Cancel Preloader

মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পেয়ে আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলনে যোগদান

– শাহরিয়ার মাহমুদ চৌধুরী (অপু)


দয়াময় আল্লাহ্ তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানবজাতির নিকট স্বীয় পরিচয় তুলে ধরার জন্য নবুয়তের যুগে অসংখ্য নবি রাসুল প্রেরণ করেছেন। নবুয়তের যুগের পরিসমাপ্তির পর এরই ধারাবাহিকতায় একই উদ্দেশ্যে আল্লাহ্ পাক বেলায়েতের যুগে অলী-আল্লাহ প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কুরআনে এরশাদ হয়েছে- “আর আমি যাদের সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে একদল আছে, যাঁরা সত্য পথ দেখায় এবং সে অনুযায়ী ন্যয়বিচার করে।” (সূরা আ‘রাফ ৭: আয়াত ১৮১)


মহান আল্লাহ্র এই শাশ^ত চিরন্তন বাণী হতে একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সমগ্র মানবজাতির মাঝে দুটি সম্প্রদায় বিদ্যমান। একটি হলো হেদায়েতকারী, আর অপরটি হলো হেদায়েত প্রার্থী। যাঁরা হেদায়েতকারী হিসেবে জগতে আবির্ভূত হন, তাঁরাই হলেন মহামানব তথা নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্। নবি-রাসুল ও অলী-আল্লাহ্গণ মানবকুলে জন্মগ্রহণ করলেও তারা সাধারন মানুষ নন। তারা জ্যোতির্ময় আল্লাহ্র নুরময় সত্তাকে নিজ হৃদয়ে ধারণ করেন বিধায় তাঁদের মাধ্যমে মহান আল্লাহ্র পরিচয় পাওয়া যায় এবং অলৌকিকত্ব প্রকাশ পায়।
নবুয়তের যুগে নবি রাসুলগণের মাধ্যমে যে সকল অলৌকিক ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল তাকে মু‘জিজা বলা হয়, আর বেলায়েতের যুগে আউলিয়ায়ে কেরামের মাধ্যমে সংঘটিত ঘটনাকে কারামত বলা হয়। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানের কাছে এসে অসংখ্য মানুষ বিভিন্ন ধরনের বিপদাপদ ও বালা মুসিবতে পড়ে প্রতিনিয়ত আল্লাহ্র দয়া ও সাহায্য লাভ করেছেন। তেমনি একজন আশেকে রাসুল মোফাখ্খারুল ইসলাম একটি মামলা থেকে জামিন পেয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশালে অনুষ্ঠিত বিশেষ আশেকে রাসুল সম্মলনে যোগদান করেন। তারই সংঘটিত ঘটনা উপস্থাপন করা হলো-


আশেকে রাসুল মোফাখ্খারুল ইসলাম দিনাজপুর জেলার বীরগঞ্জ উপজেলার সুজালপুর গ্রামের অধিবাসী। তিনি বীরগঞ্জ সদরে বসবাস করেন। পেশায় একজন ভেটারিনারি (পশুবিষয়ক) ঔষধ ব্যবসায়ী। তিনি ২০০৭ সালে তরিকা গ্রহণ করেন। তরিকা গ্রহণ করার পর একনিষ্ঠ কর্মী হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি দিনাজপুর জেলার সহকারী জেলা সমন্বয়ক এবং রংপুর বাবে নাজাত দরবার শরীফের কর্মী হিসাবে দায়িত্বরত আছেন। মহান দরদি দয়াল বাবাজানের সুযোগ্য উত্তরসূরি মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের আহŸানে ১২ই মে আশেকে রাসুল (সা.) সম্মেলন’ বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফে অনুষ্ঠিত হয়। আশেকে রাসুল মোফাখখারুল ইসলাম অনেক আগে থেকে সেখানে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিলেন।


ঘটনার দিন অর্থাৎ ১১ই মে, বৃহস্পতিবার তিনি মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমামের আহŸানে ১২ই মে, শুক্রবারের অনুষ্ঠানে যাওয়ার জন্য বাসের টিকেট-সহ অন্যান্য সকল কার্যক্রম শেষ করে তিনি তার ফার্মেসিতে এসে ১২টার দিকে বসেন। এর ঠিক একঘন্টা পর সেখানে বীরগঞ্জ থানার ৪ জন পুলিশ সদস্য এসে উপস্থিত হন। তারা সেখান থেকে তাকে গ্রেফতার করে বীরগঞ্জ থানায় নিয়ে যান। থানায় যাওয়ার পর তিনি জানতে পারেন, তার শ্যালকের নামে নারী শিশু আদালতে একটি মামলা রয়েছে। এই মামলায় তিনি নিজেও একজন আসামী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি নিজে উপস্থিত থেকে মামলাটির মীমাংসা করে দেন, কিন্তু বাদী যে মেয়েটি ছিল সে মামলাটি তুলে নেয়নি, সেই বিষয়টি আশেকে রাসুল মোফাখখারুল ইসলামের জানা ছিল না। যার কারণে তিনি গ্রেফতার হন। তিনি যখন গ্রেফতার হন, তখন বেলা ১টা বাজে। এদিকে কোর্ট ২টায় বন্ধ হয়ে যায়। তার সকল আত্মীয়স্বজন সবাই থানায় চলে আসে। একজন উকিল তৎক্ষণাৎ নিয়োগ দেওয়া হয়। থানা থেকে আশেকে রাসুল মোফাখখারুল ইসলামকে পুলিশ কোর্টে চালান করে দেয়। বীরগঞ্জ থানা থেকে কোর্টে পৌঁছাতে এবং সকল কার্যক্রম শেষ করতে ২টা বেজে যায়। আশেকে রাসুল মোফাখখারুল ইসলাম চিন্তিত হয়ে পড়েন। আগামীকাল ইমাম কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের আহবানে অনুষ্ঠানে তিনি সেখানে অংশগ্রহণ করার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন এবং আশা করেছেন, সেখানে গিয়ে ফায়েজ রহমত এবং বরকত পাবেন, অথচ তিনি মামলায় ফেঁসে যাচ্ছেন। যেখান থেকে তিনি চাইলেই মুক্তি পাওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। এমতাবস্থায় তিনি ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের উসিলা ধরে এবং মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের উসিলা ধরে মহান আল্লাহ্র নিকট দয়া কামনা করেন এবং মানত করেন যেন, এ বিপদ থেকে তিনি রক্ষা পান। কারণ কোর্ট ২টায় বন্ধ, যদি জামিন না হয়, তাহলে তিনি এই মহতী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।


সাধারণত ২টার পর সকল বিচারক এজলাস থেকে উঠে যান। তারা আর জামিন বা অন্য কোনো নালিশ বা মামলার কথা শুনেন না। আল্লাহ্র বন্ধুদের উসিলা নিয়ে আল্লাহ্র সাহায্য চাইলে দয়াময় আল্লাহ্ তাকে সাহায্য করেন। যে কোর্ট ২টায় শেষ হয়ে যায়, সেখানে আশেকে রাসুল মোফাখখারুল ইসলাম ৫টার সময় জামিন লাভ করেন। বিচারকের চেম্বারে তাকে ডেকে এনে জামিন দেওয়া হয়। এ ঘটনা দেখে উকিল এবং আরো যারা ছিল তারা অবাক হয়ে যান। যিনি বিচারক ছিলেন তিনি যেখানে ২টার পরে কোনো কথা শুনতে চান না, সেই বিচারক সেদিন একটি মামলার জন্য ৫টা পর্যন্ত তার চেম্বারে ছিলেন এবং আশেকে রাসুল মোফাখখারুল ইসলামের ঘটনাটি উকিলের কাছে শুনে তাকে জামিন প্রদান করেন। সাধারণত নারী এবং শিশু মামলায় সহজে জামিন হয় না, অথচ মহান মোর্শেদের উসিলায় রাব্বুল আলামিন তাকে ৩ ঘন্টার মধ্যে জামিনের ব্যবস্থা করে দেন। পরবর্র্তীতে রাত ৮টার সময় তিনি বাসে করে ত্রিশালে বাবে বরকত দেওয়ানবাগ শরীফে রওয়ানা হন দয়াল মেজো হুজুরের অনুষ্ঠানে যোগদান করার জন্য। মহান মোর্শেদের উসিলায় আল্লাহ্ তাকে এ রকম একটি জটিল সমস্যা থেকে তাকে উদ্ধার করেন।


অলী-আল্লাহগণ আল্লাহ্র বন্ধু। তাই তাঁরাও তাদের ভক্তের বিপদাপদে রুহানিতে দয়ার হাত প্রসারিত করে দেন। এ ঘটনা তারই প্রমাণ করে। তিনি মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত শাহ্্ দেওয়ানবাগী দয়াল বাবা কেব্লাজান এবং মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা (মা. আ.) হুজুরের কাছে শুকরিয়া জ্ঞাপন করেন।
[লেখক: ইসলামি গবেষক]

সম্পর্কিত পোস্ট