মু‘জিঝাতুল আম্বিয়া (পর্ব-২)
মৃত মানুষকে কবরস্থ করার পদ্ধতি সর্বপ্রথম কাকের মাধ্যমে আল্লাহ্ শিখালেন
হযরতুল আল্লাম এমরান হোসাইন মাজহারী
মহান প্রতিপালক আল্লাহ্ সর্বপ্রথম হযরত আদম (আ.)-কে তৈরি করেছেন এবং হযরত আদম (আ.) থেকে হযরত হাওয়া (আ.)-কে তৈরি করেন। হযরত হাওয়া (আ.) প্রতিবারই সন্তান প্রসব করতেন জোড়ায় জোড়ায়। অর্থাৎ একজন পুত্র ও একজন কন্যা সন্তান। একমাত্র হযরত শিশ (আ.) ব্যতীত। হযরত আদম (আ.)-এর প্রথম সন্তানদ্বয় একটি ছেলে ও একটি কন্যা ভূমিষ্ঠ হয়। হযরত আদম (আ.) ছেলেটির নাম রাখেন কাবীল আর কন্যাটির নাম রাখেন আকলিমা। মহান আল্লাহ্ আকলিমাকে অতিশয় রূপ এবং সৌন্দর্য দান করেছিলেন। এরপর বিবি হাওয়া (আ.) আবার যথাসময়ে গর্ভে সন্তান ধারণ করেন এবং যথাসময়ে একটি ছেলে সন্তান ও একটি কন্যা সন্তান জন্ম দেন। হযরত আদম (আ.) ছেলে সন্তানটির নাম রাখেন হাবীল আর কন্যা সন্তানটির নাম রাখেন গাজা। এভাবে তাদের জোড়ায় জোড়ায় সন্তান হতো। সর্বশেষ ভূমিষ্ট হয়েছিল আবদুল গায়স এবং উম্মুল মুগায়স।
মহান আল্লাহ্র হুকুুম অনুযায়ী হযরত আদম (আ.)-এর সন্তানদের বিবাহের বিধান ছিল এক জোড়ার ছেলের সাথে অন্য জোড়ার মেয়ের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। কাবীল, আকলিমা, হাবীল, গাজা। তারা যখন বিবাহের উপযুক্ত হয় হযরত আদম (আ.) কাবীলের সাথে গাজার এবং হাবীলের সাথে আকলিমার বিবাহ দেওয়ার সিন্ধান নেন এবং সেই অনুযায়ী তাদেরকে বিষয়টি অবহিত করেন। হাবীল স্বীয় পিতা হযরত আদম (আ.)-এর সিদ্ধান্ত শুনে চুপ থেকে সম্মতি প্রকাশ করেন। কিন্তু কাবীল স্বীয় পিতার সিধান্ত মেনে নিতে পারেনি। সে গাজার পরিবর্তে রূপসী তার বোন আকলিমাকেই বিয়ে করতে চায়। এরই জের ধরে পরবর্তীতে কাবীল তার ভাই হাবীলকে হত্যা করে।
এ প্রসঙ্গে দয়াময় আল্লাহ্্ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- “[(হে রাসুল (সা.)] আপনি তাদের যথাযথভাবে শোনান আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত। যখন তারা উভয়ে কোরবানি করেছিল, তখন একজনের কোরবানি কবুল হয়েছিল এবং অন্যজনের কবুল হলো না। সে বলল আমি তোমাকে হত্যা করবই। অপরজন বলল, অবশ্যই আল্লাহ্্ মুত্তাকিদের কোরবানি কবুল করেন। আমাকে হত্যা করার জন্য তুমি হাত তুললেও তোমাকে হত্যা করার জন্য আমি হাত তুলব না। আমি তো জগতসমূহের প্রতিপালক আল্লাহ্কে ভয় করি। আমি চাই তুমি আমার ও তোমার পাপের ভার বহন করো এবং দোজখবাসী হও। এটা আমি চাই এবং এটা জালিমদের কর্মফল। অতঃপর তার চিত্ত ভ্রাতৃ হত্যায় তাকে উত্তেজিত করল। ফলে সে তাকে হত্যা করল, তাই সে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হলো। (সূরা মায়িদা ৫ : আয়াত ২৭-৩০)
হাবীলকে হত্যা করার পর কাবীলের অবস্থা
হাবীলকে হত্যার পর কাবিলের নিকট এক নতুন সমস্যা দেখা দিলো। আর তা হলো হাবীলের মৃতদেহ কীভাবে গোপন করে সে নিজে নির্দোষ থাকবে? তার মনে এ চিন্তা দেখা দিলো যে, যদি হাবীলের লাশ এখানে এভাবে পড়ে থাকে তবে নিশ্চয় তার মৃত্যুর কথা পিতার কাছে আসবে এবং আমিই যে তার মৃত্যু ঘটিয়েছি তিনি তা অবশ্যই বুঝতে পারবেন। সুতরাং হাবীলের মৃত্যুর খবর যাতে সহজে পিতার নিকট না পৌঁছে এবং লাশের সন্ধান না পাওয়া যায় সেজন্য কাবীল হাবীলের মৃত লাশটি কী করবে ভেবেচিন্তে না পেয়ে কাঁধে বহন করে এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলো। আর কী করা যায় ভাবতে লাগলো।
অলৌকিকভাবে লাশ দাফনের পদ্ধতি শিক্ষা
কোনো কোনো তাফসীরকারক বলেছেন যে, কাবীল নিজ ভাইকে হত্যা করে এক বছর পর্যন্ত হাবীলকে নিজের পিঠে বহন করে রাখে। আবার কারো মতে একশত বছর পর্যন্ত বহন করে রাখে। অবশেষে মহান আল্লাহ্্ দুটি কাক প্রেরণ করেন। হযরত সুদ্দী (রহ.) সনদসহ কয়েকজন সাহাবি হতে বর্ণনা করেন এ কাক দুটি ভাই ছিল। কাক দুটি মারামারি করে একটি অপরটিকে হত্যা করে ফেলে। তারপর জীবিত কাকটি মাটি খুঁেড় মৃত কাকটিকে দাফন করে ঢেকে রাখে।
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ এরশাদ করেন- “তারপর আল্লাহ্্ একটি কাক পাঠালেন। এটি মাটি খনন করতে লাগলো তাকে (কাবীল) দেখানোর জন্য যে, কীভাবে সে তার ভাইয়ের মৃতদেহ (মাটির নিচে কবরস্থ করে) গোপন করবে। সে বলল আফসোস! আমি কি এই কাকের মতোও হতে পারলাম না। যাতে আমার ভাইয়ের লাশ গোপন করতে পারি। অতঃপর সে অনুতপ্ত হলো।” (সূরা মায়িদা ৫ : আয়াত ৩১)
মূলত মানুষ মারা যাওয়ার পর মাটির নিচে লাশ কবরস্থ করার পদ্ধতি মহান আল্লাহ্্ কাক দ্বারা কাবীলকে শিক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে আল্লাহ্্ তাঁর বান্দাদের মাঝে এ রেওয়াজ চালু করে রেখেছেন। মহান আল্লাহ আমাদের ষড়রিপুর বেড়াজাল থেকে মুক্ত হয়ে তাঁর ইচ্ছামতো কালাতিপাত করার তাওফিক দান করুক। আমিন
[লেখক: গবেষক, আল কোরআন গবেষণা কেন্দ্র, খতিব, বাবে রহমত, দেওয়ানবাগ শরীফ; ইসলামি আলোচক, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং সমন্বয়ক, দেওয়ানবাগীর দল ওলামা মিশন বাংলাদেশ।]