মোহাম্মদী ইসলামে ইমামতের ধারা
মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ
মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (মা. আ.) হুজুর কেবলাজান
‘ইমাম’ শব্দটি আরবি। যার বাংলা অর্থ-নেতা, প্রধান, দিকনির্দেশক ইত্যাদি। যেমন-মাজহাবের ইমাম, তরিকার ইমাম, ইত্যাদি। তবে এখানে আমি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত ও মনোনীত ধর্ম পরিচালনার ইমাম প্রসঙ্গে আলোচনা করব।
মহাবিশ্বের মহান স্রষ্টা আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন। তিনি আসমান ও জমিন এবং এ দুুয়ের মধ্যবর্তী যা কিছু রয়েছে, সকলের সৃষ্টিকর্তা, লালনকর্তা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা, জীবন ও মৃত্যুদাতা। তাঁর সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। তিনি মানুষকে সীমাহীন ভালোবাসেন। তিনি মানবজাতিকে শান্তি ও মুক্তির পথপ্রদর্শনের জন্য যুগ পরিক্রমায় মহামানব প্রেরণ করে আসছেন। এ সকল মহামানবকে পবিত্র কুরআন ও হাদিসে নবি, রাসুল, মোজাদ্দেদ, যুগের ইমাম ও অলী-আল্লাহ্ ইত্যাদি নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এ পৃথিবীতে আল্লাহর প্রেরিত সর্বপ্রথম নবি হলেন- মানবজাতির আদি পিতা হযরত আদম (আ.) এবং সর্বশেষ নবি ও রাসুল হলেন- কুল-কায়েনাতের রহমত, সকল নবি ও রাসুলের ইমাম হযরত মুহাম্মদ (সা.)। নবুয়তের যুগে মহান আল্লাহ্ যে সকল নবি ও রাসুলকে প্রেরণ করেছেন, অহির বাণী আল কুরআনে প্রেরিত এ সকল মহামানবকে ‘ইমাম’ নামে আখ্যায়িত করা হয়েছে। তাঁদের প্রত্যেকেই সমকালীন যুগে ধর্মীয় নেতা তথা যুগের ইমামরূপে দায়িত্ব পালন করেছেন। যেমন মুসলিম জাতির আদি পিতা হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (আ.) প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন- “ইন্নী জা‘ইলুকা লিন্নাসি ইমামান, ক্বালা ওয়া মিন যুররিইয়্যাতী, ক্বালা লা ইয়ানালু ‘আহাদিজ্ব জ্বালিমীন।” অর্থাৎ- ‘‘আমি আপনাকে মানবজাতির ইমাম বানাব। তিনি বললেন- আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও (এ ইমামের সিলসিলা অব্যাহত থাকবে কি)? মহান আল্লাহ্ বললেন- (হ্যাঁ, আমার প্রতিশ্রুতি মু’মিনদের জন্য, তবে) আমার প্রতিশ্রুতি জালিমদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয়।’’ (সূরা আল বাকারাহ ২: আয়াত ১২৪)
মহান রাব্বুল আলামিনের এ বাণী মোবারকে বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ্ হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (আ.)-কে যুগের ইমাম মনোনীত করেন। এ মহামানবের ওফাতের পর ধর্ম পরিচালনায় ইমামরূপে দায়িত্ব পালন করেন তাঁর সুযোগ্য সম্মানিত দুজন সাহেবজাদা হযরত ইসমাঈল জবিহুল্লাহ (আ.) এবং হযরত ইসহাক (আ.)। এমনিভাবে হযরত ইসহাক (আ.)-এর ওফাতের পরে ধর্ম পরিচালনায় ইমাম রূপে দায়িত্ব পালন করেন তাঁরই সুযোগ্য সম্মানিত সাহেবজাদা হযরত ইয়াকুব (আ.)। তারপর ধর্ম পরিচালনায় ইমামের দায়িত্ব পালন করেন হযরত ইয়াকুব (আ.)-এর সুযোগ্য সম্মানিত সাহেবজাদা হযরত ইউসুফ (আ.)।
এ প্রসঙ্গে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত হয়েছে। আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “আলকারীমুবনুল কারীমিবনিল কারীমিবনিল কারীমি ইউসুফুবনু ইয়া’কুবাবনি ইসহাক্বাবনি ইবরাহীম।” অর্থাৎ- ‘‘একজন সম্মানিত পুরুষ, যিনি আর এক সম্মানিত পুরুষের পুত্র। তিনিও আর একজন সম্মানিত পুরুষের পুত্র, আবার তিনি আর এক সম্মানিত পুরুষের পুত্র- ইনি হলেন ইউসুফ (আ.), যিনি ইয়াকুব নবির পুত্র। আর তিনি ইসহাক (আ.)-এর পুত্র এবং তিনি হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পুত্র।’’ (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৬)
এমনিভাবে আম্বিয়ায়ে কেরামের বংশ পরম্পরায় আল্লাহর ধর্ম পরিচালিত হয়েছে। অহির বাণী আল কুরআনের বর্ণনা থেকে জানা যায়, হযরত ইসহাক (আ.)-এর আওলাদ তথা সাহেবজাদা হযরত ইয়াকুব (আ.) থেকে যে বনি ইসরাঈল বংশের উৎপত্তি হয়েছে, সেই বংশেও মহান আল্লাহ্ ধর্ম পরিচালনায় আরো অনেক ইমাম বানিয়েছিলেন।
এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন- “ওয়া জা‘আলনা মিনহুম আইম্মাতাই ইয়াহদূনা বিআমরিনা।” অর্থাৎ- ‘‘অতঃপর আমি বনি ইসরাঈলদের মধ্য থেকে ইমাম মনোনীত করেছিলাম, যাঁরা আমার আদেশ অনুযায়ী হিদায়েত করত।’’ (সূরা সাজদাহ ৩২: আয়াত ২৪)
আল্লাহর মনোনীত এ সকল ইমাম নবুয়তের যুগে নবি ও রাসুলরূপে দায়িত্ব পালন করেছেন। এজন্য মহান আল্লাহ্ বিচার দিবসে মানবজাতিকে তাঁর যুগের ইমামের নাম ধরে ডাকবেন। অতঃপর মহান আল্লাহ্ বিচারকার্য পরিচালনা করবেন। সেদিন কর্মানুপাতে কারো আমলনামা ডান হাতে যাবে, আবার কারো যাবে বাম হাতে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন- “ইয়াওমা নাদ‘উ কুল্লা উনাসিম বিইমামিহিম, ফামান উতিইয়া কিতাবাহূ বিইয়ামীনিহী ফাউলাইকা ইয়াক্বরাউনা কিতাবাহুম ওয়ালা ইউজ্বলামূনা ফাতীলান, ওয়া মান কানা ফী হাযিহী আ‘মা ফাহুওয়া ফিল আখিরাতি আ‘মা ওয়া আদ্বালু সাবীলা।” অর্থাৎ- ‘‘স্মরণ করো সেদিনের কথা, যখন আমি সব মানুষকে তাদের (যুগের) ইমামসহ আহ্বান করব, তারপর যাদেরকে ডান হাতে তাদের আমলনামা দেওয়া হবে, তারা নিজেদের আমলনামা পাঠ করবে এবং তাদের উপর কিছু পরিমাণও জুলুম করা হবে না। আর যে ব্যক্তি ইহকালে অন্ধ ছিল, সে আখিরাতেও অন্ধ থাকবে এবং অধিক পথভ্রষ্ট হবে।’’ (সূরা বনি ইসরাঈল ১৭: আয়াত ৭১ ও ৭২)
সুতরাং বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ্ ধর্মের দায়িত্ব দিয়ে নবুয়তের যুগে যে সকল মহামানবকে প্রেরণ করেছেন, তাঁরাই ছিলেন সমকালীন যুগের ইমাম। আর নবি ও রাসুলগণের মাঝে ইমাম নির্বাচিত হয়েছেন বলেই হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন ইমামুল মুরসালিন অর্থাৎ সকল নবি ও রাসুলের ইমাম। এজন্য আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন- “আনা সাইয়্যিদুন বুলদি আদামা ইয়াওমাল ক্বিইয়ামাতি।” অর্থাৎ- ‘‘কিয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানের সকলের নেতা বা ইমাম হবো।’’ (ফাতাওয়া ও মাসাইল ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৭৯)
মূলত যুগের ইমাম এমনই একটি পদ বা পদবী, এটি নবুয়তের যুগ ও নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগ- উভয় যুগের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ- সর্বকালের সর্বযুগে আল্লাহর ধর্ম পরিচালনার জন্য হিদায়েতকারী মহামানব জগতে ছিলেন, আছেন ও থাকবেন। অতএব ইমামতের ধারা বলতে হিদায়েতের দায়িত্বে নিয়োজিত মহামানবগণের সিলসিলাকে বুঝায়। অর্থাৎ ইমামতের ধারা বলতে নুরে হিদায়েত বা নুরে মোহাম্মদীর ধারক ও বাহক আম্বিয়ায়ে কেরাম ও আওলিয়ায়ে কেরামের বংশ পরম্পরার সিলসিলাকে বুঝায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন- “ইন্নাল্লাহাস ত্বাফা আদামা ওয়া নূহাও ওয়া আলা ইবরাহীমা ওয়া আলা ‘ইমরানা ‘আলাল ‘আলামীনা, যুররিইয়্যাতাম বা‘দ্বুহা মিম বা‘দ্বিন।” অর্থাৎ- ‘‘নিশ্চয় আল্লাহ্ মনোনীত করেছেন আদম (আ.)-কে, নুহ (আ.)-কে, ইব্রাহীম (আ.)-এর বংশধরকে এবং ইমরানের বংশধরকে বিশ্ববাসীর জন্য। তাঁরা একে অন্যের সন্তান।’’ (সূরা আলে ইমরান ৩: আয়াত ৩৩ ও ৩৪)
মূলত সকল নবি ও রাসুল একই সূতোয় গাঁথা। তাঁরা পরস্পর একই বংশধর। এমনিভাবে হিদায়েতকারী মহামানবগণের ধারাবাহিকতা সর্বকালেই এক ও অভিন্ন। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেন- “ইন্নামা আনতা মুনযিরুও ওয়া লিকুল্লি ক্বাওমিন হাদিন।” অর্থাৎ- ‘‘[হে মোহাম্মদ (সা.)!] আপনি তো সুস্পষ্ট সতর্ককারী। আর প্রত্যেক জাতির জন্য আছে হাদি তথা পথপ্রদর্শক।’’ (সূরা আর রা’দ ১৩: আয়াত ৭)
এখানে একটি প্রশ্নের সমাধান হওয়া জরুরি। আর প্রশ্নটি হলো- নবুয়তের যুগে আল্লাহর ধর্ম নবি ও রাসুলগণের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। অথচ হযরত মুহাম্মদ (সা.) হলেন সর্বশেষ নবি ও রাসুল। তাঁর পরে আর কোনো নবি আসবেন না। তাহলে কুল-কায়েনাতের রহমত হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রেখে যাওয়া শান্তি ও মুক্তির ধর্ম ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ মানবজাতির কাছে পৌঁছাবে কীভাবে? যুগ পরিক্রমায় এ ধর্মের পতাকাবাহীরূপে কারা দায়িত্ব পালন করবেন? গুরুত্বপূর্ণ এ প্রশ্নের সমাধানও মহাগ্রন্থ আল কুরআন ও হাদিস শরীফে দেওয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ বলেন- ওয়া মিম্মান খালাক্বনা উম্মাতুই ইয়াহদূনা বিলহাক্বক্বি ওয়া বিহী ইয়া‘দিলূন।” অর্থাৎ- ‘‘আর আমি যাদের সৃষ্টি করেছি, তাদের মধ্যে এমন একদল আছেন, যাঁরা সত্য পথ দেখায় এবং সেই অনুযায়ী ন্যায়বিচার করে।’’ (সূরা আল আ’রাফ ৭: আয়াত ১৮১)
সুতরাং বিষয়টি সুস্পষ্ট যে, মহান আল্লাহ্ যাঁদেরকে হিদায়েতের কাজ পরিচালনার জন্য সৃষ্টি করেন, তাঁরা মানুষকে মহাসত্য তথা আল্লাহর পথ যেমন দেখান, তেমনি তাঁরা ন্যায়বিচার করে অর্থাৎ ন্যায়ানুগতভাবে সমস্যার ফয়সালা করেন। আর এ সকল মহান ব্যক্তিবর্গই নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগে ‘ইমাম’ নামে মোহাম্মদী ইসলামের পতাকাবাহীরূপে দায়িত্ব পালন করেন। অর্থাৎ নবুয়তের যুগ সমাপ্ত হওয়ার পর মহান আল্লাহ্ যুগের ইমামরূপে মহামানব প্রেরণ করে তাঁদের মাধ্যমে হিদায়েতের কাজ পরিচালনা করেন। আর এজন্যই আমাদের দয়াল রাসুল হযরত মুহাম্মদ (সা.) কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল উম্মতে মোহাম্মদীকে যুগের ইমামের আনুগত্য করার প্রয়োজনীয়তা বলেছেন।
যেমন যুগের ইমামের আনুগত্য প্রসঙ্গে হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসুল (সা.) এরশাদ করেন- “মান মাতা লা ইয়া‘রিফু ইমামাহূ মাতা মীতাতান জাহিলিইয়্যতান।” অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে, কিন্তু সে তার যুগের ইমামের পরিচয় লাভ করতে পারেনি, সে জাহেলি অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে।’’ (মুসনাদে ইমাম জাফর সাদেক ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫১৮ ও ৫১৯)
অন্য হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) আরো এরশাদ করেন- “মান মাতা বিগাইরি ইমামিন মাতা মীতাতান জাহিলিইয়্যাতান।” অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে যুগের ইমাম বিহনে অর্থাৎ আনুগত্য না করে, সে জাহেলি অবস্থায় তথা ধর্মহীন বেইমান হয়ে মৃত্যুবরণ করেছে।’’ (মুসনাদে আহমদ ১৩নং খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৮৮)
এমনিভাবে আমীরুল মু’মিনীন, শেরে খোদা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহু বলেন- “মান মাতা ওয়া লাইসা লাহূ ইমামুন মাতা মীতাতান জাহিলিইয়্যাতান ইযা কানাল ইমামু ‘আদলান বাররান তাক্বীইয়্যা।” অর্থাৎ- ‘‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করেছে ইমাম বিহনে (যুগের ইমামের আনুগত্য ব্যতীত), সে জাহেলি তথা অন্ধকারে মৃত্যুবরণ করেছে। যখন ইমাম হবেন ন্যায়বিচারক, ন্যায়পরায়ণ এবং মোত্তাকি (আর তিনিই প্রকৃত ইমাম)।’’ (মুসনাদে ইমাম আমীরুল মু’মিনীন আলী ইবনে আবু তালেব ২১নং খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪০৬)
এজন্য নবুয়ত পরবর্তী বেলায়েতের যুগেও আওলিয়ায়ে কেরামের বংশ পরম্পরায় হযরত রাসুল (সা.)-এর রেখে যাওয়া ধর্ম পরিচালিত হয়েছে। যেমন ইমামুত তরিকত মোজাদ্দেদ আলফেছানি শেখ আহমদ ফারুকী ছারহিন্দি (রহ.)-এর সাত পুত্র ও তিন কন্যা ছিল। অতঃপর মোজাদ্দেদ আলফেছানি (রহ.)-এর ওফাতের পরে তাঁর সুযোগ্য সাাহেবজাদা ও সাহেবজাদিগণ পিতার প্রচারিত মহান আদর্শকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান।
এরই ধারাবাহিকতায় দেওয়ানবাগ শরীফ থেকে প্রচারিত হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রেখে যাওয়া শান্তি ও মুক্তির ধর্ম মোহাম্মদী ইসলামের সেজরা শরীফে সাতাশতম মহাপুরুষ ছিলেন- শাহ সুফি খাজা হযরত আবদুর রহিম মোহাদ্দেছ দেহলভি (রহ.)। আর এ মহামানবেরই সুযোগ্য সাহেবজাদা শাহ সূফী খাজা হযরত ওয়ালিউল্লাহ মোহাদ্দেছ দেহলভি (রহ.)। তিনি পিতার ওফাতের পরে ধর্মকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান। যে কারণে শাহ সুফি খাজা হযরত ওয়ালিউল্লাহ মোহাদ্দেছ দেহলভি (রহ.)-এর নাম মোহাম্মদী ইসলামের সেজরা শরীফে পিতার পরেই অর্থাৎ আটাশতম ব্যক্তি হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় শাহ সুফি খাজা হযরত ওয়ালিউল্লাহ মোহাদ্দেছ দেহলভি (রহ.)-এর সম্মানিত সাহেবজাদা ছিলেন শাহ সূফী হযরত আবদুল আজিজ মোহাদ্দেছ দেহলভি (রহ.)। তিনি পিতার ওফাতের পরে সুযোগ্য পুত্র হিসেবে ধর্মের কাণ্ডারীর দায়িত্ব পালন করেন। যে কারণে মোহাম্মদী ইসলামের সেজরা শরীফে শাহ সুফি হযরত আবদুল আজিজ মোহাদ্দেছ দেহলভি (রহ.)-এর নাম সিলসিলার ঊনত্রিশতম ব্যক্তিরূপে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে।
মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় দেওয়ানবাগ শরীফ থেকে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর রেখে যাওয়া শান্তি ও মুক্তির ধর্ম ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ প্রচার করা হচ্ছে। এ ধর্ম বর্তমানে যেমন যুগের ইমামের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে, তেমনি ভবিষ্যতেও হযরত রাসুল (সা.)-এর রেখে যাওয়া এ ধর্ম ইমামদের মাধ্যমেই পরিচালিত হবে। মুসলিম জাতির আদি পিতা হযরত ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ (আ.) থেকে তাঁর আওলাদ হয়ে অর্থাৎ তাঁর সম্মানিত সাহেবজাদা হুজুরগণ থেকে, যেমন পিতা থেকে পুত্র, আবার তাঁর পুত্র, আবার তাঁর পুত্র, আবার তাঁর পুত্র, এভাবে ধর্মটি মানবজাতির উত্তম শ্রেণি হয়ে হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সাথে মিলিত হয়েছে। তদ্রƒপ মহান রাব্বুল আলামিনের অপার দয়ায় দেওয়ানবাগ শরীফ থেকে প্রচারিত হযরত রাসুল (সা.)-এর মোহাম্মদী ইসলামও আম্বিয়ায়ে কেরামের সুন্নত তরিকা অবলম্বনে যুগ পরিক্রমায় অনুরূপভাবে পরিচালিত হতে থাকবে ইনশাআল্লাহ।
[লেখক: প্রতিষ্ঠাতা ও স্বত্বাধিকারী; দেওয়ানবাগ শরীফ]