মহামানবগণের জীবনী থেকে
স্বীয় মোর্শেদের প্রতি সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের অটল বিশ্বাস
চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে তখন প্রতিদিন দেশ-বিদেশের শত শত মানুষের সমাগম হতো। আগত আশেকান ও জাকেরানদের সুবিধার্থে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান দরবার শরীফের সর্বত্র খাওয়ার বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করার জন্য ১৯৮৩ সালে সেখানে একটি সুউচ্চ পানির ট্যাংক নির্মাণ করেন। ওই পানির ট্যাংক নির্মাণের সময় একটি অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়। এ ঘটনাটি নিম্নে উপস্থাপন করা হলো-
ওই ট্যাংক নির্মাণের সময় সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান নিজেই সার্বক্ষণিকভাবে এর কাজ-কর্মের তদারকি করতেন। তখন হঠাৎ ঢাকা থেকে একদল জাকের চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে গিয়ে মাহ্ফিল করার জন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে ঢাকা পাঠাতে ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-কে অনুরোধ করেন। ইমাম হুজুর জাকেরদের কথা দিলেন যে, তিনি মাহ্ফিলের জন্য সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে পাঠাবেন। পরে তিনি সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে বললেন, আপনি মাহ্ফিল করার জন্য ঢাকা চলে যান। সূফী সম্রাট বললেন, আমি যদি এখান থেকে চলে যাই, তবে এই ট্যাংকের নির্মাণ কাজে অসুবিধা হতে পারে। আর যেহেতু এটা একটা জটিল ও ব্যয়বহুল কাজ, সেহেতু আমার এখানে থাকা অত্যন্ত জরুরি। অন্যথায় এ কাজের ক্ষতি হতে পারে। ইমাম হুজুর তাঁকে বললেন, না কোনো অসুবিধা হবে না। আপনি যান, আমি ট্যাংকের কাজের তদারকি করব।
ইমাম হুজুরের কথা শুনে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আশ্বস্ত হয়ে মাহ্ফিল করার জন্য ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এখানে তিনি মাসাধিককাল অবস্থান করে বিভিন্ন স্থানে বহু ওয়াজ মাহ্ফিল করেন। এদিকে চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে পানির ট্যাংক নির্মাণ শেষ হলে- সেন্টারিং খোলার পর দেখা গেল যে, ট্যাংকের একটি পিলার প্রায় এক ফুট ডেবে গেছে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেল, এই পিলার উঠানো না গেলে ট্যাংকটা ভেংগে পুনরায় নতুন করে নির্মাণ করতে হবে। ওই দরবার শরীফের সমস্ত জাকেরবৃন্দ বারবার পরিমাপ করে দেখেন, সত্যি সত্যিই ট্যাংকের একটি পিলার নিচু হয়ে গেছে। ইমাম হুজুর নিজেও পরিমাপ করে দেখেন, ট্যাংকের পিলার নিচু হয়ে গেছে। সবাই অনেক চিন্তা-ভাবনা করে দেখলেন, এই ট্যাংক না ভেঙ্গে আর কোনো কাজ করা যাবে না। নিরূপায় হয়ে এই সংবাদটি সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের কাছে পাঠানো হলো। তিনি সংবাদ পাওয়া মাত্রই তাঁর সফর সংক্ষিপ্ত করে চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে ফিরে গেলেন। সেখানে যাওয়ার পর ইমাম হুজুর তাঁকে বললেন, “আমাদের ট্যাংকের একটি পিলার এক ফুট নিচু হয়ে গেছে।”
সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান তখন আদবের সাথে বললেন, না বাবা! ডাবে নাই। ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.) বললেন, সত্যিই ডেবে গেছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান আবার বললেন, না বাবা ডাবে নাই। তখন ইমাম হুজুর বললেন, তাহলে গিয়ে দেখেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান পানির ট্যাংকের কাছে গেলেন। তারপর ট্যাংকের উপর উঠে পরিমাপ করে দেখেন, সত্যিই ট্যাংকের পিলার একটুও নীচে ডাবে নাই- সমানই আছে। তখন ইমাম হুজুর আবার ট্যাংকের কাছে গিয়ে দেখেন, সত্যি সত্যিই পানির ট্যাংকের পিলার ডাবে নাই। এ ঘটনা দেখে দরবার শরীফের সবাই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে পড়েন। কারণ, ট্যাংকের পিলার নিচু হয়ে গেছে দেখে- অনেকেই নানা রকম সমালোচনা করতে শুরু করে। কিন্তু পরবর্তীতে অলৌকিকভাবে যখন ট্যাংকের পিলার সমান হয়ে যায়, তখন ঘটনাটা নিয়ে সেখানে দারুণ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ইমাম হুজুর ট্যাংকের পিলার সমান হয়ে যাওয়ার পর সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানকে জিজ্ঞেস করলেন, আমরা সবাই দেখলাম- পানির ট্যাংকের পিলার নিচু হয়ে গেছে। এখন এটা আবার সমান হলো কীভাবে? তখন সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বললেন, বাবা! আপনি তো আমাকে বলেছিলেন, আপনি যান, আমি এ কাজের তদারকি করব, ট্যাংকের কোনো ক্ষতি হবে না। সুতরাং আল্লাহর বন্ধু পাক জবানের কথা কখনো মিথ্যা হতে পারে না। এ কারণেই ট্যাংকের কোনো ক্ষতি হয়নি। ইমাম হুজুর তাঁর প্রতি সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজানের সুদৃঢ় বিশ্বাস দেখে অত্যন্ত আনন্দিত হন।