজাদ্দেদ থাকেন, সেখানে কোনও বালা মুছিবত ক্ষতি করতে পারে না। আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তাঁর বন্ধুর সম্মানে ও অসিলায় জগতের মানুষকে হেফাজত করে থাকেন। এটা পবিত্র কুরআন ও হাদিস থেকে প্রমাণিত। বর্তমান সারা বিশ্বে করোনা ভাইরাসে বা কভিড-১৯ ভাইরাসে মানুষ যেভাবে মারা যাচ্ছে তা খুবই উদ্বেগজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে মহামারি ঘোষণা করেছেন। উন্নত বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ অদ্যাবধি করোনা ভাইরাসের কোনও প্রতিষেধকই আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি। বাংলাদেশেও করোনা ভাইরাসে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। তবে আমাদের মত স্বল্প আয়ের দেশের মানুষের আশার বাণী হচ্ছে যে, আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.)-এর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজানের অসিলায় এবং দয়াল বাবাজানের নির্দেশিত ওয়াজিফা শরীফ, মিলাদ শরীফ এবং মানতের মাধ্যমে আল্লাহ্ তায়ালা আমাদেরকে যাবতীয় বালা মুছিবত, গজব ও মহামারি থেকে রক্ষা করবেন ইনশাল্লাহ্।
লেখক : হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক