Cancel Preloader

সম্পাদকীয় ফেব্রুয়ারি ২০২৩

মহান আল্লাহর প্রিয় বন্ধু রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর গৌরবদীপ্ত জীবনে পবিত্র শবে মি‘রাজের ঘটনাটির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অত্যধিক। হযরত রাসুল (সা.)-এর ৫২ বছর বয়সে ২৬ রজব দিবাগত রাতে মি‘রাজের ঘটনাটি সংঘটিত হয়। মি‘রাজ আরবি শব্দ, যার বাংলা অর্থ পথ, সিড়ি, ঊর্ধ্বে আরোহণ, দিদার ইত্যাদি। এফ. স্টেইনগাসের আরবি, ইংরেজি অভিধানে মি‘রাজ শব্দের অর্থ লেখা হয়েছে দরৎ (সিড়ি), Ladder (মই), Ascension (আরোহণ)। বিখ্যাত তাফসীরকারকের মতে, মি‘রাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন বা ঊর্ধ্বারোহন।


পবিত্র কুরআনে মি‘রাজ সম্পর্কে মহান আল্লাহ্ বলেন, “আল্লাহ্ পবিত্র মহিমাময়, যিনি তাঁর বান্দা [মোহাম্মদ (সা.)]-কে রজনিতে পরিভ্রমণ (সায়ের) করিয়েছিলেন, মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত। যার চুতস্পার্শ্বকে আমি বরকতময় করেছি- যাতে আমি তাঁকে দেখাই আমার নিদর্শন (চেহারা মোবারক)। নিশ্চয় তিনি সবকিছু শোনেন, দেখেন।” (সূরা বনী ইসরাইল ১৭: আয়াত ১) এই প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এখানে আল্লাহ্ বলেছেন- “আমি আমার হাবিব মোহাম্মদ (সা.)-কে ভ্রমণ বা সায়ের করিয়েছি আমার অলৌকিক নিদর্শনসমূহ দেখানোর জন্য। আর ঐ রাতে আমি তাঁকে যা যা দেখিয়েছি, তা সবই ছিল অলৌকিক নিদর্শনাবলি। আর এ ব্যাপারে কোরাইশদের মন্তব্য আল্লাহ্ শুনেছেন এবং তাদের অবস্থা ও হযরত রাসুল (সা.)-এর ভ্রমণ বা সায়েরের অবস্থাও আল্লাহ্ দেখেছেন।” (তাফসীরে ইবনে আব্বাস, পৃষ্ঠা ২৮২) মূলত মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর শ্রেষ্ঠ হাবিব হযরত রাসুল (সা.)-কে তাঁর একান্ত সান্নিধ্য দানের উদ্দেশ্যে মি‘রাজের ঘটনাটি ঘটান। সেসময় আল্লাহ্ তাঁকে মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসায় সায়ের বা পরিভ্রমণ করান। সেখানে হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভাগমনের সাথে সাথে তাঁরা সবাই পরম শ্রদ্ধার সাথে ‘আস্সালামু আলাইকা ইয়া আউয়্যালিনা ওয়াল আখিরিনি’ বলে তাঁকে সালাম পেশ করেন। সেসময় প্রত্যেক নবি-রাসুল আনন্দচিত্তে বলেন- ‘মারহাবা ইয়া রাসুলাল্লাহ্! মারহাবা ইয়া হাবিবাল্লাহ্!!’ অতঃপর সাদর সম্ভাষণের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হলে সকল নবি ও রাসুলের উপস্থিতিতে তাঁদের সবাইকে নিয়ে হযরত রাসুল (সা.) ‘ইমাম’ হয়ে দুই রাকাত সালাতুল ইসরা অর্থাৎ ভ্রমণের নামাজ আদায় করেন। এই প্রসঙ্গে আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহবুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) বলেন, “এই নামাজের মাধ্যমেই হযরত রাসুল (সা.) সকল নবি-রাসুলের ‘ইমাম’ হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।”


নামাজ শেষে হযরত রাসুল (সা.) সপ্ত আকাশ সায়ের করেন। তাঁর সাথে ৭ম আকাশ পর্যন্ত কয়েকজন নবি ও রাসুলের সাক্ষাৎ হয়। সেসময় তাঁরা প্রত্যেকে পরম আনন্দের সাথে আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে আন্তরিক মোবারকবাদ জানান। এভাবে হযরত রাসুল (সা.) সপ্ত আকাশ ভ্রমণ করে সিদরাতুল মুনতাহায় এসে উপনীত হন। এরপর তিনি মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের জন্য অগ্রসর হয়ে একাই আরো ৭০ হাজার নুরের পর্দা অতিক্রম করেন। অবশেষে আল্লাহর শ্রেষ্ঠ হাবিব দয়াময় আল্লাহর সান্নিধ্যে পৌঁছে যান এবং দুই বন্ধু সৃষ্টিজগতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এছাড়াও দয়াময় আল্লাহ্ উম্মতে মোহাম্মদীর জন্য নামাজ ফরজ করেছিলেন, যাতে বান্দা তার সৃষ্টিকর্তা রাব্বুল আলামিনের দিদার সালাতের মাধ্যমে লাভ করতে পারে। সর্বশেষে হযরত রাসুল (সা.) যে স্থান থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন, পুনরায় সেই স্থানে ফিরে আসেন। এভাবে পবিত্র মি‘রাজের ঘটনা সংঘটিত হয়। এই ফেব্রুয়ারি মাসের ১৮ তারিখ শনিবার দিবাগত রাতে গভীর শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও ইবাদত বন্দেগির মাধ্যমে আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা লাইলাতুল মি‘রাজ উদ্যাপন করবেন। দেওয়ানবাগ শরীফের পক্ষ থেকে অনলাইন প্ল্যাট ফরমের মাধ্যমে পবিত্র শবে মি‘রাজের গুরুত্ব ও তাৎপর্যের উপর বিশেষ আলোচনা ও মিলাদ মাহ্ফিল অনুষ্ঠিত হবে।


এবার ভিন্ন প্রসঙ্গে আসা যাক। বাঙালি জাতির জন্য ফেব্রুয়ারি মাস তাৎপর্যমণ্ডিত ও স্মৃতিবহ একটি মাস। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর প্রমুখ বাংলা ভাষা প্রেমীর আত্মদানের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষা রাষ্ট্র কর্তৃক স্বীকৃতি পায়। মাতৃভাষার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে ভাষা শহিদরা বাঙালি প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে অমর ও অক্ষর হয়ে আছে। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন এবং ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করে, যা আমাদের দেশ-সহ সারা বিশ্বে গভীর শ্রদ্ধা ও যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপিত হয়। বাংলা ভাষা বিশ্বে আজ বিশেষ মর্যাদার স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বের প্রায় তেত্রিশ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে।

উল্লেখ্য যে, ভাষার বোধগম্য বিষয়টি বিবেচনা করে সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান সর্বপ্রথম মাতৃভাষায় জুমার নামাজের খুতবা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন এবং বাংলা ভাষায় জুমার খুতবা প্রদানের সংস্কারের মাধ্যমে মুসল্লিদের খুতবার বিষয়বস্তু বুঝার সুযোগ করে দিয়েছেন।


পরিশেষে, ভাষা শহিদদের প্রতি রইলো অতল শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। তাদের আত্মত্যাগের জন্য আজ আমরা মায়ের ভাষা বাংলায় কথা বলতে পারছি।

সম্পর্কিত পোস্ট