যাঁকে পেয়ে ধন্য জীবন
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান মিয়া
(পর্ব-২৬)
পূর্ব প্রকাশিতের পর
যুগের শ্রেষ্ঠ সংস্কারক সূফী সম্রাট
নবুয়তের যুগ সমাপ্ত হওয়ার পর শুরু হয়েছে বেলায়েত বা বন্ধুত্বের যুগ। বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.)-এর পরে জগতে আর কোনো নবি-রাসুল আসবেন না, কিন্তু মানুষের আবির্ভাব তো ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাহলে মানুষের মুক্তি পাওয়ার উপায় কী? আর সে কারণেই মহান আল্লাহ্ মানুষের কল্যাণ ও মুক্তির জন্য যুগে যুগে মোজাদ্দেদ বা সংস্কারক প্রেরণ করে থাকেন। হাদিস শরীফে আছে, হযরত রাসুল (সা.) ফরমান- “নিশ্চয় মহান ও মহিমান্বিত আল্লাহ্ এই উম্মতের জন্য প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে এমন এক ব্যক্তিকে পাঠান, যিনি তাদের ধর্মকে সংস্কারর করে সজীব ও সতেজ করবেন।” (আবু দাউদ শরীফের সূত্রে মেশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা ৩৬) হযরত রাসুল (সা.)-এর পাঁচশত বছর পরে জগতের বুকে মোজাদ্দেদ হিসেবে আবির্ভূত হন, হযরত মহিউদ্দিন আবদুল কাদের জিলানি (রহ.), যিনি বিশ্ববাসীর কাছে ‘বড়ো পির’ নামে পরিচিত। তিনি ইসলাম ধর্মে প্রবিষ্ট কিছু কুসংস্কার দূরীভূত করে ইসলামকে সতেজ করেন। তাঁর পরে পর্যায়ক্রমে আরো কয়েকজন মোজাদ্দেদ বা সংস্কারকের আবির্ভাব ঘটে। তাঁরা হলেনÑ যথাক্রমে হযরত খাজা মঈনুদ্দিন চিশতি (রহ.), হযরত বাহাউদ্দিন নকশবন্দ (রহ.), হযরত শায়েখ আহমদ সেরহিন্দি (রহ.), তিনি মোজাদ্দেদ আলফেসানি নামে পরিচিত। আমাদের এই বাংলাদেশে আগমন করেন ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)। অতঃপর মহান রাব্বুল আলামিন জগতের বুকে শ্রেষ্ঠ মোজাদ্দেদ হিসেবে প্রেরণ করেছেন-জগৎশ্রেষ্ঠ তাসাউফ বিজ্ঞানী, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী (রহ.) হুজুর কেবলাজানকে। তাঁর পূর্ব পুরুষ আরবের কাতার হতে ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে এই বাংলাদেশে আগমন করেন। সূফী সম্রাট হুজুর কেবলাজান বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন এবং বীরত্বের সাথে শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেন। এরপরে সেনাবাহিনীর মধ্যে ধর্মীয় আদর্শ শিক্ষা দেওয়ার লক্ষ্যে তিনি রিলিজিয়াস টিচার হিসেবে গুরুদায়িত্ব লাভ করেন। সূফী সম্রাটের আদর্শ ও উত্তম আচরণে সেনাবাহিনীর মধ্যে তাঁর সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। তাই সকলে তাঁকে ‘বড়ো হুজুর’ বলে সম্বোধন করতেন। আর্মিতে থাকা অবস্থায় তিনি স্বীয় মোর্শেদ ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.)-এর সান্নিধ্যে গমন করেন। তাঁর নিকট থেকে তাসাউফ সাধনার জগতে প্রবেশ করে তিনি তরিকার সর্বোচ্চ মাকাম হাসিল করে সমকালীন যুগের অলীদের বাদশাহর দরজায় পৌঁছে যান। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন সূফী সম্রাট হযরত শাহ্ দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানকে ১৯৮৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর মোজাদ্দেদ বা সংস্কারকের দায়িত্ব অর্পণ করেন। তাঁর অসংখ্য সংস্কারের মধ্যে মাত্র কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হলো।
মহান রাব্বুল আলামিন একবিংশ শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ সংস্কারক হিসেবে সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানকে দায়িত্ব প্রদান করেন। এসময় পিরানে পির, দস্তগির, সুলতানুল মাশায়েখ, সুলতানিয়া মোজাদ্দেদিয়া তরিকার ইমাম সৈয়দ আবুল ফজল সুলতান আহমদ (রহ.) জীবিত ছিলেন। তাঁর ওফাতের পর সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান ১৯৮৫ সালে দেওয়ানবাগ দরবার শরীফ প্রতিষ্ঠা করেন। এরপরে তিনি সংস্কারের বিষয়ে মনোনিবেশ করেন। এরই মধ্যে দিকে দিকে সূফী সম্রাটের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। অসংখ্য মানুষ তাঁর সান্নিধ্যে এসে তরিকা গ্রহণ করতে থাকে। অতঃপর তিনি চিন্তা করলেন যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর রেখে যাওয়া ইসলামের ভিতরে বহু কুসংস্কার প্রবেশ করেছে। প্রকৃত ধর্ম থেকে মানুষ অনেক দূরে সরে পড়েছে। তাই তিনি সেগুলো দূরীভূত করে প্রকৃত ইসলাম জগতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য সচেষ্ট হলেন। তিনি লক্ষ্য করলেন যে, আমাদের সমাজের মুসলমানগণ নামাজ পড়ার সময় যে জায়নামাজ ব্যবহার করে, তাতে মক্কার কাবা শরীফ ও মদীনার হযরত রাসুল (সা.)-এর রওজা শরীফের ছবি থাকে, যা পায়ের নীচে রেখে নামাজ পড়া চরম বেয়াদবি। তিনি এই জায়নামাজে নামাজ না পড়ার জন্য জাতিকে আহ্বান জানালেন। জাতি সূফী সম্রাটের আহ্বানে সাড়া দিয়ে এই জায়নামাজ পরিহার করে এক মারাত্মক বেয়াদবি থেকে রক্ষা পেয়েছে।
পবিত্র কুরআনে বহুবার বর্ণিত হয়েছে “আসমান ও জমিনের মালিক একমাত্র আল্লাহ্।” অথচ বৃটিশ আমল থেকে প্রচলিত জমি রেজিস্ট্রেশনের পদ্ধতি অনুসারে আমাদের দেশে জমির দলিলে উল্লেখ করা হতো ‘আমি এ জমির মালিক। আমার মালিকানা স্বত্ব অমুকের কাছে বিক্রি করলাম’। সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী বলেন, “নিজেকে জমির মালিক দাবি করা চরম গর্হিত ও র্শিক; যেটি করা কোনো মানুষের উচিত নয়।” তাই তিনি এ ভুল প্রথা পরিবর্তন করার জন্য ইসলামি রীতিতে দলিল লিখন পদ্ধতি উপস্থাপন করেছিলেন এভাবে-“বিস্মিল্লাহির রাহ্মানির রাহীম। পরম করুণাময় আল্লাহ্ তায়ালা আসমান ও জমিনের প্রকৃত মালিক। তাঁর বান্দা হিসেবে আমার জমির দখলিস্বত্ব অমুকের নিকট বিক্রি করলাম।” ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দে সমগ্র বাংলাদেশে সূফী সম্রাটের প্রস্তাবিত পদ্ধতিতে জমি রেজিস্ট্রেশন প্রচলন করা হয়।
মানবজাতির সর্বোত্তম জীবন-বিধান আল কুরআন গবেষণার মাধ্যমে যুগের ইমাম সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান প্রমাণ করেছেন এর আয়াত সংখ্যা ৬,৬৬৬ (ছয় হাজার ছয়শ’ ছেষট্টি) নয় বরং ৬,২৩৬ (ছয় হাজার দুইশ’ ছত্রিশ) খানা। তাঁর এ অভিমত সরকার কর্তৃক গৃহীত হয় এবং ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক জানুয়ারি, ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত কুরআন শরীফের সূচিতে পূর্ববর্তী ভুল সংশোধন করে সর্বমোট ৬,২৩৬ খানা আয়াত সংখ্যা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
বৃটিশ শাসনামলে প্রবর্তিত রবিবার সাপ্তাহিক ছুটির রেওয়াজ স্বাধীনতা পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশেও পালন করা হতো। যার ফলে এদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানগণ শুক্রবারের জুমার নামাজ ঠিকমত আদায় করতে সমস্যা হতো। সূফী সম্রাট কর্তৃক রবিবারের পরিবর্তে শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণা করার আবেদন ১৯৮২ সালে তৎকালীন সরকার গ্রহণ করেন এবং শুক্রবারকে সাপ্তাহিক ছুটির দিন ঘোষণা করা হয়।
হাদিস শরীফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত রাসুল (সা.) ফরমান “দ্বিন জয়ী থাকবে ততদিন, যতদিন লোক শীঘ্র শীঘ্র ইফতার করবে, কেননা ইহুদি ও খ্রিষ্টানরা ইফতার করে দেরীতে।” (আবু দাউদ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩২১) অথচ আমাদের দেশে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত সাহরি ও ইফতারের সময়সূচিতে সূর্যাস্তের ১৪ থেকে ১৮ মিনিট পর ইফতারের সময় নির্ধারণ করা হতো। যুগের ইমাম সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান হাদিস পরিপন্থি এ সময়সূচি পরিবর্তনের জন্য সরকারের কাছে যে প্রস্তাব উত্থাপন করেন, সেই অনুযায়ী ১৯৯৩ খ্রিষ্টাব্দ থেকে বিজ্ঞানভিত্তিক সাহরি ও ইফতারের সময়সূচি প্রবর্তিত হয়েছে।
সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান লক্ষ্য করলেন যে, ইসলামের প্রাণ হচ্ছে এলমে তাসাউফ অথচ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই এই অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি পড়ানো হয় না। তাই তিনি সরকারের কাছে এটি পাঠ্য তালিকায় অন্তর্ভূক্ত করার জন্য আহ্বান জানালেন। এ সম্পর্কে তৎকালীন সরকারের মহামান্য রাষ্ট্রপতি এবং শিক্ষা মন্ত্রীর সাথে সূফী সম্রাটের প্রেরিত প্রতিনিধি দলের সাথে আলাপ-আলোচনার পরে সরকার ৯ম ও ১০ম শ্রেণির ইসলাম শিক্ষা বইয়ে এবং উচ্চ মাধ্যমিক, অনার্স ও মাস্টার্সের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগে এলমে তাসাউফ পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত করেন।
মুসলিম জাতিসহ বিশ্বের সকল মানুষের ধারণা ছিল, মহান আল্লাহ্র প্রিয় হাবিব হযরত রাসুল (সা.) গরিব ছিলেন। কিন্তু মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ইতিহাসের অকাট্য দলিল দিয়ে প্রমাণ করলেন যে, হযরত রাসুল (সা.) ধনী ছিলেন। তিনি বিদায় হজে ১০০টি উট কোরবানি করেছেন। বর্তমান বাজার মূল্যে ১টি উট ১০ লক্ষ টাকা হলে ১০০টির দাম হয় ১০ কোটি টাকা। এরপরেও কি আমরা বলবো হযরত রাসুল (সা.) গরিব ছিলেন? নিশ্চয়ই না, তিনি ছিলেন ধনী ও সম্পদশালী। পবিত্র ঈদুল আজহায় আমরা পশু কোরবানি করি। কোরবানির পূর্বে ইমাম সাহেব জানতে চান যে, কার কার নামে কোরবানি হবে? আল্লাহর মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান বলেন মানুষের নামে নয়, আল্লাহর নামে কোরবানি করতে হবে। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের কারণে আজ সমাজের মানুষ কোরবানি করার ক্ষেত্রে যে ভুল ছিল, তা সংশোধন করে নিতে সক্ষম হয়েছেন। ‘কোরবানি’ মুসলমানদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় অনুষ্ঠান হিসেবে ১০ জিলহজ তারিখে সারা বিশ্বে পালিত হয়ে থাকে। আল্লাহর নির্দেশে হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে মক্কার মিনাবাজার নামক স্থানে কোরবানি করতে নিয়েছিলেন। পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে শুইয়ে যখন পিতা হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর গলায় ছুড়ি চালিয়েছিলেন, তখন আল্লাহর অপার দয়ায় হযরত ইসমাইল (আ.)-এর পরিবর্তে একটি দুম্বা কোরবানি হয়ে যায়। সেই থেকেই প্রতি বছর ঈদুল আজহায় মুসলমানগণ আল্লাহর নামে পশু কোরবানি করে থাকেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্ ফরমান- “হে ইব্রাহিম! আপনিতো স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করে দেখালেন। আমি এরূপেই খাঁটি বান্দাদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি।” (সূরা আস্ সাফফাত ৩৭: আয়াত ১০৫)
হযরত রাসুল (সা.) বলেন “আমি দু’জবেহকৃত পিতার সন্তান। একজন হযরত ইসমাইল (আ.) এবং অপরজন হলেন হযরত আবদুল্লাহ (আ.)।” (তাফসীরে কাবীর ৯ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫৬০৮) পিতা-পুত্রের এই আত্মত্যাগের কারণেই মহান আল্লাহ্ হযরত ইসমাইল (আ.)-কে ‘জাবিহুল্লাহ’ উপাধি প্রদান করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, মুসলমানদের এই ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ইসলামের শত্রুরা এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। ২০১০ সালের ১ আগস্ট তথাকথিত বিশ্ব শান্তি পরিষদের সভাপতি দেব নারায়ণ মহেশ্বর কোরবানির সত্য ইতিহাস বিকৃত করার অসৎ উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে একটি রিট পিটিশন দায়ের করে। এতে সে দাবি করে যে, হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর স্বপ্ন পূরণের জন্য তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে নয়, বরং তাঁর অন্য পুত্র হযরত ইসহাক (আ.)-কে কোরবানি করেছিলেন। চাঞ্চল্যকর এই রিট পিটিশনের বিষয়টি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়। কোরবানির সঠিক তথ্যাবলি জানার জন্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের কোনো কোনো সিনিয়র আইনজীবী বিভিন্ন ইসলামিক প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করেন। তারা এটিকে ইসলামের একটি বিধান বললেও এর স্বপক্ষে পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দলিল দিতে পারেননি। সূফী সম্রাট হযরত দয়াল বাবাজান এ বিষয়টি অবগত হয়ে তিনি পবিত্র কুরআন ও হাদিসের দলিল সংগ্রহ করলেন। অতঃপর তিনি এ বিষয়ে কুরআন-হাদিসের সুস্পষ্ট দলিল দিয়ে একটি প্রবন্ধ লিখেন। পরের দিন দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় এ প্রবন্ধটি ছাপা হয়। এ পত্রিকার ঐ লেখাটি সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবীগণ দেখে মামলার জন্য তাদের দলিল পেয়ে যান। এদিকে সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান তাঁর ভক্ত মুরিদ অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোকাদ্দাস আলীকে দিয়ে এ পত্রিকার কপি হাইকোর্টের মাননীয় বিচারপতিদ্বয়ের চেম্বারে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করেন। হযরত ইব্রাহিম (আ.)-তাঁর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে আল্লাহ্র নামে কোরবানি করেছিলেন, ইসহাক (আ.)-কে নয়, পবিত্র কুরআন ও হাদিসের সেই দলিল পেয়ে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট বৃহস্পতিবার মাননীয় বিচারপতি মো. আবদুল ওহাব মিঞা ও মাননীয় বিচারপতি কাজী রেজাউল হক এক ঐতিহাসিক রায়ে ‘হযরত ইব্রাহিম (আ.) তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.)-কে কোরবানি করেছিলেন’ উল্লেখ করেন। আর দেব নারায়ণ মহেশ্বরের রিট পিটিশনটি খারিজ করে দেন। এই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন রিট দায়ের করে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার অপরাধে তাকে জেল ও জরিমানা করেন। মহান সংস্কারক সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী দয়াল বাবাজানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা এবং বিজ্ঞ আদালতের সুচিন্তিত রায়ে মুসলমানদের ধর্মীয় অনুষ্ঠান কোরবানি টিকে যায়। সেদিন যদি সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান এ ব্যাপারে উদ্যোগ না নিতেন, তাহলে মুসলমানদের কোরবানির মতো ধর্মীয় অনুষ্ঠান রক্ষা পেত কিনা চিন্তার বিষয়।
উল্লেখ্য যে, সূফী সম্রাট দয়াল বাবাজান তাঁর লেখনীর মাধ্যমে সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর পুত্র হযরত ইসমাইল (আ.) ছোটো বেলা হতেই তাঁর মা হযরত হাজেরা (আ.)-এর সাথে মক্কায় ছিলেন। অপরদিকে হযরত ইসহাক (আ.) কোনোদিনও মক্কায় আসেননি। তিনি তাঁর মা হযরত সারা (আ.)-এর সাথে জেরুজালেমের হেবরন এলাকায় থাকতেন। আর কোরবানি হয়েছে মক্কার মিনাবাজারে। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের সেদিনের সেই জোড়ালো যুক্তি ও দলিল মুসলিম জাতির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।
মুসলমানদের ধারণা ছিল, আশুরা শিয়াদের অনুষ্ঠান। কিন্তু আল্লাহর মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানই প্রথম মহামানব, যিনি বলেছেন-আশুরা শিয়াদের অনুষ্ঠান নয়, এটি গোটা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং রহমত ও বরকতের অনুষ্ঠান। কেননা, এ দিনে বিশ্ব জাহান সৃষ্টি করে মহান আল্লাহ্ প্রভু হিসেবে আরশে সমাসীন হয়েছিলেন। এই আশুরার বরকতে বহু নবি-রাসুল কঠিন বিপদ থেকে পরিত্রাণ লাভ করেছিলেন।
মহান আল্লাহর প্রিয় হাবিব, হযরত মোহাম্মদ (সা.)-এর শুভ জন্মদিনকে মুসলিম জাতি সিরাতুন্নবি (সা.) হিসেবে পালন করত। কোথাও কোথাও আবার ফাতেহায়ে দোয়াজদাহম হিসেবেও উদ্যাপিত হতো। সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন ১২ রবিউল আউয়াল ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.) পালনের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবি (সা.)-কে ‘সৃষ্টিকুলের শ্রেষ্ঠ ঈদ’ বলে ঘোষণা দিলেন। তিনি জাতিকে আরো জানালেন যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন ১২ বরিউল আউয়াল এবং তাঁর ওফাত দিবস ১ রবিউল আউয়াল। আনন্দের বিষয় এই যে, হযরত রাসুল (সা.)-এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে সৌদি আরবসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এ দিবসে মিলাদ শরীফ পাঠ করা হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এক শ্রেণির আলেম মিলাদ শরীফ পাঠ করা এবং হযরত রাসুল (সা.)-এর সম্মানে দাঁড়িয়ে কিয়াম করাকে বিদআত ও হারাম বলে আখ্যায়িত করেন। কিন্তু সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান পবিত্র কুরআন দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, মিলাদ পড়া বিদআত নয়, বরং ফরজ। সুতরাং আজ বাংলাদেশ-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে মিলাদ শরীফ পাঠ করা হয়ে থাকে।
পূর্বে মুসলমান জাতি বিশেষ করে আলেম সমাজ ছবি তোলাকে হারাম বলতেন। আল্লাহর মহান বন্ধু, সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান পবিত্র কুরআন দিয়ে প্রমাণ করলেন যে, ছবি তোলা হারাম নয় বরং জায়েজ। মহান আল্লাহ্ হযরত আদম (আ.)-এর কাছে একটি সিন্ধুকে সকল নবি-রাসুলের ছবি পাঠিয়েছিলেন। যার বর্ণনা সূরা বাকারাহ-এর ২৪৮নং আয়াতে রয়েছে। ২০০৭ সালে ভোটার তালিকা ও ন্যাশনাল আইডি কার্ড (এনআইডি) তৈরি করার সময় সূফী সম্রাটের লেখা “আল্লাহ্ কোন্ পথে?” কিতাবে ছবি তোলা জায়েজ, এই দলিল পেয়ে নির্বাচন কমিশন আইডি কার্ডে ছবি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এখন আর কেউ ছবি তোলা হারাম বলে না। এটা সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের একটি শ্রেষ্ঠ সংস্কার হিসেবে গণ্য। আসলে মহান আল্লাহ্ সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজানকে একজন শ্রেষ্ঠ সংস্কারকের দায়িত্ব দিয়ে জগতে প্রেরণ করেছিলেন বিধায়, তিনি ধর্মীয় বিভিন্ন বিষয়ে বহু সংস্কার করে মুসলিম জাতির ব্যাপক কল্যাণ সাধন করেছেন।
মাতৃভাষা ও মাতৃভূমি প্রতিটি মানুষের কাছেই পবিত্র। মহান আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিন এ পৃথিবীতে যত নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন এবং যাঁদের উপর আসমানি কিতাব নাজিল হয়েছে, তা ঐ নবিদের মাতৃভাষায়ই করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ্ বলেন- “আমি কুরআনকে আরবি ভাষায় নাজিল করেছি যেন তোমরা সহজে বুঝতে তা পারো।” (সূরা ইউনুস ১২: আয়াত ২) যেহেতু হযরত রাসুল (সা.)-এর মাতৃভাষা ছিল আরবি, আর কুরআন তাঁর উপর নাজিল হয়েছে বিধায়, তা আরবি ভাষায় নাজিল করা হয়েছে। কারণ, অন্য কোনো ভাষায় নাজিল হলে, আরবের লোকেরা তা বুঝতে পারবে না। তবে রাসুল (সা.) যদি অন্য কোনো দেশে আগমন করতেন, তাহলে সেদেশের ভাষাতেই কুরআন নাজিল হতো।
এভাবে দেখা যায়, বেলায়েতের যুগেও বিভিন্ন অলী-আল্লাহ্ জগতে আগমন করেছেন। তাঁরাও তাঁদের মাতৃভাষাতেই ধর্ম প্রচার করেছেন। তাইতো দেখা যায়, আরবি ভাষার পাশাপাশি ফারসি, উর্দু, বাংলা, হিন্দি, রাশিয়ান এবং চীনা ভাষায়ও অলী-আল্লাহ্গণ ধর্ম প্রচার করেছেন। সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সমরখন্দ, বোখারা, তাজাকিস্তানসহ অনেক এলাকাতেই অলী-আল্লাহর আগমন ঘটেছে। তারা রুশ ভাষাতেই ধর্ম প্রচার করেছেন। অপরদিকে বিখ্যাত সাধক ও ধর্ম প্রচারক কনফুসিয়াস চীনা ভাষায় ধর্ম প্রচার করেছেন। আজও চীন দেশে অনেক স্থানে কনফুসিয়াসের প্রচারিত ধর্ম মত চালু আছে।
মহান আল্লাহ্র অপার দয়ায় জামানার শ্রেষ্ঠ অলী, মহান সংস্কারক, মোহাম্মদী ইসলামের পুনর্জীবনদানকারী, সূফী সম্রাট হযরত সৈয়দ মাহ্বুব-এ-খোদা দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান এই বাংলার বুকে আগমন করেছিলেন। তিনি তাঁর মাতৃভূমিকে অত্যাধিক ভালোবাসতেন। আর সেই কারণেই ১৯৭১ সালে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তিনি অংশগ্রহণ করেন এবং দেশকে পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে স্বাধীন করেন। শুধু তাই নয়, মাতৃভাষাকেও সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আর সে কারণেই তিনি মাতৃভাষায় জু’মার খুৎবা প্রদানের গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং বাঙালি জাতিকে বাংলা ভাষায় জুমার খুৎবা দেওয়ার রেওয়াজ চালু করেন।
সূফী সম্রাট দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান স্বীয় মোশের্দের দরবার শরীফে থাকা অবস্থায় ১৯৮১ সালে নিজ মাতৃভাষা বাংলাতে জু’মার খুৎবা প্রদান করা শুরু করেন। আজ সূফী সম্রাটের এই সংস্কারটি বাংলার সর্বত্র চালু করা হয়েছে। তাই দেখা যায়, এ দেশের প্রতিটি মসজিদেই শুক্রবার দিনে খতিব সাহেব জু’মার খুৎবার বাংলা অর্থ মুসুল্লিদের পড়ে শুনিয়ে থাকেন। সূফী সম্রাটের এই সংস্কারটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এই যে, মুসলিমগণ যে দেশেই বসবাস করেন, সেই দেশের মাতৃভাষায় জু’মার খুৎবা প্রদান করতে হবে। তাঁর এই যুক্তিপূর্ণ বক্তব্যের বাস্তব প্রতিফলন আজ বিশ্বব্যাপী লক্ষ্য করা যায়। পৃথিবীর যে দেশে বাংলা ভাষা বিশেষ করে আশেকে রাসুলগণ জু’মার নামাজ পড়েন, তারা বাংলা ভাষায় খুৎবা দিয়ে থাকেন। তাছাড়া ইংল্যান্ড ও আমেরিকাসহ অন্যান্য ইংরেজি ভাষার মানুষেরাও জুমার নামাজ আদায় করে থাকেন। সেই দেশগুলোতে খতিব সাহেব মুসুল্লিদের সামনে খুৎবার বিষয়বস্তু ইংরেজি ভাষায় বর্ণনা করে থাকেন। এভাবেই সারা বিশ্বে মুসলমানগণ নিজ নিজ মাতৃভাষায় জু’মার খুৎবা প্রদান করে থাকেন। আল্লাহ্র মহান বন্ধু, যুগের ইমাম, সূফী সম্রাট হযরত দেওয়ানবাগী হুজুর কেব্লাজান লক্ষ্য করেছেন যে, মসজিদে ইমাম সাহেব যখন আরবি ভাষায় খুৎবা পাঠ করেন, তার অর্থ ও মর্ম না বুঝার কারণে মুসুল্লিগণ তখন অনেকেই তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। কিন্তু বাংলা ভাষায় খুৎবা প্রদান করার কারণে মুসল্লিগণ খুৎবায় খতিব সাহেব কী বলছেন, তা বুঝতে এবং সেই মোতাবেক আমল করতে সক্ষম হন। বিশ্বনবি হযরত রাসুল (সা.) যখন আরবি ভাষায় জুমার খুৎবা দিতেন, তখন পরবর্তী ১ সপ্তাহ মুসলমান সাহাবিগণ কিভাবে জীবন পরিচালিত করবেন, তার সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা থাকতো। আজও সেই বিধান মোতাবেক খুৎবা প্রদান করা হয়ে থাকে। আর বাংলাদেশে ইমামের দিক নির্দেশনামূলক বক্তব্যসমূহ মাতৃভাষাতে হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। তাই সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজান মাতৃভাষায় খুৎবা পাঠ করার বিধান চালু করেছেন। এটি সূফী সম্রাট হুজুর কেব্লাজানের অন্যতম সংস্কার। এ সংস্কারটি আজ বাংলাদেশে আলেম সমাজ স্বতঃস্ফূর্তভাবে গ্রহণ করেছেন। সুতরাং একথা সুনিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, যে দেশে যে ভাষা সেই ভাষাতেই জুমার খুৎবা প্রদান করা একান্ত বাঞ্ছনীয়।
[লেখক: সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল, জাতীয় আইন কলেজ, ঢাকা]