মহামানবদের জীবনী থেকে
হাসান বসরী (রহ.)-এর অসিলায় অগ্নি উপাসক শামাউনের ইসলাম গ্রহণ
বর্ণিত আছে, সুফি হযরত হাসান আল বসরী (রহ.)-এর ‘শামাউন’ নামক এক অগ্নি উপাসক প্রতিবেশী ছিল। বার্ধক্যের কারণে সে কঠিন রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ল। হযরত হাসান বসরী (রহ.) তার বাড়িতে গিয়ে তার শয্যাপার্শ্বে বসলেন এবং শামাউনকে বললেন- ভাই! সারাটি জীবন তো আগুনের উপাসনা করেই কাটিয়ে দিলে, এখন শেষ মুহূর্তে অন্তত আল্লাহ্কে মেনে নিয়ে ইসলাম গ্রহণ করো। তুমি সারা জীবন আগুনের উপাসনা করেছ, তুমি কি বলতে পার যে, আগুন তোমার বাধ্য
হয়েছে? তুমি তো জান, আমি কখনও আগুনের উপাসনা করিনি, কিন্তু আল্লাহ্র অনুগ্রহে আগুন আমার বাধ্য হয়েছে। শামাউন বলল- আমি আগুনের উপাসনা করেছি, সে আমার কোনো অনিষ্ট করবে না।
হযরত হাসান বসরী (রহ.) বললেন- তোমার কথা আমার বিশ্বাস হয় না, আগুন নিয়ে এসো পরীক্ষা করে দেখি। আগুন আনা হলো। অতঃপর সুফি হযরত হাসান বসরী (রহ.) বললেন- এবার তুমি আগুনের মধ্যে হাত রাখ দেখি। শামাউন তাতে সাহস করল না। এবার হাসান বসরী (রহ.) আল্লাহ্র নাম নিয়ে আগুনে হাত ঢুকিয়ে দিলেন। আল্লাহ্র কি অপূর্ব মহিমা, আগুনে তাঁর হাতের একটি পশমও পুড়ল না। এ দৃশ্য দেখে শামাউন তার দীর্ঘ দিনের ভুল বুঝতে পেরে হাসান বসরীর হাতে হাত রেখে
কালেমা পড়ে মুসলমান হয়ে গেল। মহান আল্লাহ্ তাঁর বন্ধুর অসিলায় অগ্নিপূজককে ক্ষমা ও মুক্তির ব্যবস্থা করলেন।(তাযকেরাতুল আউলিয়া, পৃষ্ঠা ৩১)
এভাবেই মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর আল-গাফূর নামের বরকতে সূফী হযরত হাসান আল বসরী (রহ.)-এর প্রতিবেশী অগ্নি উপাসক শামাউনকে ক্ষমা করেছেন। তবে এ জাতীয় ঘটনা আহলে বাইতের অন্যতম সদস্য, শেরে খোদা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু’র শিষ্য সূফী হযরত হাসান আল বসরী (রহ.)-এর জীবনেই যে সংঘটিত হয়েছে, তা নয় বরং বর্তমান যুগে নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক অলী-আল্লাহ্গণের দরবার শরীফেও অনুরূপ অসংখ্য ঘটনা সংঘটিত হতে দেখা যায়।
প্রসঙ্গত মহান সংস্কারক যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজানের দেখা দুটি ঘটনা উল্লেখ করা হলো। এই প্রসঙ্গে সুফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বলেন, “আমি তখন আমার মোর্শেদ পিরানে পির, দস্তগির, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর দরবার শরীফে একনিষ্ঠ খেদমতে
নিয়োজিত ছিলাম। বাৎসরিক ওরস মোবারক পরিচালনার দায়িত্ব ছিল আমার উপর। ওরস মোবারকের প্রচার থেকে শুরু করে সকল কাজ আমাকেই তদারকি করতে হতো। ওরসে খেদমতের জন্য জাকের কর্মীদের মাঝে খেদমত বন্টন করতে হতো। একইভাবে খাবার মাঠ, পাকশালা, নিরাপত্তা বিভাগ তদারকি ও মঞ্চ পরিচালনা করতে হতো। ঘটনা দুটি ওরস মোবারকের দিন, পাকশালার দুজন জাকের কর্মীর জীবনে সংঘটিত হয়। আমি তখন পাকশালা থেকে প্রায় ২শ ফুট দূরে মোর্শেদ কেব্লার
হুজুরা শরীফের টিকিট কাউন্টারে টিকিট দিচ্ছিলাম। হঠাৎ পাকশালার একজন জাকেরকে দ্রুতগতিতে আমার দিকে আসতে দেখলাম। সে জানালো- আমাদের একজন সেবক ডেগ ভর্তি মাংস রান্না করছিল, এ অবস্থায় তার জজবা হয়, তথা সে আল্লাহ্র এশকে দেওয়ানা হয়ে যে বৈঠা দিয়ে জ¦লন্ত চুলার উপর টগবগ করতে থাকা মাংস নাড়ছিল, সেই বৈঠা উঠিয়ে নিজের ডান হাত পাতিলের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বৈঠার পরিবর্তে হাত দিয়েই মাংস নাড়ছে। আমরা নিষেধ করা সত্ত্বেও সে অনবরত হাত দিয়েই ডেগের মাংস নেড়ে চলেছে। আমি সংবাদ পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে হাজির হলাম এবং এরূপ করতে নিষেধ
করলাম। আমার নির্দেশ শুনে ঐ আশেকে রাসুল জাকের হাত উঠিয়ে নেয়, কিন্তু কী আশ্চর্য! যেখানে আগুনের তাপে তার হাতের সকল মাংস খসে পড়ার কথা এবং রান্না মাংসের সাথে মিশে যাওয়ার কথা, সেখানে তার হাতে একটি ফোসকাও পড়েনি। আসলে যে ব্যক্তি আল্লাহ্র প্রেমের আগুনে নিজেকে জালিয়ে-পুড়িয়ে নিঃশেষ করতে পারে, দুনিয়ার কোনো আগুন তাকে পোড়াতে পারে না।
দ্বিতীয় ঘটনাটি আরো বেশি আশ্চর্যজনক! এ ঘটনার ঘণ্টা দুয়েক পরের ঘটনা। আমি আমার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি।
রন্ধনশালার অন্য একজন কর্মী জাকের, সেও জজবার হালতে রান্না করছিল। উল্লেখ্য, মাঠের ভিতর মাটি কেটে বড়ো করে চুলা বানিয়ে বড়ো বড়ো ডেগ বসিয়ে গাছের চলা (কাঠের লাকড়ি) দিয়ে রান্না করার কারণে চুলার আগুনের তীব্রতা সাধারণ আগুনের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি। ঐ জাকের জজবার হালতে রাণ্ণা করার এক পর্যায়ে চুলার ভিতরে জ¦লন্ত আগুনের লেলিহান
শিখার মাঝে নেমে পড়ে। অতঃপর জ¦লন্ত আগুনের মাঝে বসে বসে আল্লাহ্ ও রাসুল (সা.) -এর প্রেমে চিৎকার করতে থাকে। পূর্বের ন্যায় এবারও অন্যান্য জাকেররা তাকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। অবশেষে পাকশালার এক জাকের দৌড়ে আমার কাছে ছুটে আসে। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে দেখতে পাই, প্রজ্বলিত অগ্নিগর্ভের মাঝে লোকটি যেভাবে বসে আছে তাতে মুহূর্তকাল সময়ের মধ্যেই তার সমস্ত শরীর জ¦লে-পুড়ে দগ্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু একি! দীর্ঘসময় যাবৎ সে আগুনের
মাঝে দিব্যি বসে আছে। আমি তাকে মৃদু ভর্ৎসনা করে বললাম- কি, কারামত দেখাও? তারপর তাকে উঠে আসতে বললাম। ঐ জাকের আমার নির্দেশ মান্য করল। দেখা গেলো, মহান রাব্বুল আলামিনের অপর দয়ায় তার শরীরের একটি পশম পোড়া তো দূরের কথা, তার শরীরে থাকা লুঙ্গি ও গেঞ্জিও সম্পূর্ণ অক্ষত রয়েছে।
এভাবেই মহান রাব্বুল আলামিন যুগে যুগে নুরে মোহাম্মদীর অনুসারী মুমিনদেরকে দুনিয়ার আগুন থেকে রক্ষা করে সিরাতুল মুস্তাকিমের নিদর্শন স্থাপন করেছেন।