মানব জীবনে মাৎসর্য রিপুর প্রভাব এবং মুক্তির উপায়
মানব জীবনে মাৎসর্য রিপুর প্রভাব এবং মুক্তির উপায়
ড. পিয়ার মোহাম্মদ
মাৎসর্য বা হিংসার আভিধানিক অর্থ হলো ধ্বংসাত্মক ঈর্ষা, দ্বেষ, অনিষ্ট, পরশ্রীকাতরতা, বধ, হনন ইত্যাদি। হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে চরম অশান্তি ডেকে আনে। পরশ্রীকাতরতার কয়েকটি দিক আছে। অন্যের ভালো কিছু দেখলে তার গা জ্বলে যাওয়া, অপর কেউ ভালো কিছু করলে তার বিরোধিতা করা কিংবা ভালো কাজটির নেতিবাচক দিকগুলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে অন্যের সামনে হাজির করা বা বেঁকে বসা, ঘৃণা করা এবং অবজ্ঞা করা পরশ্রীকাতরতার বিভিন্ন দিক।
হিংসা রিপুর বশবর্তী মানুষের মন হিংসার আগুনে দাউ দাউ করে প্রতিনিয়ত জ্বলতে থাকে। অন্যের ভালো সহ্য করতে না পারা এবং অতি আপনজনকেও অযথা সন্দেহের চোখে দেখা হিংসা রিপুর বৈশিষ্ট্য। হিংসা রিপুর বশবর্তী মানুষ অন্যের ভালো সহ্য করতে না পারার কারণে অপরের দুঃখে আনন্দিত হয়, অপরের আনন্দে হিংসা হয় এবং মনে মনে অপরের অনিষ্ট চিন্তা করে, কুট কৌশলে অপরের ক্ষতি সাধন করে। এই রিপুর বশবর্তী মানুষ মায়াবী কাল সাপের মতো। এসব মানুষ এতো কুটিল স্বভাবের হয় যে, সে অতি আপন জনের ভালোও সহ্য করতে পারে না এবং তার ক্ষতিসাধন করতে দ্বিধাবোধ করে না। হিংসা রিপুর বশবর্তী মানুষের ধর্মে কর্মে বিশ্বাস থাকে না।
মাৎসর্যে অন্ধ ব্যক্তি কোনো কাজেই কোনো কালে সুখ পায় না। তার চোখে বুকে অপরের ভালো কাজের প্রতি প্রতিহিংসার আগুন জ্বলতে থাকে। অথচ সে কাজ করার ক্ষমতাও তার নাই। অনেক সময় মানুষ নিজের স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়েও সে মাৎসর্যে লিপ্ত হয়। এক সময় সে সমাজে চিহ্নিত হয়ে যায় এবং তার আর কোনো মূল্য থাকে না। হিংসা মানব মনের কঠিনতম রোগসমুহের অন্যতম। হিংসার জন্য মানুষ মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুতে পরিণত হয়। হিংসুক ব্যক্তি অন্তরাগুনে জ্বলে সর্বদা এবং হিংসাপূর্ণ মনোভাব নিয়ে সত্যকে মিথ্যা এবং মিথ্যাকে সত্যতায় রূপ দান করে। হিংসুক ব্যক্তি ইবলিসের ন্যায়। সে শয়তানের অনুসারী।
জীবনে চলার পথে মাৎসর্য প্রতিনিয়ত ক্রীয়াশীল। মাৎসর্য রিপু অসংযমী হলে মানুষ পরশ্রীকাতরতায় ভুগে থাকে। অর্থাৎ অন্য লোকের ভালো কিছু হচ্ছে বা হয়েছে তা দৃষ্টিগোচর হলে হিংসায় অন্তর জ্বলে উঠে, এর ফলে আত্মা কলুষিত হয়। মাৎসর্য রিপু ঈর্ষা, হিংসা ও পরশ্রীকাতরতার প্রবৃত্তির উদ্রেক করে। নিজের স্বার্থ বৈ অন্যের সমৃদ্ধিকে সহ্য করতে পারে না। এসবই শয়তানের প্ররোচনায় ঘটে। মানুষ চরমভাবে আমিত্বে ভুগে, ক্ষমতার বাহাদুরি করে এবং মালিকের নির্দেশনা ভুলে যায়। শয়তান বহাল তবিয়তে তার কাজ চালিয়ে যেতে থাকে। এমনকি মানুষ পাপ কাজ করতে করতে এমনভাবে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন শয়তানের আর প্ররোচনার প্রয়োজন হয় না। অভ্যাসগতভাবেই পাপ কাজে লিপ্ত হয়।
মনোবিজ্ঞান বলে, এক ধরনের অনুভূতিজনিত আঘাত থেকে হিংসা, বিদ্বেষ বা ঈর্ষার উদ্ভব হয়। তার মূলে থাকে নিজের কোনো দুর্বল দিক। কেউ যদি লেখাপড়ায় খারাপ হয় তাহলে যতবার সে লেখাপড়ায় ভালো কারো মুখোমুখি হয় ততবারই তার মনের মধ্যে সেই মানসিক আঘাতের জন্ম নেয়। নিজের প্রতি হীন মনোভাবের কারণেও এমন প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। অন্যের খুশিতে এরা খুশি না হয়ে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার অমঙ্গল কামনা করতে থাকে। স্বাভাবিকভাবে একজন মানুষের মন আকাশের মতো উদার হওয়ার কথা, কিন্তু পরশ্রীকাতর মানুষ তা হয় না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে মানুষের সবচেয়ে বড় স্ট্রেস হিংসা, বিদ্বেষ বা পরশ্রীকাতরতায় আক্রান্ত হওয়া।
হিংসা মানুষের ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনকে করে তুলে দুর্বিষহ ও বিষময়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ বলেন, “তুমি পৃথিবীতে দম্ভভরে পদচারণা করো না। তুমি তো কখনই জমিনকে বিদীর্ণ করতে পারবে না এবং উচ্চতায় কখনই তুমি পর্বতসম হতে পারবে না।” (সূরা বনী ইসরাইল ১৭: আয়াত ৩৭) মানুষ মানুষকে পরশ্রীকাতরতা, শত্রæতা, দাম্ভিকতা, একে অপরকে ঈর্ষা করা, নেতৃত্ব পাওয়া, নিজকে যোগ্য ভাবা, ব্যক্তিগত সুবিধা হাসিল করা, ক্ষমতা পাওয়া এসব কারণে হিংসা করে। হিংসুক ব্যক্তি মনে করে সেই সমাজে সম্মানিত ও দামি আর সবাই তার চেয়ে নগণ্য। এজন্য আল্লাহ্ পাক হিংসা ও বিদ্বেষ থেকে এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য পবিত্র কুরআনে দিকনির্দশনা দিয়েছেন। এরশাদ হয়েছে, “হিংসুকের অনিষ্ট থেকে (আমি তোমার আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসা করে।” (সূরা ফালাক ১১৩: আয়াত ৫) হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “তোমরা হিংসা থেকে বেঁচে থাক। কেননা হিংসা নেক আমলকে এমনভাবে ধ্বংস করে দেয়, যেমন আগুন কাঠের টুকরাকে খেয়ে ফেলে।”
মহান আল্লাহ্ বলেন, “তারা কি মানুষকে ঈর্ষা করে আল্লাহ্ নিজ অনুগ্রহে তাদের যা দিয়েছেন সেজন্য?” (সূরা নিসা ৪: আয়াত ৫৪) তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াচ্ছে, আল্লাহ্ তায়ালা অনুগ্রহ করে কাউকে কোনো নিয়ামত দান করলে তাতে হিংসাকারী অসন্তুষ্ট হয়। আল্লাহ্র ফয়সালাকে মানতে তার কষ্ট হয়। সেজন্য মহান রাব্বুল আলামিন ঈর্ষাকারীকে পছন্দ করেন না। মানুষের অন্যতম খারাপ বৈশিষ্ট্য হলো হিংসা। তারা না ভালো স্রষ্টার চোখে না ভালো সৃষ্টির চোখে। প্রকৃতপক্ষে আমাদের যা কিছু আছে তার সবই সৃষ্টিকর্তা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। আমাদের নিয়ে স্রষ্টার নিশ্চয় একটি পরিকল্পনা রয়েছে। তাই যা কিছু তিনি দিয়েছেন তার কৃতজ্ঞতা পোষণ করা উচিৎ। সেজন্য সবাইকে মনে রাখতে হবে হিংসা, বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতা খুবই সহজাত। নফস আমাদের অনুমতি ছাড়া প্রলুদ্ধ করে তুলে এসব অনুভূতিকে। আমাদের এসব থেকে সচেতন থাকা জরুরি।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসে হিংসা এবং হিংসুককে কঠিনভাবে নিন্দা করা হয়েছে। ইমাম আলী (রা.) বলেছেন, “হিংসা ও বিদ্বেষকারি শোকার্ত হয়।” আল কুরআনে হিংসুক থেকে বাঁচার জন্য বলা হয়েছে, “হিংসুকের অনিষ্ট থেকে (আমি তোমার আশ্রয় চাই) যখন সে হিংসা করে।” (সূরা ফালাক ১১৩ : আয়াত ৫) হযরত লোকমান (আ.) স্বীয় পুত্রদের হিংসুকের বিষয়ে সতর্ক করতে বলেছিলেন, “হিংসুক পিছনে গিবত করে, সামনাসামনি তোষামোদ করে এবং অন্যের বিপদে আনন্দিত হয়।” হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “তোমরা দোষ অন্বেষণ করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, পরস্পর হিংসা করো না, একে অন্যের প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণ করো না এবং পরস্পর বিরোধে লিপ্ত হয়ো না; বরং তোমরা সবাই আল্লাহ্র বান্দা ভাই ভাই হয়ে থেকো। (বোখারী শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৮৯৬) মহান আল্লাহ্ বলেছেন, “নিশ্চয়ই মু’মিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।” (সূরা হুজরাত ৪৯ : আয়াত ১০)
যে সমাজে হিংসার প্রসার যত বেশি সেই সমাজে অশান্তি তত বেশি। সমাজে ততক্ষণ যাবত কল্যাণ ও শান্তি বিরাজ করে, যতক্ষণ সেখানে হিংসার প্রসার না ঘটে। এ সম্পর্কে হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “মানুষ ততক্ষণ কল্যাণের মধ্যে থাকবে যতক্ষণ তারা পরষ্পরে হিংসা না করবে।” (তাবারানী) হযরত রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, “তোমাদের মধ্যে পিপিলিকার মতো প্রবেশ করবে বিগত উম্মতগণের রোগ। আর তা হলো হিংসা ও বিদ্বেষ। যা হলো ছাফকারী। আমি বলি না যে তা চুল ছাপ করবে, বরং তা দ্বিনকে ছাফ করে ফেলবে।” ক্ষুর ও বেøড যেমন চুল ছাফ করে দেয় হিংসা ও বিদ্বেষ তেমনি দি¦নকে বিদূরিত করে দেয়। হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “কোনো বান্দার অন্তরে ইমান ও হিংসা একত্রে থাকতে পারে না।” অর্থাৎ একটি অন্তরে হয় ইমান থাকবে, না হয় হিংসা থাকবে। ইমানদারের অন্তরে হিংসা থাকবে না, হিংসুকের অন্তরে ইমান থাকবে না। মু’মিন কখনো হিংসুক হতে পারে না।
মানব হৃদয়ের সবচেয়ে নোংরা ও ক্ষতিকর কাজ হিংসা, বিদ্বেষ, ঘৃণা, অমঙ্গল কামনা ও পারস্পারিক শত্রæতা করা। এগুলোর উপস্থিতি হৃদয়কে কলুষিত করে, ভারাক্রান্ত করে। এ ধরনের কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা আল্লাহ্র বিশেষ ক্ষমা থেকে বঞ্চিত হয়। এ ব্যাপারে হযরত রাসুল (সা.) বলেন, “মানুষের আমলনামা সপ্তাহে দু’বার- সোমবার ও বৃহস্পতিবার উপস্থাপন করা হয়। এরপর প্রত্যেক মু’মিন বান্দাকে ক্ষমা করা হয়। তবে সে ব্যক্তিকে নয়, যার ভাইয়ের সাথে তার শত্রæতা আছে। তখন বলা হবে, এই দু’জনকে রেখে দাও অথবা অবকাশ দাও যতক্ষণ না তারা আপসের দিকে প্রত্যাবর্তন করে। (মুসলিম শরীফ ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩১৭) ইবনে মাজাহ শরীফের সূত্রে হযরত আবু মুসা আশয়ারী (রা.) হতে বর্ণনা করা হয়েছে। আল্লাহ্র রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা অর্ধ শাবান বা শবে বরাতের রজনিতে নিজেকে প্রকাশ করেন। অতঃপর মুশরিক ও হিংসুক ব্যতীত তাঁর সকল সৃষ্টিকে ক্ষমা করে দেন।” (মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ১১৫)
হিংসার একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো যার প্রতি হিংসা করা হয়, তার কিন্তু কোনো ক্ষতি হয় না। সে এগিয়ে যেতে থাকে। বরং হিংসার আগুন হিংসুকের মনেই জ্বলতে থাকে এবং তাকেই সাজা দেয়। হিংসার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হতে থাকে হিংসুকের অন্তর। আবার কেউ যদি কারো ভালো কিছু দেখে নিজের জন্যও সেরূপ কামনা করে ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ হয়, সেটা কিন্তু খারাপ নয়। এটি হলো অনুপ্রেরণা। মহান আল্লাহ্ এ ধরনের উৎসাহ সৃষ্টির উদ্দেশ্যেই মানুষের মাঝে মাৎসর্য রিপুর জন্ম দিয়েছেন যেন মাৎসর্য। রিপুকে ইতিবাচক দিকে ধাবিত করা যায়, আমাদের এ বিষয়টি ভালোভাবে বুঝে জীবনে চলতে হবে তাহলেই সফলকাম হওয়া যাবে।
আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য হিংসা বর্জন করা উচিৎ। যত কষ্টই হোক, যত কঠিনই হোক, আল্লাহ্র আদেশ নিষেধ মেনে নিয়ে হিংসা থেকে নিবৃত্ত হওয়া আবশ্যক। হিংসা হলো শয়তানি আমল। শয়তান সব সময় মানুষকে প্ররোচনা দিয়ে থাকে। তার হাত থেকে বাঁচার জন্য শয়তানের প্রতি তীব্র ঘৃণা থাকতে হবে। যখনই কোনো হিংসার উদ্রেক হবে তখনই মহান আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করতে হবে। একই রকম অবস্থান হওয়া সত্তে¡ও অন্য কেউ কোনো কিছু পেয়ে গেলো আমি পেলাম না তখন ভাবতে হবে নিশ্চয় সে কখনো না কখনো ভালো কাজ করেছে তাই পেয়েছে। তাতে হিংসা হবে কেন বা দুঃখ হবে কেন। বরং ভালো কাজ করতে থাকি, নিশ্চয় একদিন না একদিন মূল্যায়ন হবে। এভাবে ভাবতে পারলে মাৎসর্য রিপু দূরীভূত হবে।
মাৎসর্য রিপু থেকে বাঁচার উপায় হলো এ কথা নিশ্চিতভাবে অনুধাবন করা যে হিংসা, বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতা আত্মার মারাত্মক ব্যাধি। এ রোগ এমনই যে যার প্রতি হিংসা করা হয় তার কোনই ক্ষতি হয় না বরং হিংসাকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কেউ এ কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করলে তার জন্য হিংসা ত্যাগ করা সহজ হবে। হিংসার ভিত্তি হলো দুনিয়ার প্রেম ও সম্পদের মোহ। কোনো ব্যক্তি যখন অন্তর থেকে দুনিয়ার প্রেম ও সম্পদের লোভ-লালসাকে বিতাড়িত করতে পারে তখন তার আত্মা এ রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করে। আসলে যে যা কিছু দুনিয়াতে পাচ্ছে সবইতো মহান আল্লাহ্র ইচ্ছায় পাচ্ছেন। সেজন্য হিংসা করা মারত্মক বোকামী ছাড়া কিছু নয়।
প্রতিটি মুহূর্তে আমাদেরকে এ রিপুর মুখোমুখি হতে হয়। মানব জীবনের সাফল্যের জন্যে অটুট সংযম, দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও কঠোর সাধনার প্রয়োজন। সংযম সাধনার মাধ্যমেই মাৎসর্য নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সমাজের প্রতিটি মানুষ রিপু নিয়ন্ত্রণ করে চললে দুনিয়া স্বর্গ হয়ে যাবে। মানুষ তিনটি গুণ অর্জন করতে পারলে হিংসার ছোবল থেকে বাঁচতে পারেন। এগুলো হলো আল্লাহ্র সন্তষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে সকল কাজ করা, মুসলমানদের বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত দায়িত্বশীলদের কল্যাণ কামনা করা এবং মুসলমানদের সাথে মিলে মিশে সংঘবদ্ধ জীবন যাপন করা। মহান আল্লাহ্র সন্তুষ্টির জন্য কেউ কাজ করলে সে কারো প্রতি হিংসা করতে পারে না। কেননা সবাইকে তার সহযোগী হিসেবে ভাবতে শিখে। তদ্রæপ কেউ যদি অন্যের জন্য কল্যাণ কামনা করা শিখে তাহলে সে হিংসা করবে কীভাবে। তাছাড়া মানুষ যখন সংঘবদ্ধ হয়ে বসবাস করে তখন সবার মধ্যে আন্তরিকতা গড়ে উঠে বিধায় সেক্ষেত্রে হিংসা বিদ্বেষ প্রবেশ করতে পারে না।
হিংসা, বিদ্বেষ, পরশ্রীকাতরতা এসব মূলত অন্তরের রোগ। কাজেই অন্তর যদি এসব রোগ দ্বারা আক্রান্ত থাকে তাহলে তার পক্ষে মাৎসর্য রিপু থেকে বাঁচার উপায় থাকে না। সেজন্য এসব অন্তর থেকে দূর করার জন্য প্রয়োজন অন্তরের চিকিৎসা করা। নবি-রাসুলগণ মানুষের অন্তরের চিকিৎসা করে মানুষের অন্তরকে কলুষমুক্ত করতেন। বর্তমানে অলী-আল্লাহ্গণ একই কাজ করে যাচ্ছেন। মানুষ যখন তাঁদের সংস্পর্শে এসে মোর্শেদ হিসেবে গ্রহণ করে ধ্যান সাধনার মাধ্যমে মহান আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.) এবং নিজকে চিনতে পারেন তখন আর তাদের অন্তরে কোনো হিংসা বিদ্বেষের উদ্রেক হয় না। সে হয় মহান আল্লাহ্ পাকের দেওয়া জ্ঞানে জ্ঞানী। এ জ্ঞান যিনি পেয়েছেন তিনিতো এমন অযৌক্তিক কাজ করতে পারেন না। তিনি মহান আল্লাহ্র নির্দেশ মতই চলেন।
জ্ঞানীজনের এবং মোর্শেদের উপদেশ ও সহবত ব্যতীত হিংসা রিপু কোনোভাবেই বশীভুত হয় না। মহান সংস্কারক মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান বলেন, “সুফি সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের মাৎসর্য রিপুকে দমন করতে পারে। এ রিপু দমনের একমাত্র ঔষধ হলো ফায়েজ। ফায়েজ আল্লাহ্র কাছ থেকে হযরত রাসুল (সা.) হয়ে অলী-আল্লাহ্র ক্বালবের মাধ্যমে মানুষের ক্বালবে আসে। ফায়েজ এসে মানুষকে পবিত্র করে দেয়। মাৎসর্য রিপুকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়। ফায়েজ অর্জনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জন করা যায়। যে যত বেশি আত্মশুদ্ধি অর্জন করতে পারবে সে তত বেশি উপকৃত হবে।”
আমাদের মহান দরদি মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্Ÿুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) সারা জীবন মানুষকে মাৎসর্য রিপু নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শান্তির চরিত্র ধারণ করে দয়াল রাসুল (সা.) ও দয়াল মাওলার করুণা পাওয়ার জন্য আশেকে রাসুলদের শিক্ষা দিয়েছেন। তাঁর শিক্ষানুযায়ী আশেকে রাসুলগণ ক্বালবে আল্লাহ্র জিকির জারি এবং আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে হিংসা, বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতার প্রভাবমুক্ত হয়েছেন। তাঁর সংস্পর্শে আসলেই অনেকের ভিতর পরিবর্তন এসেছে। অলী-আল্লাহ্গণ যে কোনো রিপু নিয়ন্ত্রণের শিক্ষা দিতে পারেন। মহান মোর্শেদের দরবারে এসে লক্ষ লক্ষ আশেকে রাসুল এ সুমহান শিক্ষা লাভ করেছেন।
দয়াল মোর্শেদের ওফাতের পর ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) মানুষের মুক্তির জন্য মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারে নেতৃত্ব দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি হিংসা, বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতা নিয়ন্ত্রণ করে চরিত্র সংশোধনের মাধ্যমে আত্মশুদ্ধি অর্জনের শিক্ষা গ্রহণের জন্য সবাইকে তাগিদ দিচ্ছেন। তাঁর মাধ্যমে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.)-এর শিক্ষা গ্রহণ করে সফল হওয়া সম্ভব। তাঁর দরজা দেশ বিদেশের সকল মানুষের জন্য খোলা। মহান আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে তৌফিক দান করুন আমরা যেন তাঁর কদম মোবারকে থেকে হিংসা, বিদ্বেষ ও পরশ্রীকাতরতাকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে সফলকাম হতে পারি। আমিন।
[লেখক: সাবেক অতিরিক্ত সচিব, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।]