বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী
ড. সৈয়দ মেহেদী হাসান
যুগে যুগে ধর্ম প্রবর্তকগণ সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসার কথা বলেছেন। স্রষ্টাকে ভালোবাসতে হলে প্রথমে তাঁর সৃষ্টিকে ভালোবাসতে হবে। আর ধর্মের মূলেই রয়েছে প্রেম। কারণ যিনি সৃষ্টিজগতের মালিক তিনি প্রেমের কারণেই জগত সৃষ্টি করেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসে কুদসীতে মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন বলেন- “কুনতুকানযাম মাখফিইয়্যান ফাআহ্বাবতু আন উ’রাফা ফাখালাকতুল খালকা লিউ’রাফ’’। অর্থাৎ- আমি ছিলাম গুপ্ত ধনাগার, নিজেকে প্রকাশ করতে ভালোবাসলাম তাই সৃষ্টিজগত সৃজন করলাম। (সিররুল আসরার, পৃ. ১০)
অন্যত্র বিশ্বনবি হযরত রাসূল (সা.) ফরমান, ‘‘ইরহামু মানফিল আরদ্বি ইয়ারহামুকা মানফিস সামায়ী” অর্থাৎ তুমি যদি সৃষ্টজীবকে ভালোবাস, তাহলে উর্ধ্বলোকের মহান স্রষ্টা তোমাকে ভালোবাসবেন।
এই মানবসেবার আদর্শটি স্বামী বিবেকানন্দের “সখার প্রতি” কবিতায় আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে-
বহুরূপে সম্মুখে তোমার ছাড়ি, কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর।
জীবে প্রেম করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর॥
পৃথিবীর সকল ধর্মেই মানব প্রেমের কথা বলা হয়েছে। সৃষ্ট জীবের প্রতি ভালোবাসার জন্য সর্বকালের, সর্বযুগের, সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব মানবতার মূর্ত প্রতীক বিশ্বনবি হযরত রাসূল (সা.) বলেছেন, “সকল সৃষ্ট জীবকে আল্লাহ্র একই পরিবারভুক্ত মনে করবে।” তাঁর সৃষ্ট জীবকে যে ভালোবাসে সেই তাঁর প্রিয়।” তিনি আরো বলেন, “মানবের সেবা আল্লাহ্রই সেবা।” প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টার প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণই ইসলাম। যিনি তাঁর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করতে পেয়েছেন তিনিই হৃদয়ে সত্যিকার শান্তি উপলব্ধি করে মুসলমান হতে পেরেছেন। এ প্রসঙ্গে হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- সেই ব্যক্তিই প্রকৃত মুসলমান যার হস্ত এবং জবান থেকে অন্য যে কোনও ব্যক্তি নিরাপদ।
মানবতাবাদ সম্পর্কে মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, ‘‘মানব সেবার মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করা সম্ভব।’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘নৈতিক চরিত্রের উন্নয়ন ব্যতীত যান্ত্রিক সভ্যতা মানুষের কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।’’
কিন্তু আমরা আজ পৃথিবীতে প্রেম ভালোবাসা থেকে দূরে সরে গিয়ে হিংসা-বিদ্বেষ, হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, সাম্প্রদায়িকতা, আঞ্চলিকতা, ধর্মান্ধতা, প্রভাব-প্রতিপত্তির মোহে ব্যক্তি জীবন, সমাজ জীবন, রাষ্ট্রীয় জীবন এমনকি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলকে কলুষিত করে ফেলেছি। যার ফলে ধরিত্রী শুদু দুষণ হয়নি বরং বসবাসের অযোগ্য বলে বিবেচিত। এমনকি সভ্যতা ধ্বংসের আশংকা করছে নাসা। সম্প্রতি দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত এক সম্পাদকীয়তে ঘঅঝঅ (ঘধঃরড়হধষ অবৎড়হধঁঃরপং ড়ভ ঝঢ়ধপব অফসরহরংঃৎধঃরড়হ)- এর এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে-
শিল্পায়নভিত্তিক চলতি মানব সভ্যতা আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী ও সামাজিক বিজ্ঞানীদের সমন্বয়ে গঠিত নাসার একটি গবেষক দলের সদ্য প্রকাশিত গবেষণাতে এ আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। কি কারণে মানব সভ্যতা এমন এক আশঙ্কাজনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে তা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বাছবিচারহীনভাবে প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার এবং ক্রমবর্ধমান হারে সম্পদের অসম বণ্টনকে কারণ হিসাবে খুঁজে পেয়েছে বিজ্ঞানীরা। উল্লেখ করার বিষয় এই যে, কেবলমাত্র সাম্প্রতিক প্রবণতাগুলোর দিকে দৃষ্টি ফেলে এরকম সিদ্ধান্তে উপনীত হননি বিজ্ঞানীরা। বরং মানবসভ্যতা ধ্বংস হওয়ার আশঙ্কা নিয়ে গবেষণাকালে প্রাচীন সভ্যতাগুলোর বিলুপ্ত হওয়ার কারণের সাথে বর্তমানের প্রবণতাগুলোকে হিউম্যান অ্যান্ড নেচার ডাইনামিক্যাল (ঐঁসধহ ধহফ ঘধঃঁৎব উুহধসরপধষ) নামক একটি মডেল ব্যবহার করে তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করে দেখেছেন, নাসার গবেষকদল।
এ উত্তরণ থেকে বাঁচার জন্য গবেষকগণ দু’টি পথের কথা বলেছেন একটি হচ্ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য প্রশমন এবং অপরটি প্রকৃতিকে যথেচ্ছাভাবে ভোগ করার বর্তমান প্রবণতাতে অনতিবিলম্বে রশি টেনে ধরা।
উপরোক্ত রিপোর্টে এটা সূস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, মানুষ আজ তার মানবিক গুণাবলী (ঐঁসধহ য়ঁধষরঃরবং) তথা মানবতাকে ভুলণ্ঠিত করার কারণে পৃথিবীতে নেমে এসেছে মহাবিপর্যয়, যা মানবজাতির কাম্য নয়। তাই প্রখ্যাত দার্শনিক অধ্যাপক ড. আমিনুল ইসলাম ১৯৮৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চতর মানববিদ্যা গবেষণা কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যথার্থই বলেছিলেন, সমকালীন বৈজ্ঞানিক পরিবেশে মানবিক বিষয়ের প্রতি এই অবহেলা আর যাই হোক মানবতার পক্ষে যে কল্যাণকর নয়, এবং তাতে যে মানুষ যথার্থ মানবীয় উৎকর্ষের দিকে না এগিয়ে সর্বাত্মক ধ্বংসের মুখোমুখি হয়ে যেতে পারে এটিই আশঙ্কার ব্যাপার। কারণ, একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যায় যে, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিদ্যার অভাবিত সাফল্য ও অগ্রগতি মানুষের জন্য বিপুল বৈষয়িক সমৃদ্ধি বয়ে আনতে পারলেও, মানুষের দীর্ঘস্থায়ী সুখ কিংবা ব্যাপক কল্যাণের নিশ্চিতি দিতে পারে না। আর তা পারে না বলেই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অসম্ভবকে সম্ভব করার কৃতিত্ব নিয়েও সমকালীন মানুষ (বিশেষত বিত্তবান দেশসমূহের মানুষ) তার আপন জীবনের স্বরূপ ও লক্ষ্য, এবং মানুষ হিসেবে তার কারণীয় সম্পর্কে অতীতের চেয়ে অনেক বেশি অনিশ্চিত, অনেক বেশি দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অনাবিল আস্থা ও শুভবুদ্ধি হারিেেয় সুসভ্য মানুষ আজ লিপ্ত হয়ে পড়েছে স্বার্থের কুৎসিৎ লড়াই ও ভ্রান্ত আদর্শের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে। এই অবস্থাদৃষ্টে জনৈক চিন্তাবিদ হয়তো যথার্থই বলেছেন : মানুষ আজ পাখির মতো আকাশে উড়তে, মাছের মতো পানিতে সাঁতার কাটতে শিখেছে, কিন্তু শিখেনি তার নিজ আবাস মাটির পৃথিবীতে শান্তিতে বাস করতে।
একেই বলে ‘হিউম্যান প্রেডিক্যামেন্ট’ বা মানবসংকট। জাতি হিসেবে আমরা নিজেরাও এই বিশ্বব্যাপী সংকট থেকে মুক্ত নই। আমাদের অবস্থা বরং আরা বেশি আশঙ্কাজনক। আমরা আছি অর্থনৈতিক নৈতিক- এ দ্বৈত সংকটে।
ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও শোষণ-বঞ্চনার দিক দিয়ে আমরা পৃথিবীর সব অসহায় জাতির মধ্যে শীর্ষস্থানের অধিকারী এবং সে কারণেই বিত্তবান পৃথিবীর করুণার পাত্র। কিন্তু ন্যায়, সভ্য, সুনীতি প্রভৃতি মানবীয় গুণ বা মূল্যবোধের অনুশীলনে যে আমাদের অবস্থা অপেক্ষাকৃত উজ্জ্বল, তা-ও হলফ করে বলার উপায় নাই। কারণ অন্যান্য দেশের মতো এ দেশেও আজকাল সর্বক্ষণ ও সর্বত্র শোনা যাচ্ছে সনাতন মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নতুন মূল্যবোধের শূণ্যতার কথা। এখানেও আমরা প্রত্যক্ষ করছি দুর্নীতির ব্যাপক প্রাদুর্ভাব, প্রবীণদের হতাশা ও তরুণদের লক্ষ্যহীনতা নিঃসন্দেহে মারাত্মক। বলা বাহুল্য, এ সংকট যেকোনো বৈষয়িক বা অর্থনৈতিক সংকটের চেয়ে বেশি আশঙ্কাজনক। কারণ, কোনো জাতির অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়লে তাকে সহজেই পুনর্গঠিত বলা যায়, কিন্তু নীতিবোধ ও মূল্যবোধের অবহেলা ও অবমাননাপ্রসূত মানবীয় সংকট থেকে উত্তরণ লাভ তেমন সহজসাধ্য নয়।
আমার এসব কথা বলার লক্ষ্য শুধু একটিই। সেটি হলো, বর্তমান মানবসংকট থেকে পরিত্রাণ লাভ, তথা মানবতার জন্য যথার্থ নিরাপত্তা ও দীর্ঘস্থায়ী সুখ নিশ্চিত করতে হলে শুধু প্রযুক্তি ও বস্তুবিজ্ঞানে গবেষণা করলেই চলবে না, একই সঙ্গে ব্রতী হতে হবে মানুষের স্বরূপ সন্ধানে, তার সাংস্কৃতিক, নৈতিক ও নান্দনিক সত্তা গবেষণায়। আপন প্রয়োজনেই মানুষকে আজ গভীরভাবে ভাবতে হবে তার নিজেকে নিয়ে, অন্ন-বস্ত্র-ভিটামিন অনুসন্ধানের সাথে সাথে তাকে অনুসন্ধান করতে হবে সত্য, সুন্দর, ন্যায় ও সুনীতির স্বরূপ। কারণ এসব মূল্যবোধের চর্চা ও অনুশীলন ব্যতিরেকে নিছক বিষয়-সম্পদ মানুষকে যথার্থ মানবোচিত জীবনের সন্ধান ও মর্যাদা দেয় না, দিতে পারেও না।
সব ধর্মের যে মূলমন্ত্র মনুষ্যত্ব তাকে বিশ্বমানবের জন্য একমাত্র বাস্তব ধর্ম বলে আখ্যায়িত করা যায়। ধর্ম অর্থ মানবধর্ম অর্থাৎ মানবোচিত ধর্ম। মানব মাত্রই একটা জাতি। তার মধ্যে ভেদাভেদের তেমন কোন অর্থ হয় না। মানব জাতির সবার একধর্ম মানবধর্ম। বিশ্ব মানবের একটাই ধর্ম-মানবধর্ম। একমাত্র মানবধর্ম পালন করার মাধ্যমে সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্ব-সংসারে শান্তি আসতে পারে।
অসৎ কর্ম বা পাপরাশী মানব সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যায়, সাধু ব্যক্তির সৎকর্ম বিশ্বকে সে ধ্বংস হতে রক্ষা করে। যে সকল নীতি মানুষকে সৃষ্টির অনুকূলে কর্তব্য পালনে প্রবৃত্ত করে সে সবের সমষ্টিকে ধর্ম বলা হয়। সুতরাং এই ধর্মেই বিশ্ব জগতের প্রতিষ্ঠা। ধর্মাৎ পরং নাস্তি’ত অর্থাৎ ধর্ম থেকে বড় কিছু নাই।
মহামানবগণ যুগে যুগে ধর্মকে সজীব এবং সতেজ করে তেলার জন্য নবুয়তের যুগে নবি-রাসূলরূপে মোর্শেদ তথা শিক্ষকরূপে সমকালীন যুগের মানুষকে হেদায়েতের পথ দেখিয়েছেন, তদ্রƒপ বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্গণ এরই ধারাবাহিকতায় ধর্মকে সজীব ও সতেজ করে তোলেন।
তাঁদের মধ্য থেকেই যুগের ইমাম, মোজাদ্দেদ বা সংস্কারক হিসেবে অলী-আল্লাহ্গণ পৃথিবীতে আগমন করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে হযরত আবু হুরায়রা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- “ইন্নাল্লাহ্ ‘আয্যা ওয়া জাল্লাহ্ ওয়া ইয়াব’আছু লিহাযিহীল উম্মাতি ‘আলা রাছি কুল্লি মিয়াতি সানাতিন মাই ইউজাদ্দিদু লাহা দ্বিনাহা।” অর্থাৎ নিশ্চয়ই মহাপরাক্রমশালী সম্ভ্রান্ত আল্লাহ্ তায়ালা প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এ উম্মতের জন্য এমন এক ব্যক্তিকে প্রেরণ করেন, যিনি ধর্মকে সংস্কার অর্থাৎ- সজীব ও সতেজ করে তোলেন (মেশকাত শরীফ; পৃষ্ঠা-৩৬, আবু দাউদ শরীফ)।
এ কারণেই মহান আল্লাহ্ হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পরে ধর্মকে পুনর্জীবিত করার জন্য মোজাদ্দেদ হিসেবে বড় পীর হযরত মহিউদ্দিন আব্দুল কাদের জিলানী (রহ.), পরবর্তীতে হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী আজমিরী (রহ.), হযরত খাজা বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রহ.), হযরত মোজাদ্দেদ আল ফেসানী (রহ.), ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর মত অসংখ্য অলী-আল্লাহ্গণকে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন।
বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর শিরোভাগে এরই ধারাবাহিকতায় মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী যুগের ইমাম বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানকে ধর্মকে সজীব ও সতেজ করে তোলার জন্য বাংলাদেশে প্রেরণ করেছেন। যাঁর জীবদ্দশায় আজ মোজাদ্দেদ হিসেবে তাঁর বহু সংস্কার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশ-বিদেশে স্বীকৃতি পেয়েছে।
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লা মানুষকে আত্মদর্শন তথা আত্মপরিশুদ্ধির মাধ্যমে ব্যক্তিশুদ্ধি, সমাজশুদ্ধি, রাষ্ট্রশুদ্ধি এমনকি আন্তর্জাতিকভাবে মানুষে মানুষে ঐক্যের এবং ভাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করছেন। তিনি বলেন, আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে ব্যক্তিশুদ্ধ হয় এবং ব্যক্তিশুদ্ধির মাধ্যমে সমাজ শুদ্ধ হয়। সমাজশুদ্ধির মাধ্যমে রাষ্ট্রশুদ্ধ হয়। এ দর্শনই পৃথিবীতে মানবের মুক্তির ব্যবস্থা করতে সক্ষম।
মানবতার জন্য উৎসর্গিত সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী সম্পর্কে বিভিন্ন মনীষীদের অভিমত
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানের মানবতাবাদী দর্শন সম্পর্ক বলতে গিয়ে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রাক্তন প্রধান, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী গবেষক ও বহু গ্রন্থ প্রণেতা প্রফেসর (ড.) ওসমান গণী সাহেব বলেন,
হে সূফী সম্রাট!
হে মহান, হে মহৎ তব পরিচিতি
এ জগতে মানুষের পূর্ণ পরিণতি
আল্লাহ্র ‘মাহ্বুব’ তুমি তোমার জীবন
মানব সমাজে যেন সূর্যের কিরণ।
সাবেক প্রধান বিচারপতি সৈয়দ জে. আর মোদাচ্ছির হোসেন বলেন, সত্যিকার অর্থে ধর্ম ও বিজ্ঞানের সাথে যে কোন মতবিরোধ নেই। সূফী সম্রাট তাই ব্যক্ত করেছেন। বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা আছে, বিজ্ঞানের বাইরে যে অনন্ত জ্ঞান অর্থাৎ আধ্যাত্মিক জ্ঞানের পরিমণ্ডল রয়েছে তিনি তা ব্যাখ্যা করছেন। সমগ্র মানবজাতির জন্য ইসলাম যে একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা- সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী মানুষকে তা বুঝাতে চেষ্টা করেছেন।
প্রখ্যাত ইসলামী চিন্তাবিদ ও দার্শনিক জনাব দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সাহেব সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানের লিখিত বিতাব ‘আল্লাহ্ কোন্ পথে?’ মানবতার দর্শন সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, মানবাত্মা এ মাটির মধ্যেই মিশে রয়েছিল তার পরে তা থেকে বিবর্তনের নানা স্তর ভেঙ্গে তার গমন হচ্ছে স্বয়ং আল্লাহ্র আদর্শের পানে। মানবাত্মাকে কোন কোন সূফী দরবেশ আল্লাহ্রই এক অংশ বলে ধারণা করেছেন। আমাদের দেশের মরমী সাধক, ফকিরেরা তাকে নানাভাবে ধারণা করেছেন। লালন শাহ্ আল্লাহ্কে দেহের বহির্ভূত এক সত্তারূপে ধারণা করেছেন। হাসন রাজা তাঁকে সমগ্র সত্তারই এক চরমরূপ বলে স্বীকার করে বলেছেন, এ দুনিয়াতে যে মানুষ রয়েছে তারা প্রত্যেকেই সেই আদি সত্তারই একটি অংশ।
প্রকৃত অর্থে আল্লাহ্ থেকেই সব কিছুর উৎপত্তি এবং আল্লাহ্র মধ্যেই সব কিছুই বিলীন হবে। স্থান, কাল, পাত্র সবকিছুই আল্লাহ্ থেকে উদ্ভুত এবং কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্ হাজির নাজির থাকবেন। এ দুনিয়া তো বটেই বেহেশত, দোজখ এবং সবকিছুই আল্লাহ্র অস্তিত্ব থেকে উৎপত্তি। শেষ পর্যন্ত একমাত্র তিনিই থাকবেন এবং তাঁর অস্তিত্ব ব্যতিরেকে এ বিশ্ব চরাচরে আর কিছুই থাকবে না।
আমাদের এক্ষেত্রে মানব জীবনের মধ্যে দু’টো ভাগ স্বীকার করতে হবে। একটা পরিচালিত হয় শরিয়তের দ্বারা এবং অপরটা মারেফাত দ্বারা। শরিয়তের কাজ হচ্ছে আল্লাহ্র ইচ্ছা মত এ দুনিয়াতে তাঁর রাজত্বের প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহ্ হযরত রাসুল-ই-আকরাম (সা.)-কে পাঠিয়েছেন শিক্ষকরূপে, কুরআন-উল-কারীমকে পাঠিয়েছেন নির্দেশিকারূপে এবং তারই মধ্যে মানুষকে মর্দে মুমিন বা ইনসান-ই-কামিল তৈরি করার সব কিছুই রয়েছে। এভাবে ইনসান-ই-কামিল তৈরি হলেই এ দুনিয়ায় আল্লাহ্র রাজত্ব তৈরি হবে। তবে মানুষকে প্রকৃত মানুষ হতে হলে তার মধ্যকার সত্যিকার মানুষ স্বয়ং আল্লাহ্কে সম্পূর্ণভাবে বিকশিত করে তুলতে হবে। তার ফলেই এ দুনিয়ার মানুষ হবে স্বয়ং আল্লাহ্র এক ক্ষুদ্র সংস্করণ এবং তার দ্বারাই তার সৃষ্ট এ দুনিয়ার সব কিছুতেই সে আল্লাহ্র অস্তিত্বের সন্ধান পাবে।
বাংলাদেশ হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের ভাইস চেয়ারম্যান এবং রামকৃষ্ণ মিশনের সভাপতি বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা বলেন, হিংসায় উন্মত্ত আজকের বিপন্ন বিশ্বে মানুষের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন শান্তি ও স্বস্তির, যা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অভাবিত সাফল্য ও বৈষায়িক প্রাচুর্য দিতে সক্ষম নয়। একমাত্র ধর্ম-দর্শনের সম্যক উপলব্ধি ও উদার নৈতিক চিন্তা-চেতনার প্রচার ও প্রসারই এই সুকঠিন কাজটি সম্পন্ন করতে সমর্থ। সূফীবাদের বিশ্বজনীন উদার মানবতাবোধ আশাহত মানুষের জন্য আর্শীবাদস্বরূপ। বিশ্বের সকল বস্তুতে শ্রীমদ্ভগবদ গীতায় যে অখণ্ড ঐকতান ও অচ্ছেদ্য বন্ধনের সুর লহরীর কথা বিধৃত হয়েছে, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগীর জীবন্ত দর্শনে তাই প্রতিভাত।
যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মহামানব যাঁর সান্নিধ্যে এসে মানুষ নিজের ভিতর সুপ্ত মানবিক গুণাবলীকে বিকশিত করছেন। যাঁর সান্নিধ্যে আজ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষ ঐশী প্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মনুষ্যত্বকে জাগ্রত করতে পারছেন। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে সত্যিকার মানুষে পরিণত হচ্ছেন।
4 Comments
আমিন
আলহামদুলিল্লাহ্
আলহামদুলিল্লাহ্, মহাগুরুত্বপূর্ণপোষ্।
Alhamdulillah