মহাপাপী আল্লাহর রহমতে ক্ষমা লাভ করে জান্নাতি হলো
আল্লামা বগভী (রহ.) দামদাম ইবনে হাওশ থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন- “আমি মদীনার মসজিদে প্রবেশ করলাম। জনৈক বৃদ্ধ লোক আমাকে ডেকে বললো- হে ইয়েমেনবাসী! এদিকে আসুন (আমি কিন্তু তাকে চিনতাম না)। এরপর তিনি বললেন, কাউকে কোনো দিন এ কথা বলবেন না যে, আল্লাহ্ তোমাকে ক্ষমা করবেন না এবং তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। তখন আমি বললাম- আল্লাহ্ আপনাকে দয়া করুন। আপনি কে জানতে পারি কি? তিনি বললেন- আমি আবু হুরায়রাহ। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আমি বললাম- আমাদের কেউ কেউ ক্রোধান্বিত হয়ে তার পরিবারের কাউকে কিংবা তার স্ত্রীকে কিংবা খাদেমকে এরূপ বলে থাকে। হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন, তাহলে শোন- আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন- বনী ইসরাঈলের মধ্যে দু’জন লোক ছিল, যারা পরস্পর বন্ধু ছিল। একজন যথাসাধ্য ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকত। অপরজন ছিল পাপাচারী। প্রথমজন দ্বিতীয় জনকে বলতো- পাপাচার থেকে বিরত হও। পাপী ব্যক্তি জবাবে বলতো- আমার গুনাহর বিষয়টি আমার ও আমার প্রতিপালকের মাঝে ছেড়ে দাও। তুমি কি আমার উপর খবরদারী করতে প্রেরিত হয়েছ? একদা আবেদ লোকটি বলল- আল্লাহ্ তায়ালা কখনো তোমাকে ক্ষমা করবেন না। আর তিনি কখনো তোমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন না। আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন- তখন আল্লাহ্ তায়ালা তাদের উভয়ের নিকট একটি মৃত্যুর দূত প্রেরণ করেন এবং রূহ কবজ করে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। অতঃপর তাদের দু’জনকেই আল্লাহর সম্মুখে উপস্থিত করা হলো। মহান রাব্বুল আলামিন পাপী ব্যক্তিকে বললেন- আমার দয়ায় তুমি জান্নাতে চলে যাও। আর অপর ব্যক্তিকে বললেন- আমার বান্দার উপর রহমত বর্ষণে তুমি বাধা দিতে পারো কি? সে বললো- না, হে আমার প্রতিপালক! তখন আল্লাহ্ তায়ালা নির্দেশ দিলেন- এ আবেদকে জাহান্নামে নিয়ে যাও। হযরত আবু হুরায়রাহ (রা.) বলেন- ঐ আল্লাহর শপথ যাঁর হাতে আমার জীবন! আবেদ ব্যক্তি এমনই একটি কথা বললো, যা তার দুনিয়াও ধ্বংস করলো আখিরাতও ধ্বংস করল।” (তাফসীরে মাজহারী ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৩)
প্রিয় পাঠক! হাদিস শরীফে ঘটনাটি আপনারা অবগত হলেন। এ ঘটনা কি প্রমাণ করে না যে, আল্লাহ্ চাইলে যে কাউকে ক্ষমাও করতে পারেন আবার শাস্তিও দিতে পারেন? তিনি যদি পৃথিবীর সকল মানুষকে ক্ষমা করে দেন, তবে এমন কেউ নেই যে, তাঁর কাছে কৈফিয়ত চাইতে পারে। এ জন্য হযরত ইব্রাহিম (আ.) বলেছিলেন- হে আমার পিতা! আমি অবশ্যই আপনার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করব। কিন্তু ক্ষমা করা অথবা না করা- এটি আল্লাহর এখতিয়ার, এ ব্যাপারে আমার কোনো অধিকার নেই।
(তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী ৪র্থ খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৭)