মাসিক আত্মার বাণী’র ৪০ বছর পদার্পণ উপলক্ষ্যে সূফী সম্রাটের শুভেচ্ছা বাণী
[মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, যুগের ইমাম, আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভকারী, আল্লাহ্র দেওয়া পুরস্কার: পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান-এর শুভেচ্ছা বাণী]
আলহামদু লিল্লাহে রাব্বিল আলামিন, লক্ষ কোটি শোকরিয়া জ্ঞাপন করছি মহান রাব্বুল আলামিনের নুরের কদম মোবারকে, যাঁর অপার দয়া ও সাহায্যে মোহাম্মদী ইসলামের মাসিক মুখপত্র ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটি ৩৯ বছর পূর্ণ করে ৪০ বছরে পদার্পণ করেছে। লক্ষ কোটি দরূদ ও সালাম পেশ করছি ইমামুল মুরসালিন, রাহমাতুল্লিল আলামিন হযরত রাসুল (সা.)-এর প্রতি, যিনি মানব মুক্তির জন্য পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান চির শান্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলামকে জগদ্বাসীর জন্য উপহার দিয়ে গেছেন।
‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটি প্রকাশনার গৌরবোজ্জ্বল ৪০ বছরে পদার্পণ করতে যাচ্ছে এই সংবাদ শুনে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। এই গৌরবদীপ্ত পদার্পণ উপলক্ষ্যে শুভেচ্ছা বাণী লিখতে গিয়ে আমার মনে পড়ছে যে, আমার মহান মোর্শেদ, পিরানে পির দস্তগির, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর দরবার শরীফে সাধনাকালীন ১৯৮১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে অর্থাৎ ৩৯ বছর পূর্বে আমি নিজে উদ্যোগী হয়ে ‘আত্মার বাণী’ পত্রিকাটি প্রকাশ করি।
মূলত হযরত রাসুল (সা.)-এর সুমহান শিক্ষা ও আদর্শ সংবলিত চিরশান্তির ধর্ম বিশ্বময় প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ‘আত্মার বাণী’সাময়িকীটি প্রকাশ করা হয়, যা ছিল সময়োপযোগী এক পদক্ষেপ। এই সাময়িকীটি প্রকাশের স্বর্ণালি ইতিহাস রয়েছে। আমার হৃদয় পটে আজ ‘আত্মার বাণী’ প্রকাশের ইতিবৃত্ত ভেসে উঠছে। ঘটনাটি ছিল ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দের। আমি অসুস্থ ছিলাম, বাবা চন্দ্রপুরী
(রহ.) আমাকে বললেন, ‘‘মাহ্বুব মিয়া! আপনি ঢাকা যান।’’ আমি বললাম, “আমি হাঁটতে পারি না। আমার বাম পায়ে রড ঢুকে গিয়েছে।” বাবাজান বললেন, ‘‘হাঁটা লাগবে কেন? গাড়িতে যাবেন।’’ আমি বললাম, “আমিতো জুতা পায়ে দিতে পারি না।”
বাবাজান বললেন, ‘‘জুতা লাগবে কেন?’’ অতঃপর আমি বললাম, “কাপড়-চোপড় তো ধোয়া নেই।” বাবা বললেন, ‘‘কাপড় ধোয়া লাগবে কেন?’’ অর্থাৎ উনি আমাকে পাঠাবেনই।
এদিকে আমার বড়ো ভাইয়ের মেয়ে বিয়ে। তিনি মোরাকাবায় বসে কানড়বাকাটি করছেন যে, আমার মেয়ের বিয়ে, আমাদের বাড়ির কেউ আসেনি। অন্তত আমার ছোটো ভাই যদি আসত, এই বলে তিনি আজিজি করছিলেন। মোর্শেদ তো রূহানি জগতের খবর রাখেন। মোর্শেদ রূহানিতে বিষয়টি অবগত হয়ে আমাকে বিয়েতে যাওয়ার জন্য জোরাজুরি করেন। তখন আমি আমার স্ত্রীকে বললাম, “কাপড় চোপড় যা আছে গুছিয়ে দাও, আমি ঢাকা যাব।” সকালে গেইট দিয়ে বের হয়ে দেখি দরবারের দায়রা শরীফের সামনে একটি প্রাইভেট কার। এক জাকের গাড়িটি কিনে দরবারে নিয়ে এসেছেন। তিনি নিয়ত করেছেন যে, তার গাড়িতে করে আমাকে ঢাকা নিয়ে আসবেন। আমি তাকে জিজ্ঞেস করলাম, “কী ব্যাপার ভাই?” তিনি বললেন, ‘‘আপনাকে নেওয়ার জন্য আমি গাড়িটা নিয়ে এসেছি। আমি গাড়িটি নতুন কিনেছি। তাই আপনাকে দিয়ে উদ্বোধন করব। আপনি যদি রাজি থাকেন, তাহলে গাড়িতে করে আমি আপনাকে ঢাকায় নিয়ে যাব। অন্যথায় সদরপুর পর্যন্ত আপনাকে গাড়িতে করে ঘুড়িয়ে আবার আপনাকে দরবার শরীফে নামিয়ে দিয়ে যাব।” আমি বললাম, “ঠিক আছে।” মোর্শেদের কথার কী রহস্য! মোর্শেদ বলেছিলেন যে, আপনার হাঁটা লাগবে না। সত্যিই আমার হাঁটার প্রয়োজন হয়নি। এরপর আমরা নাস্তা খেয়ে গাড়িতে বসি। সেখান থেকে একেবারে ঢাকার মিরপুরে বড়ো ভাইয়ের বাসায়।
বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে রাত ১১টার পর আমি দরবারের ম্যানেজার বদরুজ্জামান সাহেবকে সাথে নিয়ে সদরঘাট সিমসন রোডে অবস্থিত দরবার শরীফের কেন্দ্রীয় প্রচার দপ্তরে চলে আসি। সেখানে বসে আমি মনে মনে চিন্তা করলাম যে, মোর্শেদ আমাকে এত জোর দিয়ে ঢাকায় পাঠালেন, নিশ্চয়ই এর কোনো মহৎ উদ্দেশ্য আছে। তাই মোর্শেদের মহাসত্য প্রচারের নতুন একটি উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমি ঢাকার বিশিষ্ট জাকেরদের বৈঠকে ডেকে আলোচনা করলাম যে, আমাদের তরিকা প্রচারের জন্য একটি পত্রিকা প্রয়োজন। সুতরাং আমি একটি মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করতে চাই। আমার প্রস্তাবে সকলেই একমত হলেন। তখন সদরঘাট প্রচার দপ্তরে একজন সাংবাদিক আসলেন। তিনি বললেন যে, তাকে সম্পাদকের দায়িত্ব প্রদান করতে। আমি বললাম, “আমি আপনাকে সম্পাদক বানাবো না।” তখন তিনি রাগানি¦ত হয়ে বললেন, ‘‘এটি খুব কঠিন কাজ, আপনি পারবেন না।’’ তার এই কথা শুনে
আমি অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে বললাম, “আমি না পারলে না পারলাম, তবুও আপনাকে দিয়ে করাব না।” এরপরে সদরঘাটে কেন্দ্রীয় প্রচার দপ্তরে বসে প্রকাশিতব্য মাসিক পত্রিকাটির জন্য আমি নিজেই স্বনামে-বেনামে অনেকগুলো আর্টিকেল লিখলাম। পত্রিকাটির নামকরণের জন্য আমি কয়েকটি নাম ঠিক করলাম। এরপর নামগুলো চন্দ্রপাড়ায় ইমাম হুজুরের কাছে পাঠালাম। তিনি ঐ নামগুলো থেকে ‘আত্মার বাণী’ নামটি পছন্দ করলেন। তখন থেকেই পত্রিকাটির নামকরণ হলো- ‘আত্মার বাণী’। ১৮ দিন পর ‘আত্মার বাণী’ পত্রিকার ১ম সংখ্যা ছেপে চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফে গেলাম। পত্রিকাটি দেখে আমার মোর্শেদ দারুণ খুশি হলেন। এই হলো ‘আত্মার বাণী’ প্রকাশের ইতিহাস।
আমি দীর্ঘ ১২ বছর আমার মহান মোর্শেদের দরবারে গভীর সাধনা ও রিয়াজতের মাধ্যমে মহান রাব্বুল আলামিন ও রাহমাতুল্লিল আলামিনের পরিচয় লাভ করি। অতঃপর মোর্শেদের জীবদ্দশায় ১৯৮৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর মহান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে ‘মোজাদ্দেদ’ তথা সংস্কারকের সুমহান দায়িত্ব লাভ করি। মোর্শেদের ওফাতের পর আরো ১ বছর তাঁর পরিবারবর্গ, জাকেরবৃন্দ ও দরবার শরীফ পরিচালনা করি। পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালের ২৮ মার্চ মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের বৃহত্তর স্বার্থে রাজধানী ঢাকায় চলে আসি এবং সেই বছর ১০ মহররম পবিত্র আশুরার দিবসে ‘দেওয়ানবাগ শরীফ’ প্রতিষ্ঠা করি। μমবর্ধমান আশেকে রাসুলদের জোয়ারের সাথে সঙ্গতি রেখে আমি বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে সর্বমোট ১১টি দরবার শরীফ, শতাধিক খানকা শরীফ ও সহস্রাধিক আশেকে রাসুল জাকের মজলিস প্রতিষ্ঠা করি। এছাড়া বহির্বিশ্বে মোহাম্মদী ইসলাম জাগরণের লক্ষ্যে World Ashek-e-Rasul Organization প্রতিষ্ঠা করি। মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের শতাধিক দেশে বর্তমানে মোহাম্মদী ইসলামের অনুসারী
আশেকে রাসুলদের সংখ্যা ৩ কোটিরও বেশি।
উল্লেখ্য যে, চন্দ্রপাড়া দরবার শরীফ থেকে ঢাকায় আসার পর আমি ১৫৪ আরামবাগে থাকতাম। সেসময় প্রতিদিন দল বেধে মানুষ আমার কাছে ‘পানি পড়া’ নিতে আসত। আল্লাহ্র অপার দয়ায় আমি পানি পড়া দিলে, মানুষ উপকার পেত। একদিন আমি হুজরা শরীফে আগত জাকেরদের উদ্দেশে ‘আল্লাহ’্ সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম। সেসময় আমার খাদেম আবু সাইদ আমাকে জানালো যে, পানি পড়া নেওয়ার জন্য মানুষ লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছে । আমি আবু সাইদ কে বললাম, “তুমি এক কাজ করো, ‘আত্মার বাণী’ চুবিয়ে তাদেরকে পানি দিয়ে দাও।” তখন আবু সাইদ বলল, “বাবাজান! লোকগুলো তো বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে এসেছে, সকলকে কি আত্মার বাণী চুবানো পানি পান করতে বলব?।” আমি বললাম যে, সব রোগের জন্যই আত্মার বাণীর চুবানো পানি মহৌষধ হিসাবে কাজ করবে। মহান আল্লাহ্র অপার দয়ায় সেদিন থেকে কোটি কোটি মোর্শেদ প্রেমিক আত্মার বাণী চুবানো পানি পান করে কঠিন কঠিন রোগ থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছে এবং বর্তমানেও করছে। এই আত্মার বাণী পত্রিকাটি এমনই এক নেয়ামতপূর্ণ পত্রিকা, যা মহান আল্লাহ্র রহমত ও বরকতে পরিপূর্ণ। এটি পাঠ করে দেশ-বিদেশের অসংখ্য মুক্তিকামী মানুষ মোহাম্মদী ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আসার সৌভাগ্য লাভ করেছেন।
মাসিক ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটি প্রতিমাসে নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে কোটি কোটি আশেকে রাসুল ও মুক্তিকামী মানুষের নিকট মোহাম্মদী ইসলামের মূল বার্তা পৌঁছে দিচ্ছে। মূলত এই সাময়িকীটি মোহাম্মদী ইসলামের মুখপত্রের ভূমিকা যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে আমি আমার মেজো সাহেবজাদা ইমাম ড. আরসাম কুদরত এ খোদাকে মাসিক ‘আত্মার বাণী’ পত্রিকার সম্পাদনার দায়িত্ব অর্পণ করি। সে সাময়িকীটিকে আধুনিক কলেবরে প্রকাশ এবং এর প্রচার সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে, তা জেনে আমি অত্যন্ত খুশি হয়েছি। আমি ‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটির উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করছি।
‘আত্মার বাণী’ সাময়িকীটির সাথে সংশ্লিষ্ট স্টাফ, লেখক, গ্রাহক, পাঠক, বিজ্ঞাপনদাতা, শুভানুধ্যায়ী সকলের মঙ্গল কামনা করছি।
মহান রাব্বুল আলামিন আপনাদের সকলের সহায় হোন। আমিন।
(সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী)
স্বত্বাধিকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ।