মহান ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.)
অধ্যক্ষ মো. নিয়ামুল কবির
বিপন্ন মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে নবুয়ত ও রেসালতের যুগে নবি-রাসুলগণ মহান আল্লাহ্ কর্তৃক প্রেরিত হন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন- “আমি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। আর এমন কোনো উম্মত ছিল না, যাদের মধ্যে কোনো সতর্ককারী আসেনি।” (সূরা ফাতির ৩৫: আয়াত ২৪)
নবি অর্থ সংবাদদাতা, রাসুল অর্থ প্রতিনিধি বা প্রেরিত পুরুষ। যে সকল পয়গাম্বর আল্লাহর কাছ থেকে বিধান নিয়ে আসতেন তাদের রাসুল বলা হতো। সুতরাং নবিরা রাসুলের অনুগামী ছিলেন। যিনি শুধু নবি তিনি সম্মানিত হন আলাইহিস সাল্লাম বলে। আর যে মহামানব একাধারে নবি ও রাসুল তিনি কখনো শফিউল্লাহ, কখনো খলিলুল্লাহ, কখনো কালিমুল্লাহ, কখনো রহমিুল্লাহ বলে সম্মানিত হন। আর যে মহামানব নবিদের নবি, রাসুলদের রাসুল তিনি কখনো হাবিবুল্লাহ্, কখনো ইমামুল মুরসালিন, কখনো রাহমাতুল্লিল আলামিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে সম্মানিত হন। সর্বশেষ নবি ও রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানবের সিরাজুম মুনিরা (প্রজ্বলিত প্রদীপ)-এর উত্তরাধিকারী হলেন বেলায়েতের যুগের ইমাম, জামানার মোজাদ্দেদ কিংবা ইমামে আজম প্রমুখ হাদি শ্রেণির অলী-আল্লাহ্গণ। সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) ছিলেন জামানার উলুল আজম মোজাদ্দেদ। ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর হলেন মহান ইমাম, যিনি পথহারা মানুষের মুক্তির দিশারি এবং মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-কে লাভ করার পথপ্রদর্শক।
ইমাম শব্দটি আরবি। যার অর্থ নেতা, প্রধান, দিকনির্দেশক, ইত্যাদি। যেমন- মাজহাবের ইমাম, তরিকার ইমাম, ইত্যাদি। মহান রাব্বুল আলামিন মানবজাতিকে শান্তি ও মুক্তির পথপ্রদর্শনের জন্য যুগ পরিক্রমায় মহামানব প্রেরণ করে আসছেন। এ সকল মহামানবকে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নবি, রাসুল, মোজাদ্দেদ, যুগের ইমাম ও অলী-আল্লাহ্ ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ পৃথিবীতে আল্লাহ্র প্রেরিত সর্বপ্রথম নবি হলেন- মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম (আ.) এবং সর্বশেষ নবি ও রাসুল হলেন- কুল কায়েনাতের রহমত, সকল নবি ও রাসুলের ইমাম হযরত মোহাম্মদ (সা.)। নবুয়তের যুগে মহান আল্লাহ্ যে সকল নবি ও রাসুলকে প্রেরণ করেছেন, ওহির বাণী আল কুরআনে প্রেরিত এ সকল মহামানবকে ‘ইমাম’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকেই সমকালীন যুগে ধর্মীয় নেতা তথা যুগের ইমামরূপে দায়িত্ব পালন করেছেন। যেমন- মুসলিম জাতির আদি পিতা হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ্ (আ.)। মহান আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহিম (আ.)-কে যুগের ইমাম মনোনীত করেন, অতঃপর এ মহামানবের মাধ্যমে মুসলিম জাতি সত্তার গোড়া পত্তন করেন। এ মহামানবের ওফাতের পর ধর্ম পরিচালনায় নবি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাঁর সুযোগ্য সম্মানিত দু’জন সাহেবজাদা হযরত ইসমাঈল জবিহুল্লাহ (আ.) এবং হযরত ইসহাক (আ.)। এমনিভাবে হযরত ইসহাক (আ.)-এর ওফাতের পরে ধর্ম পরিচালনায় নবি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাঁরই সুযোগ্য সম্মানিত সাহেবজাদা হযরত ইয়াকুব (আ.)। তারপর ধর্ম পরিচালনায় নবি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর সম্মানিত সাহেবজাদা হযরত ইউসুফ (আ.)। এমনিভাবে আম্বিয়ায়ে কেরামের বংশপরম্পরায় আল্লাহর ধর্ম পরিচালিত হয়েছে।
নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ্গণ ‘ইমাম’ নামে মোহাম্মদী ইসলামের পতাকাবাহীরূপে দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ নবুয়ত যুগ সমাপ্ত হওয়ার পর মহান আল্লাহ্ যুগের ইমামরূপে মহামানব প্রেরণ করে তাঁদের মাধ্যমে হিদায়েতের কাজ পরিচালনা করেন। আর এজন্যই আমাদের দয়াল রাসুল (রা.) কেয়ামত পর্যন্ত আগত সকল উম্মতে মোহাম্মদীকে যুগের ইমামের আনুগত্য করার প্রয়োজনীয়তা বলেছেন। যেমন যুগের ইমামের আনুগত্য প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে, কিন্তু সে তার যুগের ইমামের পরিচয় লাভ করতে পারেনি, সে জাহেলি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।” (মুসনাদে ইমাম জাফর সাদেক ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ৫১৮ ও ৫১৯)
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর যে সাধারণ ব্যক্তি নন, তাঁর শিশুকালেই সেটা প্রকাশ পেয়েছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান তাঁর সম্পর্কে বলেন- “আমার সাত সন্তানের মাঝে সে পঞ্চম। মাতৃগর্ভের সাত মাস বয়সেই সে দুনিয়াতে আগমন করে। জন্মের সাত দিনের মাথায় আমি আমার দুই হাতের দুটি আঙ্গুল তার দিকে বাড়িয়ে দিয়েছিলাম, সে আমার আঙ্গুল দুটি শক্তভাবে ধরে শোয়া থেকে দাঁড়িয়ে আল্লাহ্ প্রদত্ত উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দিয়েছিল। শিশু বয়সে সে যখন বসতে পারতো না, তখনকার সময় আমি যখন তার মায়ের সাথে তরিকার বিষয়ে আলাপ-আলোচনা করতাম, তখনই তার জজবাহ্ হয়ে যেত। আল্লাহর প্রেমের হালতে সে বিছানায় গড়াগড়ি খেত।”
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) ১৯৮৫ সালের ১৬ই জুন পবিত্র রমজান মাসে লাইলাতুল কদরের মহিমান্বিত রজনিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষাতে কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হন। অতঃপর তিনি দি পিপল্স ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ-এর ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) পরীক্ষায় মেধা তালিকায় প্রথম স্থান অর্জন করেন। তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পরীক্ষায় সবগুলো বিষয়ে A+ পেয়ে মেধা তালিকায় প্রথম স্থান লাভ করেন এবং চ্যান্সেলর’স অ্যাওয়াডের জন্য মনোনীত হন। এমএ পরীক্ষায় তাঁর এই অসাধারণ ফলাফলের জন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান তাঁকে গোল্ড মেডেল প্রদান করেন। ছাত্রাবস্থায় অত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন কালচারাল প্রোগ্রামে তিনি অসাধারণ যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখেন। তাঁর নেতৃত্ব ও সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তৎকালীনর ভাইস চ্যান্সেলর ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী তাঁকে ‘ইবংঃ খবধফবৎংযরঢ় অধিৎফ’ প্রদান করেন। এছাড়া তিনি দক্ষ সংগঠকের স্বীকৃতিস্বরূপ আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ থেকে ‘Community Leadership Award’ পান। তিনি এলএল.বি (অনার্স) এবং এলএল.এম পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণি অর্জন করেন। তিনি আয়ারল্যান্ড থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি লাভ করেন।
ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ১৯৯৪ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ইনসানিয়াত ক্লাব গড়ে তুলেন। তিনি ক্লাবের সদস্যদেরকে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ হৃদয়ে ধারণে তালিম দেন। ফলে এলাকার যুব স¤প্রদায়ের মাঝে আদর্শ চরিত্র গঠন সম্ভব হয়। ২০১০ সালে তাঁর তোলা সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের দুর্লভ ছবি মোবারক নিয়ে রাজধানীর ধানমন্ডির দৃক গ্যালারিতে Photography Exibition-এর আয়োজন করা হয়, যা ছিল বিশ্বের ইতিহাসে কোনো মহান অলী-আল্লাহ্কে নিয়ে প্রথম চিত্র প্রদর্শনী। এই চিত্র প্রদর্শনী সমাজের সর্বস্তরের মানুষের নিকট বেশ প্রশংসিত হয়। ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুর মোহাম্মদী ইসলামের দৈনন্দিন আমলের অ্যাপ ‘পিউরিটি’ চালু করেন। এই অ্যাপে রয়েছে নামাজের সময়সূচি, তাসবিহ গণনা, পূর্ণাঙ্গ কুরআন শরীফ, প্রতিটি সূরার বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ, শুদ্ধ উচ্চারণসহ তেলাওয়াত এবং পবিত্র কুরআনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হাদিস ও হাদিসের বাংলা ও ইংরেজি অনুবাদ। এছাড়া অ্যাপব্যবহারকারী পাচ্ছেন মোহাম্মদী ইসলামের ওয়াজিফার পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি, মোহাম্মদী ইসলামের প্রধান চারটি শিক্ষার বিস্তারিত বিবরণ, মসজিদ লোকেশন, কেব্লা নির্ধারণ এবং দরবার থেকে প্রকাশিত সকল প্রকাশনা পড়ার সুযোগ। শুধু তাই নয়, এই অ্যাপে রয়েছে ডিজিটাল শপ, যেখান থেকে ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’-সহ দরবারের সকল প্রকাশনা ঘরে বসে কেনা যাবে। ‘পিউরিটি’ অ্যাপটিতে অনলাইন কোর্সের সুব্যবস্থা রয়েছে, যার মাধ্যমে আশেকে রাসুলেরা মোহাম্মদী ইসলামের আমলের যাবতীয় শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ পাবেন এবং অনলাইনে পরীক্ষাও দিতে পারবেন।
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কিশোর বয়সে তিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় সফর করেন। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাবা দেওয়ানবাগীর শিক্ষা ও আদর্শ ছড়িয়ে পড়ে। তাঁর প্রচেষ্টায় মোহাম্মদী ইসলামের তালিমের কেন্দ্রবিন্দু খানকাহ শরীফ ও জাকের মজলিসের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পায়। বহির্বিশ্বে মোহাম্মদী ইসলামের জাগরণ আনার লক্ষ্যে তিনি আন্তর্জাতিক সফর করেন। ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মোহাম্মদী ইসলামের নবজাগরণ সূচিত হয়। তিনি বাবা দেওয়ানবাগীর আদর্শ প্রচারের জন্যে ৩০টির বেশি দেশ সফর করেন। তিনি যে দেশেই গিয়েছেন, সেখানেই মোহাম্মদী ইসলামের জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। তাঁর প্রচেষ্টায় আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নাগরিকেরা বাংলাদেশে ছুটে আসছেন সূফী সম্রাটের আদর্শ গ্রহণের জন্য।
পরিশেষে বলা যায়, মহান ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ. ) হুজুর মোহাম্মদী ইসলামের আকাশে ধ্রবতারা হয়ে জগতের বুকে আবির্ভূত হয়েছেন। তাঁর শুভ জন্মদিনে আমরা অবনত চিত্তে শত কোটি সালাম ও কদমবুসি জানাই।
সহায়ক গ্রন্থ ও অন্যান্য:
১. মোর্শেদের দরবারে মুরীদের করণীয়, ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.), তাসাউফ পাবলিকেশন্স, বাবে রহমত কমপ্লেক্স, ১৪৭ আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
২. মুক্তি কোন পথে? সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.), আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্র, দেওয়ানবাগ শরীফ, বাবে রহমত, ১৪৭ আরামবাগ, ঢাকা-১০০০
৩. মোহাম্মদী ইসলামের তালিম, ইমাম প্রফেসর ড. আরসাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.), তাসাউফ পাবলিকেশন্স, ১৪৭/২ আরামবাগ, মতিঝিল, ঢাকা-১০০০
[লেখক: অধ্যক্ষ, নবযুগ কলেজ, কুশুরা, ধামরাই, ঢাকা]