Cancel Preloader

যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন -অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া


(পর্ব-২৫)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
আল্লাহ্ ও হযরত রাসুল (সা.) প্রদত্ত সূফী সম্রাটের লকবসমূহ:
মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। এই মানুষই সৃষ্টির সেরা জাতি। এই মানুষের মধ্যে এমন একটা শ্রেণি রয়েছেন, যারা ফেরেশতার চেয়েও সম্মানিত। আবার একটা শ্রেণি রয়েছে, যাদেরকে আল্লাহ্ পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন। এরাই সমাজে অশান্তি সৃষ্টিকারী। কেননা, তাদেরকে আল্লাহ্ হৃদয়ের চোখ দিয়েছেন, তা দিয়ে তারা দেখে না, হৃদয়ের কান দিয়েছেন, তা দিয়ে তারা শোনে না। এককথায় যাদের ক্বালব বা হৃদয়ে আল্লাহ্ জ্বিকির জারি নেই, তারা আল্লাহ্র পরিচয় জানে না বিধায়, আল্লাহ্ এই শ্রেণির মানুষকে অভিসম্পাত করে পশুর চেয়েও নিকৃষ্ট বলেছেন। আবার এই মানুষের মধ্যে যারা আল্লাহ্কে নিজ হৃদয়ে ধারণ করে, তাঁর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছেন, মহান আল্লাহ্ তাঁদেরকে অলী বা বন্ধু বলে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ্র কাছে এই সকল মহামানবের মর্যাদা অনেক। যাঁরা আল্লাহ্র সাথে যোগাযোগ স্থাপন করে তাঁর বন্ধুতে পরিণত হয়েছেন, নবুয়তের যুগে তাঁদেরকে নবি ও রাসুল এবং এই বেলায়েত বা বন্ধুত্বের যুগে তাঁদেরকে অলীÑআল্লাহ্ বলা হয়। নবিগণের মধ্যে অনেককেই মহান আল্লাহ্ বিশেষ মর্যাদা ও লকব বা উপাধি দান করেছেন। যেমন- হযরত আদম (আ.)-এর লকব ছিল- ছফি উল্লাহ। হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর লকব ছিল- খালিলুল্লাহ। হযরত ইসমাইল (আ.)-এর উপাধি ছিল জবিউল্লাহ। হযরত মুসা (আ.)-এর উপাধি ছিল- কালিমুল্লাহ্। হযরত ঈসা (আ.)-এর লকব ছিল- রুহুল্লাহ। আর বিশ্ব নবি হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর উপাধি ছিল- হাবিবুল্লাহ্। হযরত রাসুল (সা.) ছিলেন- মহান আল্লাহ্র সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু। যাঁকে সৃষ্টি করা না হলে আসমান-জমিন, গ্রহ-নক্ষত্র, মানুষ, জীব-জন্তু ও গাছপালা কোনো কিছুই সৃষ্টি হতো না। হযরত রাসুল (সা.) বলেছেন- “আমার উম্মতের আলেমগণ, বনি ইস্রাইলের নবিদের মতো।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৪৮) এই আলেম বলতে- এলমে শরিয়ত ও এলমে মারেফাতের জ্ঞানে জ্ঞানীদেরকে বুঝানো হয়েছে। মহান আল্লাহ্ নবুয়তের পরবর্তী যুগে যে সকল অলী-আল্লাহ্কে সংস্কারের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন ও হযরত রাসুল (সা.) তাঁকে বিভিন্ন লকব বা উপাধিতে ভূষিত করেছেন। ইতঃপূর্বে কোনো অলী-আল্লাহ্ এত বেশি উপাধি পেয়েছেন বলে জানা যায় না। সূফী সম্রাটের লকব বা উপাধিগুলো হচ্ছে-


মোজাদ্দেদের দায়িত্ব লাভ
মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন তাঁর বন্ধু এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর সিরাজুম মুনিরার ধারক ও বাহক হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানকে ১৯৮৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর মোজাদ্দেদ বা সংস্কারকের দায়িত্ব অর্পণ করেন। পূর্বযুগে যত মোজাদ্দেদ জগতে আগমন করেছেন, তাঁদের তুলনায় আরো অনেক জটিল বিষয় সম্পর্কে সংস্কার সাধন করে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান শ্রেষ্ঠ সংস্কারক এবং সূফী সম্র্রাট হিসেবে বিশ্বের বুকে পরিচিতি লাভ করেছেন। তাঁর শ্রেষ্ঠ সংস্কার হলো- মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন বিশ্বজাহানের স্রষ্টা ও পালনকর্তা, অথচ মানুষ তাঁকে নিরাকার বলে বিশ্বাস করে। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান পবিত্র কুরআন ও হাদিস দিয়ে অকাট্যভাবে প্রমাণ করেছেন যে, আল্লাহ্ নিরাকার নন, তিনি আকার। তবে মহান আল্লাহ্র মানুষের মতো রক্ত মাংসের দেহ নেই, তিনি নুরের। এ বিষয়টি নিয়ে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’ নামক যে মহামূল্যবান তাফসীর শরীফ প্রনয়ণ করেছেন, তার প্রথম খণ্ডে তিনি ১৫২৭ পৃষ্ঠাব্যাপী দীর্ঘ আলোচনায় আল্লাহ্র জাতপাকের বর্ণনা দিয়েছেন। আল্লাহ্র বাণী পবিত্র কুরআন ও হযরত রাসুল (সা.)-এর বাণী পবিত্র হাদিস দিয়ে তিনি প্রমাণ করেছেন যে, মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের নুরের হাত মোবারক, নুরের চোখ মোবারক, নুরের কদম মোবারক এবং নুরের চেহারা মোবারক রয়েছে। সুতরাং আল্লাহ্ নিরাকার নন, তাঁর নুরের আকার রয়েছে। সূফী সম্রাটের আল্লাহ্ সম্পর্কে দেওয়া এই সুস্পষ্ট বক্তব্যের কারণে আজ বিশ্বের মানুষ, বিশেষ করে মুসলিম সমাজ বিশ্বাস করে যে, মহান রাব্বুল আলামিন নিরাকার নন, তিনি আকার। তবে আল্লাহ্ মানুষের মতো রক্ত মাংসের দেহধারী নন, তিনি নুরের। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান আল্লাহ্র জাত ও সিফাত বা গুণাবলি নিয়ে মোট ৮ খণ্ড তাফসীর লিখেছেন। যার নাম- ‘তাফসীরে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী’।


হাদিগণের ইমামের দায়িত্ব লাভ
আল্লাহর মহান বন্ধু, মহান সংস্কারক, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান ধর্মের বিভিন্ন সংস্কার সাধন করার পর মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এই মহামানবকে ১৯৮৮ সালের আশুরার দিবসে বিশ্বের হাদিগণের ইমাম হিসেবে দায়িত্ব অর্পণ করেন। দেওয়ানবাগ দরবার শরীফে (নারায়ণগঞ্জ জেলার বাবে জান্নাত) পবিত্র আশুরা উপলক্ষ্যে সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ঢাকার আরামবাগ বাবে রহমত থেকে বিশাল মোটর শোভাযাত্রা সহকারে দেওয়ানবাগ গমন করেছেন। রাস্তায় যেমন গাড়ির বিশাল বহর সূফী সম্রাটকে অনুসরণ করে পথ চলছিল, অনুরুপভাবে দেওয়ানবাগ দরবার এলাকা জুড়ে ২/৩ কিলোমিটারব্যাপী রাস্তার দুই পার্শ্বে অগণিত মানুষ হাত ধরে শিকল বেঁধে স্লোগান দিয়ে সূফী সম্রাটকে স্বাগত জানিয়েছেন। পবিত্র আশুরার বিশাল সম্মেলনে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী দয়াল বাবাজান জনগণের উদ্দেশে যে ভাষণ দিয়েছিলেন, তা থেকেই অনুমান করা যাচ্ছিল যে, আজকের দিনে আল্লাহ্, কোনো বিশেষ নিয়ামত দান করেছেন তাঁর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী দয়াল বাবাজানকে। পরবর্তীতে বিষয়টি সম্পর্কে সূফী সম্রাট নিজেই সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তাঁর বক্তব্য থেকে জানা গেছে যে, এই আশুরার দিবসেই মহান রাব্বুল আলামিন তাঁর মহান বন্ধু সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানকে বিশ্বের হাদিগণের ইমামের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন।


মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী খেতাব লাভ
আল্লাহর মহান বন্ধু, মহান সংস্কারক, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর একদিকে মোজাদ্দেদ বা সংস্কারকের দায়িত্ব এবং অন্যদিকে হাদিগণের ইমামতের দায়িত্ব সুচারুরূপে পালন করার সাথে সাথে আল্লাহ্র প্রিয় হাবিব হযরত রাসুল (সা.) ১৯৮৯ সালের ৫ এপ্রিল তাঁকে ‘মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী’ খেতাবে ভূষিত করেন। তখন থেকে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান মোহাম্মদী ইসলাম বিশ্বব্যাপী প্রচার করেছেন। সূফী সম্রাট জাতিকে জানিয়ে দিয়েছেন যে, হযরত রাসুল (সা)-এর প্রচারিত ইসলাম তাঁর স্বনামে ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ হিসেবেই হওয়া বাঞ্চনীয়। আর সে লক্ষ্যেই তিনি ব্যাপকভাবে মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের কাজ করেছেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান যখন সর্বপ্রথম ‘মোহাম্মদী ইসলাম’ নামটি প্রকাশ করেছেন, তখন মুসলমানদের মধ্যে অনেকেই, বিশেষ করে আমাদের দেশের আলেম সমাজ প্রশ্ন তুলেছেন- এ আবার কোন ইসলাম? তাঁদের প্রশ্নের জবাব আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান যখন পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে বক্তব্যের মধ্যে এবং পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের বিভিন্ন আলোচনার মাধ্যমে তুলে ধরেছেন, তখন মানুষ তা সানন্দে মেনে নিয়েছেন।


আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত লাভ
মহান আল্লাহর প্রিয় হাবিব, ইমামুল মুরসালিন হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর আবির্ভাব ঘটেছিল হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-এর বংশে। হযরত ইব্রাহীম (আ.) নিজ পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) এবং স্ত্রী বিবি হাজেরা (আ.)-কে আল্লাহ্র নির্দেশে মক্কায় নির্বাসন দিয়েছিলেন। তখন থেকেই হযরত ইসমাইল (আ.) মক্কাতেই বসবাস করেন। পরবর্তীতে হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও হযরত ইসমাইল (আ.) পিতাপুত্র মিলে মক্কার কাবাঘর পুর্ননির্মাণ করেন। সুতরাং হযরত রাসুল (সা.) হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর একদিকে যেমন বংশধর ছিলেন, অপরদিকে হযরত ইব্রাহীম (আ.) মুসলিম জাতিরও পিতা ছিলেন। হযরত রাসুল (সা.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান জগতে আগমন করেছেন। তিনি একদিকে যেমন হযরত রাসুল (সা.)-এর বংশধারার ২৩তম মহাপুরুষ, অপরদিকে সেজরা শরীফ অনুযায়ী ৩৬তম মহাপুরুষ। তাই বংশধারা এবং রূহানি জগত, এই উভয়দিকেই তিনি হযরত রাসুল (সা.) এবং হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর বংশধর ও রূহানি সন্তান। আল্লাহ্র প্রিয় বন্ধু হযরত ইব্রাহীম (আ.) ১৯৯৬ সালের ২ অক্টোবর, ১৭ আশ্বিন ১৪০৩ বঙ্গাব্দ, ১৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪১৭ হিজরি বুধবার সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানকে ‘আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত’ দান করেন। ঘটনাটি ছিল এরূপ- সেদিন শেষ রাতে দয়াল বাবাজান স্বপ্নে দেখতে পান, একটি বিরাট এলাকা জুড়ে অসংখ্য ইমারত। সেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল পুরো এলাকাটা যেন একটা প্রাচীন নগরী। ঐ ইমারতগুলো পৃথিবীতে আগমনকারী সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামের আবাসগৃহ। প্রত্যেক পয়গম্বররের জন্য নির্ধারিত রয়েছে এক একটি ইমারত। সেখানে তাঁদের নিজস্ব সম্পদ তথা হীরা, মণি, মুক্তা পরিপূর্ণ করে রাখা আছে। ঐ ইমারতগুলো ভাঙ্গা না হলেও দেখতে বেশ পুরোনো শেওলা পড়া। কিন্তু বিল্ডিংগুলোর ভিতরে হীরা, মণি-মুক্তাগুলো খুব সুন্দর ঝকঝকে দেখাচ্ছিল। দয়াল বাবাজান আম্বিয়ায়ে কেরামের ইমারতগুলো ঘুরে ঘুরে দেখতেছিলেন। তিনি যখন হযরত ইব্রাহীম (আ.)-এর বাসগৃহের ছাদে যান। তখন হযরত ইব্রাহীম (আ.) দয়াল বাবাজানের কাছে এসে এই ইমারতগুলো দেখিয়ে বললেন, এগুলো নবি-রাসুলগণের ধর্ম। এগুলো আপনাকে দেওয়া হলো। এখন আপনি এগুলোর মালিক। ইচ্ছা করলে আপনি এগুলো রাখতে পারেন, আবার ইচ্ছা করলে এগুলো ভেঙ্গে আপনার পরিকল্পনা অনুযায়ী নতুন করে তৈরি করতে পারেন। আপনাকে সমস্ত আম্বিয়ায়ে কেরামের ধর্মের দায়িত্ব ও বেলায়েত প্রদান করা হলো। আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হযরত ইব্রাহীম (আ.) দয়াল বাবাজানকে এ দায়িত্ব প্রদান করার পর তাঁর ঘুম ভেঙ্গে গেলে জেগে উঠে তিনি দেখেন তখন রাত ৩টা বাজতে ৫ মিনিট বাকি।


পূর্ণিমার চাঁদে বাবা দেওয়ানবাগীর জীবন্ত প্রতিচ্ছবি
মহান আল্লাহ্র অপার দয়ায় হযরত রাসুল (সা.)-এর সুযোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজান এই বাংলাদেশে আগমন করেন। তিনি ছিলেন যুগের শ্রেষ্ঠ অলী আল্লাহ্ এবং জামানার মোজাদ্দেদ বা সংস্কারক হিসেবে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত। মহান আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর এই মহান বন্ধুকে এমন একটি মর্যাদা দান করেছেন, যা বিশ্বের আর কোনো মহামানবকে দেওয়া হয়নি। আর তা হলো- ২০০৮ সালের ১০ অক্টোবর রোজ শুক্রবার সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানকে আকাশের পূর্ণিমার চাঁদে দেখা যায়।
আমি ২০০৮ সালের ১১ অক্টোবর আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানকে পূর্ণিমার চাঁদে দেখা গেছে বলে খবর পাই। তাই আমিও দয়াল বাবাজানকে চাঁদে দেখার জন্য সন্ধ্যায় মাগরিবের নামাজের পরে আকাশের দিকে তাকাই। কী আশ্চর্য! হঠাৎ পূর্ণিমার চাঁদে এক মহামানবের নুরানিময় চেহারা মোবারক দেখতে পেলাম। আমার চিনতে অসুবিধা হলো না, তিনি আর কেউ নন, তিনি হলেন আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) দয়াল বাবা কেব্লাজান।
আমি সূফী সম্রাটের চেহারা মোবারক দাঁড়ি গোঁফবিহীন উজ্জ্বল নুরের আকৃতিতে দেখতে পেয়েছি। ১১ অক্টোবর রাতে দয়াল বাবাজান বাবে রহমতের দোতলায় তাফসীরের গবেষণার রুমে বসা ছিলেন। সে সময় আমি বাবাজানের সামনে হাজির হয়ে আমার চাঁদে দেখার ঘটনাটি ব্যক্ত করি। এসময় আমার সাথে আরামবাগ নিবাসী ড. নাছিরউদ্দীন (সোহেল) ছিলেন। তিনিও বাবাজানকে চাঁদে দেখেছেন। আমি দয়াল বাবাজানকে বললাম, বাবা! আমরা যে আপনাকে চাঁদে দেখেছি, এ খবরটা মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে জানাতে পারি। দয়াল বাবাজান বললেন- হ্যাঁ, তাহলে জানিয়ে দেন। তখন আমি বাবে রহমতের নীচ তলায় গিয়ে মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে এলাকাবাসীকে এই সুসংবাদটি জানিয়ে বললাম- সম্মানিত এলাকাবাসী! আমাদের মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেব্লাজানকে পূর্ণিমার চাঁদে দেখা যাচ্ছে। আপনারা চাঁদের দিকে তাকিয়ে এই মহামানবের চেহারা মোবারক দেখুন। এ ঘোষণার পরবর্তীতে আরামবাগ এলাকা থেকে সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানকে চাঁদে দেখা উপলক্ষ্যে আশেকে রাসুল ভাইয়েরা এবং এলাকাবাসী সম্মিলিতভাবে একটি মিছিল বের করে। ঐ রাতে সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান নিজেও বাবে রহমতের ৯ তলায় চাঁদ দেখতে গিয়েছিলেন। এ খবর শুনে আমিও পুনরায় চাঁদ দেখার জন্য ৯ তলার ছাদে উঠি। দেখতে পেলাম সম্মানিত সাহেবজাদা হুজুরগণও ৯ তলার ছাদে রয়েছেন এবং চাঁদ দেখছেন। আমি তখন চাঁদের দিকে তাকিয়ে দয়াল বাবাজানের নুরানিময় চেহারা মোবারক দেখতে পেলাম। দয়াল বাবাজান আমাকে ডাক দিয়ে বললেন- মান্নান মিয়া! চাঁদে কী দেখছেন? আমি জবাব দিলাম বাবাজান! চাঁদে আপনাকে দেখতে পাচ্ছি। আপনার চেহারা মোবারক অত্যন্ত নুরের আলোকে আলোকময় দেখাচ্ছে। দাঁড়ি গোঁফ বিহীন এই চেহারা মোবারক থেকে নুরের আলোক রশ্মি বের হচ্ছে। একথা শুনে দয়ার বাবাজান বললেন- নুরের চেহারায় কোনো দাঁড়ি গোঁফ থাকে না, শুধু চেহারাই দেখা যায়। আমি তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ি আর মনে মনে ভাবি, আমি সত্যিই ভাগ্যবান! কেননা, আমার মহান মোর্শেদ সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজানকে মহান আল্লাহ্ চাঁদে দেখিয়ে সম্মানিত করেছেন, যা পৃথিবীর ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি।


উল্লেখ্য যে, আমি ২০০৮ সালের ১১ অক্টোবর থেকে আজ পর্যন্ত প্রতি মাসেই পূর্ণিমার চাঁদে দয়াল বাবাজানের নুরানি চেহারা মোবারক দেখতে পাই।
সূফী সম্রাটের জীবনের আরো কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা:
ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর ৭ বছর বয়সে তাঁকে স্বপ্নযোগে নৌকায় তুলে নিয়ে হযরত ইমাম মাহ্দী (আ.) কর্তৃক ইসলাম ধর্মের কাণ্ডারীর দায়িত্ব প্রদান।
১৯৬২ সালে মাত্র ১২ বছর বয়সে ঈদুল ফিতরের নামাজের পূর্বে ভাষণদানকালে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, “এমন একটা সময় আসবে যখন সারা পৃথিবীতে আমার কণ্ঠস্বর প্রচারিত হবে।”
১৯৭১ সালের ২০ নভেম্বর ভারতের হেজামারায় ঈদুল ফিতরের নামাজের খুৎবায় বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিজয়ের ভবিষ্যদ্বাণী প্রদান করে বলেছিলেন, “আল্লাহ্র কসম! আগামী বকরা ঈদের আগে দেশ স্বাধীন হবে। আমি আপনাদের নিয়ে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ঈদুল আজহার নামাজ আদায় করবো।”
১৯৭৪ সালের ৬ জানুয়ারি তরিকতের সবক গ্রহণ এবং ৩ ফেব্রুয়ারি ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.)-এর কাছ থেকে খেলাফত লাভ।
১৯৭৫ সালে ইমাম শাহ্ চন্দ্রপুরী (রহ.) কর্তৃক ইসলাম ধর্মের সংস্কার করে কিতাব লেখার নির্দেশ লাভ।
১৯৭৬ সালে হযরত রাসুল (সা.) কর্তৃক স্বপ্নের মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম সংস্কারের নির্দেশ লাভ। ১৯৮৪ সালে হযরত রাসুল (সা.)-সহ পাক পাঞ্জাতন যুদ্ধের সাজে সুসজ্জিত হয়ে চন্দ্রপাড়া থেকে ঘোড়ার পিঠে চড়িয়ে ঢাকায় নিয়ে আসেন। অতঃপর ১৯৮৫ সালের ২৮ মার্চ তিনি মোর্শেদের দরবার থেকে ঢাকায় চলে আসেন এবং ঐ বছরই ঢাকার অদূরে নারায়ণগঞ্জ জেলার দেওয়ানবাগে ‘বাবে জান্নাত’ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন।


১৯৯০ সালের মার্চ মাসে রাসূল (সা.)-সহ পাক পাঞ্জাতন যুদ্ধের সাজে সুসজ্জিত সূফী সম্রাটের সাথে মিশে একাকার হয়ে যান।
ঐ বছরই কতিপয় স্বার্থান্বেষী লোক সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের দরবার শরীফে হামলা চালায় এবং আল্লাহ্কে দেখার অভিযোগ এনে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে মামলা দায়ের করে। মহান আল্লাহ্ সূফী সম্রাটকে ঐ মামলায় বিজয়ী করেন। আল্লাহ্র মহান বন্ধু সূফী সম্রাট দয়াল বাবা কেব্লাজান ধর্ম সম্পর্কে যখন যা বলেছেন, তাই বাস্তবায়িত হয়েছে। সুতরাং একজন সংস্কারক হিসেবে এবং বিশ্বব্যাপী মোহাম্মদী ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে সূফী সম্রাট দয়াল বাজাজান একজন অত্যন্ত সার্থক মহামানব, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।
[লেখক: সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা]

সম্পর্কিত পোস্ট