মহামানবগণের জীবনী থেকে
হযরত বড়ো পির (রহ.) তাওয়াজ্জোহ্ দিয়ে চোরকে কুতুব বানালেন
একদা বড়ো পির হযরত মুহিউদ্দীন আবদুল কাদের জিলানি (রহ.)-এর হুজরা শরীফে এক সিঁধেল চোর গভীর রাতে চুরি করার উদ্দেশ্যে ঢুকে পড়ে। অতঃপর চোর যখনই কোনো কিছু চুরির উদ্দেশ্যে ধরে, তখনই সে অন্ধ হয়ে যায়। আবার উক্ত মালামাল রেখে দিলে তার চোখের দৃষ্টি ফিরে আসে। এভাবে যখনই সে কোনো কিছু গ্রহণ করে সাথে সাথে চোখের দৃষ্টি চলে যায়। আবার মালামাল স্বস্থানে রেখে দিলে আল্লাহ্ তাকে মাফ করে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেন। এভাবে সারা রাত্রি পার হয়ে গেলো।
প্রভাতের আলো যখন হুজরা শরীফে প্রবেশ করতে শুরু করেছে, সিঁধেল চোর আত্মরক্ষার জন্য বড়ো পিরের হুজরা শরীফের খাটের নিচে গিয়ে নিজেকে লুকিয়ে ফেললো। তখন বড়ো পির হযরত আবদুল কাদের জিলানি (রহ.) হুজরা শরীফ হতে বের হয়ে দরবার শরীফের কুরসি মোবারকে মাত্র উপবিষ্ট হয়েছেন। সেই মুহূর্তে হযরত খিজির (আ.) বড়ো পিরের সাক্ষাৎ কামনায় দরবার শরীফে উপস্থিত হন। আরজ করলেন- হযরত! অমুক শহরের শহর কুতুব ইন্তেকাল করেছেন। দয়া করে একজন কুতুবের ব্যবস্থা করে দিন। বড়ো পির তখন লক্ষ্য করলেন এই মুহূর্তে দরবার শরীফে তাঁর খাদেম ব্যতীত কোনো লোক নেই। আর খাদেমকে কুতুব বানালে তাঁর খেদমতই বা কে করবে?
তখন আল্লাহর বন্ধু খাদেমকে ডেকে বললেন, আমার খাটের নিচে একজন ব্যক্তি লুকিয়ে আছে, তাকে নিয়ে আসো। মোর্শেদের নির্দেশে খাদেম হুজরা শরীফে ঢুকে যখন খাটের নিচে তাকিয়েছে, সিঁধেল চোর হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলছে, আমি আর চুরি করব না, আমাকে ছেড়ে দিন। খাদেম ডেকে বলছে, ভাই, তোমাকে আসলেও আর চুরি করতে হবে না। আল্লাহর বন্ধুর নেক নজর তোমার উপর পড়ে গেছে। তুমি তাড়াতাড়ি বের হয়ে আসো।
খাদেম সিঁধেল চোরকে বড়ো পিরের কদমে হাজির করলেন। আল্লাহ্র অলী প্রশড়ব করলেন- তুমি আমার হুজরা শরীফে খাটের নিচে লুকিয়ে রইলে কেন? জবাবে সিঁধেল চোর মাথা নিচু করে বলল- আমি আপনার সম্পদ চুরি করার জন্য এসেছিলাম। আল্লাহর অলী বললেন- তাহলে চুরি করলে না কেন? সে বলল- এমন এক ফকিরের ঘরে চুরি করতে এসেছি যে, এই ফকির আমাকে কিছুই নিতে দেয়নি।
বড়ো পির বললেন, যাও বাবা! অজু করে এসো, আমি তোমাকে এমন এক সম্পদ দিবো, যে সম্পদ জগতের কেউ দিতে পারে না। লোকটি অজু করে আসলো। বড়ো পির লোকটিকে তাওয়াজ্জোহ্ দিলেন। ফলে সাথে সাথে সে কুতুবে পরিণত হলেন। তখন বড়ো পির আবদুর কাদের জিলানি (রহ.) এই কুতুবকে হযরত খিজির (আ.)-এর হাতে তুলে দিয়ে বললেন, ‘‘যান! একে নিয়ে যান; ডিউটিতে লাগিয়ে দেন।’’
এভাবেই আল্লাহর অলীর নেক দৃষ্টির বদৌলতে সিঁধেল চোর মুহূর্তে কুতুব হয়ে যান। আসলে এটিই ছিল ঐ সিঁধেল চোরের জন্য সম্মান বা কদর। তিনি হাজার মাস ইবাদত করেও ঐ সম্মানের অধিকারী হতে পারতেন না। মূলত আল্লাহর বন্ধুর দয়া তিনি যে মুহূর্তে লাভ করেছিলেন উহাই ছিল তার জন্য ক্বদর। কেননা আল্লাহর অলীগণ যে কোনো সময় মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করে দিতে পারেন। তাই হাদিস শরীফে বলা হয়েছে- “তকদির পরিবর্তন হয় না উপযুক্ত ব্যাক্তি বা আল্লাহ্র অলীর দোয়া বিহনে।’’ তাই প্রত্যেককে সমকালীন যুগের আল্লাহ্র মনোনীত মহামানবের কদম মোবারকে গিয়ে সে সম্মান তালাশ করে নিতে হয়।
[তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৪৪০ থেকে সংকলিত]