Cancel Preloader

যুদ্ধের পরিকল্পনা করছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ ।

মুক্তিযুদ্ধে সূফী সম্রাট : স্মৃতিময় ১৯ নভেম্বর

বীর মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ আলম
মাতৃভূমিকে স্বাধীন করতে মুক্তিযুদ্ধ চলেছিল দীর্ঘ ৯ মাস। এই সময়ে যুদ্ধের বিভিন্ন সেক্টরে যে সকল ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল, এর অনেক তথ্য ইতিহাসের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়নি। যেমন- লিপিবদ্ধ হয়নি ১৯৭১ সালের ১৯ নভেম্বরের ঐতিহাসিক ঘটনা। মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে যারা লিখেছেন তাদের মধ্যে কেহ কেহ সেই ঐতিহাসিক ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন নিজেদের আঙ্গিকে, আমরা আমাদের জাতিকে সেদিনের ঘটনা স্মরণ করিয়ে দিতে চাই।
আপনরা যারা মুক্তিযুদ্ধের পর জন্মগ্রহণ করেছেন, তারা যেমন মুক্তিযুদ্ধ দেখেননি, অনেকেরই স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচির বাইরে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস পাঠের সুযোগ হয়নি। আমাদের নিশ্চয়ই জানা আছে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হঠাৎ সৃষ্ট এক দিনের ঘটনা নয়। বলতে গেলে স্বাধিকার আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে। ১৯৫২ হতে ১৯৭১ সাল প্রায় ২০ বছর সময়ের অনেক জানা অজানা ঘটনায় সমৃদ্ধ আমাদের মুুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। পলাশীর আম্রকাননে স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হওয়ার পর পরাধীনতার শৃংখল মুক্ত হয়ে স্বাধিকারের জন্য ১৯৭১ সালের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। ১৯৫২ সালের ভাষা শহিদদের আত্মত্যাগ যে বাঙালিকে স্বাধীনতা সংগ্রামের চুড়ান্ত এক যুদ্ধে নিয়ে যাবে, তা কী কারোই জানা ছিল? এটাই স্রষ্টার অমোঘ বিধানের রহস্যাত্মক ঘটনা।
ঘটনার সূত্রপাত ১৯৫২ সালে আর এর পরিসমাপ্তি ঘটে ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোষণা করেছিলেন- এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম। এর মাধ্যমেই শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। এই ঘোষণার মাত্র ১৮ দিনের মাথায় পাক হানাদার বাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালির উপর। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
ঢাকার নির্যাতিত মানুষ জীবনের শেষ ঠিকানা খুঁজতে ছুটতে থাকে গন্তব্যের পথে। পথে পথে বাধা। ভুলুণ্ঠিত মানবতার এই করুণ সময়ে যে ব্যক্তিটি মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়ে নিরস্ত্র মানুষের আহার ও আশ্রয়ের ব্যবস্থা করার জন্য মরণপর সংগ্রামে লিপ্ত হলেন- তিনি হলেন মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেব্লাজান। মাদ্রাসায় পাঠরত কোনো ব্যক্তির সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে যোগদান এক অনন্য ঘটনা। একদিকে ঢাকা হতে ছুটে আসা অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা করলেন, অন্যদিকে মাতৃভূমিকে শত্রু মুক্ত করার মানসে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সাথি- বন্ধুদের একত্রিত করার কাজ শুরু করেন। অবশেষে ১৯৭১ সালের ১১ এপ্রিল রবিবার ৭২ জন সহকর্মীদের নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়ীয়ায় স্থাপিত বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগ দেন।
এর আগের ঘটনা: পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজন থেকে বিদায় নিতে তিনি ছুটে যান নিজ বাড়ী আশুগঞ্জের বাহাদুরপুরের সরকার বাড়িতে। পিতা-মাতার নিকট যুদ্ধে যাবার জন্য বিদায় চাইলেন। ছেলে যুদ্ধে যাবে শুনে মা-বাবার মন এক অজানা আতঙ্কে আতকে উঠল। যুদ্ধ মানেই জীবন মৃত্যুর লড়াই। কোনো পিতা-মাতাই স্নেহের সন্তানকে অস্ত্রের মুখে ঠেলে দিতে পারে না। পিতা-মাতার মনের অবস্থা অনুধাবন করে তাঁর সংগ্রামী মন ব্যাকুল হয়ে উঠল। কখন বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়বেন এই ভেবে। পিতা-মাতাকে সালাম করে বললেন, “আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন। যদি পাক হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে দেশ স্বাধীন করতে পারি,” তবেই আমি আপনাদের কোলে ফিরে আসবো। আর তা না হলে এটাই আপনাদের সাথে আমার শেষ কথা।” একথা বলেই তিনি দ্রুত পদে বাড়ি হতে মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের জন্য বেরিয়ে পড়লেন।
১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের আম্রকাননে গঠিত হয় মুজিবনগর সরকার। বাংলাদেশের সরকার গঠনেরও ৬ দিন পূর্বে ১১ এপ্রিল সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ছিল এক স্মরণীয় ঘটনা। ১১ এপ্রিল মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে যোগদানের পরের দিন তাঁদের পাঠিয়ে দেয়া হয় ৩নং সেক্টরের হেড কোয়ার্টার তেলিয়াপাড়ায়।
জীবনের এক নব অধ্যায়ের সূচনা হলো। সেই সময় তিনি ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার পশ্চিমাঞ্চলের মাদ্রাসা, স্কুল ও কলেজের ছাত্র সমন্বয়ে গঠিত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ভিপি ছিলেন। মাদ্রাসা পড়ুয়া কোনো ছাত্রের মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ গ্রহণ ছিল এক ব্যতিক্রমধর্মী ঘটনা। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান গেরিলা বাহিনীতে না গিয়ে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত নিয়মিত বাহিনীতে যোগদানের মাধ্যমে সামরিক কায়দায় যুদ্ধ করে বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁর মুক্তিযুদ্ধ জীবন বিভিন্ন ঘটনায় সমৃদ্ধ।

সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণ
তেলিয়াপাড়ায় সেক্টর হেডকোয়ার্টারে যোগদানের পর যুবক সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানকে ৩০ জনের একটি প্লাটুন কমাণ্ডারের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরপর মাত্র ১৫ দিনের মাথায় লে. হেলাল মোর্শেদের নেতৃত্বে কমাণ্ডার হিসাবে তিনি সর্বপ্রথম শাহাবাজপুরে পাক সেনাদের উপর আক্রমণ পরিচালনা করেন। কেমন দেশপ্রেম ও সাহসী হলে একটি নিয়মিত বাহিনীর বিরুদ্ধে সরাসরি সমর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা সম্ভব। এই আক্রমণে তিনি সফলকাম হন। এরপর একে একে ২৮ এপ্রিল মাধবপুর যুদ্ধ, সিলেট ব্রাহ্মণবাড়ীয়া সড়কে অ্যাম্বুস, মাধবপুর, বাগসাইর গ্রামে অ্যাম্বুস, তেলিয়াপাড়ায় এ্যাম্বুস ও যুদ্ধ এবং মনতলার যুদ্ধসহ বিভিন্ন যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন।
২১ জুন হবিগঞ্জ জেলার মনতলায় প্রতিষ্ঠিত ঘাটির পতন ঘটে। এরপর ৩নং সেক্টর হেডকোয়ার্টার স্থানান্তর করা হয় সীমান্তবর্তী ভারতের মনতলা চা বাগানে। হেডকোয়ার্টার ভারতীয় এলাকায় স্থাপনের পর জুলাই মাসে প্লাটুন কমাণ্ডারের কমিশন দিয়ে অফিসার পদে নিয়মিত বাহিনীতে নিয়োগ প্রদান শুরু হয়। কিন্তু সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান প্লাটুন কমাণ্ডারদের নিয়মিত বাহিনীতে যোগদানে অনাগ্রহ প্রকাশ করেন। তিনি একজন আলেম বিধায় তাঁকে ক্যাম্পে একজন ধর্মীয় নেতার দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখানে অবস্থানকালে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের মাতৃভূমির স্বাধীনতার যুদ্ধের প্রতি উৎসাহিত করতেন এবং প্রশিক্ষণ শেষে দেশে প্রবেশের পূর্বে মুুক্তি বাহিনীকে শপথ বাক্য পাঠ করানোর দায়িত্ব পালন করতেন।
ধর্মীয় দায়িত্ব লাভের পর মেজর জেনারেল কে. এম. শফিউল্লাহ সাহেবের অনুরোধেই ৫ ওয়াক্ত নামাজের জন্য তিনি মনতলা পাহাড়ী এলাকায় বাঁশের বেড়া দিয়ে একটি মসজিদ স্থাপন করেন। ভারতের মাটিতে জুমার খুৎবার কিতাব না পাওয়ার কারণে তিনি স্বহস্তে খুৎবা লিখে জুমার নামাজ পড়াতে শুরু করেন।

১৯ নভেম্বরের সেই স্মরণীয় ঘটনা : বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী
দেখতে দেখতে মুক্তিযুদ্ধের ৮ মাস পেরিয়ে গেল। সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধা আর হানাদার বাহিনীর সমর যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়েছে। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয়ের জন্য মরণপ্রাণ সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। সামরিক বাহিনীর গতিরোধ করতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ব্রিজ-কালভার্ট ভেঙ্গে ফেলছে। হিট অ্যান্ড রানের সাথে সাথে মুখোমুখি যুদ্ধ শুরু হয়েছে বিভিন্ন অঞ্চলে। চারিদিকে যুদ্ধ আর যুদ্ধ। এরই মাঝে সমাগত হলো ঈদুল ফিতর। সেদিন ছিল ১৯ নভেম্বর। ঈদের দিনেও প্রচণ্ড গোলাগুলি।
হেজামারায় অনুষ্ঠিত হলো ঈদের জামাত। মুকুন্দপুরের প্রচণ্ড গোলাগুলির মধ্যে অনুষ্ঠিত ঈদের এই জামাতে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান খুৎবা দিতে দণ্ডায়মান হলেন। আবেগময় কণ্ঠে বলতে শুরু করলেন, “ঈদের চাঁদ ফিরে যাও তাদের কাছে, যারা আমাদের মা-বোনদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে।” সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের এই ভাষণ শ্রবণ করে উপস্থিত সবাই কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল। সকলের মনে ভেসে উঠল নিজেদের মা-বাবা, ভাই-বোন ও আত্মীয়স্বজনদের কথা। দীর্ঘ দিনের বিচ্ছেদ যাতনায় অনেকেই মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগল। সৃষ্টি হলো এক অভূতপূর্ব আবেগময় পরিবেশের।
আগত সৈনিকদের ক্রন্দনরোলে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠল। বিপন্ন পরিবেশে বহুকষ্টে নিজকে সামলে দিয়ে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান হঠাৎ এমন এক বাণী প্রমাণ করলেন, যা প্রমাণ করে তিনি আল্লাহ্র নিকটতম বন্ধু। যুগের একজন শ্রেষ্ঠ মহামানব। তিনি ঘোষণা করলেন, “আল্লাহ্র কসম! আগামী বকরা (কোরবানি) ঈদের আগে দেশ স্বাধীন হবে। আমি আপনাদের নিয়ে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করব।” তাঁর এই ঐতিহাসিক ঘোষণার সামান্যতম ব্যত্যয় ঘটেনি। কোরবানি ঈদের পূর্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছিল এবং তিনি রেসকোর্স ময়দানে সস্মিলিত বাহিনীর ঈদের জামাতে ইমামতি করেন।
উল্লেখ্য যে, বীর মুক্তিযোদ্ধা সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের সেই ঐতিহাসিক ভবিষ্যদ্বাণী ঈদের পরদিন হতেই কার্যকরী হতে শুরু করলো। ভবিষ্যদ্বাণী প্রদানের কয়েক ঘন্টার মধ্যে অর্থাৎ ঈদের দিন বিকালেই মুক্তিবাহিনী মুকুন্দপুর ঘাটি দখলে নিয়ে নেয়। এরপর শুরু হয় একের পর এক বিজয়ের ঘটনা। মুক্তিযোদ্ধারা তাদের হৃদয়ে এক ঐশী শক্তির প্রভাব অনুভব করতে থাকে। মুক্তিবাহিনীর অভাবনীয় সাফল্যে পাক সেনাদের মাঝে ভয়ের সৃষ্টি হতে শুরু করে। একদিকে মুক্তিবাহিনীর সাড়াশি আক্রমণ অন্যদিকে মিত্রবাহিনীর স্থল ও বিমান হামলায় হানাদার বাহিনী নিজেদের গুটিয়ে ফেলার কার্যক্রম শুরু করে। এভাবে একের পর এক আক্রমণের মুখে ১৯ নভেম্বর ঈদের জামাতে প্রদত্ত বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর মাত্র ২৭ দিন পর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হয়।

রেসকোর্সে ঈদের জামাত
১৬ ডিসেম্বর মাতৃভূমি হানাদার মুক্ত হওয়ার পর সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান নিজ গ্রাম ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার বাহাদুরপুরে গমন করেন, তাঁর পিতা-মাতা ও আত্মীয়স্বজনদের সাথে সাক্ষাতের জন্য। সকলের সাথে সাক্ষাত শেষে ৩নং সেক্টর হেডকোয়ার্টার থেকে ২৪ জানুয়ারি স্টিমারে আরোহণ করে ২৫ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের পাগলাঘাটে এসে পৌঁছেন। সেখান হতে রেসকোর্স ময়দানে পৌছলে জানতে পারেন পরদিন ঈদুল আজহা। সাথে সাথে তাঁর ভারতের মাটিতে ঈদুল ফিতরে প্রদত্ত ভাষণের কথা মনে পড়ে গেল- “আল্লাহ্র কসম! আগামী বকরা ঈদের আগে দেশ স্বাধীন হবে। আমি আপনাদের নিয়ে রেককোর্সে ঈদের জামাত আদায় করব।”
এই প্রসঙ্গে আমরা মুক্তিযুদ্ধকালীন বিভিন্ন সমর সেনাদের কিছু বাণী তুলে ধরব যারা সেই ঐতিহাসিক ঘটনার জ্বলন্ত সাক্ষী।

মেজর নাসির উদ্দিন
১১তম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের অ্যাডজুটেন্ট মেজর নাসির উদ্দিন ‘যুদ্ধে যুদ্ধে স্বাধীনতা’ গ্রন্থে লিখেছেন যে, “১৯শে নভেম্বর। সেদিন ছিল ঈদ। প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দের মধ্যেই ১১তম ইষ্ট বেঙ্গল শিবিরে অনুষ্ঠিত হলো ঈদের জামাত। সৈনিক এবং অফিসার অনেকেই বিষন্ন মন নিয়ে যোগ দিল নামাজে। মুনাজাতের সময় ইমাম সাহেব অঝোরে কাঁদছিলেন। তিনি (সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান) বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য সৃষ্টিকর্তার অনুকম্পা চাইলেন।”

মেজর জেনারেল ইব্রাহিম
এই প্রসঙ্গে বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল ইব্রাহীম বলেন, ‘ঈদের কথা শুনেই আমি সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাকে বললাম, কি হুজুর! আপনি না বলেছিলেন- রেসকোর্সে এসে আমাদের নিয়ে ঈদুল আজহার নামাজ পড়াবেন। দেখেন আল্লাহ্ তায়ালা ঈদুল আজহায় ঠিকই আমাদেরকে রেসকোর্সে নিয়ে এসেছেন। আপনি তৈরি হয়ে যান। বিভিন্ন সেক্টরের সম্মিলিত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে আপনাকেই আগামীকাল ঈদের নামাজ পড়াতে হবে। ইব্রাহীম সাহেব আরো বললেন, যেহেতু এখন দেশ স্বাধীন হয়েছে। সেহেতু ফৌজী পোশাকে আর নামাজ পড়ানো যাবে না। আপনি ধর্মীয় পোশাক কিনে আনার ব্যবস্থা নিন। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান রেসকোর্স হতে নিউমার্কেটে গিয়ে পাঞ্জাবী-পায়জামা, টুপি কিনে নামাজের জন্য প্রস্তুত হলেন।

মেজর জেনারেল এম. আজিজুর রহমান, বীর উত্তম
মেজর জেনারেল (অব.) এম আজিজুর রহমান, বীর উত্তম সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান সম্পর্কে বলেন, “১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় একজন সহযোদ্ধা হিসাবে দেখেছি, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর সর্বোপরি একজন ব্যতিক্রমধর্মী ব্যক্তিত্ব। এদেশের আলেম সমাজ যখন বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছেন, তখন তিনি দেশ ও জাতিকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কবল থেকে উদ্ধার করার জন্য সহপাঠিদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। আমার জানা মতে হয়তো তিনিই একমাত্র আলেম বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি ধর্মীয় অনুভূতি ও মূল্যবোধকে সমুন্নত রেখে অত্যন্ত সাহসিকতার সাথে শত্রু বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন।

মেজর জেনারেল কে এম শফিউল্লাহ
সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের মুক্তিযুদ্ধকালীন কথা বলতে গিয়ে সাবেক সেনা প্রধান, বীর উত্তম মেজর জেনারেল কে.এম. শফিউল্লাহ বলেন, তাঁর (সূফী সম্রাট) কার্যক্রম প্রথমে আমার নজরে আসে ধর্মগড় অপারেশনে। সেই অপারেশনে তাঁর বীরত্বের কারণে আমি অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম। পরবর্তীতে তিনি শুধু যুদ্ধই করেননি, তিনি আমার সেক্টরের অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ধর্মীয় বিষয়ে শিক্ষা দিয়ে অনুপ্রাণিত করেছেন। নামাজের সময় তাঁর বয়ান এতই শ্রুতিমধুর ছিল যে, তা শুনতে ইচ্ছে করত। মুক্তিযুদ্ধের শেষ প্রান্তে হেজামারাতে রোজার ঈদের নামাজের খুৎবা এবং মুনাজাত এমনই প্রাণবন্ত ছিল যে, সেদিন সেই জামায়াতে এমন কোনো লোক ছিল না, যে কাঁদে নাই। সেদিন হুজুর সবারই মনকেড়ে নিয়েছিলেন এবং দোয়া করেছিলেন যে, আল্লাহ্ আমরা যেন ঈদুল আজহার নামাজ রেসকোর্স ময়দানে পড়তে পারি। হয়েছিলও তাই। আমরা ঈদুল আজহার নামাজ রেসকোর্স ময়দানেই পড়েছিলাম।

সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান যখন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন তখন তিনি ছিলেন বয়সে তরুণ। তিনি যে জন্মসূত্রে অলী-আল্লাহ্ তা তাঁর শৈশব জীবনের বহু ঘটনা দ্বারা প্রমাণিত। যা এই ছোটো প্রবন্ধে আলোচনা করা সম্ভব নয়। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান অলীগণের সম্রাট তথা যুগের ইমামের আসনে সমাসীন। তিনি ইসলাম ধর্মের মহান সংস্কারক। তাঁর রয়েছে অগণিত অলৌকিক কারামত। মুক্তিযুদ্ধকালীন ঈদের জামাতের খুৎবায় প্রদত্ত ভাষণে এটা প্রমাণিত হয় যে, তিনি মুক্তিযুদ্ধের এক আধ্যাত্মিক নেতা। তাঁর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ ছিল যুদ্ধ বিজয়ের এক রহস্যজনক দিক। তাঁর সেই ঐতিহাসিক ভাষণের কারণেই তাঁকে বলা হয় “মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী প্রদানকারী”। এই মহামানবকে সকল আশেকে রাসুলদের পক্ষ হতে জানাই লক্ষ কোটি কদমবুসি ও শ্রদ্ধার্ঘ্য।

সম্পর্কিত পোস্ট

3 Comments

  • সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের মুক্তী যুদ্দে জীবন কাহিনি পড়ে সত্য সন্ধান পেলাম।

  • সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের মুক্তী যুদ্দে জীবন কাহিনি পড়ে সত্য সন্ধান পেলাম।

  • সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুরের মুক্তি যুদ্বের জীবন কাহিনি পড়ে সত্য সন্ধান পেলাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *