Cancel Preloader

মহামানবগণের অনুসরণই ধর্ম – হযরত এম. আমিরুল ইসলাম

মহান রাব্বুল আলামিন জগতসমূহের সৃষ্টিকর্তা। তিনি আমাদের মহান স্রষ্টা। সকল সৃষ্টি মহান আল্লাহ্র ইচ্ছায় পরিচালিত হয়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে, “সূর্য ও চন্দ্র হিসাবমতো আবর্তন করে, আর তৃণলতা ও বৃক্ষ উভয়ই তাঁর অনুগত।” (সূরা আর রহমান ৫৫: আয়াত ৫-৬) পৃথিবীর সবকিছুই মহান আল্লাহ্র ইচ্ছায় পরিচালিত হয়। মানুষকে সঠিক পথে তুলে আনার জন্য মহান আল্লাহ্ নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণকে প্রেরণ করেছেন।


মহামানবগণের পথই ‘সিরাতুল মোস্তাকিম’ বা সরল পথ বুঝানো হয়েছে। সাধারণ মানুষকে কোন পথে চলতে হবে- এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন-“ইহদিনাস সিরাত্বাল মুসতাক্বীম, সিরাত্বাল্লাযীনা আন‘আমতা ‘আলাইহিম।” অর্থাৎ- “দেখাও আমাদের সরল সোজা পথ। সেই লোকদের পথ, যাদের তুমি অনুগ্রহ করেছ।” (সূরা ফাতিহা ১: আয়াত ৫ ও ৬) এখানে মহান আল্লাহ্র নিয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পথে চলার প্রতি নামাজে আমরা প্রার্থনা করি। এখন জানার বিষয় নিয়ামতপ্রাপ্ত ব্যক্তি কারা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন- “আর যে ব্যক্তি আনুগত্য করবে আল্লাহ্ ও রাসুলের এরূপ ব্যক্তিরা সে ব্যক্তিদের সঙ্গী হবেন, যাঁদের প্রতি আল্লাহ্ অনুগ্রহ করেছেন, তাঁরা হলেন নবি, সিদ্দিক, শহিদ এবং সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিবর্গ।” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ৬৯) এখানে সালেহিন বা সৎকর্মপরায়ণ ব্যক্তিবর্গ বলতে পবিত্র আত্মার অধিকারী তথা আল্লাহ্র অলীগণকে বুঝানো হয়েছে। তাই নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণ যে পথ দেখিয়েছেন, তাই হলো সরল পথ।


পবিত্র কুরআনে হযরত রাসুল (সা.)-এর উত্তম আদর্শ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন- “তোমাদের জন্য রয়েছে আল্লাহ্র রাসুল (সা.)-এর জীবনে উত্তম আদর্শ।” (সূরা আল আহযাব ৩৩: আয়াত ২১) হযরত রাসুল (সা.) হলেন উত্তম আদর্শ। সেজন্য কালেমা, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ, কোরবানি-সহ ইসলাম ধর্মের প্রতিটি বিষয়ে হযরত রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করা উচিৎ। এই বিষয়গুলো বর্ণনা করা হলো-
কালেমা: সাধারণভাবে যে ব্যক্তি মনেপ্রাণে এ বিশ্বাস স্থাপন করেছে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোনো উপাস্য নেই এবং হযরত মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহ্র প্রেরিত রাসুল, সে ব্যক্তি এরূপ বিশ্বাস বা ইমানের ফলেই মুসলমানদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। কিন্তু হাকিকতে কালেমা হলো ইসলামের এক একটি ক্লাস। কালেমা মুখস্ত করে ইমানদার হওয়া যায় না। এ প্রসঙ্গে মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, “ক্লাস ওয়ান থেকে এমএ পর্যন্ত মুখস্ত করলে তাকে এমএ পাশ বলে না। তেমনি সব কালেমা মুখস্ত করে ইমানদার হওয়া যায় না। যা সাধনার মাধ্যমে অর্জন করতে হয়।”
নামাজ: হযরত মোহাম্মদ (সা.) আমাদেরকে নামাজের শিক্ষা দিয়েছেন, যে নামাজ আদায় করলে মি’রাজ লাভ হয়। আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “তোমরা সেভাবেই নামাজ আদায় করো যেভাবে আমাকে নামাজ আদায় করতে দেখো।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৮) দয়াল রাসুল (সা.)-এর দেখানো নিয়মে নামাজ আদায় করে সাহাবায়ে কেরাম মহান আল্লাহ্র দিদার লাভ করেন এবং তাঁর সাথে কথা বলার যোগ্যতা অর্জন করেন। তারাই প্রকৃত মুু’মিন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “তোমাদের কেউ যখন নামাজে দণ্ডায়মান হয়, তখন সে তার প্রতিপালকের সাথে গোপনে কথা বলে থাকে।” (বোখারী শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৭৬) আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ক্বালবে জ্বিকির জারির মাধ্যমে হুজুুরি দিলে নামাজ আদায়ের শিক্ষা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো।” (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ৪৫) এজন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান নামাজে প্রার্থনামূলক আয়াত দিয়ে নামাজ আদায় করতে পরামর্শ দিয়েছেন, যেন মহান আল্লাহ্ বান্দার প্রার্থনা কবুল করে তাঁর নৈকট্য দান করেন।


রোজা: হযরত রাসুল (সা.)-এর শিক্ষানুযায়ী রোজা পালন করলে দেহ ও আত্মার সমস্ত পাপ হতে মুক্ত থাকা যায়। হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে- “আসসিইয়ামু জুন্নাহ।” অর্থাৎ- “রোজা হচ্ছে ঢালস্বরূপ। (রোজা পাপ কাজ থেকে ফিরিয়ে রাখে) আর সর্বসময় ক্বালবে জিকিরে নিমগ্ন থাকতে পারলে এই রোজার পুরস্কার হলো আল্লাহ্ নিজেই। হাদিসে কুদসিতে এরশাদ হয়েছে- “আসসিইয়ামু লী ওয়া আনা আজঝী বিহী।” অর্থাৎ- “রোজা আমার জন্য এবং আমি এর প্রতিদান।” (বোখারী শরীফ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৫৪) তাই সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের শিক্ষানুযায়ী পানাহার, কামাচার এবং পাপের কল্পনা থেকে মুক্ত হয়ে ক্বালবে আল্লাহ্র স্মরণ রাখতে পারলেই সেই রোজায় পুরস্কার হিসেবে আল্লাহ্কে পাওয়া যায়।


কোরবানি: হযরত রাসুল (সা.)-এর দেখানো পথে কোরবানি নিজ হাতে করতে হয়। এটা উত্তম। কোরবানি প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন, “আর আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানি বিধিবদ্ধ করে দিয়েছি।” (সূরা আল হাজ্জ ২২: আয়াত ৩৪) এই কোরবানির মাধ্যমে হযরত ইব্রাহিম (আ.) আল্লাহ্র বন্ধুর মর্যাদা লাভ করেছিলেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী কোরবানি করতে পারলে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান হাকিকতে কোরবানি করার নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কোরবানির পশু জবেহ করার সময় মনে মনে বলবেন, হে আল্লাহ্! আপনি দয়া করে এই পশুর সাথে আমার মনের পশুকে কোরবানি করে দিন।” সেজন্য মনের পশু কোরবানি করে আল্লাহ্র ইচ্ছার উপর আত্মসমর্পণের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য হাসিল করাই হাকিকতে কোরবানি।

যাকাত: হযরত মোহাম্মদ (সা.) আল্লাহ্র পক্ষ থেকে নির্দেশ পেয়ে উম্মতকে যাকাত দেওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ্ বলেন, “তোমরা নামাজ আদায় করো এবং যাকাত আদায় করো।” (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ১১০) যাকাত অন্তরকে পরিশুদ্ধ করে। যাকাত দিলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় এবং আল্লাহ্ খুশি হন। মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন- “পক্ষান্তরে আল্লাহ্র চেহারা মোবারকের সন্তুষ্ট লাভের জন্য তোমরা যে যাকাত দিয়ে থাকো, তাই বৃদ্ধি পায়। আর যাকাত প্রদানকারীরাই সমৃদ্ধশালী।” (সূরা আর রুম ৩০: আয়াত ৩৯) সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান যাকাত আদায়ের শিক্ষা দিয়েছেন। একটি আল্লাহ্র হক। অন্যটি বান্দার হক। বান্দার হক আদায় করতে হবে। আল্লাহ্ বলেন- “আর তাদের ধনসম্পদে রয়েছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক বা অধিকার। (সূরা আয যারিয়াত ৫১: আয়াত ১৯) তাই যাকাত দিয়ে গরিবের হক আদায় করতে হবে। পাশাপাশি সকল মানুষের সাথে সুন্দরভাবে কথা বলা ও ব্যবহার করাও যাকাত তুল্য। তাহলে মহান আল্লাহ্ আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন।

হজ: হযরত মোহাম্মদ (সা.) মহান আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে শরিয়তের নিয়ম অনুসারে নিদিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট স্থানে যে কাজ করার শিক্ষা দিয়েছেন, তাই হলো হজ। এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেন- “যে কেউ এ ঘরে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ হয়ে যায়। মানুষের মধ্যে তার উপর আল্লাহ্র জন্য এ ঘরের হজ করা ফরজ। যার সেখানে যাওয়ার সামর্থ্য আছে।” (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৯৭) হজের শিক্ষাই হলো মহামানবগণের অনুসরণ করা এবং বাকী জীবন সেই পথে চলার সংকল্প করা। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের শিক্ষা নিয়ে হজ করলে হাকিকতে হজের নিয়ামত লাভ করা যায়। তিনি বলেন, আপনি হজের সকল রুকন পালনের সময় ক্বালবে খেয়াল রেখে চলুন। তখন প্রত্যেক কাজে মহান আল্লাহ্র সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবেন এবং মদীনায় রওজা মোবারকে হযরত রাসুল (সা.)-এর জিয়ারতে অসংখ্য আশেকে রাসুল সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের পক্ষ থেকে সালাম দিলে তিনি দয়া করে সালামের জবাব ও দিদার দিয়ে ধন্য করেছেন। আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান হলেন হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতিষ্ঠিত মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী। যার কারণে তিনি মানুষকে ধর্মের সঠিক শিক্ষা দিয়ে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর নৈকট্য লাভ করার ব্যবস্থা করেছেন।

মহামানবগণের অনুসরণই ধর্র্ম। তাই আমরা যদি মহামানবগণের নির্দেশে ধর্ম পালন করতে পারি তাহলে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.)-এর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারবো। মহান আল্লাহ্ আমাদের সেই তৌফিক দান করুক। আমিন।
[লেখক: সদস্য, আল কুরআন গবেষণা কেন্দ্র, পেশ ইমাম, বাবে রহমত দেওয়ানবাগ শরীফ।]

সম্পর্কিত পোস্ট