মদ রিপুর প্রভাব ও প্রতিকার – ড. পিয়ার মোহাম্মদ
মদ শব্দের অর্থ অহংকার হলো দম্ভ, গর্ব, দর্প, মদ্য, প্রমত্ততা, বিহ্বল ভাব ইত্যাদি। এ মদ বা অহংকার রিপু হচ্ছে কাম, ক্রোধ ও লোভের অতি মাত্রায় বহিঃপ্রকাশ। অহংকার মানুষকে তার প্রকৃত অবস্থা থেকে বিকৃত করে দেয় এবং তার আসল রূপটি লোপ পায়। অহংকারী মানুষের অধিকাংশই আত্মশ্লাঘায় ভোগে। এই আত্মশ্লাঘা তার নিজের মধ্যে নিহিত আত্মবোধ বা আত্মদৃষ্টিকে ধ্বংস করে দেয়। সে পৃথিবীর সব কিছুকে তুচ্ছ এবং ধরাকে সরা জ্ঞান করে। অহংকার জীবনের অর্জিত বা সঞ্চিত যাবতীয় সম্পদকে চোখের নিমিষে ধ্বংস করে দিতে পারে। অহংকার হলো কোনো বিষয়ে নিজেকে বড়ো ভেবে অন্য মানুষকে তুচ্ছ মনে করা। অহংকার হচ্ছে ছোটোকে ছোটো বলে তাচ্ছিল্য করা। ধনী ব্যক্তি গরিব ব্যক্তিকে তাচ্ছিল্য করা বা গরিব বলে হেয় করা হলো অহংকার। এ অহংকার মানব জীবনে একটি মারাত্মক ব্যাধি, যা মানুষের অন্তর জগতকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়।
আল্লাহ্ পাক বলেন, “আমি ফিরিয়ে দেবো আমার আয়াতসমূহ থেকে তাদের যারা পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে অহংকার করে বেড়ায়।” (সূরা আ‘রাফ ৭: আয়াত ১৪৬) অন্যত্র আল্লাহ্ বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ ভালোবাসেন না অহংকারীদের।” (সূরা নাহল ১৬: আয়াত ২৩) এ প্রসঙ্গে দয়াল রাসুল (সা.) বলেছেন, “যার অন্তরে সরিষার দানা পরিমাণ অংহকার থাকে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে না।” (জামে তিরমিযী, হাদিস নং ২০০৪)
সমাজে যারা উঁচু স্তরে থাকেন তাদের মধ্যেই মদ রিপুর আধিক্য পরিলক্ষিত হয়। তারাই সমাজে অবস্থান পাকাপোক্ত করতে অত্যধিক ব্যাকুলতা প্রদর্শন করে থাকে। সাধারণ মানুষও তাদের মধ্যে এসব কর্মকাণ্ড দেখতে পছন্দ করেন। যিনি বুনিয়াদি বলে বিবেচিত হবেন, তার যদি একটু অহংকার নাই থাকলো তাহলে মানায় না, এটা কম বেশি সব সমাজেই প্রচলিত আছে। মদ বা অহংকার মানুষের আত্মাকে কলুষিত করে। মত্ততাও এ মদ রিপুর বৈশিষ্ট্য। এমতাবস্থায় মানুষ সর্বাধিক চঞ্চল হয়ে বাহ্যিকভাবে আমোদ প্রমোদে রত থাকে। সাধনার জন্য মনের স্থিরতা খুবই জরুরি বিধায় এ রিপু দ্বারা আক্রান্ত মানুষ সাধনায় সফল হতে পারে না। নিজকে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে ফেলে। অহংকারীকে কেউ পছন্দ করে না। মদ বা অহংকার অনেক বড়ো গুনাহ। আল্লাহ্ পাক অহংকারীর ব্যপারে কঠোর শাস্তি ঘোষণা করেছেন। আল্লাহ্ তায়ালা বলেন, “তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের প্রার্থনা মঞ্জুর করবো। অবশ্য যারা আমার ইবাদত থেকে অহংকার করে, অচিরেই তারা লাঞ্ছিত হয়ে জাহান্নামে দাখিল হবে।” (সূরা মু’মিন ৪০: আয়াত ৬০) অন্যত্র বলেন, “আর যখন আমি আদমকে সিজদা করার জন্য ফেরেশতাদের বললাম, তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে আদেশ অমান্য করল এবং অহংকার করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।” (সূরা বাকারা ২: আয়াত ৩৪) হযরত রাসুল (সা.) অহংকারীদের ব্যাপারে মু’মিন বান্দাদের সতর্ক করেছেন। তিনি বলেন, “আমি কি তোমাদের জাহান্নামিদের সম্পর্কে জানাবো না? তারা হলো কর্কশ স্বভাবের, শক্ত হৃদয়ের এবং অহংকারী।” (বুখারি শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৯৭)
কথায় বলে অহংকার পতনের মূল। অনেক সময় লক্ষ্য করা যায় যে মানুষ অনেক সাধনা ও ত্যাগ স্বীকার করে, যা কিছু অর্জন করে তা সে অহংকারের কারণে ধরে রাখতে পারে না। অহংকার ধীরে ধীরে তাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়। অহংকারী মানুষ আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য খুব বেশি পীড়াপীড়ি করে থাকে। সর্বত্রই চায় তার সর্বোচ্চ সাফল্য এবং তাতে আত্মঅহংকারে স্ফীত হয়ে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করার প্রাণান্তর চেষ্টায় বিভোর বিহ্বল হয়ে পড়ে। ফলে শ্রেষ্ঠত্বের স্বীকৃতিতো পায়ই না; উপরন্তÍ হীন ও ক্ষুদ্র বলেই স্বীকৃতি পায়। মদ রিপুর বশবর্তী মানুষের সাধারণত সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভক্তি থাকে না। মদ রিপু অসংযমী থাকলে মানুষ আমোদ-প্রমোদ, নাচ-গান নিয়ে মত্ত থাকে। ইবাদত করতে ভালো লাগে না, এতে আত্মা কলুষিত হয়ে থাকে।
অহংকার সকল পাপের মূল। একে আরবিতে বলা হয় উম্মুল আমরায অর্থাৎ সকল রোগের জননী। সৃষ্টি জগতের প্রথম পাপ হলো অহংকার, যা ইবলিশ শয়তান আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে হযরত আদম (আ.)-কে সিজদা করেনি। অহংকার করে সে মহান আল্লাহ্র আদেশে ফেরেশতার সরদার থেকে শয়তানে পরিণত হয়ে বেহেশত থেকে বিতাড়িত হয়েছিল। অহংকার তাই বিবেচিত হয় ভয়ঙ্কর আত্মিক রোগ হিসেবে। কোনো ধর্মীয় বিধানেই মদ বা অহংকারের কোনো স্থান নেই। মানুষ মদ রিপুর কারণে দম্ভভরে সত্যকে প্রত্যাখান করে, নিজকে অন্যের চেয়ে বড়ো মনে করে, অন্যের আনুগত্য ও সেবা করাকে নিজের জন্য অপমানজনক মনে করে। সে লোকের কাছে নিজের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করে, মানুষের প্রতি অসদ্ব্যবহার করে এবং তাদের প্রতি কঠোর ভাব প্রকাশ করে। শক্তি বা বুদ্ধির জোরে অন্যের হক নষ্ট করে, অধীনস্তদের প্রতি দুর্ব্যবহার করে, তাদেরকে নিকৃষ্টভাবে খাটায় এবং মিথ্যা বা ভুলের উপর জিদ করে। আল্লাহ্ তায়ালা অহংকারী ব্যক্তিকে পছন্দ করেন না। তিনি বলেন, “নিশ্চয় আল্লাহ্ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে ভালোবাসেন না।” (সূরা লুকমান ৩১: আয়াত ১৮) হযরত রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেন: ইজ্জত সম্মান তাঁর (আল্লাহ্র) ভূষণ এবং অহংকার তাঁর চাদর। যে ব্যক্তি এই ব্যাপারে আমার (অর্থাৎ আল্লাহ্র) সঙ্গে ঝগড়ায় অবতীর্ণ হবে আমি তাকে অবশ্যই শাস্তি দেবো।” (মুসলিম শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২৯) এ অহংকারকে নিয়ন্ত্রণ করে সৎকর্মে লাগানোর মধ্যেই মানুষের কৃতিত্ব নির্ভর করে। অহংকার রিপুও মানুষের প্রয়োজনে সৃষ্টি তবে এর দক্ষ ব্যবহার কাম্য। এ রিপু আমাদের চলার পথে সব সময়ের সাথি। এটি ডাক্তারের আলমারিতে সাজানো ঔষধের শিশির মতো। যা প্রয়োজনমতো ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যায়। অন্যথায় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এটিকে মোটর গাড়ির সম্মুখে রাখা আগুনের বাক্সের সাথেও তুলনা করা যায়। যাকে সব সময় ঠাণ্ডা রাখতে হয় এবং গিয়ার পরিবর্তন করে প্রয়োজনমতো ব্যবহার করতে হয়। সেজন্য এ রিপু সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অহংকারের আগুন জ্বলে উঠলে মানবগাড়িকে পুড়িয়ে ফেলতে পারে।
আবার কেউ কেউ অহংকারের বিষয়ে ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন। কেউ যদি সুন্দর জামা গায়ে ও পরিষ্কার জুতা পায়ে দিয়ে হেঁটে যায় তবে মনে হতে পারে সে অহংকারী। আসলে তা নয়, বরং মহান আল্লাহ্ সুন্দর এবং তিনি সুন্দরকে পছন্দ করেন। এটি অহংকার নয়, অহংকার হলো সত্যকে দম্ভের সাথে পরিত্যাগ করা এবং মানুষকে তুচ্ছ জ্ঞান করা। সর্বদা নিজকে অন্যের চেয়ে বড়ো মনে করলে এবং সেই মোতাবেক অন্যের কাছে মূল্যায়ন আশা করলে সে হবে অহংকারী। এসব লোক মনে করে তার কাছে যা আছে অন্যের কাছে তা নেই। অন্যের চেয়ে তার মান অনেক বেশি। আত্মঅহংকারী হওয়া খুবই মারাত্মক। কুফরির মূল উৎস অহংকার। অহংকার মানুষের ভিতরে লুকায়িত একটা বিষের নাম। একে নিশ্চিহ্ন করা যায় না, দমিয়ে রাখতে হয়। সেজন্য বেশ কিছু আত্মিক চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। নিজের সৃষ্টি ও মৃত্যুর কথা সর্বদা স্মরণ করতে হয়, আখিরাতে জবাবদিহিতার ভয়ে ভীত থাকতে হয়, যে সব বিষয় মনে অহংকার সৃষ্টি করে, সেগুলি সম্পর্কে চিন্তা করা যে, এগুলিতে অহংকার করার মতো কিছু নেই। আল্লাহ্ আমার সব কাজ দেখছেন এবং সব কথা শুনছেন, দৃঢ়ভাবে এ বিশ্বাস পোষণ করতে হয়। গরিব ও এতিমদের সাথে থাকতে এবং রোগীর সেবা করতে হয়। নিজের সৎকর্মগুলো আল্লাহ্র দরবারে কবুল হচ্ছে কিনা সেই ভয়ে ভীত থাকতে হয়। ভুলক্রমে অহংকার প্রকাশ পেলে সঙ্গে সঙ্গে বান্দার কাছে এবং আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাইতে হয়। অহংকারী পোশাক ও চালচলন পরিহার করতে হয়। গোপন আমল করতে হয়। আল্লাহ্র ভয়ে ক্রন্দন করতে হয়। মানুষকে ক্ষমা করা শিখতে হয়, নম্র ব্যবহার অনুশীলন করতে হয় এবং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়।
মদ রিপু থেকে মুক্তি পেতে হলে সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভক্তি এবং বিশ্বাস থাকা প্রয়োজন। ভাবা দরকার সে যা কিছু করেছে, বা পেয়েছে, তা সবই মহান স্রষ্টার কৃপায়। সমাজের উঁচু তলার লোকের দিকে নজর না দিয়ে, গরিব দুঃখী ও শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের দিকে গভীরভাবে মনোযোগ নিবিষ্ট করলে ক্রমে ক্রমে অহংকার রিপু থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জ্ঞান যত বাড়বে, অহংকার তত কমবে; আর জ্ঞান যত কমবে, অহংকার তত বাড়বে। সেজন্য অহংকার থেকে মুক্তি পেতে প্রকৃত জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে হয়। অহংকার থেকে বেঁচে থাকার জন্য শুধু আকাক্সক্ষায় যথেষ্ট নয়, বরং অহংকার থেকে বাঁচার জন্য পার্থিব অবস্থানের কথা সব সময় চিন্তা করতে হবে। না হলে শয়তানের প্ররোচনায় পদচ্যুত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমাদের মধ্যে জন্ম, মৃত্যু ও আল্লাহ্র সামনে জবাবদিহিতার অনুভূতি তৈরি হলে আর অহংকার থাকতে পারে না। আমি কোনো কিছুর মালিক হলে অহংকার হতে পারে। আমিতো আসলে কোনো কিছুর মালিক নই। আমার বলে যা কিছুকে জানি সবই আমাকে দেওয়া হয়েছে ব্যবহার করার জন্য। সব ফেলে চলে যেতে হবে। আমার হলে ফেলে যেতে হবে কেন। এগুলি একনিষ্ঠভাবে ভাবলে অহংকার থাকতে পারে না। পবিত্র কুরআন আমাদের অহংকার থেকে মুক্ত থাকার পথ বাতলে দিয়েছেন। এ পথ হলো শোকর ও কৃতজ্ঞতার পথ। বান্দা যখন শোকর আদায় করবে, কৃতজ্ঞতায় সিজদাবনত হবে, সব কিছুকেই আল্লাহ্র নিয়ামত বলে মনে প্রাণে স্বীকার করবে। তখন তার কাছে অহংকার ভিড়তে পারবে না। শোকর করার অর্থইতো হলো আমার যা প্রাপ্তি, সবই আল্লাহ্র নিয়ামত ও অনুগ্রহ। এখানে আমার কোনো কৃতিত্ব নেই। এ ভাবনা যার মনে জাগরূক থাকে, অহংকার তার মনে বাসা বাঁধতে পারে না কোনোভাবেই।
মানুষকে ভাবতে হবে তাদের উৎপত্তি হয়েছে গন্ধময় বীর্যে, সমাপ্তি গলিত লাশে আর এ দুয়ের মাঝে অবস্থান এক বিষ্ঠাবাহী দেহে। তাহলে অহংকারের সুযোগ কোথায়। আজকে যিনি অনেক ধন সম্পদের মালিক কে নিশ্চয়তা দিতে পারে যে কালকে তার এ সম্পদ থাকবে, আবার যার আজ কিছু নেই কাল যে অনেক কিছু হয়ে যাবে না, তাই বা কে বলতে পারে। কেউ যদি ইসলামের নামকরা খাদেম হয়ে থাকেন তারও অহংকার করার সুযোগ নেই। তার চেয়ে ইবাদত-বন্দেগিতে, ইলমে-আমলে সর্বক্ষেত্রে দূর্বলের প্রতিও তাচ্ছিল্য ভাব দেখানোর সুযোগ নেই। আল কুরআনে বলা হয়েছে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্র কাছে সবচেয়ে সম্মানিত সেই, যে তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে মুত্তাকী।” (সূরা হুজুরাত ৪৯: আয়াত ১৩) তাই যাকে আমলে দুর্বল ভাবছি কে জানে তাকওয়ার শক্তিতে আল্লাহ্ তায়ালার দৃষ্টিতে সে সবল হয়ে উঠেছে কিনা? হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “আমি কি তোমাকে জান্নাতের বাদশাহদের সম্পর্কে অবহিত করবো না। আমি বললাম: হাঁ। তিনি বললেন: দুর্বল লোকদের দৃষ্টিতে সর্বাপেক্ষা নিম্নস্তরের এবং দুটো ছিন্ন বস্ত্র পরিহিত ব্যক্তি, যাকে হিসাবে গণ্য করা হয় না। সে যদি আল্লাহ্র নামে কোনো বিষয়ে শপথ করে, তা অবশ্যই তিনি সত্যে পরিণত করেন। সে হবে জান্নাতের বাদশাহ।” (সুনানে ইবনে মাজাহ্, পৃষ্ঠা ৩০৩)
এত কিছু করার পরও অহংকারমুক্ত হওয়া কঠিন। পুরোপুরি অহংকারমুক্ত হওয়ার জন্য একজন কামেল অলী-আল্লাহ্র শরণাপন্ন হয়ে তাঁর নির্দেশমতো আমল ও মোরাকাবা করতে হয়। মোর্শেদের দরবারে গোলামি করতে হয়। ইচ্ছাকৃতভাবে নিচু স্তরের কাজ করে নিজের অহংকার কমাতে হয়। সামাজিকভাবে মানুষের উপর অহংকার ভর করে তার শিক্ষা, দীক্ষা ও পদপদবির কারণে। মানুষ যদি এসব ভুলে ইচ্ছাকৃতভাবে তার নিজ মর্যাদার চেয়ে নিচু স্তরের কাজ নিজ হাতে করে, তাহলে তার অহংকার কমে যায়। সেকারণে মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) তাঁর মুরিদদের জন্য দরবার শরীফে গোলামির ব্যবস্থা চালু করেন। সেখানে গেলে দেখা যাবে অনেক উঁচু স্তরের লোক ঘর মুছামুছি, রান্না এমনকি টয়লেট পরিষ্কার কাজেও নিয়োজিত আছেন। নিজেদেরকে গোলাম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করছেন। এতে আশেকে রাসুলদের মন থেকে অহংকার দূরীভুত হচ্ছে। মোহাম্মদী ইসলামের বর্তমান নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর নিজেও দয়াল মোর্শেদের গোলাম হিসেবে পরিচয় দিয়ে গোলামির কাজে নিয়োজিত থাকেন। সেজন্য মোহাম্মদী ইসলামের ছায়াতলে এসে আশেকে রাসুলগণ অহংকারমুক্ত জীবন যাপন করতে পারেন।
অহংকার নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজকে জানা এবং আল্লাহ্কে জানার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হয়। সেজন্য প্রয়োজন মহান আল্লাহ্র ধ্যানে মগ্ন হওয়া। প্রকৃতপক্ষে ধ্যান বা মোরাকাবার মাধ্যমেই মানুষের ভিতরে মৌলিক পরিবর্তন আসে এবং মানুষ নিরংকারী হয়ে উঠে। এ ধ্যান সাধনা করেই সকল নবি-রাসুল নিরংকার জীবন যাপন করে গেছেন। আমাদের মহান মোর্শেদ মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারি, তাসাউফ বিজ্ঞানী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) সারা জীবন মানুষকে অহংকার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শান্তির চরিত্র ধারণ করে দয়াল রাসুল (সা.) ও দয়াল প্রভুর করুণা পাওয়ার জন্য আশেকে রাসুলদের শিক্ষা দিয়ে গেছেন। তাঁর শিক্ষানুযায়ী আশেকে রাসুলগণ ক্বালবে আল্লাহ্র জিকির জারি এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ ও দয়াল রাসুল (সা.)-কে চিনতে পেরেছেন। যার ফলে তাদের অন্তর থেকে অহংকার দূরীভূত হয়েছে। তাঁর সংস্পর্শে আসলেই মানুষের ভিতরে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। অনেক তীব্র অহংকারী মানুষও তার কাছে এসে দয়াময়ের অপার দয়ায় অহংকার মুক্ত হয়ে আল্লাহ্ পাকের প্রকৃত গোলামে পরিণত হয়েছেন।
দয়াল মোর্শেদের ওফাতের পর ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ-খোদা (মা. আ.) হুজুর মানুষের মুক্তির জন্য মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে বর্তমানে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি অহংকার ত্যাগ করে চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনের শিক্ষা গ্রহণের জন্য সবাইকে তাগিদ দিচ্ছেন। তাঁর মাধ্যমে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের শিক্ষা গ্রহণ করে সফল হওয়া সম্ভব। তিনি মুরিদের গোলামির জন্য দয়াল মোর্শেদের জীবদ্দশায় ‘মোর্শেদের দরবারে মুরীদের করণীয়’ গ্রন্থ রচনা করেন। এছাড়া তিনি ‘মোহাম্মদী ইসলামের তালিম’ নামে একজন মু’মিনের সারা জীবনের করণীয় সম্পর্কে সুষ্পষ্ট বিধান সংবলিত মূল্যবান পুস্তক রচনা করেছেন। তাঁর নির্দেশনা মোতাবেক আমল করতে পারলে দয়াময়ের ইচ্ছায় আশা করা যায় মুরিদ অহংকারমুক্ত হতে পারবেন।
ষড়রিপুর মধ্যে মদ রিপুটি অতীব স্পর্শকাতর। অণু পরিমাণ এ রিপু কারো মধ্যে বিরাজ করলে সে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেজন্য এ অহংকার থেকে দূরে থাকার অনুশীলন করা দরকার। এ অনুশীলনে সহায়তা করার জন্য মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী মহামানব ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর তাঁর দরজা সকল মানুষের জন্য সব সময় খোলা রেখেছেন। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন আমরা যেন তাঁর কদম মোবারকে হাজির থেকে অহংকারমুক্ত হয়ে সফলকাম হতে পারি। আমিন।
[লেখক: ইসলামি গবেষক; সাবেক অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার]