মু‘জিঝাতুল আম্বিয়া (পর্ব-০১) – হযরত শিশ (আ.)-এর মু‘জিঝা
হযরতুল আল্লাম এমরান হোসাইন মাজহারী
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এ সৃষ্টি জগত সৃজন করেছেন নিজেকে প্রকাশ করার জন্য। তাঁর অগণিত সৃষ্টির মাঝে মানুষকে সর্বশ্রেষ্ঠ করে সৃষ্টি করেছেন। সর্বপ্রথম মানব হলেন আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.)। অতঃপর আদি মাতা হযরত হাওয়া (আ.)। যাঁদের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে মানুষের প্রসার ঘটে। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন- “হে মানবমন্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন। যিনি তাদের দুজন হতে বহু নর নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন। (সূরা আন নিসা ৪: আয়াত ১)
হযরত আদম (আ.) ও হযরত হাওয়া (আ.)-এর মাধ্যমে জগতে তাঁদের অনেক সন্তান জন্ম হয়। কোনো কোনো বর্ণনা থেকে জানা যায় তাঁদের মোট সন্তান হয়েছিল ১২০ জোড়া। এর মধ্যে হযরত শিশ (আ.) একা হয়েছিলেন অর্থাৎ ২৩৯ জন তাঁদের সন্তান হয়েছিল। আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ১ হাজার বছর হায়াত লাভ করেছিলেন। তিনি তাঁর সন্তানদের আত্মশুদ্ধি অর্জন করত এক আল্লাহ্র সন্তুটি অর্জনের শিক্ষা দিয়েছিলেন। হযরত আদম (আ.) ওফাত লাভের পূর্বে তাঁর রেখে যাওয়া ধর্ম পরিচালনার দায়িত্ব তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরি প্রিয় সাহেবজাদা হযরত শিশ (আ.)-কে তার অন্যান্য সন্তানদের সম্মুখে অছিয়তের মাধ্যমে দায়িত্ব প্রদান করেন। আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ.) ওফাত লাভের পূর্বে তাঁর সুযোগ্য সাহেবজাদা হযরত শিশ (আ.)-এর নিকট ফল খাওয়ার কথা বলেন।
আল্লামা তাহের সুরাটির লিখিত ‘কাসাসুল আম্বিয়া’ নামক কিতাবের বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায়- আল্লাহ্র নবি হযরত আদম (আ.) একদিন তাঁর সাহেবজাদা হযরত শিশ (আ.)-কে বললেন- “হে শিশ! আমি ফল খেতে চাই। তুমি উমুক পাহাড়ে গিয়ে আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করো, তাহলে আল্লাহ্ তোমার প্রার্থনা কবুল করবেন এবং ফলের ব্যবস্থা করবেন।” তাঁর নির্দেশ শুনে হযরত শিশ (আ.) বললেন- “হে পিতা! আপনি বুজুর্গ ব্যক্তি, মানবকুলের সর্বপ্রথম ব্যক্তি। আল্লাহ্র দরবারে আপনার মর্যাদা অপরিসীম। আপনি যদি আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করেন তাহলে আমার মনে হয় আল্লাহ্ আপনার জন্য মেওয়া তথা ফলের ব্যবস্থা করে দিবেন।” পুত্রের কথা শুনে হযরত আদম (আ.) বললেন- “হে পুত্র! তুমি অবশ্যই শুনেছ, আমি জান্নাতে থাকা অবস্থায় আল্লাহ্র আদেশ অমান্য করে গন্ধম ফল খেয়েছি। তাই আমি নিজেকে অপরাধী মনে করছি এবং এ ব্যাপারে আমি আল্লাহ্র নিকট খুবই লজ্জিত। এজন্য আমি আল্লাহ্র নিকট কিছু চাওয়া সমুচিত বোধ করছি না। বরং তুমি আল্লাহ্র নিকট এখনও নিষ্পাপ রয়েছে। তুমি কোনো গুনাহ্ করো নাই। আল্লাহ্ তোমার দোয়া কবুল করবেন। হে পুত্র! তুমিই আল্লাহ্র নিকট প্রার্থনা করো।”
হযরত শিশ (আ.) হযরত আদম (আ.)-এর নির্দেশমতো নির্ধারিত পাহাড়ে গিয়ে পিতার জন্য আল্লাহ্র নিকট বললেন- “হে আল্লাহ্! আমার পিতা ফল খাওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন। আমি আপনার নিকট প্রার্থনা করছি, আপনি আমার প্রার্থনা কবুল করে, আমার পিতার জন্য ফলের ব্যবস্থা করে দিন।” দয়াময় রাব্বুল আলামিন হযরত শিশ (আ.)-এর প্রার্থনা কবুল করেন। বেহেস্ত থেকে সর্বোত্তম মেওয়া তথা ফল ও আরো নিয়ামতসমূহ একটি স্বর্ণের থালে করে একজন রূপসী হুরের মাথায় তুলে হযরত জিবরাইল (আ.)-সহ হযরত শিশ (আ.)-এর নিকট মহান আল্লাহ্ পাঠিয়ে দিলেন। হযরত আদম (আ.) অত্যন্ত খুশি হন এই মু‘জিঝা দেখে, আরো খুশি হন এই ভেবে যে, আমার সুযোগ্য সাহেবজাদা হযরত শিশ (আ.) মহান আল্লাহ্র নিকট কবুলিয়াত প্রার্থনা করা শিখেছে এবং তাঁর এ প্রার্থনার ফলে দয়াময় আল্লাহ্ আমার জন্য জান্নাতের ফলের ব্যবস্থা করেছেন। আল্লাহ্র কাছ থেকে আগত ফল ভক্ষণ করে আল্লাহ্র নবি হযরত আদম (আ.) অত্যন্ত তৃপ্তি লাভ করেন।
[লেখক: গবেষক, আল কোরআন গবেষণা কেন্দ্র, খতিব, বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফ; ইসলামি আলোচক, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং সমন্বয়ক, দেওয়ানবাগীর দল ওলামা মিশন বাংলাদেশ।]