Cancel Preloader

মোহাম্মদী ইসলাম বিলুপ্তির প্রেক্ষাপট – ইমাম প্রফেসর ড. কুদরত এ খোদা – (শেষ পর্ব)

কারবালার ঘটনা এবং হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত


হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) ৬০ হিজরির ৮ই জিলহজ তারিখে তাঁর পরিবার-পরিজন, কিছু সংখ্যক আহলে বাইত প্রেমিকদের সাথে নিয়ে মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশে যাত্রা করেন। কুফাবাসী ইমাম হোসাইন (রা.)-কে বাই‘য়াত গ্রহণ করার জন্য চিঠি প্রেরণের মাধ্যমে বারবার আহŸানের ফলে ইমাম হোসাইন (রা.) কুফার উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন। এদিকে ইমাম হোসাইন (রা.) পথিমধ্যেই তাঁর প্রেরিত প্রতিনিধি হযরত মুসলিম ইবনে আকিল (রা.)-এর শাহাদতের খবর পান। তবুও ইমাম হোসাইন (রা.) কুফা অভিমুখে চলতে লাগলেন। মহররম মাসের ২ তারিখ কারবালা নামক স্থানে তিনি তাঁবু স্থাপন করেন। কারবালায় অবস্থানের দ্বিতীয় দিন ‘আমর ইবনে সাদ’ এজিদের নিয়োগকৃত কুফার গভর্নর ইবনে জিয়াদের নির্দেশে চার হাজার সৈন্য নিয়ে কারবালায় এসে পৌঁছে। কুফার গভর্নর ইবনে জিয়াদ আমর ইবনে সাদকে নির্দেশ পাঠায় যে, হোসাইনের নিকট থেকে প্রথমে এজিদের পক্ষে বাই‘য়াত গ্রহণ করো, যদি হোসাইন এজিদের কাছে নতি স্বীকার করে বাই‘য়াত গ্রহণ না করে, তবে কারবালার প্রান্তরে তাদের পানি বন্ধ করে দাও। নির্দেশ মোতাবেক আমর ইবনে সাদ ইমাম হোসাইন (রা.)-এর কাছ থেকে এজিদের পক্ষে বাই‘য়াত গ্রহণে চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু শেরে খোদার সাহেবজাদা ইমাম হোসাইন (রা.) স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন, মিথ্যার কাছে সত্য কখনো মাথা নত করবে না। ফলে কুফার গভর্নর ইবনে জিয়াদের নির্দেশে ৬১ হিজরি ৭ই মহররম ইমাম হোসাইন (রা.) ও তাঁর সাথিদের পানি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফোরাত নদীতে ৫০০ সৈন্য পাহারায় বসানো হয়। পানির অভাবে শিশুদের মরণপ্রায় অবস্থা হয়। ছয় বছরের শিশু আলী আসগর (রহ.)-এর জন্য ইমাম হোসাইন (রা.) পানি আনতে গেলে এজিদ বাহিনীর সৈন্যরা ইমাম হোসাইন (রা.)-কে তির নিক্ষেপ করলে তির শিশু আসগর (রহ.)-এর গলায় বিদ্ধ হয়। এতেই শিশু আসগর (রহ.) শহিদ হন।

কারবালার যুদ্ধের পূর্বে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর বাণী


ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালার যুদ্ধের পূর্বে কুফাবাসীর উদ্দেশে এক মর্মস্পর্শী বাণী মোবারক প্রদান করেন। তিনি কুফাবাসীসহ সকল এজিদি সৈন্যকে সম্বোধন করে বললেনÑ “হে জনগণ একটু থামো, আমার কথা শোনো। আমি আমার দায়িত্ব পালন করতে চাই। যদি তোমরা মেনে নাও, তবে তোমাদের চেয়ে অধিক সৌভাগ্যবান আর কেউ নেই। আর যদি না মানো, সেটাও তোমাদের উপর নির্ভর করে। বিষয়টির সবদিক সুস্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পর তোমাদের যা ইচ্ছা করবে। আমি গোটা বিষয়টাকে আল্লাহ্র উপর ছেড়ে দিচ্ছি। হে জনগণ, চিন্তা করে দেখো, আমি কে? আরো চিন্তা করে দেখো, আমাকে হত্যা করা এবং আমার অমর্যাদা করা তোমাদের জন্য জায়েজ কিনা? আমি কি তোমাদের নবির (সা.) নাতি নই? আমি তাঁর চাচাতো ভাই আলীর (কা.) পুত্র নই? সাইয়্যেদুশ শুহাদা হামজা (রা.) কি আমার পিতার চাচা ছিলেন না? জাফর তাইয়ার শহিদ (রা.) কি আমার চাচা ছিলেন না? আমাদের দুই ভাই সম্পর্কে কি নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ হাদিস নয় যে, হাসান ও হোসাইন (রা.) বেহেশতের যুবকদের নেতা? শোনো, তোমরা আমাকে ছাড়া পূর্ব ও পশ্চিমে নবির (সা.) আর কোনো দৌহিত্র পাবে না। তোমরা আমাকে হত্যা করতে চাও কেন? আমি কি তোমাদের কারো রক্তপাত ঘটিয়েছি? তোমাদের কারো অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করেছি? তোমাদের কাউকে কি আহত করেছি? এরপর তিনি কুফার কিছু সংখ্যক নেতার নাম ধরে ডাকতে শুরু করলেন এবং জিজ্ঞেস করতে থাকলেন, তোমরা কি আমাকে পত্র পাঠিয়ে ডেকে আননি? এতে সেই সমস্ত লোক নেতিবাচক জবাব দিয়ে দিলে তিনি বললেন, তোমরা অবশ্যই আমাকে আসার জন্য আহŸান জানিয়েছ। এখন আমার আগমন যদি তোমাদের কাছে মনঃপূত না হয়ে থাকে তাহলে আমাকে আমার আশ্রয়স্থলে ফিরে যেতে দাও। কুফাবাসীদের মধ্য থেকে একজন বলল, আপনি ইবনে জিয়াদের সিদ্ধান্ত মেনে নিচ্ছেন না কেন? মহান ইমাম জবাব দিলেন, আল্লাহ্র শপথ! আমি নিচু প্রকৃতির মানুষদের মতো দুশমনদের হাতে হাত দিতে পারি না এবং ক্রীতদাসদের মতো তাদের দাসত্ব মেনে নিতে পারি না। যারা কিয়ামতের দিনের প্রতি বিশ্বাস পোষণ করে না, সেই সব অহংকারীদের থেকে আমি আল্লাহ্র আশ্রয় প্রার্থনা করছি।” (তারীখে ইসলাম, পৃষ্ঠা ১৬৯)


ইমাম হোসাইন (রা.)-এর সাথে তাঁর সঙ্গী যারা কারবালায় অবস্থান করছিলেন, তাদের মধ্যে ৭২ জন এজিদ বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করে শাহাদতবরণ করেছেন। কারবালার প্রান্তরে একে একে ইমাম হোসাইন (রা.)-এর সাথিগণ শহিদ হয়েছেন। “পরিশেষে হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর ভাই হযরত আবদুল্লাহ (রা.), হযরত আব্বাস (রা.), হযরত উসমান (রা.), হযরত জাফর (রা.) ও হযরত মুহাম্মদ (রা.) নিহত হন। এদিকে হযরত হোসাইন (রা.) তীব্র পিপাসায় অস্থির হয়ে পড়েন এবং ফোরাতের পানি পান করার জন্য সেদিকে পৌঁছার চেষ্টা করেন, কিন্তু শত্রæরা তাঁকে বাধা প্রদান করায় তিনি তা করতে সক্ষম হলেন না। অবশেষে যখন এক ঢোক পানি পান করলেন, তখন হাসান ইবনে তামীম (লেখকের মতে হাসীন ইবনে তামীম তির নিক্ষেপ করেছিল, অপর এক বর্ণনায় তির নিক্ষেপকারী ছিল ইবনে নুমায়ের) নামক এক ব্যক্তি তাঁর চোয়ালে তির বিদ্ধ করল। ইমাম হোসাইন (রা.) তাঁর চোয়াল থেকে যখন তা টেনে বের করলেন, তখন ফিনকি দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হলো। তিনি তখন দুই হাতে তা নিলেন এবং রক্তে রঞ্জিত দুই হাত আসমানের দিকে উঠিয়ে সেই রক্ত সেদিকে নিক্ষেপ করে বললেন, হে আল্লাহ্! আপনি তাদেরকে সংখ্যা গুণে বেষ্টন করে রাখুন এবং তাদেরকে বিচ্ছিন্ন করে হত্যা করুন। আর পৃথিবীর বুকে তাদের কাউকে ছেড়ে দেবেন না। এভাবে তিনি তাদের বিরুদ্ধে মর্মস্পর্শী দু‘আ করলেন।” (ই.ফা.বা. কর্তৃক অনূদিত আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৮ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৪৯)


ইমাম হোসাইন (রা.)-এর শাহাদত প্রসঙ্গে তারীখে ইসলাম কিতাবে উল্লেখ রয়েছেÑ “এবার রইলেন অসংখ্য জখমে ক্ষতবিক্ষত পিপাসায় কাতর ইমাম হোসাইন (রা.) একা। কিন্তু তাঁর বীরত্ব, উদ্দীপনা ও সাহসিকতায় কোনো ভাটা পড়েনি। তাঁর তরবারি যেদিকে ঝলসে উঠছিল সেদিকের শত্রæরা প্রাণভয়ে পালাচ্ছিল। অবশেষে তিনি অসংখ্য জখমে কাতর হয়ে মাটিতে বসে পড়লেন এবং দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ বসে থাকলেন। কিন্তু শেরে খোদা হযরত আলী র্কারামাল্লাহু ওয়াজহাহুর আহত এই সন্তানের উপর আক্রমণ করার দুঃসাহস কারো হলো না। নিজের দুর্ভাগ্যের ওপর তাঁর রক্তের শেষ মোহর অঙ্কিত করা থেকে প্রত্যেকেই পাশ কাটিয়ে চলছিল। অবশেষে শামার চিৎকার করে বলল, ‘এখন কিসের জন্য অপেক্ষা করছ, হত্যা করছ না কেন?’ হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) তাঁর শুষ্ক ঠোঁটে পানির পেয়ালা লাগিয়েছেন মাত্র, ঠিক সেই মুহূর্তে ইবনে নুমায়ের (লেখকের মতে ইবনে নুমায়ের তির নিক্ষেপকারী ছিল, অপর এক বর্ণনা মতে তির নিক্ষেপ করেছিল হাসীন ইবনে তামীম) তাক করে তির নিক্ষেপ করে। তির তাঁর কণ্ঠে বিদ্ধ হয়। তিনি ফোরাত নদীর দিকে অগ্রসর হতে থাকলে শত্রæরা চারদিক থেকে ঝাপিয়ে পড়ে। যারা‘আ ইবনে শারীক তামীমী তরবারি দ্বারা আঘাত করে এবং সানান ইবনে আনাস নখয়ী বর্শার আঘাতে তাঁকে মাটিতে ফেলে দেয় এবং তরবারি দিয়ে মাথা মোবারক কেটে পবিত্র দেহ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।’ তাঁর পবিত্র দেহে তেত্রিশটি বর্শার এবং ত্রিশটি তরবারির আঘাতের চিহ্ন ছিল। এছাড়াও ছিল তিরের আঘাতের চিহ্ন। তাঁর শাহাদতের পর জালেমরা আহলে বাইতের তাঁবুর দিকে অগ্রসর হয় এবং সেখানে যেসব মালামাল ছিল তা লুট করে নেয়। এমনকি মেয়েদের বস্ত্র পর্যন্ত ছিনিয়ে নেয়। হযরত ইমাম হোসাইন (রা.)-এর পুত্র জয়নুল আবেদীন (রহ.) অসুস্থ অবস্থায় তাঁবুতে শোয়া ছিলেন। শামার তাঁকেও শহিদ করতে উদ্যত হয়। কিন্তু আমর ইবনে সা‘দ নির্দেশ দেয় যে, মেয়েদের তাঁবুতে প্রবেশ করবে না এবং শিশুদেরকে আঘাত করবে না। মহান ইমাম হযরত হোসাইন (রা.)-এর এই শাহাদতের মহাকলঙ্কজনক ঘটনা ৬১ হিজরি ১০ই মুহররম সংঘটিত হয়।” (তারীখে ইসলাম, পৃষ্ঠা ১৭১ ও ১৭২)


মোহাম্মদী ইসলামের ইতিহাসে ধারাবাহিক ঘটনা পরম্পরায় শেষ পর্যায়ে কারবালা প্রান্তরে ইমাম হোসাইন (রা.)-কে শহিদ করার মাধ্যমে মোহাম্মদী ইসলামের আদর্শ ও চরিত্র বিলুপ্ত হয়ে রাজতন্ত্র ও ভোগবিলাসের ইসলাম কায়েম হয়। ধারাবাহিকভাবে ঘটনা পরম্পরায় মোহাম্মদী ইসলাম যেমন বিলুপ্ত হয়, তেমনি ইমাম হোসাইন (রা.) কারবালায় শাহাদতের মাধ্যমে উমাইয়ারা রাজতন্ত্র কায়েম করে ইসলামের বাহ্যিক বিষয়ে প্রাধান্য দেয়। তাদের ধর্ম পালন ছিল লোক দেখানো মাত্র। তারা বলছিল, ইমাম হোসাইনকে তাড়াতাড়ি শহিদ করো, আসরের নামাজ আদায় করব। তাদের এ নামাজ মূল্যহীন।


প্রিয় পাঠক! হযরত রাসুল (সা.)-এর রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলামের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল আল্লাহ্র দর্শন লাভ করা এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা। জান্নাতের যুবকদের সর্দার ইমাম হোসাইন (রা.)-কে শহিদ করার পর উমাইয়ারা যখন রাজতন্ত্র কায়েম করল, তখন থেকে নামাজে আল্লাহ্র দিদার লাভ করার শিক্ষা বিলুপ্ত হয়ে যায়। আত্মশুদ্ধি, ক্বালবে আল্লাহ্র জিকির চালু করার মাধ্যমে দিলজিন্দা এবং নামাজে একাগ্রতা তথা নামাজে হুজুরির সুমহান শিক্ষা হযরত ইমাম হোসাইন (রা.) দিতে সক্ষম ছিলেন। পক্ষান্তরে, চরিত্রহীন এজিদের মাঝে উক্ত শিক্ষাগুলো ছিল না, এমনকি উমাইয়া রাজতন্ত্রের মুসলিম শাসকদের মাঝেও ছিল না। ফলে এলমে মারেফাত বিবর্জিত অন্তঃসারশূন্য ইসলাম পালন করা শুরু হয়েছিল। মোহাম্মদী ইসলামের বাই‘য়াতের সূচনা হয়েছিল হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর মাধ্যমে। হযরত রাসুল (সা.)-এর ওফাতের পর খোলাফায়ে রাশেদার যুগে বাই‘য়াতের শিক্ষার প্রচলন ছিল।


ইমাম হোসাইন (রা.) বাই‘য়াত করানোর জন্যই কুফায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে কারবালায় তাঁকে শহিদ করা হয়। বাই‘আতের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য বিলুপ্ত করে রাজতন্ত্রের বাই‘য়াতবিহীন ধর্ম পালন শুরু হয়। সুতরাং মোহাম্মদী ইসলামের বাই‘আতের কার্যক্রম বিলুপ্তির মাধ্যমে মোহাম্মদী ইসলামের প্রাণের বিলুপ্তি হয়েছে।


মোরাকাবা ও সাধনার মাধ্যমে আল্লাহ্কে লাভ করা যায় এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। তাই হযরত রাসুল (সা.) সাহাবিগণকে যেমন মোরাকাবা শিক্ষা দিয়েছেন, তেমনি ইমাম হোসাইন (রা.) তাঁর যুগের মু’মিন মুসলমানগণকে এ শিক্ষা বাস্তবে দিতেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় ইমাম হোসাইন (রা.)-কে কারবালায় শহিদ করার পর মোরাকাবার মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের শিক্ষা বিলুপ্ত হয়েছে। এজিদসহ উমাইয়া শাসকরা মোরাকাবা জানত না, ফলে অন্যকে তা শিক্ষা দিতেও পারত না। ফলে মুসলমানরা উমাইয়া যুগ থেকে আল্লাহ্র নৈকট্য অর্জনবিহীন অন্তঃসারশূন্য ধর্ম পালনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এভাবেই আল্লাহ্র নৈকট্য লাভের মোরাকাবার শিক্ষা বিলুপ্তির মাধ্যমে মূলত মোহাম্মদী ইসলামের প্রাণ এলমে তাসাউফ বিলুপ্ত হয়েছে।


হযরত রাসুল (সা.)-এর রেখে যাওয়া মোহাম্মদী ইসলাম ছিল এলমে শরিয়ত, এলমে তরিকত, এলমে হাকিকত ও এলমে মারেফাতের সমন্বয়ে পরিপূর্ণ ইসলাম। মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্বপ্রদানকারী ইমাম হোসাইন (রা.) মানুষকে শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফাতের জ্ঞানের আলোকে মোহাম্মদী ইসলামের শিক্ষা দিতেন। তাঁকে কারবালায় শহিদ করার পর উমাইয়া শাসকদের মাঝে এই শিক্ষা দেওয়ার মতো যোগ্য কেউ ছিল না। ফলে উমাইয়া শাসনামলে শুধুমাত্র শরিয়তকেন্দ্রিক ইসলাম পালনের কারণে মুসলমানগণ তরিকত, হাকিকত ও মারেফাত থেকে বঞ্চিত হয়। মোহাম্মদী ইসলামের তরিকত, হাকিকত ও মারেফাত বিলুপ্তির মাধ্যমেই মোহাম্মদী ইসলামের প্রাণের বিলুপ্তি ঘটেছে। ফলে মুসলমানরা হযরত রাসুল (সা.)-এর যুগের মতো এবং খোলাফায়ে রাশেদার যুগের মতো মোহাম্মদী ইসলাম পালন করে বাস্তব শান্তি উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়নি। ধর্ম পালন করে ইসলামের শান্তি বাস্তবে না পাওয়ার মূল কারণই হচ্ছে মোহাম্মদী ইসলামের বিলুপ্তি এবং মারেফাতবিহীন কেবলমাত্র শরিয়তের ইসলাম পালন। উপমাস্বরূপ বলা যায়, শরিয়ত হচ্ছে ইসলামের দেহতুল্য, আর মারেফাত হচ্ছে ইসলামের রুহতুল্য। দেহের মাঝেই রুহ বিরাজ করে। রুহ ছাড়া দেহ যেমন চলাফেরা করতে পারে না, তেমনি মারেফাত ছাড়াও মোহাম্মদী ইসলামের বাস্তব শান্তি হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করা যায় না।


পরিশেষে বলা যায় যে, মোহাম্মদী ইসলামের বিলুপ্তির প্রেক্ষাপট বিভিন্ন দুঃখজনক ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমেই সংঘটিত হয়েছে যা উল্লিখিত ধারাবাহিক আলোচনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।


[লেখক: মোহাম্মদী ইসলামের নেতৃত্ব প্রদানকারী ইমাম; পরিচালক, সমন্বয়ক ও সমস্যার ফয়সালাকারী, দেওয়ানবাগ শরীফ; প্রফেসর, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, ফারইস্ট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি]

সম্পর্কিত পোস্ট